Ajker Patrika

শিক্ষকদের কোন্দলে সেশনজট

মো. ফাহাদ বিন সাঈদ, জাককানইবি
আপডেট : ৩১ জুলাই ২০২২, ১২: ৫৭
শিক্ষকদের কোন্দলে সেশনজট

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে (ইএসই) শিক্ষকদের কোন্দলের কারণে সেশনজট সৃষ্টি হয়েছে বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের। বিভাগে ঠিকমতো ক্লাস-পরীক্ষা হচ্ছে না। সাড়ে ছয় বছরেও এই বিভাগের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের অনার্স শেষ হয়নি।

একই সময় অন্য বিভাগের শিক্ষার্থীরা মাস্টার্স শেষ করার পথে। বিভাগের প্রধান অধ্যাপক আশরাফ আলী সিদ্দিকী বলেছেন, আমি শারীরিক ও মানসিকভাবে অসুস্থ। তাই নিয়মিত কিছু করতে পারছি না। এগুলো আমি কি একা সমাধান করতে পারব, সবাই যদি একসঙ্গে কাজ না করে। সবাইকে দায়িত্বশীল হতে হবে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চলতি বছরের জুন মাসের ১৩ তারিখ বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. আশরাফ আলী সিদ্দিকী বিভাগের নাম ‘এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং’ থেকে পরিবর্তন করে ‘এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স অ্যান্ড ক্লাইমেট চেঞ্জ’ করা যায় কি না এমন প্রস্তাব তোলেন। এ নিয়ে তাঁর সঙ্গে বিভাগের অন্য শিক্ষকদের চরম বাগ্‌বিতণ্ডা হয়। বিতণ্ডার একপর্যায়ে এদিন সকালে বিভাগীয় প্রধানকে প্রায় দেড় ঘণ্টা তাঁর অফিসকক্ষে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়। পরবর্তী সময়ে শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও প্রক্টর ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে বিষয়টি সমাধানের আশ্বাস দিয়ে ড. আশরাফকে বের করে আনেন। এদিন বিভাগের তিন শিক্ষক মো. নকিবুল হাসান খান, মো. রকিবুল হাসান ও মো. আলিম মিয়া মিলে এই ঘটনা ঘটান বলে জানান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. উজ্জ্বল কুমার প্রধান।

এই ঘটনার পর থেকেই বিভাগটিতে ক্লাস, পরীক্ষা নিয়মিত হচ্ছে না। আগে থেকেই এই বিভাগে শিক্ষকদের মধ্যে কোন্দল থাকায় সৃষ্টি হয়েছে সেশনজট।

বিভাগের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষে অনার্স শেষ হয়নি সাড়ে ছয় বছরেও।

সেশনজটের কথা স্বীকার করে ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা বলেন, আমাদের সেশনে অন্য বিভাগের শিক্ষার্থীরা অনার্সের ৮ম সেমিস্টার ও মাস্টার্সের ১ম সেমিস্টার পরীক্ষা দিচ্ছেন। অনেকের মাস্টার্স শেষের দিকে। সেখানে (ইএসই) বিভাগের একই সেশনের শিক্ষার্থীরা ৩য় বর্ষের ২য় সেমিস্টার পরীক্ষা এখনো শেষ করতে পারেননি। আমাদের তৃতীয় বর্ষের ভাইভা নিতে চলে যাচ্ছে তিন মাস। সেশনজটের এই অভিশাপ থেকে সবাই মুক্তি চান। ইতিমধ্যে সেশনজটের কারণে অনেকে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন।

শিক্ষার্থীরা আরও অভিযোগ করেন, কোনো শিক্ষককে কোনো কিছু বলতে গেলে শিক্ষার্থীদের নানান ধরনের হুমকি-ধমকি পর্যন্ত দিয়ে থাকেন শিক্ষকেরা। শিক্ষকদের মধ্যে স্বেচ্ছাচারী মনোভাব দেখা যাচ্ছে।

বিভাগের সেশনজট, ক্লাস নিয়মিত না হওয়ার বিষয়ে বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. নাকিবুল হাসান খান, সহকারী অধ্যাপক মো রকিবুল হাসান ও সহকারী অধ্যাপক মো. আলিম মিয়ার কাছে জানতে চাইলে তাঁরা কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক আশরাফ আলী সিদ্দিকী বিভাগের নাম পরিবর্তনের বিষয়ে বলেন, ‘ওই ঘটনার পর থেকে এখনো মানসিকভাবে বিভিন্ন চাপ দেওয়া হচ্ছে। আমি শারীরিক ও মানসিকভাবে অসুস্থ, তাই নিয়মিত কিছু করতে পারছি না।’ তিনি ক্লাস পরীক্ষার বিষয়ে বলেন, ‘এগুলো আমি কি একা সমাধান করতে পারব, সবাই যদি একসঙ্গে কাজ না করেন। আমি একা কীভাবে সব কাজ করব। এখানে সবাইকে দায়িত্বশীল হতে হবে। বিভাগীয় প্রধান হিসেবে তাঁর দায়িত্ব বিভাগকে সুন্দরভাবে পরিচালনা করা।

বিশ্ববিদ্যালয় রেজিস্ট্রার কৃষিবিদ ড. মো. হুমায়ুন কবির বলেন, এখানে সবাইকে দায়িত্বশীল হতে হবে। বিভাগীয় প্রধান হিসেবে ড. আশরাফের দায়িত্ব বিভাগটিকে সুন্দরভাবে পরিচালনা করা। অন্যদের উচিত তাঁকে সহযোগিতা করা।’

এর বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য অধ্যাপক ড. সৌমিত্র শেখর বলেন, ‘আমরা তাঁদেরকে বলেছি তাঁরা যদি কার্যক্রম শুরু না করেন আগামী মঙ্গলবার বা বুধবার থেকে আমাদের সিস্টেম চালু করে দেব।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত