Ajker Patrika

৫০ হাজার মানুষের গলার কাঁটা বাদোখালী বিল

শেখ শাহানশাহ, বাগেরহাট
৫০ হাজার মানুষের গলার কাঁটা বাদোখালী বিল

বাগেরহাট সদর উপজেলার ষাটগম্বুজ, কাড়াপাড়া ও যাত্রাপুর ইউনিয়নের প্রায় ৭ হাজার একর জমি নিয়ে বাদোখালী বিল। ১৩টি গ্রামের প্রায় ৫০ হাজার মানুষ এই বিলের ওপর নির্ভরশীল। বিলে ছোট-বড় ২০টির বেশি খাল রয়েছে।

একসময় এই বিল ছিল হাজারো মানুষের আয়ের অন্যতম উৎস। কিন্তু সময়ের ব্যবধানে সেই চিত্র বদলে গেছে। বিল দখল করে প্রভাবশালীদের মাছের ঘের ও পানি নিষ্কাশনের পথ বন্ধ হওয়ায় আশপাশের এলাকায় জলাবদ্ধতায় ভুগছে স্থানীয়রা। বিলটি এখন যেন গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। 

সরেজমিনে উপজেলার রাজাপুর গ্রামের বাসিন্দা মোল্লা মনিরুজ্জামান বলেন, ‘বর্ষা মৌসুমের পুরো সময় জলাবদ্ধতা লেগে থাকে। অতিরিক্ত বৃষ্টি হলে পানি নামতে না পেরে ঘেরের মাছ যেমন ভেসে যায়, তেমনি পাড়ের ফসলও পচে যায়। শুকনা মৌসুমেও পানির ব্যাপক সংকট থাকে আমাদের। আসলে বাদোখালী বিল এখন আর আমাদের ভরসার জায়গায় নেই, দিন দিন গলার কাঁটা হয়ে যাচ্ছে।’ 
বাদোখালী বিলে মনিরুজ্জামানের চার একর জমি রয়েছে। এই জমিতে করা ঘের ও ঘেরের পাড়ের ফসলের আয়েই তাঁর সংসার চলে।

চলতি বছরেও দুবার ঘেরের পাড়ের ফসল পচে গেছে এবং মাছ ভেসে গেছে। বিলের ভেতর দিয়ে যাওয়া ছোট-বড় খালগুলো দখল করে মাছ চাষ, বিলসংলগ্ন পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) চারটি স্লুইসগেট নষ্ট থাকা এবং পানি নিষ্কাশনের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না থাকায় জলাবদ্ধতার এই ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে বলে দাবি মনিরুজ্জামানের। তবে শুধু মনিরুজ্জামান নয়, বাদোখালী বিলের বহু জমির মালিক ও মাছচাষিরা প্রতিবছরই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন জলাবদ্ধতার কারণে। 

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বাদোখালী বিলের মধ্যে থাকা খালগুলোর কিছু কিছু অংশ প্রভাবশালীরা দখল করে মাছ চাষ করছেন। আর বাকি অংশে খালের দুই পাড়ের বাসিন্দারা নেট-পাটা, বোটা ও কুমোড় (পানির নিচে একসঙ্গে গাছের অনেক ডাল পুঁতে দিয়ে মাছ ধরার বিশেষ উপায়) দিয়ে পানির স্বাভাবিক প্রবাহ বাধাগ্রস্ত করছেন। এ ছাড়া বিলের পানি নিষ্কাশনের জন্য বিভিন্ন খালের মুখে থাকা চারটি স্লুইসগেট নষ্ট হয়ে গেছে। ফলে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে।

শেখ হারুণ অর রশীদ নামের স্থানীয় এক কৃষক বলেন, বাদোখালী বিলকে কেন্দ্র করে এখন যে জলাবদ্ধতা, তা একসময় ছিল না। খালগুলো দখল হয়ে যাওয়া এবং নাব্যতা হারানোর ফলে পানির স্বাভাবিক প্রবাহ ব্যাহত হয়েছে। খালগুলো দখলমুক্ত ও নষ্ট স্লুইসগেটগুলো ঠিক করা গেলে এই জলাবদ্ধতা থাকবে না। শুকনা মৌসুমেও চাষাবাদে পর্যাপ্ত পানি পাবে এলাকাবাসী। 

জমির মালিক ও স্থানীয়দের দুঃখ-দুর্দশার বিষয় জানতে এবং জলাবদ্ধতার সমাধান খুঁজতে গত রোববার দুপুরে বাদোখালী বিল এবং বিলসংলগ্ন খালের মুখে থাকা অকেজো স্লুইসগেটগুলো পরিদর্শন করেছেন পরিবেশকর্মীরা। এ সময় পরিবেশ সুরক্ষা মঞ্চ খুলনার সভাপতি খুদরত-ই-খুদা, সদস্য অজন্তা দাস, এমডি জাহাঙ্গীর হোসেন, বাগেরহাট পরিবেশ সুরক্ষা নাগরিক কমিটির সভাপতি মোল্লা নজরুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক মাহাবুবুর রহমান লিটন, কার্যকরী সদস্য শেখ আব্দুল গনিসহ স্থানীয় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকেরা উপস্থিত ছিলেন। বাদোখালী বিলের খালগুলো অবমুক্ত করতে পাউবোসহ সংশ্লিষ্টদের তাগিদ দেন তাঁরা। 

পরিবেশ সুরক্ষা মঞ্চ খুলনার সভাপতি খুদরত-ই-খুদা বলেন, বাদোখালী বিল একটা বড় জায়গা। এভাবে বছরের পর বছর জলাবদ্ধ থাকলে এই এলাকার মানুষ যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তেমনি স্থানীয় বাস্তসংস্থানও ভেঙে পড়ার শঙ্কা রয়েছে। তাই যত দ্রুত সম্ভব সংশ্লিষ্টদের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান তিনি। 

বাগেরহাট পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী আবু রায়হান মোহাম্মাদ আল বিরুনী বলেন, ‘জেলায় বেশ কিছু স্লুইসগেট অচল অবস্থায় রয়েছে। এগুলো সংস্কারের জন্য বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। বরাদ্দ পেলে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে স্লুইসগেটগুলো মেরামত করা হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মামলার আসামিসহ বিএসইসির ২২ কর্মকর্তাকে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত

‘ভারতে ঢুকে’ পাকিস্তানি সেনাদের গুলি, সীমান্তে সংঘাত গড়াল ষষ্ঠ দিনে

এনবিআর চেয়ারম্যানের কক্ষের সামনে কর্মকর্তাদের অবস্থান

ঐকমত্য কমিশনের সদস্যদের তেলের বরাদ্দ ২৫০ থেকে বেড়ে ৫০০ লিটার

বন্ধুকে ছাত্রলীগ সাজিয়ে পুলিশে দিয়ে তাঁর প্রেমিকাকে ধর্ষণ করলেন ছাত্রদল নেতা

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত