Ajker Patrika

ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য হ্রাসের নেপথ্যে

হাসান মামুন
আপডেট : ২০ মে ২০২৪, ১১: ৫৬
ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য হ্রাসের নেপথ্যে

ভারত আমাদের দ্বিতীয় বৃহৎ বাণিজ্যিক অংশীদার। অবশ্য রপ্তানির তুলনায় ভারত থেকে আমদানি অনেক বেশি। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোয় দেশটিতে রপ্তানি বাড়ছিল আমাদের; বিশেষ করে তৈরি পোশাক রপ্তানি। মাঝে দু-এক বছরে এটা লাফিয়ে দ্বিগুণের বেশি হয়ে গেলে আমরা উৎসাহিত হয়েছিলাম। ভেবেছিলাম, দ্বিতীয় বৃহৎ জনসংখ্যার দেশটিতে তৈরি পোশাক দিয়ে রপ্তানি বাড়িয়ে ফেলব অনেকখানি। তাতে বিরাট বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর সুযোগ প্রশস্ত হবে। তবে সম্প্রতি প্রাপ্ত খবরে জানা যাচ্ছে, ওভেন ও নিট উভয় পণ্যে ভারতে আমাদের রপ্তানি গেছে কমে। কমার হারটাও অনুল্লেখযোগ্য নয়।

রপ্তানি বাড়তে থাকার সময় আমরা স্বভাবতই আশায় থাকি যে এটা আরও বাড়বে। এ অবস্থায় উল্টো খবর পেলে হতাশ হতে হয়। এর কারণ জানার আগ্রহও বাড়ে। ভারতে পাট ও পাটজাতপণ্যও আমরা রপ্তানি করছি। মার্চে সমাপ্ত ভারতীয় অর্থবছর শেষে যে তথ্য মিলল, সেই অনুযায়ী দেশটিতে আমাদের চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি কিছুটা বেড়েছে অবশ্য। ভারতের বাণিজ্য বিভাগ থেকে পাওয়া এসব তথ্যসংবলিত প্রতিবেদন আমাদের সংবাদমাধ্যমে এসেছে। দেখা যাচ্ছে, গত অর্থবছরে ভারতও বাংলাদেশে রপ্তানি করেছে আগের বছরের চেয়ে কম; বিশেষ করে মার্চে দুই দেশ থেকেই পরস্পরের কাছে রপ্তানি কমেছে অনেকখানি। এ অবস্থায় মোট বাণিজ্য গেছে কমে। ভারতে বাংলাদেশের রপ্তানি কমেছে ৮ দশমিক ৭৪ শতাংশ। আর বাংলাদেশে ভারতের রপ্তানি কমেছে ৯ দশমিক ৪৫ শতাংশ।

গেল বছরের একই সময়ে দেশের একটি বিজনেস ডেইলিতে প্রকাশিত খবরে দেখছি, ২০২২-২৩ অর্থবছরেও দুই দেশের বাণিজ্য কমেছিল ৩১ শতাংশ। সে বছর অবশ্য তৈরি পোশাক রপ্তানি বেড়েছিল ভারতে। এই পণ্য রপ্তানির খবরটা বেশি করে পেতে চাই এ জন্য যে, ভারতে আমাদের রপ্তানির প্রায় ৫০ শতাংশই এখন তৈরি পোশাক। এটা আমাদের প্রধান রপ্তানি পণ্যও বটে। বিশ্ববাজারে ভারত ও বাংলাদেশ এ ক্ষেত্রে আবার পরস্পরের প্রতিযোগী। তা সত্ত্বেও ভারত কিছু তৈরি পোশাক এখান থেকে নিচ্ছে অপেক্ষাকৃত কম দামে পাচ্ছে বলে। বাণিজ্যের এটাই নিয়ম। কম দামে পণ্য জোগাতে পারাটা সক্ষমতাও বটে, যা তৈরি পোশাকে আমরা অর্জন করেছি। এ কারণে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে আমরা আছি ২-৩ নম্বরে। আর রপ্তানি আয়ের ৮০-৮৫ শতাংশই আসছে এখান থেকে। একটি পণ্যে এতটা নির্ভরতা অবশ্য বিপজ্জনক। কোনো কারণে এর রপ্তানিতে ধস নামলে বিপদে পড়ে যাব আমরা।

এ-ও ঠিক, ভারতের মতো তৈরি পোশাকের নতুন নতুন বাজারে আমরা প্রবেশ করছি। এগুলোয় রপ্তানি প্রবৃদ্ধি ভালো। তবে যুক্তরাষ্ট্রের মতো পুরোনো ও বড় বাজারগুলো ধরে রাখতে হবে। ওই সব দেশ হালে মূল্যস্ফীতির শিকার হওয়ায় তাদের তৈরি পোশাকের বাজার কিছুটা সংকুচিত হয়ে এলেও তা আবার ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। মূল্যস্ফীতি কমানোর স্বীকৃত কৌশল প্রয়োগে তারা সিদ্ধহস্ত। এর সুফলও পাচ্ছে।

ভারতও মূল্যস্ফীতি কমিয়ে এনেছে অনেকখানি। অভ্যন্তরীণ পণ্যবাজার শান্ত রাখতে তারা, বিশেষ করে জরুরি খাদ্যশস্য রপ্তানি কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করছে অনেক দিন ধরে। বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের বাণিজ্য যে দুই বছর ধরেই কমছে—তার পেছনে প্রধানত রয়েছে সেখান থেকে আমদানি কমে যাওয়াটা। চাল, গম, ভুট্টা, চিনি, পেঁয়াজ ও মসলার মতো খাদ্যপণ্যে আমরা স্বভাবতই ভারতের ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু ভারত এই তালিকার প্রায় সব কটি পণ্য রপ্তানিই নিরুৎসাহিত করছে। অন্যান্য পণ্য রপ্তানি অবশ্য কমছে ভিন্ন কারণে।

চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত আমরা ভাতের চাল আমদানি করিনি বললেই চলে। তবে গমসহ অন্যান্য খাদ্যপণ্য যথাসম্ভব আমদানি করতে হয়েছে। ভারত থেকে সহজে আনতে ব্যর্থ হওয়ায় এসব আমদানি করতে হয়েছে দূরবর্তী দেশ থেকে। তাতে বেশি সময় লেগেছে;আমদানি ব্যয়ও বেশি। উদাহরণস্বরূপ, চিনির দাম দেশে অনেক দিন থেকেই চড়া। অথচ ভারতে দাম অর্ধেকেরও কম। কিন্তু নিষেধাজ্ঞার কারণে আমরা চিনি আনতে পারছি না ভারত থেকে। আনতে হচ্ছে ব্রাজিলের মতো দূরবর্তী দেশ থেকে। তাতে এর দাম কমানো যাচ্ছে না দফায় দফায় কিছু শুল্ক ছাড় দিয়েও।

সম্প্রতি ‘আজকের পত্রিকা’য় প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেখা গেল, ভারত থেকে সীমান্তপথে আসছে চিনি এবং বস্তা বদলে তা বিক্রি হচ্ছে অনেক বেশি দামে। পাশের দেশে কোনো পণ্য অনেক কম দামে পাওয়া গেলে কিছু লোক এর সুযোগ নেওয়াটা অবশ্য অস্বাভাবিক নয়। চিনি পরিশোধনকারীরাও চোরাচালানের অভিযোগ করে আসছিলেন। এতে তাঁরা ব্যবসা হারাচ্ছেন; সরকারও হারাচ্ছে রাজস্ব। এ অবস্থায় সরকারের দায়িত্ব কেবল চোরাচালান দমন নয়; চিনির বাজার শান্ত রাখা। কোরবানির ঈদ সামনে রেখে মসলার দামও বেড়ে চলেছে।

সম্প্রতি ভারত পেঁয়াজ রপ্তানির অনুমতি দিয়েছে তার ব্যবসায়ীদের। তবে ‘ন্যূনতম দাম’ বেঁধে দেওয়ায় লাভজনকভাবে পেঁয়াজ আনার সুযোগ কমই।

নতুন অর্থবছরেও দেশটি থেকে দ্রুত প্রয়োজনীয় খাদ্যশস্য আনতে আমরা পারব বলে মনে হয় না। এরই মধ্যে চিনি আমদানি ৭০ শতাংশ কমেছে বলে খবরে প্রকাশ। ভারত থেকে ডালজাতীয় পণ্য আমদানিও কমেছে বিপুলভাবে। গত দুই রমজানে আমরা পণ্যবাজারে যে সংকট মোকাবিলা করেছি, সেটা ভারত থেকে সহজে পণ্যসামগ্রী আনা যায়নি বলেও। নজিরবিহীন ডলার-সংকটে পড়েও সামগ্রিকভাবে আমদানি কমাতে বাধ্য হয়েছি আমরা। সেটা অন্যান্য দেশ থেকেও। এ অবস্থায় শিল্পের মেশিনারিজ আর কাঁচামাল আমদানিও কমেছে।

ভারত থেকেও আমরা এসব আমদানি করে থাকি উল্লেখযোগ্যভাবে।

তুলার মতো কাঁচামাল আমদানি হয় সবচেয়ে বেশি। আমাদের সুতা ও বস্ত্র খাত এ জন্য ভারতের ওপর অনেকখানি নির্ভরশীল। জ্বালানি তেল, বিটুমিন, রেল আর বিদ্যুৎ খাতের যন্ত্রপাতিও আমরা কম আনি না ভারত থেকে। খাদ্যপণ্যের তুলনায় ডলারে এসবের আমদানি অনেক বেশি। খাদ্য আমদানি ব্যাহত হলে অবশ্য তা নিয়ে বেশি আলোচনা হয়। সরকারের ওপর চাপ বাড়ে সংকট নিষ্পত্তির। তবে সংকটের তীব্রতা কমিয়ে আনাও সম্ভব হয় না অনেক ক্ষেত্রে। আর এ পরিস্থিতিটাই অনেকখানি প্রতিফলিত হচ্ছে প্রধানত খাদ্য মূল্যস্ফীতিতে। এটা এতই তীব্র যে গবেষণা সংস্থা বিআইডিএসের ডিজি সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে বললেন, রাষ্ট্রীয় সংস্থা বিবিএস এ বিষয়ে যে তথ্য জোগাচ্ছে—পরিস্থিতি তার চেয়ে খারাপ।

ভারত থেকে খাদ্যশস্য আমদানির সুযোগ অনেক কমে যাওয়াটা এতে কতখানি ভূমিকা রেখেছে, সেটাও খতিয়ে দেখা যেতে পারে।

সদ্যসমাপ্ত ভারতীয় অর্থবছর শেষে অবশ্য দেখা যাচ্ছে, দেশটি থেকে এখানে তুলা আমদানি বেড়েছে। জ্বালানি তেল, বিটুমিন, অন্যান্য খনিজ পদার্থ আমদানিও বেড়েছে কিছুটা। এর আগের বছর যে কারণেই হোক–তুলা আমদানি কমে গিয়েছিল অনেক। সেই ঘাটতি পূরণে নিশ্চয়ই বেগ পেতে হয়েছে। আর তুলার মতো কাঁচামালের ঘাটতি তো পূরণ করতেই হবে; নইলে বিকাশমান বস্ত্র খাত পড়বে সংকটে। 
এ খাতে সংকট সৃষ্টির অন্য কারণও রয়েছে। যেমন গ্যাসের ঘাটতি। এ খাতে পানিও লাগে প্রচুর। পানি না হয় শক্তিশালী পাম্প বসিয়ে মাটির অনেক গভীর থেকে তোলা যায়। কিন্তু গ্যাসের চলমান সংকটে এটা মিলবে কোত্থেকে? গ্যাস দিয়ে একই সঙ্গে বিদ্যুৎ আর সারের মতো জরুরি উপকরণও উৎপাদন করা হচ্ছে। গ্যাসের ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে আমদানি হচ্ছে এলএনজি। এটা অবশ্য ভারত থেকে আনা হচ্ছে না। তবে দেশটি থেকে চুক্তির আওতায় আনা হচ্ছে বিদ্যুৎ। এটা নতুন বাস্তবতা। বাণিজ্য কিছুটা কমে এলেও ভারতের সঙ্গে এর প্যাটার্ন বদলাচ্ছে। বাণিজ্য সামনে বাড়বে না, সেটাও বলা যায় না।

কোভিডের সময় এবং এর পরপর বৃহৎ প্রতিবেশী দেশ ভারতের সঙ্গে আমাদের বাণিজ্য অনেক বেড়েছিল। এতে দুই দেশই কমবেশি উপকৃত হয়। এরপর ‘ইউক্রেন যুদ্ধ’ বিশ্ববাণিজ্যকে এতটা এলোমেলো করে দিয়েছে যে তাতে বাংলাদেশ-ভারত বাণিজ্যও হয়েছে প্রভাবিত; বিশেষ করে ভারত নিজের খাদ্যপণ্য বাজারে দৃষ্টি নিবদ্ধ করেছে বেশি। রপ্তানিতে আরোপ করেছে বিধিনিষেধ। এতে তার ওপর নির্ভরশীল অন্যান্য দেশও পড়েছে সংকটে। ভারত তার আমদানিও কিছুটা কমিয়েছে। তাতে আবার রপ্তানি কমেছে আমাদের মতো দেশগুলোর। ভারতে সামান্যই রপ্তানি; সেটাও কমেছে।

মোট বাণিজ্য কমে আসার মধ্যেও ভারতে আমাদের রপ্তানি বাড়লে সেটা হতো সুসংবাদ। দেশটি থেকে শিল্পের উপকরণ আমদানি কমে যাওয়াটাও উদ্বেগজনক। এর আমদানি কমেছে অন্যান্য দেশ থেকেও। এটা দেশে বিনিয়োগ হ্রাসের সংকেত দিচ্ছে। জুনে যে অর্থবছর শেষ হতে চলেছে, তাতে আমাদের প্রবৃদ্ধি অনেকখানি কমে যাওয়ার সঙ্গে রয়েছে এর সম্পর্ক। একই সময়ে উচ্চ মূল্যস্ফীতি বহাল থাকার ঘটনাটি এ পরিস্থিতিকে করে তুলেছে সংকটজনক।

লেখক: সাংবাদিক, বিশ্লেষক

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বিএনপি ছেড়ে আওয়ামী লীগে যোগদানের ঘোষণা কিশোরগঞ্জের আইনজীবীর, ফেসবুকে ঝড়

মার্কিন নিষেধাজ্ঞার পর রাশিয়ার তেল কেনা স্থগিত করল চীন

‘বিএনপি করি, শেখ হাসিনার আদর্শে বিশ্বাসী’: সেই ইউপি সদস্য গ্রেপ্তার

অধস্তন আদালতের বিচারকদের বদলি-পদোন্নতির ক্ষমতা পাচ্ছেন সুপ্রিম কোর্ট

চীনের সহায়তায় বিদ্রোহীদের কাছে হারানো অঞ্চল আবার দখলে নিচ্ছে মিয়ানমার

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেষ সাক্ষীর জেরা চলছে

বাসস, ঢাকা  
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।

আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।

এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।

গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।

পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্‌ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।

মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।

অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।

মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বিএনপি ছেড়ে আওয়ামী লীগে যোগদানের ঘোষণা কিশোরগঞ্জের আইনজীবীর, ফেসবুকে ঝড়

মার্কিন নিষেধাজ্ঞার পর রাশিয়ার তেল কেনা স্থগিত করল চীন

‘বিএনপি করি, শেখ হাসিনার আদর্শে বিশ্বাসী’: সেই ইউপি সদস্য গ্রেপ্তার

অধস্তন আদালতের বিচারকদের বদলি-পদোন্নতির ক্ষমতা পাচ্ছেন সুপ্রিম কোর্ট

চীনের সহায়তায় বিদ্রোহীদের কাছে হারানো অঞ্চল আবার দখলে নিচ্ছে মিয়ানমার

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পাওয়ার আশায় সাগরে জেলেরা

  • এবার ভারতের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নিষেধাজ্ঞা দেয় সরকার।
  • গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলে পল্লিগুলোতে ব্যস্ততা।
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।

মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।

বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’

জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’

নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’

সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’

পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।

কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।

একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।

কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।

[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বিএনপি ছেড়ে আওয়ামী লীগে যোগদানের ঘোষণা কিশোরগঞ্জের আইনজীবীর, ফেসবুকে ঝড়

মার্কিন নিষেধাজ্ঞার পর রাশিয়ার তেল কেনা স্থগিত করল চীন

‘বিএনপি করি, শেখ হাসিনার আদর্শে বিশ্বাসী’: সেই ইউপি সদস্য গ্রেপ্তার

অধস্তন আদালতের বিচারকদের বদলি-পদোন্নতির ক্ষমতা পাচ্ছেন সুপ্রিম কোর্ট

চীনের সহায়তায় বিদ্রোহীদের কাছে হারানো অঞ্চল আবার দখলে নিচ্ছে মিয়ানমার

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ভারতের নিষেধাজ্ঞা: স্থলবন্দর থেকে ফেরত আসছে রপ্তানি পণ্য

  • ক্রয়াদেশের চালান নিয়ে বাড়ছে দুশ্চিন্তা
  • সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষা
  • আজ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ডেকেছে জরুরি বৈঠক
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২০ মে ২০২৫, ০২: ৪৪
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।

ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।

গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।

বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।

জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’

বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।

এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।

স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।

সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।

আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।

এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বিএনপি ছেড়ে আওয়ামী লীগে যোগদানের ঘোষণা কিশোরগঞ্জের আইনজীবীর, ফেসবুকে ঝড়

মার্কিন নিষেধাজ্ঞার পর রাশিয়ার তেল কেনা স্থগিত করল চীন

‘বিএনপি করি, শেখ হাসিনার আদর্শে বিশ্বাসী’: সেই ইউপি সদস্য গ্রেপ্তার

অধস্তন আদালতের বিচারকদের বদলি-পদোন্নতির ক্ষমতা পাচ্ছেন সুপ্রিম কোর্ট

চীনের সহায়তায় বিদ্রোহীদের কাছে হারানো অঞ্চল আবার দখলে নিচ্ছে মিয়ানমার

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।

১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।

গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।

সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?

১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।

ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বিএনপি ছেড়ে আওয়ামী লীগে যোগদানের ঘোষণা কিশোরগঞ্জের আইনজীবীর, ফেসবুকে ঝড়

মার্কিন নিষেধাজ্ঞার পর রাশিয়ার তেল কেনা স্থগিত করল চীন

‘বিএনপি করি, শেখ হাসিনার আদর্শে বিশ্বাসী’: সেই ইউপি সদস্য গ্রেপ্তার

অধস্তন আদালতের বিচারকদের বদলি-পদোন্নতির ক্ষমতা পাচ্ছেন সুপ্রিম কোর্ট

চীনের সহায়তায় বিদ্রোহীদের কাছে হারানো অঞ্চল আবার দখলে নিচ্ছে মিয়ানমার

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত