Ajker Patrika

চা-শ্রমিকের ‘ভাঙা স্বাস্থ্য’

শাকিলা ববি, সিলেট
Thumbnail image

মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার ভারাউরা চা-বাগানের শ্রমিক রম্বা রবি দাস। ৩০ বছর ধরে চা-শ্রমিকের কাজ করেন তিনি। রম্বা বলেন, ‘সারা দিন দাঁড়িয়ে কাজ করে শরীরে ব্যথা হয়ে যায়।

কাজ করে যে মজুরি পাই, তাতে পরিবার নিয়া তিন বেলা খেতে পারি না। কোনো দিন দুই বেলা, কোনো দিন একবেলা খাই। তাই বাচ্চারা অনেক রোগা। অসুখ-বিসুখ হলে মেডিকেলে গেলে একটা নাপা ট্যাবলেট দিয়েই শেষ। অনেক সময় দেয়ই না। তখন ওষুধ চাইলে টাকা খোঁজে। স্বাস্থ্যসেবায় এখনো যায়নি চা-শ্রমিকদের দুরবস্থা।’ একই কথা জানান বাগানের শ্রমিক শিলা হাজরা ও পার্বতী গরও।

শিলা ও পার্বতী বলেন, ‘আমরা অনেক শারীরিক সমস্যায় ভোগী। কাজ করতে করতে জ্বর আসে। কারও প্রেশার কমে যায়, কারও বেড়ে যায়, শরীর কাঁপে। এসবের জন্য বাগানের হাসপাতালেই যাই চিকিৎসা নিতে। কিন্তু এখানে তেমন কোনো সেবা দেওয়া হয় না। এ জন্য নারী চা-শ্রমিকেরা এ রোগগুলো আজীবন বহন করে।’

পার্শ্ববর্তী হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার চানপুর চা-বাগানের শ্রমিক খাইরুন আক্তার ও চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি চা-শ্রমিকের ছেলে খোকন ওরাং বলেন, ‘এখানে শুধু নামকাওয়াস্তে হাসপাতাল আছে। ভালো ডাক্তার নেই, নার্স নেই। তা ছাড়া যে হাসপাতাল নেওয়া হয় সেখানে সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা নেই। চিকিৎসা ওই রকমভাবে পাওয়া যায় না। এটা যে শুধু আমাদের চা-বাগানেই তা কিন্তু না। প্রায় প্রতিটি চা-বাগানের চিত্র একই।’

জানা গেছে, সারা দেশে বাংলাদেশ চা-বোর্ডের নিবন্ধিত চা-বাগান আছে ১৬৭টি। সিলেট বিভাগে আছে ১৩৪টি। এর মধ্যে মৌলভীবাজারে আছে ৭৫টি টি-এস্টেট ও ১৫টি চা-বাগান। হবিগঞ্জে আছে ২২টি টি-এস্টেট ও তিনটি চা-বাগান। সিলেট জেলায় আছে ১২টি টি-এস্টেট ও সাতটি চা-বাগান। চট্টগ্রাম জেলায় আছে ১৮টি টি-এস্টেট ও ৪টি চা-বাগান। রাঙামাটি জেলায় আছে ২টি টি-এস্টেট। পঞ্চগড় জেলায় আছে ৮টি চা বাগান। ঠাকুরগাঁও জেলায় আছে একটি চা-বাগান।

চা-শ্রমিকদের স্বাস্থ্য তথ্য জানতে সম্প্রতি কয়েকটি চা-বাগান সরেজমিনে পরিদর্শন করে চা-শ্রমিকদের সঙ্গে কথা এ তথ্য জানা যায়।

বাংলাদেশ চা-শ্রমিক ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক বালিশিরা ভ্যালির সভাপতি বিজয় হাজরা বলেন, ‘চা-বাগানকে আলাদা একটা জগতের মতো মনে করেন অনেকেই। কিন্তু আমরা তো এই রাষ্ট্রেরই বাসিন্দা। আর এই রাষ্ট্রের বাসিন্দা হিসেবে স্বাস্থ্যসেবা পাওয়া আমাদের অধিকার। তাই আমি বলব যদি সরকার চা-বাগানের হাসপাতালগুলোর তত্ত্বাবধান করে এবং বাগানমালিকদের ভালো স্বাস্থ্যসেবা দিতে বাধ্য করতে পারে।’

বাংলাদেশ চা-বোর্ডের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মো. আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘বাগানগুলোয় ক্লিনিক, ডাক্তার আছে কি না এবং সেখানে চিকিৎসা ঠিকমতো দেওয়া হয় কি না তা আমরা মনিটর করি। কিছু চা-বাগানে চিকিৎসাসেবার অনেক ভালো ব্যবস্থা থাকলেও অনেক বাগানে নেই এটা সত্য। কিন্তু আমরা যখন তথ্য চাই তখন বলা হয় সব ঠিকঠাক মতো হচ্ছে। তবে যেসব বাগানে ক্লিনিক চিকিৎসক না থাকার তথ্য পাওয়া যায় সে প্রতিবেদন আমরা মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দেই। বাগানমালিকদেরও বলি চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে।’

মেজর জেনারেল মো. আশরাফুল ইসলাম আরও বলেন, ‘প্রতিটি বাগানে যদি সরকারি হাসপাতাল থাকে তাহলে খুবই ভালো হয়। চা-শ্রমিকেরা যদি এ বিষয়টা তাঁদের দাবিতে রাখেন এবং যথাযথ মাধ্যমে এটা জানালে আমরা এ বিষয়ে অবশ্যই মন্ত্রণালয়ে কথা বলব।’

প্রসঙ্গত, বিএনএনআরসির তত্ত্বাবধানে স্বাস্থ্য-সাংবাদিকতায় মিডিয়া ফেলোশিপের জন্য প্রস্তুত করা এ প্রতিবেদন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত