Ajker Patrika

২০ বছর পেটে কাঁচি বয়ে বেড়াচ্ছেন তিনি

মেহেরপুর প্রতিনিধি
আপডেট : ০৪ জানুয়ারি ২০২২, ০৮: ৪২
২০ বছর পেটে কাঁচি বয়ে বেড়াচ্ছেন তিনি

২০০২ সালের মার্চে পেটে ব্যথা নিয়ে হাসপাতালে যান চুয়াডাঙ্গার হাপানিয়া গ্রামের বাচেনা খাতুন। চিকিৎসক বলেছিলেন, পিত্তথলিতে পাথর হয়েছে, দ্রুত অস্ত্রোপচার করাতে হবে। সে সময় জমানো টাকা দিয়ে ওই ক্লিনিকে অস্ত্রোপচার করেন বাচেনা। কিন্তু এতেও ব্যথা কমেনি, একবারের জন্যও সুস্থ হতে পারেননি তিনি। গত রোববার রাজশাহীতে এক্স-রে করে জানা গেল তাঁর পেটে রয়েছে একটি কাঁচি। এক, দুই কিংবা তিন নয়, দীর্ঘ ২০ বছর ধরে এই কাঁচি বয়ে বেড়াচ্ছেন তিনি।

বাচেনার স্বামী আবদুল হামিদ জানান, পেটের ব্যথা উপশমে ২০০২ সালে মেহেরপুরের গাংনীর রাজা ক্লিনিকে অস্ত্রোপচার হয়েছিল তাঁর স্ত্রীর। ওই সময় ভুলক্রমে ভেতরে কাঁচি রেখে দেন চিকিৎসক। গত রোববার এ কথা জানার পর বিষয়টি তাঁদের জন্য মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

মেহেরপুরের শেষ সীমান্ত চুয়াডাঙ্গা জেলার নওদা হাপানিয়া গ্রামের জীর্ণ একটি কুটিরে বাস বাচেনা খাতুন ও স্বামী আবদুল হামিদের। পরিবারের দুই সন্তান বিয়ের পর থেকেই আলাদা থাকে। স্বামী শারীরিক প্রতিবন্ধী। প্রতিবন্ধী ভাতা ও স্ত্রীর মাঠে কাজ করার রোজগারেই সংসার চলে তাদের।

বাচেনা খাতুন বলেন, ‘বিভিন্ন চিকিৎসকের কাছে গেলেও কিছুতেই সুস্থ হতে পারিনি। খরচ জোগাতে প্রথমে একখণ্ড জমি বিক্রি করে চিকিৎসা করতে থাকি। পরে পালিত গাভি, ছাগল ও হাঁস-মুরগি বিক্রি করি। বারবার রাজা ক্লিনিকে গেলেও তারা সাহায্যের হাত বাড়ায়নি। গত ডিসেম্বরের শেষ দিকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিউরো মেডিসিনের চিকিৎসকের কাছে গেলে এক্স-রে ও আল্ট্রাসনোগ্রাম দেন। এক্স-রে করার পর আমার শরীরের ভেতরে একটি কাঁচি (রাফ সিজার) দেখতে পান তাঁরা। পর পর তিনবার করা হয় এক্স-রে। একই ফল মেলে।’

প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা বলতে বলতে একসময় কান্নায় ভেঙে পড়েন বাচেনা। তিনি বলেন, আমার সহায় সম্বল সব শেষ। এখন কী দিয়ে চিকিৎসা করাব। কিছুদিন আগেই রাজশাহীতে যাওয়ার পর বিভিন্ন রিপোর্ট করতে আমার ৩২ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। এর বেশির ভাগই ধারদেনার টাকা।

বাচেনার প্রতিবেশী চায়না খাতুন জানান, এ ঘটনা জানার পর আমরাও এখন চিকিৎসকের কাছে সিজার বা অন্য অপারেশন করতে যেতে ভয় পাচ্ছি। ইউপি সদস্য শমসের আলী জানান, খরচ জোগাতে ঋণের জালে বন্দী হয়ে গেছে পরিবারটি। এখন চিকিৎসা করার সামর্থ্যটুকুও নেই। সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রুহুল কুদ্দুস টিটো এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, চিকিৎসকদের এমন কাণ্ডজ্ঞানহীনতা কখনো মেনে নেওয়া যায় না।

এদিকে রাজা ক্লিনিকের মালিক ডা. পারভিয়াস হোসেন রাজা বলেন, কাজ করলে ভুল হতেই পারে। আমি আমার ভুলের জন্য সকলের কাছে ক্ষমা চাচ্ছি। তাঁর সুচিকিৎসার জন্য আমার পক্ষ থেকে সব ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হবে। আর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার চেষ্টা করব। গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ডা. জাহিদুর রেজা জানান, অভিযোগ পেলে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত