Ajker Patrika

মেয়াদ শেষ, হলো না পাকা

মনিরামপুর (যশোর) প্রতিনিধি
আপডেট : ১২ মে ২০২২, ১৪: ৩০
Thumbnail image

গত বছরের জুন মাসে এক থেকে দেড় ফুট গভীর করে খুঁড়ে রাখা হয়েছে যশোরের মনিরামপুরের ঝাঁপা ইউনিয়নের হানুয়ার গ্রামের দুটি রাস্তায়। খুঁড়ে রাখা পর্যন্তই শেষ। এর পর প্রায় পৌনে তিন কোটি টাকা বরাদ্দের রাস্তায় দুটি ইটের সোলিং করার কাজ আর এগোয়নি। কাজ না করে গত ডিসেম্বরে মেয়াদ শেষ করে ফেলেন ঠিকাদার। ফলে খুঁড়ে রাখা রাস্তায় এক বছর ধরে সামান্য বৃষ্টিতেই কাদা-পানি মাড়িয়ে পথ চলতে হচ্ছে স্থানীয়দের। এ দুর্ভোগের শেষ হবে, আদৌ রাস্তা দুটি সংস্কার হবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে স্থানীয়দের মনে।

তবে ঠিকাদারের দাবি, টাকা না পাওয়ায় রাস্তা পাকা করার কাজ এগোয়নি। বিলের টাকা চেয়ে আবেদন করেছেন তিনি। টাকা পেলে কাজ শুরু করবেন।

গত বছরের এপ্রিল মাসে ঝাঁপা ইউনিয়নের হানুয়ার আমতলা সড়কের ৩৬৪ মিটার ও একই গ্রামের আফতাব গাজীর মোড় থেকে হানুয়ার মণ্ডলপাড়া হয়ে পুলেরহাট রাজগঞ্জ সড়ক পর্যন্ত ২ হাজার ৪৮০ মিটার কাঁচা রাস্তা পাকা করার দরপত্র হয়। মাগুরার স্বাধীন এন্টারপ্রাইজের অনুকূলে ৩৮ লাখ ৬০ হাজার ৭৪৬ টাকা ও ২ কোটি ৩০ লাখ ৪৯ হাজার টাকায় কাজ দুটোর অনুমোদন দেওয়া হয়। স্বাধীন এন্টারপ্রাইজের পক্ষে কাজের দায়িত্ব নেন মনিরামপুরের আবু সাইদ নামের এক ঠিকাদার।

গত জুন মাসের দিকে ঠিকাদার রাস্তা খুঁড়ে রাখেন। এর পর আর কাজ করেননি। একটু বৃষ্টি হলে এখন রাস্তা দুটিতে কাদা জমে। শুরু হয় কাদার সঙ্গে পথচারীদের সংগ্রাম। জনগণের ভোগান্তি নিয়ে এর আগেও রাস্তা দুটি আজকের পত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।

এদিকে গত ১২ ডিসেম্বর রাস্তা দুটির সংস্কারকাজের মেয়াদ শেষ হয়েছে। ঠিকাদার কাজ না করায় অনুমোদন বাতিল চেয়ে আবেদন করেন উপজেলা প্রকৌশলী। এরপর আড়াই কিলোমিটার খুঁড়ে রাখা রাস্তাটিতে কিছু অংশে নামমাত্র বালু ও ইটের খোয়া ফেলা হয়েছে। বাকি রাস্তা পড়ে আছে খুঁড়ে রাখা অবস্থায়।

রাজগঞ্জ কলেজে চাকরি করেন হানুয়ার গ্রামের বিল্লাল হোসেন। তিনি বলেন, ‘আমার বাড়ির সামনে থেকে খালিয়া মাদ্রাসা মোড় পর্যন্ত ৩৫০ মিটার রাস্তা খুঁড়ে ফেলে রাখা হয়েছে। এক বছর ধরে রাস্তায় কাজ করেনি ঠিকাদার। বাড়ি থেকে কলেজে যেতে আগে এক কিলোমিটার পথ ছিল। রাস্তা খুঁড়ে রাখায় এখন চার কিলোমিটার পথ ঘুরে কর্মস্থলে যেতে হচ্ছে।’

বিল্লাল হোসেন বলেন, ‘এ রাস্তার মাথায় খালিয়া দাখিল মাদ্রাসা। বৃষ্টি হলে মাদ্রাসায় যেতে কিংবা বাজার করতে গেলে চার কিলোমিটার পথ ঘুরে যেতে হয়।’

হানুয়ার গাজীর মোড় এলাকার ইসলাম আলী বলেন, ‘আমাদের মাঠের ফসল ঘরে তুলতে যে কি ভোগান্তি পেতে হচ্ছে, তা বলে শেষ করা যাবে না। রাস্তায় খোঁড়া গর্তে কাদা-পানি জমে থাকছে। মাঠের ফসল গাড়িতে করে তোলা যাচ্ছে না। বাড়তি খরচ দিয়ে মাথায় করে আনতে হচ্ছে। আমাদের কষ্টের শেষ নেই।’

ঝাঁপা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান শামছুল হক মন্টু ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘রাস্তা দুটিতে চলাচলে জনগণের ভোগান্তি হচ্ছে। আমি এ বিষয়ে উপজেলা প্রকৌশলীকে বহুবার জানিয়েছি। জেলা নির্বাহী প্রকৌশলীকে চারবার ফোনে জানিয়েছি। তারপরও রাস্তার কাজ করেননি ঠিকাদার।’

মনিরামপুর উপজেলা প্রকৌশলী বিদ্যুৎ কুমার দাস বলেন, ‘হানুয়ার গ্রামের রাস্তা দুটির কাজের মেয়াদ শেষ হয়েছে কয়েক মাস আগে। খোঁড়াখুঁড়িরও এক বছর পার হতে যাচ্ছে। ঠিকাদারকে কয়েকবার চিঠি দিয়েছি কাজ শেষ করার জন্য। অবশেষে কাজ বাতিল চেয়ে আবেদন করেছি। তারপর ঠিকাদার এক কিলোমিটার রাস্তায় বালু ও খোয়া ফেলেছেন।’

বিদ্যুৎ কুমার বলেন, ‘জনগণের ভোগান্তি হচ্ছে বুঝতে পারছি। কাজ শেষ করার জন্য আবারও ঠিকাদারকে বলা হবে।’

রাস্তা দুটির সংস্কার কাজের ঠিকাদার আবু সাইদ বলেন, ‘টাকা না থাকায় কাজ করতে পারিনি। জেলা নির্বাহী প্রকৌশলীর সঙ্গে কথা হয়েছে। তাঁর কাছে ১ কোটি টাকা বিলের আবেদন করেছি। টাকা পেলে আগামী সপ্তাহে কাজ শুরু করব।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত