Ajker Patrika

ফুটেছে সুগন্ধি নাগলিঙ্গম

চয়ন বিকাশ ভদ্র
আপডেট : ১৮ এপ্রিল ২০২২, ০৯: ০২
ফুটেছে সুগন্ধি নাগলিঙ্গম

ময়মনসিংহ শহরের শশী লজের পেছনে গাছের কাণ্ড থেকে বের হয়ে এসেছে সাদা, লালহলুদের মিশ্রণে উজ্জ্বল বড় বড় ফুল। গাছের নিচ দিয়ে যাওয়ার সময় এর সুগন্ধ নাকে এসে লাগে। ফুলটির রং, মিষ্টি গন্ধ, পাপড়ির বিন্যাস মুগ্ধ করার মতো। নাগের ফণার মতো বাঁকানো এর পরাগচক্র। ঠিক এমনটি আমাদের দেশের অন্য কোনো ফুলে নেই। পরাগদণ্ড সাদা কিংবা ম্লান গোলাপি ও মাংসল এবং প্রান্ত গর্ভমুণ্ডের ওপর উদ্যত। পাপড়ি ছয়টি ও পুরু।

পরাগদণ্ডের শেষে অজস্র পুংকেশর রয়েছে। শুরুতে আরও অসংখ্য যেসব মৃদু হলুদ পুংকেশর আছে, সেগুলো বন্ধ্যা। গাছে সারা বছর ফুল ফোটে। তবে বসন্ত ও গ্রীষ্মে ফুল ফোটে বেশি। যেসব গাছে ফল হয় না, সেসব গাছে সব সময়ই ফুল ফোটে। গ্রীষ্মকাল পাতা ঝরার সময়, কিন্তু বছরে কয়েকবারই পাতা ঝরে, পাতা গজায়। মঞ্জরিদণ্ডে একটির পর একটি ফুল ফুটতে থাকে। গাছের চারপাশে ঘিরে থাকে মৌমাছি, প্রজাপতি ও বিভিন্ন পতঙ্গ। ফল গোলাকৃতির, মাংসল, বড় ও বাদামি রঙের। ফল কামানের গোলার মতো বড় হয় বলে এই উদ্ভিদকে ইংরেজিতে ক্যানন বল ট্রি বা কামানের গোলার গাছ। গাছের প্রতিটি ফলে ২০০ থেকে ৩০০ পর্যন্ত বীজ থাকে।

এতক্ষণ যে বৃক্ষ ও ফুলের কথা বলা হলো, সেটি সুউচ্চ চিরসবুজ নাগলিঙ্গম। এই উদ্ভিদের বৈজ্ঞানিক নাম কুরুপিটা গুইয়ানেনসিস। এটি লেসাইথিডেসি পরিবারের সদস্য।

শিবমন্দিরে নাগলিঙ্গম গাছের বিশেষ কদর আছে। হিন্দুধর্মাবলম্বীরা শিবপূজায় নাগলিঙ্গম ফুল ব্যবহার করে। এমনকি এই গাছকে ভারতে শিব কামান নামে ডাকা হয়। বৌদ্ধমন্দিরগুলোতে নাগলিঙ্গম যত্নে রোপণ করা হয়। এ কারণে থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা, মিয়ানমারের বৌদ্ধমন্দির প্রাঙ্গণে নাগলিঙ্গমের গাছ বেশি দেখা যায়।

দক্ষিণ আমেরিকার উষ্ণমণ্ডল নাগলিঙ্গমের আদি নিবাস। ঢাকার বলধা গার্ডেন, রমনা পার্ক, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, বোটানিক্যাল গার্ডেন, জাতীয় স্মৃতিসৌধ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হলের বাগানে, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, নটর ডেম কলেজে, কিশোরগঞ্জে আজিমুদ্দিন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পেছনে, ময়মনসিংহে শশী লজের দক্ষিণ পাশে পুকুরপাড়ে দুটি এবং পশ্চিম পাশে দুটি নাগলিঙ্গমের গাছ আছে। এ ছাড়া বরিশালের সরকারি ব্রজমোহন কলেজ, ময়মনসিংহের মুক্তাগাছার জলটঙ্গি পুকুরপাড়ে, গাজীপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয় এবং শ্রীমঙ্গলের বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউটে বৃক্ষটি রয়েছে। ২০১২ সালে ভারতের কেরালার ত্রিবান্দ্রাম চিড়িয়াখানায় নাগলিঙ্গমগাছ দেখেছি।

হাতির পেটের অসুখের প্রতিষেধক হিসেবে ওই গাছের কচি পাতা কার্যকর ভূমিকা রাখত বলে জানা যায়। গাছের কাণ্ডে ফুল ফোটে। ফলের গায়ের রং সফেদার মতো। বাংলাদেশের অনেকেই গাছটির ফল সংগ্রহ করে এর বীজ থেকে চারা উৎপাদনের চেষ্টা করেছেন, কিন্তু কোনো চারা গজায়নি। ফলের ওজন প্রায় দুই কেজি। দেখতে সুন্দর হলেও ফলের স্বাদ খুবই তিতা। পশু–পাখিও এ ফল খায় না। দুর্লভ নাগলিঙ্গমগাছের ব্যাপক ঔষধি গুণ রয়েছে।

স্বাভাবিক নিয়মে বীজ থেকে চারা উৎপন্ন হওয়ার কথা থাকলেও প্রচণ্ড উষ্ণ অঞ্চলের গাছ বলে এই গাছের বীজ এ দেশে অঙ্কুরিত হয় না।

এই বৃক্ষের ফুল, পাতা ও বাকলের নির্যাস অ্যান্টিবায়োটিক, অ্যান্টিফাঙ্গাস ও অ্যান্টিসেপটিক হিসেবে ব্যবহৃত হয়। পেটের অসুখ দূরীকরণে এর জুড়ি নেই। পাতা থেকে উৎপন্ন রস ত্বকের সমস্যা দূরীকরণে খুবই কার্যকর। চর্মরোগ ও কাটাছেঁড়ায় নাগলিঙ্গমের রসে উপকার পাওয়া যায়। দক্ষিণ আমেরিকায় এর পাতা ম্যালেরিয়া রোগ নিরাময়ে ব্যবহার করে থাকে। ফলের শক্ত খোলস অলংকার বা বিভিন্ন দ্রব্য বহনে ব্যবহার করা হয়।

লেখক: সহযোগী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান, উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগ, মুমিনুন্নিসা সরকারি মহিলা কলেজ, ময়মনসিংহ

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ফরিদপুরে পালিয়ে যাওয়া আ.লীগ নেতা গ্রেপ্তার, থানার ওসিকে বদলি

আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করায় ভারতের উদ্বেগ

কাতারের রাজপরিবারের দেওয়া বিলাসবহুল বিমান না নেওয়াটা বোকামি: ট্রাম্প

সৌদি আরবের সঙ্গে ১৪২ বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র বিক্রির চুক্তি করে নিজের রেকর্ড ভাঙল যুক্তরাষ্ট্র

পুলিশ হত্যাকারী ফোর্স হতে পারে না: আইজিপি

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত