Ajker Patrika

রোমাঞ্চকর নকআউটের অপেক্ষা

রানা আব্বাস, দুবাই থেকে
আপডেট : ০৯ নভেম্বর ২০২১, ১১: ৪৯
রোমাঞ্চকর নকআউটের অপেক্ষা

দুবাই আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামের প্রেসবক্স হয়ে হন্তদন্ত হয়ে ধারাভাষ্য কক্ষে যাচ্ছিলেন সুনীল গাভাস্কার। গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় নামিবিয়ার সঙ্গে ম্যাচ শুরুর আগে পরিচিত এক সাংবাদিকের রসিকতায় মুখে তেমন হাসি ফুটল না এই ভারতীয় কিংবদন্তির। টুর্নামেন্ট থেকে ভারতের বিদায় নিশ্চিত হয়েছে, গাভাস্কারের মুখে চেনা হাসি না থাকতেই পারে।

পরে অবশ্য একটু ‘ফ্রি’ হয়ে প্রেসবক্সে মন খুলে ভারতীয় সাংবাদিকদের সঙ্গে আড্ডা দিলেন গাভাস্কার। এ আড্ডায় অনুমিতভাবেই থাকল টুর্নামেন্টে ভারতের পারফরম্যান্স। গতকাল ‘খালিজ টাইমসে’ লেখা কলামে গাভাস্কার ভারতীয় দলকে ইংল্যান্ড ফুটবল দলের সঙ্গে তুলনা করেছেন। বিশ্বের সবচেয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ, আর্থিক দিক দিয়ে সবচেয়ে শক্তিশালী আর সবচেয়ে বেশি দর্শকের ঘরোয়া ফুটবল লিগ থাকার পরও ইংলিশরা ফুটবলে বড় শিরোপা জিততে পারছে না। ‘সানি ভাই’য়ের চোখে ভারতীয় ক্রিকেটও নাকি একই রোগে আক্রান্ত। কলামে টুর্নামেন্ট বাংলাদেশের পারফরম্যান্স নিয়েও এক ছত্র লিখেছেন ভারতীয় কিংবদন্তি, ‘অনেক টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট খেলা এবং এই সংস্করণে প্রচুর অভিজ্ঞতা থাকার পরও বাংলাদেশ বড় হতাশ করেছে।’

সুনীল গাভাস্কার আসলে সুপার টুয়েলভ থেকে বিদায় নেওয়া আটটি দলের পারফরম্যান্সই বিশ্লেষণ করেছেন। যারা বিদায় নিয়েছে তাদের নিয়ে ভেবে আর কী হবে। এখন চোখ নকআউট পর্বে। পাকিস্তান, অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড–যোগ্য চারটি দল উঠেছে সেমিফাইনালে। আসলে সুপার টুয়েলভে খেলা ছয়–সাতটি দলের সবাই ছিল প্রায় সমশক্তির। শক্তিশালী দলগুলোর মধ্যে বাদ পড়েছে ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকা।

আর যে চারটা দল ফাইনালে ওঠার লড়াই নামছে, প্রত্যেকেই শিরোপার দাবিদার। চার সেমিফাইনালিস্টের মধ্যে যদি কোনো দলকে সামান্য এগিয়ে রাখতে হয়, তো পাকিস্তানকেই রাখতে হবে। এমনিতে মরুর দেশ তাদের কাছে দ্বিতীয় ঘর। দুর্দান্ত ছন্দেও আছে দলটি। পাকিস্তান যে এবার একজন-দুজন পারফরমারের ওপর তাকিয়ে টুর্নামেন্ট খেলছে না, লিগ পর্বে তাদের জেতা পাঁচটি ম্যাচে পাঁচ ম্যাচসেরা দেখেই বোঝা যাচ্ছে। ভারতের বিপক্ষে শাহিন আফ্রিদি, নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে হারিস রউফ, আফগানিস্তানের বিপক্ষে আসিফ আলী, নামিবিয়ার বিপক্ষে মোহাম্মদ রিজওয়ান আর স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে শোয়েব মালিক। এতে প্রমাণ হয়, তাদের ম্যাচ জেতানোর খেলোয়াড়ের অভাব নেই। ধারাবাহিক দ্যুতি ছড়িয়ে বাবর আজম দলকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন সামনে থেকেই। সব মিলিয়ে টুর্নামেন্টে একমাত্র অপরাজিত দল পাকিস্তানকে অন্যরকম উজ্জীবিত মনে হচ্ছে। টুর্নামেন্টের আগে ঘরের মাঠে টানা দুটি সিরিজ স্থগিত হয়ে যাওয়ায় বেশ ধাক্কাই খেয়েছিল দেশটির ক্রিকেট। এই টুর্নামেন্ট জিতে সবাইকে ‘দেখিয়ে দেওয়া’র একটা তাড়না তাদের মধ্যে কাজ করাটা অস্বাভাবিক নয়। আবার দলকে উজ্জীবিত করছেন স্বয়ং দেশটির প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান।

পাকিস্তান যতই ছন্দ থাক, ১১ নভেম্বর দুবাইয়ের সেমিফাইনালে বড় চ্যালেঞ্জ জানাতে প্রস্তুত অস্ট্রেলিয়া। ব্যাটিং নিয়ে কিছুটা চিন্তা থাকলেও অস্ট্রেলিয়ানদের বড় শক্তি তাদের দুর্দান্ত বোলিং লাইনআপ আর ফিল্ডিং। আর বড় মঞ্চে জ্বলে ওঠার অভিজ্ঞতা তো আছেই। তবুও দুবাইয়ে এ কদিনে যত পাকিস্তানি দর্শকের সঙ্গে কথা হলো, তাদের অনুমান সেমির-বাধা টপকে পাকিস্তানই খেলবে ফাইনাল। আর তাদের সম্ভাব্য প্রতিপক্ষ হবে ইংল্যান্ড।

অবশ্য এই ভবিষ্যদ্বাণী আরও আগেই করেছেন বেন স্টোকস। বোলিং, ব্যাটিং, ফিল্ডিং আর এউইন মরগানের দুর্দান্ত অধিনায়কত্ব—ইংল্যান্ড দলটা যেন ‘কমপ্লিট প্যাকেজ’। বিশেষ করে তাদের বোলিং আর ফিল্ডিং। ২০১৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ না জেতার দুঃখ ভুলতে মরিয়া মরগানের দল। সুপার টুয়েলভে ইংলিশরা পাঁচ ম্যাচের চারটিতেই জিতেছে হেসেখেলে। সুপার টুয়েলভের শেষ দিকে তাদের দুঃসংবাদ, মারকুটে ওপেনার জ্যাসন রয়ের চোটে পড়া। চোটে পড়ে ছিটকে গেছেন বাঁহাতি পেসার টাইমাল মিলসও।

শেষ চারে ইংল্যান্ডের প্রতিপক্ষ নিউজিল্যান্ড ২০১৯ বিশ্বকাপেই প্রমাণ করেছে তারা আর ‘সেমিফাইনালের দল’ নয়। ইংলিশদের কাছে লর্ডসের সেই রোমাঞ্চকর ফাইনালে হারের ক্ষতে প্রলেপ দেওয়ার বড় সুযোগ আগামীকাল আবুধাবিতে কিউইরা পাচ্ছে। কেন উইলিয়ামসনের এই দল এগোচ্ছে দারুণ বোলিং আর চোখ ধাঁধানো ফিল্ডিংয়ে ভর করে। টুর্নামেন্টে এখনো পর্যন্ত ফিল্ডিংয়ে সবচেয়ে সফলতম দল তারা। গ্রাউন্ড ফিল্ডিংয়ে সবচেয়ে বেশি রান বাঁচিয়েছে কিউই ফিল্ডাররাই।

কাছাকাছি শক্তির চার দলের ফাইনালে ওঠার লড়াই—রোমাঞ্চকর এক নকআউট পর্ব দেখার আশা করাই যায়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...