Ajker Patrika

একটি ৯৯৯ কাণ্ড

সম্পাদকীয়
একটি ৯৯৯ কাণ্ড

আক্কেলপুরের মানুষের ভালোই ‘আক্কেল’ আছে বলে মনে হয়! তা না হলে একজন পুলিশ সদস্যকে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগে পুলিশেরই হাতে ধরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে পারে?  সেটাও আবার জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ কল দিয়ে। সবারই এই জরুরি নম্বরটি মুখস্থ থাকার কথা। যেকোনো বিপদ-আপদে এই নম্বরে ফোন করে সাহায্য চাওয়া যায়—হতে পারে কোনো সড়ক দুর্ঘটনায় অ্যাম্বুলেন্সের প্রয়োজনে, অগ্নিদুর্ঘটনায় ফায়ার ব্রিগেডের প্রয়োজনে কিংবা ছিনতাইকারী-চাঁদাবাজদের হাত থেকে রক্ষা পেতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রয়োজনে।

যা-ই হোক, সেই পুলিশ সদস্যের ঘটনাটি শুনুন, যা আমরা জানতে পারি গত সোমবার আজকের পত্রিকায় প্রকাশিত একটি খবরের মাধ্যমে। জয়পুরহাটের আক্কেলপুর থানার কনস্টেবল আশিক হোসেন সপ্তাহখানেক আগে এক এসআইয়ের সঙ্গে গিয়েছিলেন শ্রীকৃষ্টপুর মহল্লায়। তাঁরা গিয়েছিলেন জমিজমা নিয়ে একটি অভিযোগের তদন্ত করতে। তখন আশিক বিবাদীপক্ষের সোহেল রানার কাছ থেকে ১ হাজার টাকা ঘুষ দাবি করেন। কিন্তু সোহেল তা দেননি। তাতে আশিক ক্ষুব্ধ হয়ে সোহেলকে ‘দেখে নেওয়ার’ হুমকি দেন।

এর দুই দিন পর রাতে এক সড়কে সোহেলের পকেট তল্লাশি করে ইয়াবা পাওয়া গেছে বলে জানান আশিক। ২০ হাজার টাকা ঘুষ দিলে ছেড়ে দেওয়া হবে—এমন শর্তে সোহেল রাজি হলে সেই রাতে মুক্তি পান। পরদিন সকালে ঘুষের টাকা নিতে আশিক যান সোহেলের বাড়িতে। সেদিন সোহেলকে না পেয়ে শনিবার সকালে আবার যান। তখন সোহেল ৫ হাজার টাকা দিয়ে ছাড়া পেতে চান। এ ঘটনা সোহেলের স্ত্রী মোবাইল ফোনে ভিডিও করেন। আশিক ব্যাপারটি বুঝতে পেয়ে টাকা ফেরত দিয়ে সেখান থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু সোহেলরা আশিককে আটকে রেখে ৯৯৯-এ ফোন করলে স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর ফেরদৌস হোসেনকে সঙ্গে নিয়ে থানা-পুলিশ ঘটনাস্থলে আসে এবং ভিডিওটি মুছে ফেলে আশিককে নিয়ে চলে যায়! ঘটনাটি মুদ্রার এক পিঠ, জানা গেছে ভুক্তভোগী এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছ থেকে। তবে আশিকের বক্তব্য ভিন্ন। তিনি বলছেন, সোহেল মাদক কারবারি বলে তাঁকে চিহ্নিত করতে তাঁর বাড়িতে গিয়েছিলেন তিনি। এ কারণেই নাকি আশিককে আটকে রাখা হয়েছিল।

পুলিশ সুপার মোহাম্মদ নূরে আলম জানিয়েছেন, তদন্ত হচ্ছে, বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এটা স্পষ্ট যে এখনো দুই পক্ষের কারও অভিযোগই প্রমাণিত হয়নি। তবে সোহেলের অভিযোগ যদি সত্যি হয়ে থাকে, অর্থাৎ জরুরি সেবায় কল দিয়ে ভুক্তভোগী যদি যথাযথ সেবা না পান, উল্টো অন্যায়কারী সাহায্য পান, তাহলে তো এ বড্ড ভয়ানক কথা! কাকে ভরসা করবে মানুষ? তাহলে কাদের জন্য এই ‘জরুরি সেবা ৯৯৯’?

আবার সোহেলের অভিযোগ যদি মিথ্যা প্রমাণিত হয়, তাহলে হয়তো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর থেকে সাধারণ মানুষের ভরসা উঠবে না সহজে। দুপক্ষের কোনো একটা অভিযোগ সত্য কিংবা মিথ্যা হোক, তদন্ত যেন সুষ্ঠু হয়, সেই ভরসাটুকু আমরা করতে চাই।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত