Ajker Patrika

বন, পাহাড় ও একটি খুন

সম্পাদকীয়
বন, পাহাড় ও একটি খুন

সাজ্জাদুজ্জামান ছিলেন কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগের উখিয়া রেঞ্জের দোছড়ি বনবিটের বিট কর্মকর্তা। শনিবার রাতে খবর পান পাহাড় কেটে মাটি পাচার করছে একটি চক্র। ঘরেবসে থাকতে পারেননি তিনি। অভিযানে বেরিয়ে পড়েন উখিয়া উপজেলার রাজাপালং ইউনিয়নের হরিণমারা এলাকায়। কিন্তু পাহাড়খেকোরা তাঁকে মিনিট্রাক দিয়ে চাপা দিয়ে চলে যায়। তখনই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন পরিবেশ রক্ষাকারী এই কর্মকর্তা। দিবাগত রাত সাড়ে ৩টার দিকে ঘটা এই ঘটনায় আহত হন বনরক্ষী মোহাম্মদ আলীও।

আজকের পত্রিকায় প্রকাশিত এমন একটি খবর পড়ে কিছু ভাবনার উদ্রেক হয়: যেখানে বন আছে, পাহাড় আছে, সেখানে গাছ থাকবেই। আর সেই গাছ আমাদের পরিবেশ, মানুষ ও প্রাণিজগতের টিকে থাকার জন্য কতটা জরুরি তা ব্যাখ্যাতীত। কিন্তু সেই গাছ কেটে বন-পাহাড় সাফ করে দিচ্ছি আমরা মানুষেরাই। ফলে ওজোন স্তর ভাঙতে শুরু করেছে। তাই বরফের পাহাড় গলতে শুরু করেছে, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে চলেছে। উন্নত দেশগুলোর বর্জ্য দিয়ে বিষিয়ে উঠেছে নির্মল পরিবেশ। 

আমাদের সভ্যতা আজ হুমকির মুখে। মানুষ ও প্রাণিকুলের অস্তিত্ব টিকবে কি না, এটা এখন বৈশ্বিক ভাবনা। এই সমস্যার বিরুদ্ধে হয়ে যাচ্ছে কতশত আন্দোলন, সময়মতো হচ্ছে জলবায়ু সম্মেলন। বিশ্বের সব পরিবেশবাদী মানুষ সোচ্চার হয়েছে পরিবেশকে বাঁচানোর জন্য, যেন নিজেরা বাঁচতে পারে, ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে বাঁচাতে পারে। 

ছোট দেশ হিসেবে এসব বিবেচনায় সামান্য প্রয়াস তো আমরাও করতে পারি। যে বন-পাহাড়ের গাছ প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও অন্যান্য প্রতিকূলতা থেকে আমাদের লোকালয়কে রক্ষা করতে পারে, দেশকে বাঁচাতে পারে, সেই বন-পাহাড় বাঁচাতেই তো গিয়েছিলেন সাজ্জাদুজ্জামান। এটা সামান্য কোনো চেষ্টা ছিল না তাঁর। মাত্র ৩০ বছর বয়সে প্রাণটা দিয়ে দিলেন পাহাড়খেকোদের হাতে।

যাঁরা পরিবেশ রক্ষার দায়িত্বে আছেন, তাঁদের নিরাপত্তাই যদি না থাকে, তবে পরিবেশ নিরাপদ থাকবে কীভাবে? আইন বা সরকারের লোকও নিরাপদ নন—বন কর্মকর্তা হত্যার ঘটনায় এ কথা এখন স্পষ্ট। তার মানে, যারা এই অন্যায়-অপরাধ করে বেড়ায়, তারা কোনো না কোনো প্রভাবশালীর মদদপুষ্ট। আমরা লুটপাটের যে খবরগুলো নিয়মিত পত্রিকায় কিংবা টেলিভিশনে দেখি, সেগুলো তাদের মতো প্রভাবশালীদের পৃষ্ঠপোষকতাতেই তো ঘটে। গাছ উজাড় করে পাহাড়ের মাটি কেটে নেওয়া আর নিজেদের স্বার্থ উদ্ধারের জন্য পরিবেশ রক্ষাকারীদের খুন করা তাদের কাছে যেন কোনো ব্যাপারই না! 

বছর দেড়েক আগে বলিউডে একটা সিনেমা মুক্তি পেয়েছিল—‘ভেড়িয়া’। বক্স অফিসে সাড়া না পেলেও সিনেমার গল্পটা কিন্তু যেকোনো দর্শককে পরিবেশ নিয়ে ভাবতে বাধ্য করে। বন কেটে রাস্তা বানানোর এই গল্পে ইচ্ছাধারী নেকড়ে কামড়ে দেয়, খুন করে পরিবেশ ধ্বংসকারীদের। আমরা এমন ইচ্ছাধারী নেকড়ে না চাইলেও চাইব যেন বন কর্মকর্তা হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার হোক। সঠিক বিচার হলে ভবিষ্যতে এমন কোনো সরকারি কাজে বাধা আসবে 
না বলেই আমাদের বিশ্বাস।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এবার সরানো হলো জ্বালানি উপদেষ্টার পিএসকে

সব রুফটপ রেস্তোরাঁর ট্রেড লাইসেন্স বাতিল

উদ্দীপনের ২০০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে সাবেক সচিব মিহির কান্তির বিরুদ্ধে ৬ মামলা

ঈদ শুভেচ্ছা কার্টুনে কুকুরের ছবি: প্রথম আলো সম্পাদকের বিরুদ্ধে মামলার আবেদন

মন্ত্রণালয়ের মতামত ছাড়াই ইশরাককে মেয়র ঘোষণা: আইন উপদেষ্টা

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত