Ajker Patrika

এবার লোডশেডিংয়ের খড়্গ

আবুল কাশেম, সাতক্ষীরা ও ফয়সাল পারভেজ, মাগুরা
আপডেট : ০১ আগস্ট ২০২২, ১২: ৫২
Thumbnail image

‘পাট ভালো হলেও অনাবৃষ্টির কারণে জাগ দেওয়া নিয়ে বিপাকে পড়েছি। খালে-বিলে নেই পানি। এতে আমন ধান লাগাতেও দেরি হয়েছে। কৃত্রিম সেচ দিয়ে কিছু জমিতে ধানের চারা লাগিয়েছি, কিন্তু এখন লোডশেডিংয়ের কারণে খেতে ঠিকঠাক সেচও দিতে পারছি না।’

আক্ষেপ করে কথাগুলো বলছিলেন মাগুরা সদরের ছোট আবালপুরের কৃষক মফিজ উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের কারণে বারবার মোটর বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এতে আমার মতো অনেক কৃষকই বিপদে আছেন।’

এদিকে সাতক্ষীরায় ভয়াবহ লোডশেডিংয়ে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে জেলার অন্তত ২২ লাখ মানুষ। শহরের চেয়ে গ্রামে লোডশেডিং বেশি। ফলে, শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ায় মারাত্মক ব্যাঘাত ঘটছে। সন্ধ্যার পরে লোডশেডিংয়ের সুযোগে ছিনতাইয়ের ঘটনাও ব্যাপকভাবে বেড়েছে।

মাগুরা সদর উপজেলার মঘি, হাজিপুর, নড়িহাটি, শিবরামপুর, ডেফুলিয়াসহ বেশ কয়েকটি এলাকার কৃষকেরা বলছেন, সেচ ঠিকমতো না দেওয়া গেলে এ মৌসুমে আমন ভালো হবে না। খাল-বিলে পানি না থাকায় একদিকে কৃষকেরা মাঠ থেকে পাট কাটতে পারছেন না, অন্যদিকে আমন ধান রোপণ করতে পারছেন না সেচের অভাবে।

আবালপুরের দক্ষিণপাড়া মাঠে গরু দিয়ে মই টানছিলেন কৃষক জহিরুল শেখ। তিনি বলেন, ‘সবকিছুর দাম এত বেশি যে পাওয়ার টিলার দিয়ে চাষ করা সাধ্যের বাইরে। এ জন্য নিজের পোষা গরু বের করেছি। মই দিয়ে জমি ঠিক করছি। এর পর ধানের চারা লাগাব।’

জহিরুল শেখ আরও বলেন, ‘এই মাঠে শতাধিক কৃষক মাত্র একটা সেচযন্ত্রের ওপর নির্ভরশীল। প্রতিদিন ৪-৫ ঘণ্টা সেচযন্ত্র চালু রাখা দরকার। কিন্তু লোডশেডিংয়ে ২ ঘণ্টা সেচ দেওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। এতে এ বছর আমন কম লাগাচ্ছেন কৃষকেরা।’

এ বিষয়ে মাগুরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক সুফি মো. রফিকুজ্জামান আজকের পত্রিকাকে জানান, জেলায় ৬১ হাজার হেক্টর জমিতে আমন ধান চাষের এবার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। বৃষ্টি তেমন নেই। তাই কৃষকেরা ইতিমধ্যে প্রায় ৫ হাজার হেক্টর জমিতে ধান লাগানো শেষ করেছেন। পাট ওঠার পর এটা পুরোপুরি সমাপ্ত হবে।

মো. রফিকুজ্জামান আরও বলেন, ‘এ মুহূর্তে সেচ দেওয়া খুব দরকার। না হলে বড় ধরনের ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। পানির অভাবে মাঠ থেকে পাট কাটতে পারছেন না কৃষকেরা। আমরা কৃষকদের সঙ্গে এসব বিষয়ে যোগাযোগ রাখছি। সেচ কীভাবে নিরবচ্ছিন্নভাবে দেওয়া যায়, সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মহলের নজরে আনা হয়েছে।’

বিদ্যুতের বিষয়ে মাগুরা পল্লী বিদ্যুতের এজিএম মো. আনিচুর রহমান আজকের পত্রিকাকে জানান, মাগুরায় পল্লী বিদ্যুতের মোট ফিডার সংখ্যা ৪২। এর মাধ্যমে পুরো জেলায় ওজোপাডিকোর (ওয়েস্ট জোন পাওয়ার সাপ্লাই কোম্পানি) বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়। এখন গড়ে গ্রামে ৬-৭ ঘণ্টা লোডশেডিং চলছে। আমরা ঠিকমতো মাগুরা উপকেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ পাচ্ছি না। দরকার ৭২ মেগাওয়াট; আমরা পাচ্ছি ২১-২৩ মেগাওয়াট। তাহলে এই ফিডারগুলোতে কীভাবে বিদ্যুৎ শিডিউল অনুযায়ী থাকে?

ওজোপাডিকো সূত্রে জানা গেছে, সাতক্ষীরা শহরে ৪৯ হাজার বিদ্যুতের গ্রাহক রয়েছেন। চাহিদা রয়েছে দৈনিক ১৮ থেকে ১৯ মেগাওয়াট। পাওয়া যাচ্ছে ১৩ থেকে ১৪ মেগাওয়াট। তালা উপজেলার নগরঘাটা গ্রামের আনোয়ারুল ইসলাম জানান, দুপুরে প্রচণ্ড গরমে যখন একটু বিশ্রাম করার সময়, ঠিক তখনই প্রায় প্রতিদিন বিদ্যুৎ থাকে না। এভাবে সারা দিন বিদ্যুৎ যাওয়া-আসার মধ্যে থাকে। কোনো কোনো দিন ৮ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকে না বলে জানান তিনি।

সাতক্ষীরা পৌরসভার কাটিয়া এলাকার আব্দুল গফফার বলেন, সন্ধ্যার পরে কয়েকবার বিদ্যুৎ চলে যায়। দিনে-রাতে বিদ্যুতের ৪ ঘণ্টার বেশি লোডশেডিং থাকে বলে জানান তিনি। বিদ্যুৎ না থাকায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শিক্ষার্থীরা। বিশেষ করে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা বিদ্যুৎ না থাকায় তীব্র গরমে লেখাপড়া চালিয়ে নিতে পারছে না।

সাতক্ষীরার পাটকেলঘাটা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার জিয়াউর রহমান জানান, জেলায় বিদ্যুতের চাহিদা রয়েছে ১২২ মেগাওয়াট। সরবরাহ রয়েছে ১০০ মেগাওয়াটেরও কম। তাই লোডশেডিং থাকবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত