Ajker Patrika

প্রসূতি অস্ত্রোপচার বাড়ছে

রহিম রেজা, ঝালকাঠি
আপডেট : ৩০ ডিসেম্বর ২০২১, ১৩: ৩৪
প্রসূতি অস্ত্রোপচার বাড়ছে

ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে প্রসূতি অস্ত্রোপচার কমলেও বেড়েছে ক্লিনিকে। নিরাপদ মাতৃত্বের ক্ষেত্রে প্রসূতি অস্ত্রোপচার নিরুৎসাহিত করা হলেও এ বিষয়ে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষের কোনো পদক্ষেপ না থাকায় এমনটা হচ্ছে বলে অভিযোগ রোগীর স্বজনদের। পাশাপাশি সপ্তাহের বেশির ভাগ দিনেই প্রসূতি অস্ত্রোপচার না হওয়া এবং প্রয়োজনীয় সময়ে চিকিৎসক না পাওয়ার কারণে সরকারি হাসপাতালের তুলনায় বেসরকারি ক্লিনিকে নির্ভরতা বাড়ছে রোগীদের।

ঝালকাঠি সদর হাসপাতাল থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বরে হাসপাতালটিতে প্রসূতি অস্ত্রোপচার হয়েছে ৩৯টি। এর মধ্যে সেপ্টেম্বর মাসে ১১টি, অক্টোবরে ১৪টি, নভেম্বরে ১৪টি। সে হিসেবে প্রতি মাসে গড়ে প্রসূতি অস্ত্রোপচার হয়েছে ১৩টি। এর বিপরীতে সদর হাসপাতালে স্বাভাবিক প্রসভ হয়েছে ৫৮টি। এর মধ্যে সেপ্টেম্বর মাসে ২০টি, অক্টোবরে ১৮টি, নভেম্বরে ২০টি। সে হিসেবে প্রতি মাসে গড়ে প্রসূতি অস্ত্রোপচার হয়েছে ১৯টিরও বেশি। তবে ডিসেম্বর শেষ না হওয়ায় এ মাসের পরিসংখ্যান পাওয়া যায়নি।

সদর হাসপাতাল থেকে মাত্র ৫০ গজ দূরত্বে ঝালকাঠি মডেল ক্লিনিক। ক্লিনিকের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত সেপ্টেম্বরে ৪৫টি প্রসূতি অস্ত্রোপচারের বিপরীতে স্বাভাবিক প্রসভ হয়েছে চারটি। অক্টোবরে ৬৭টির বিপরীতে দুটি। নভেম্বরে ৫৪টির বিপরীতে একটি। এ ছাড়া চলতি মাসের ২১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৩৪টি প্রসূতি অস্ত্রোপচারের বিপরীতে স্বাভাবিক প্রসভ হয়েছি মাত্র একটি।

একই অবস্থা সদর হাসপাতালের পূর্বগেট সংলগ্ন স্কয়ার ক্লিনিক, ফায়ার সার্ভিস মোড়ের সদর পুলিশ ফাঁড়ি মার্কেটের দ্বিতীয় তলায় সিটি ক্লিনিক, সদর উপজেলা পরিষদ গেট সংলগ্ন মৌমিতা ক্লিনিকে। এসব ক্লিনিক থেকে পাওয়া পরিসংখ্যানে দেখা যায়, এ চারটি প্রাইভেট ক্লিনিকে ২১ ডিসেম্বর সন্ধ্যা পর্যন্ত গত চার মাসে গড়ে প্রসূতি অস্ত্রোপচার হয়েছে ৪০টিরও বেশি।

রোগীর স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সদর হাসপাতালে সপ্তাহে তিন দিন সিজারিয়ান অপারেশন হয়। এতে বেকায়দায় পড়তে হয় তাদের। হাসপাতালে প্রসূতি অস্ত্রোপচার করতে চাইলে নির্ধারিত দিনের তিন দিন আগে ভর্তি হতে হয়। ফলে বাধ্য হয়ে ক্লিনিকে ছুটতে হয় তাদের।

স্থানীয় মাহবুবুল ইসলাম বলেন, ‘মাতৃত্বকালীন রোগীরা নানা ধরনের ঝুঁকিতে থাকেন। গুরুতর অবস্থায় কোনো রোগী এলে তাদের প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য জরুরি বিভাগ খোলা থাকে। কিন্তু জরুরি অস্ত্রোপচারের ব্যবস্থা নেই সদর হাসপাতালে। তখন বাধ্য হয়ে বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। এ ছাড়া প্রতি সপ্তাহের শনি, বুধ ও বৃহস্পতিবার অপারেশন থিয়েটার (ওটি) চালু থাকে। নির্ধারিত সময়ের আগের দিন ভর্তি না হলে তার অপারেশন করা হয় না।’

সরেজমিন সদর হাসপাতাল ঘুরে দেখা গেছে, অপারেশন থিয়েটারের সামনেই টিনের হলুদ বোর্ডের ওপর লাল অক্ষরের সাইনবোর্ডে লেখা আছে ‘শনি, বুধ ও বৃহস্পতিবার বহির্বিভাগে রোগী দেখা হয় না’—এমন নির্দেশনা। একদিকে যেমন ওই তিন দিনের বাইরে অপারেশন করা হয় না, অন্যদিকে চিকিৎসক অপারেশনে গেলে বহির্বিভাগের রোগীরা স্বাস্থ্যসেবা পান না। ফলে মাতৃত্বকালীন রোগী ও চিকিৎসাসেবা প্রত্যাশীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়।

হাসপাতালের রোগী ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শনিবার সকাল ১০টায় যদি কোনো মাতৃত্বকালীন রোগী হাসপাতালে আসেন, আর তাঁর অবস্থা গুরুতর হয়, তাহলে চিকিৎসক না থাকায় ওই রোগী এবং স্বজনদের চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে সিভিল সার্জন কার্যালয়ের এক কর্মচারী জানান, জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মী হয়েও তিনি স্ত্রীর সিজারিয়ান অপারেশন ক্লিনিকে করিয়েছেন। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘হাসপাতালের পরিবেশ এবং সেবার মান ভালো না। দক্ষ জনবল থাকলেও রোগীর প্রয়োজনে যথাসময়ে ডাকলে চিকিৎসকদের তেমন সাড়াও পাওয়া যায় না। এ ছাড়া রোগীর বিছানা, টয়লেট অপরিষ্কার থাকে। এতে রোগীর অপারেশনের জায়গায় ইনফেকশনের আশঙ্কা থেকে যায়।’

ঝালকাঠির সিভিল সার্জন ডা. রতন কুমার ঢালী বলেন, ‘সদর হাসপাতালে শুধু সিজারিয়ানদেরই নয়, বরং অন্যান্য অপারেশনও এখানে করা হয়। অত্যন্ত দক্ষ জনবল দিয়ে এসব অপারেশন করা হয়।’

তিনি জানান, বর্তমানে ১০০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে নির্ধারিত সময়ের বাইরে অপারেশনের কোনো ব্যবস্থা নেই। আড়াই শ বেডের হাসপাতাল নির্মাণের কাজ চলছে। এটার কাজ শেষ হলে সার্বক্ষণিক ব্যবস্থা থাকবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত