Ajker Patrika

গরুর চর্মরোগ বিস্তার দুশ্চিন্তায় খামারিরা

নুরুল আলম, মিরসরাই (চট্টগ্রাম) 
আপডেট : ০৪ ডিসেম্বর ২০২১, ১৩: ২৯
গরুর চর্মরোগ বিস্তার দুশ্চিন্তায় খামারিরা

চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে ভয়াবহভাবে ছড়িয়ে পড়ছে গরুর ভাইরাসজনিত রোগ লাম্পি স্কিন ( চর্মরোগ)। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি ইউনিয়নে ধরা পড়েছে রোগটি। এতে খামারি ও কৃষকের কপালে পড়েছে দুশ্চিন্তার ভাঁজ।

সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় প্রায় ছয় হাজার গরু লাম্পি স্কিনে আক্রান্ত হয়েছে। চারটি মারা গেছে। মিরসরাইয়ে ১৮ হাজার টিকা প্রয়োজন হলেও উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর জেলা থেকে পেয়েছে মাত্র ২ হাজার ৮০০ টিকা।

অভিযোগ রয়েছে সঠিক সময়ে গবাদিপশুকে টিকা না দেওয়ায় ভাইরাসজনিত লাম্পি স্কিন রোগ ছড়িয়ে পড়ছে।

মিরসরাই উপজেলায় গত কয়েক বছরে গ্রামে গ্রামে গড়ে উঠেছে গবাদিপশুর খামার। অনেকেই চাকরির পেছনে না ছুটে সরকারি প্রশিক্ষণ নিয়ে নিজ উদ্যোগে খামার গড়ে তুলেছেন। তাঁদের বেশির ভাগই তরুণ উদ্যোক্তা। লাম্পি স্কিন রোগে তাঁদের কপালে এখন দুশ্চিন্তার ভাঁজ পড়েছে।

লাম্পি স্কিনের বিস্তার রোধে মিরসরাই উপজেলায় মাঠপর্যায়ে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ ও গবেষণার কাজ করেছেন বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিএলআরআই) ও প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তারা।

মিরসরাই উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯ সালের জুলাই ও আগস্ট মাসে চট্টগ্রাম জেলার বিভিন্ন উপজেলায় প্রথম শনাক্ত হয় গরুর লাম্পি স্কিন রোগ। সেই বছর মিরসরাই উপজেলায় ১০ হাজার গরু আক্রান্ত হয় এ রোগে।

এরপর এক বছর বিরতি দিয়ে উপজেলায় এ বছর আবার দেখা দিয়েছে লাম্পি স্কিন রোগ। এর মধ্যে মিরসরাইয়ের মায়ানী, মঘাদিয়া, মিঠানালা, ওয়াহেদপুর, দুর্গাপুর ইউনিয়নে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে রোগটি। গত ১৫ দিনে এ রোগে আক্রান্ত হয়ে মঘাদিয়া ইউনিয়নে দুটি ও মিঠানালা ইউনিয়নে দুটি গরুর মৃত্যু হয়েছে। আক্রান্তের হার দ্রুত বাড়ায় কৃষক ও খামারিদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ছে আতঙ্ক।

উপজেলার মঘাদিয়া ও মিঠানালা ইউনিয়ন ঘুরে দেখা গেছে, কৃষক ও খামারিরা লাম্পি স্কিনে আক্রান্ত গরুর চিকিৎসা করাচ্ছেন। যাঁদের গরু আক্রান্ত হয়নি, তাঁরা বাড়তি যত্ন নিচ্ছেন।

মিঠানালা ইউনিয়নের মধ্যম মুরাদপুর গ্রামের কৃষক মো. আবুল বাশার বলেন, ‘লাভের আশায় একটি ষাঁড় কিনেছিলাম। ৬ অক্টোবর ষাঁড়টি লাম্পি স্কিন রোগে আক্রান্ত হয়। গত ১৬ অক্টোবর তাঁর ১ লাখ টাকা দামের ষাঁড়টি মারা যায়।’

উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. শ্যামল চন্দ্র পোদ্দার বলেন, ‘লাম্পি স্কিন রোগ নিরাময়ের জন্য মাঠপর্যায়ে কৃষক ও খামারিদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। প্রতিটি ইউনিয়নে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের একটি করে দল কাজ করছে। ‘উপজেলায় প্রায় ৬ হাজার গরু এ রোগে আক্রান্ত হয়েছে। বর্তমানে ১৮ হাজার টিকা প্রয়োজন। আমরা জেলা অফিসের মাধ্যমে অধিদপ্তরে চাহিদাপত্র পাঠিয়েছে। এ পর্যন্ত ২ হাজার ৮০০ টিকা পেয়েছি।’

ডা. শ্যামল চন্দ্র পোদ্দার জানান, খামার পরিষ্কার রাখলে এ রোগ ছড়ায় কম। গরুর গোবর নিয়মিত পরিষ্কার না করা হলে এবং মেঝে স্যাঁতসেঁতে থাকলে সেখানে মশার মতো ছোট ছোট পোকা জন্ম নেয়। ওই পোকাগুলো গরুর শরীরে যেখানে কামড় দেয়, সেখানে ফুলে চাকা চাকা হয়ে যায়; যা ‘লাম্পি স্কিন রোগ’ নামে পরিচিত। অনেক সময় তা ফেটে রক্ত বের হয়। চামড়া ফুটো হয়ে যায়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত