জাহীদ রেজা নূর

চলে গেলেন অর্থনীতিবিদ নুরুল ইসলাম। তাঁকে অর্থনীতিবিদদের অর্থনীতিবিদ কিংবা শিক্ষকদের শিক্ষক বলা হতো। রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দেওয়া ছয় দফা আন্দোলন। সেই আন্দোলন এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে যাঁরা অর্থনৈতিক বিষয়বস্তুর চুলচেরা হিসাব-নিকাশ করেছিলেন, নুরুল ইসলাম ছিলেন তাঁদের মধ্য অগ্রগণ্য। বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করার পর প্রথম যে পরিকল্পনা কমিশন হয়েছিল, নুরুল ইসলাম ছিলেন তার ডেপুটি চেয়ারম্যান। কমিশনের চেয়ারম্যান ছিলেন প্রধানমন্ত্রী, তাই এটাই ছিল কমিশনের সর্বোচ্চ পদ।
১৯৬৬ সালে ছয় দফা পেশ করেছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান। সে সময় ছয় দফা প্রসারে মূলত ছাত্রলীগ ও ইত্তেফাক পালন করেছিল মুখ্য ভূমিকা। আন্দোলন যতই তীব্র হয়েছে, ততই বিষয়টি নিয়ে পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণের প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। অর্থনীতিবিদেরা বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে মিলে পুরোদমে কাজ করেছেন মূলত ১৯৬৯ সাল থেকে। ছয় দফার বিশ্লেষণ, সত্তরের নির্বাচনের ইশতেহার তৈরি, ১৯৭১ সালের অসহযোগ আন্দোলনের নির্দেশমালা তৈরি, পাকিস্তানের সম্ভাব্য সংবিধান তৈরির ব্যাপারে আলোচনা করা ইত্যাদি বিষয়ে এই অর্থনীতিবিদেরা অবদান রেখেছেন।
আমাদের সৌভাগ্য, অন্য অনেক লেখালেখির মধ্যে নুরুল ইসলাম সে সময়টি এবং বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে একটি ক্ষুদ্র পুস্তিকা রচনা করে গেছেন। বাংলাদেশ নিয়ে নুরুল ইসলামের কার্যক্রম তাতে ধরা পড়েছে। বাংলাদেশ নিয়ে তাঁর আরও তিনটি উল্লেখযোগ্য বই আছে। সেগুলোর নাম এখানে বলা যেতে পারে। ‘মেকিং অব আ নেশন বাংলাদেশ: অ্যান ইকোনমিস্টস টেল’, ‘ডেভেলপমেন্ট প্ল্যানিং ইন বাংলাদেশ: আ স্টাডি ইন পলিটিক্যাল ইকোনমি’, ‘অ্যান ওডেসি: দ্য জার্নি অব মাই লাইফ’। এই বইগুলোয় বিস্তারিতভাবে নুরুল ইসলামের ভাবনার নাগাল পাওয়া যাবে।
আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা থেকে বঙ্গবন্ধু বের হওয়ার পর থেকেই মূলত অর্থনীতিবিদেরা ছয় দফা কর্মসূচির পক্ষে কাজ করতে শুরু করেন। তৎকালীন পাকিস্তান স্টেট ব্যাংকের গভর্নর এম রশিদ একটি বার্তা দিয়ে নুরুল ইসলামকে জানান, যত শিগগির সম্ভব নুরুল ইসলামকে ঢাকায় গিয়ে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে দেখা করতে বলেছেন বঙ্গবন্ধু। পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের অর্থনৈতিক বিষয় নিয়ে নুরুল ইসলামের তৎপরতার কথা বঙ্গবন্ধু জানতেন। বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে দেখা হওয়ার পর তিনি নুরুল ইসলামকে বললেন, এখন তাঁর পাশে বেশ কিছু বিশেষজ্ঞ প্রয়োজন, স্বাধিকার দাবি ও ছয় দফাকে জোরালো করার ব্যাপারে যাঁরা অবদান রাখতে পারেন।আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ইশতেহার রচনায় অর্থনৈতিক বিষয়গুলো দেখার কথাও তিনি বলেন।
ছয় দফা কর্মসূচির মূল বিষয়গুলো সম্প্রসারণের কাজটি যাঁদের হাতে দেওয়া হয়েছিল, তাঁদের একজন ছিলেন নুরুল ইসলাম। ১৯৭০ সালের নভেম্বর থেকে ১৯৭১ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু ও তাঁর ঊর্ধ্বতন সহকর্মীদের তত্ত্বাবধানে বিশেষজ্ঞদের কাজটি গোপনে শেষ করে ফেলার কথা ছিল। এ সময় ছয় দফা নিয়ে আলোচনায় দেখা গেছে, অনেক ব্যাপারেই খন্দকার মোশতাক আহমেদ একমত নন। তিনি খুব বেশি প্রশ্ন করতেন। ১৯৭১ সালের জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারির দিকে পাকিস্তানের লাহোরের একটি পত্রিকায় ছয় দফার মূল বিষয়গুলো ছাপা হলে সবাই অবাক হন। এগুলো ছিল গোপন বিষয়। এই খসড়ার অনুলিপি সংরক্ষিত থাকত ড. কামাল হোসেনের কাছে। পরিচালনা কমিটির সদস্য রাজনীতিবিদেরা সেটা কিছু সময়ের জন্য ধার নিতে পারতেন। সবচেয়ে ঘন ঘন ধার নিতেন খন্দকার মোশতাক আহমেদ। যখন ফাঁস হয় পত্রিকায়, তখন মোশতাকের হাতে এই খসড়ার একটি অনুলিপি ছিল। নুরুল ইসলামসহ অনেকেই এই ফাঁসের ব্যাপারে মোশতাককেই সন্দেহ করেছিলেন।
ছয় দফার পুরোটা ফাঁস হয়ে যাওয়ায় অন্য অনেকের মতো নুরুল ইসলামও খুব অখুশি হন। এখন পশ্চিম পাকিস্তানিরা আগেই পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে ছয় দফার বিষয়ে জেনে যাওয়ায় সংঘবদ্ধভাবে বিরোধিতা করতে পারবে। ড. কামাল হোসেন আর রেহমান সোবহানকে নিয়ে নুরুল ইসলাম বঙ্গবন্ধুর কাছে যান, বিষয়টির ভয়াবহতার কথা বলেন। বঙ্গবন্ধু বিষয়টিকে নিজের রাজনৈতিক জীবনের ঝুঁকি হিসেবে গ্রহণ করেন এবং আশ্বাস দেন যে বিষয়টি তিনি খতিয়ে দেখবেন।
দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বঙ্গবন্ধু দেশে ফিরলেন। নুরুল ইসলামকে বললেন পরিকল্পনা কমিশন গঠন করতে। পাকিস্তানের শেষের দিকে যাঁরা অর্থনৈতিক বিষয়ে কাজ করেছিলেন, তাঁদের নিয়েই কমিশনটি করতে বললেন। কমিশনের ডেপুটি চেয়ারম্যান হলেন নুরুল ইসলাম। সঙ্গে থাকলেন রেহমান সোবহান, আনিসুর রহমান এবং মুক্তিযুদ্ধের সময় মুজিবনগর সরকারের পরিকল্পনা বিভাগে কাজ করা মোশারফ হোসেন।
পরিকল্পনা কমিশনের কাজ নানাভাবে বাধাগ্রস্ত হয়েছিল। ১৯৭৩ সালে পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা প্রণয়নের কাজ চূড়ান্ত হলে কমিশনের সদস্যরা একমত হন যে এভাবে কাজে সাফল্য আসবে না। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কমিশনের সন্তোষজনক সম্পর্ক ছিল না। দেশের উন্নয়নের জন্য জরুরি ভিত্তিতে যে পদক্ষেপ নেওয়ার দরকার ছিল বলে মনে করতেন কমিশনের লোকেরা, রাজনীতিবিদ আর আমলারা সেগুলোর সঙ্গে পুরোপুরি একমত পোষণ করতেন না। ফলে কমিশন অর্থহীন হয়ে পড়েছিল। ফলে বিদায়ের কথা ভাবছিলেন কমিশনের প্রায় সব সদস্যই। বঙ্গবন্ধুর কাছে গিয়ে নুরুল ইসলাম বলেছিলেন, এখন উপযুক্ত অর্থনীতিবিদ ও আমলারা মিলে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করুক। কমিশনের আর প্রয়োজন নেই। প্রয়োজন পড়লে কমিশনের সদস্যরা অবশ্যই অনানুষ্ঠানিকভাবে পরামর্শ দেবেন, কমিশনের সদস্য বা সরকারের কর্মকর্তা হিসেবে নয়।
কিন্তু বঙ্গবন্ধু তাঁদের কথা একেবারেই শুনতে চাইলেন না। তিনি মনে করলেন, সবে পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার কাজ শুরু হয়েছে, বাংলাদেশ সরকার সংগঠিত হতে শুরু করেছে—এ সময় কমিশন ছেড়ে যাওয়া ঠিক হবে না।
১৯৭২ ও ১৯৭৩ সালে ব্যাপক ফসলহানি ঘটেছিল দেশে। ১৯৭৪ সালেও একই রকম অবস্থা হওয়ায় খাদ্য মজুত করার প্রবণতা বেড়ে যায়। মজুতের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তোলার দরকার ছিল সে সময়। খাদ্যশস্য মজুত না করার আহ্বান জানানো দরকার ছিল। নুরুল ইসলাম ভাবতেন, মজুতদারির বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধুরই বিভিন্ন অঞ্চলে গিয়ে বক্তৃতা দেওয়া দরকার। কিন্তু তিনি জানতেন না, সর্বজনের স্বার্থের খাতিরে কিংবা জরিমানা বা হুমকি দিয়ে ব্যক্তিস্বার্থপরতা বা নিজের ব্যক্তিগত প্রয়োজন বিসর্জন করানো বা লাভজনক মজুত করার প্রবণতা রোধ করতে পারে না।
নিজের প্রস্তাব নিয়ে ১৯৭৪ সালের মাঝামাঝি বঙ্গবন্ধুর কাছে গেলে বঙ্গবন্ধু বিমর্ষচিত্তে বলেছিলেন, ‘আপনি বাংলাদেশের মানুষকে চেনেন না। বহু বছর ধরে আমি তাদের সঙ্গে থেকেছি। আমি এদের খুব ভালো করেই চিনি। এরা ক্ষমা করবে না। যদি আপনি একবার ভুল করেন বা ব্যর্থ হন, তাহলে আপনার সারা জীবন তাদের জন্য যা করেছেন, সব বৃথা হয়ে যাবে।’
যাই হোক, আরেকটি ঘটনার উল্লেখ করা অপ্রাসঙ্গিক হবে না। ১৯৭৩ সালের শেষ দিক থেকেই বঙ্গবন্ধু আমলাতন্ত্রের ছলাকলা সম্পর্কে মোটামুটি জ্ঞান লাভ করেছিলেন। সে সময় বঙ্গবন্ধুর নির্দেশও ঠিকভাবে পালন করছিলেন না আমলারা। এ নিয়ে তিনি ক্রুদ্ধ ছিলেন। নুরুল ইসলাম গিয়েছিলেন কমিশনের কোনো এক কাজে। সিভিল সার্ভিসের সাবেক এক সদস্যকে ডেকে বঙ্গবন্ধু তাঁর নির্দেশ পালনে দেরি হচ্ছে কেন, তা খুঁজে বের করতে বললেন। তারপর নুরুল ইসলামের দিকে ফিরে বললেন, ‘ছোট লাঠি (ব্যাটন) হাতে শর্ট-প্যান্ট পরা আর ইংরেজি বলা (পাকিস্তানি) সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেনদের আদেশ এই আমলারা অবিলম্বে পালন করত। পাঞ্জাবি-পায়জামার মতো সাধারণ পোশাকের রাজনীতিবিদ, যারা বাংলায় কথা বলে আর মাঝে মাঝে পান চিবোয়, তাদের কথায় এরা মনোযোগ দিতে চায় না। সেনাবাহিনীর সেই সব ক্যাপ্টেন আবার ক্ষমতা নিয়ে শাসন করলেই এরা খুশি হবে।’
কথাগুলো যে কতটা অন্তর্ভেদী ছিল, সেটা নুরুল ইসলাম অনুভব করেছেন পরে। শারীরিক অসুস্থতার কারণে বঙ্গবন্ধু ১৯৭৫ সালের জানুয়ারি থেকে এক বছরের জন্য নুরুল ইসলামের ছুটি মঞ্জুর করেছিলেন। কিন্তু মার্চের ১৯ তারিখেই বঙ্গবন্ধু চিঠি লিখেছিলেন, নুরুল ইসলাম যেন যত দ্রুত সম্ভব আগের দায়িত্ব বুঝে নেন। কিন্তু সেই সুযোগ আর আসেনি নুরুল ইসলামের জীবনে। এর আগেই বাংলার ইতিহাসের নৃশংসতম হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটি ঘটে যায়।
লেখক: উপসম্পাদক, আজকের পত্রিকা

চলে গেলেন অর্থনীতিবিদ নুরুল ইসলাম। তাঁকে অর্থনীতিবিদদের অর্থনীতিবিদ কিংবা শিক্ষকদের শিক্ষক বলা হতো। রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দেওয়া ছয় দফা আন্দোলন। সেই আন্দোলন এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে যাঁরা অর্থনৈতিক বিষয়বস্তুর চুলচেরা হিসাব-নিকাশ করেছিলেন, নুরুল ইসলাম ছিলেন তাঁদের মধ্য অগ্রগণ্য। বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করার পর প্রথম যে পরিকল্পনা কমিশন হয়েছিল, নুরুল ইসলাম ছিলেন তার ডেপুটি চেয়ারম্যান। কমিশনের চেয়ারম্যান ছিলেন প্রধানমন্ত্রী, তাই এটাই ছিল কমিশনের সর্বোচ্চ পদ।
১৯৬৬ সালে ছয় দফা পেশ করেছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান। সে সময় ছয় দফা প্রসারে মূলত ছাত্রলীগ ও ইত্তেফাক পালন করেছিল মুখ্য ভূমিকা। আন্দোলন যতই তীব্র হয়েছে, ততই বিষয়টি নিয়ে পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণের প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। অর্থনীতিবিদেরা বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে মিলে পুরোদমে কাজ করেছেন মূলত ১৯৬৯ সাল থেকে। ছয় দফার বিশ্লেষণ, সত্তরের নির্বাচনের ইশতেহার তৈরি, ১৯৭১ সালের অসহযোগ আন্দোলনের নির্দেশমালা তৈরি, পাকিস্তানের সম্ভাব্য সংবিধান তৈরির ব্যাপারে আলোচনা করা ইত্যাদি বিষয়ে এই অর্থনীতিবিদেরা অবদান রেখেছেন।
আমাদের সৌভাগ্য, অন্য অনেক লেখালেখির মধ্যে নুরুল ইসলাম সে সময়টি এবং বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে একটি ক্ষুদ্র পুস্তিকা রচনা করে গেছেন। বাংলাদেশ নিয়ে নুরুল ইসলামের কার্যক্রম তাতে ধরা পড়েছে। বাংলাদেশ নিয়ে তাঁর আরও তিনটি উল্লেখযোগ্য বই আছে। সেগুলোর নাম এখানে বলা যেতে পারে। ‘মেকিং অব আ নেশন বাংলাদেশ: অ্যান ইকোনমিস্টস টেল’, ‘ডেভেলপমেন্ট প্ল্যানিং ইন বাংলাদেশ: আ স্টাডি ইন পলিটিক্যাল ইকোনমি’, ‘অ্যান ওডেসি: দ্য জার্নি অব মাই লাইফ’। এই বইগুলোয় বিস্তারিতভাবে নুরুল ইসলামের ভাবনার নাগাল পাওয়া যাবে।
আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা থেকে বঙ্গবন্ধু বের হওয়ার পর থেকেই মূলত অর্থনীতিবিদেরা ছয় দফা কর্মসূচির পক্ষে কাজ করতে শুরু করেন। তৎকালীন পাকিস্তান স্টেট ব্যাংকের গভর্নর এম রশিদ একটি বার্তা দিয়ে নুরুল ইসলামকে জানান, যত শিগগির সম্ভব নুরুল ইসলামকে ঢাকায় গিয়ে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে দেখা করতে বলেছেন বঙ্গবন্ধু। পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের অর্থনৈতিক বিষয় নিয়ে নুরুল ইসলামের তৎপরতার কথা বঙ্গবন্ধু জানতেন। বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে দেখা হওয়ার পর তিনি নুরুল ইসলামকে বললেন, এখন তাঁর পাশে বেশ কিছু বিশেষজ্ঞ প্রয়োজন, স্বাধিকার দাবি ও ছয় দফাকে জোরালো করার ব্যাপারে যাঁরা অবদান রাখতে পারেন।আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ইশতেহার রচনায় অর্থনৈতিক বিষয়গুলো দেখার কথাও তিনি বলেন।
ছয় দফা কর্মসূচির মূল বিষয়গুলো সম্প্রসারণের কাজটি যাঁদের হাতে দেওয়া হয়েছিল, তাঁদের একজন ছিলেন নুরুল ইসলাম। ১৯৭০ সালের নভেম্বর থেকে ১৯৭১ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু ও তাঁর ঊর্ধ্বতন সহকর্মীদের তত্ত্বাবধানে বিশেষজ্ঞদের কাজটি গোপনে শেষ করে ফেলার কথা ছিল। এ সময় ছয় দফা নিয়ে আলোচনায় দেখা গেছে, অনেক ব্যাপারেই খন্দকার মোশতাক আহমেদ একমত নন। তিনি খুব বেশি প্রশ্ন করতেন। ১৯৭১ সালের জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারির দিকে পাকিস্তানের লাহোরের একটি পত্রিকায় ছয় দফার মূল বিষয়গুলো ছাপা হলে সবাই অবাক হন। এগুলো ছিল গোপন বিষয়। এই খসড়ার অনুলিপি সংরক্ষিত থাকত ড. কামাল হোসেনের কাছে। পরিচালনা কমিটির সদস্য রাজনীতিবিদেরা সেটা কিছু সময়ের জন্য ধার নিতে পারতেন। সবচেয়ে ঘন ঘন ধার নিতেন খন্দকার মোশতাক আহমেদ। যখন ফাঁস হয় পত্রিকায়, তখন মোশতাকের হাতে এই খসড়ার একটি অনুলিপি ছিল। নুরুল ইসলামসহ অনেকেই এই ফাঁসের ব্যাপারে মোশতাককেই সন্দেহ করেছিলেন।
ছয় দফার পুরোটা ফাঁস হয়ে যাওয়ায় অন্য অনেকের মতো নুরুল ইসলামও খুব অখুশি হন। এখন পশ্চিম পাকিস্তানিরা আগেই পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে ছয় দফার বিষয়ে জেনে যাওয়ায় সংঘবদ্ধভাবে বিরোধিতা করতে পারবে। ড. কামাল হোসেন আর রেহমান সোবহানকে নিয়ে নুরুল ইসলাম বঙ্গবন্ধুর কাছে যান, বিষয়টির ভয়াবহতার কথা বলেন। বঙ্গবন্ধু বিষয়টিকে নিজের রাজনৈতিক জীবনের ঝুঁকি হিসেবে গ্রহণ করেন এবং আশ্বাস দেন যে বিষয়টি তিনি খতিয়ে দেখবেন।
দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বঙ্গবন্ধু দেশে ফিরলেন। নুরুল ইসলামকে বললেন পরিকল্পনা কমিশন গঠন করতে। পাকিস্তানের শেষের দিকে যাঁরা অর্থনৈতিক বিষয়ে কাজ করেছিলেন, তাঁদের নিয়েই কমিশনটি করতে বললেন। কমিশনের ডেপুটি চেয়ারম্যান হলেন নুরুল ইসলাম। সঙ্গে থাকলেন রেহমান সোবহান, আনিসুর রহমান এবং মুক্তিযুদ্ধের সময় মুজিবনগর সরকারের পরিকল্পনা বিভাগে কাজ করা মোশারফ হোসেন।
পরিকল্পনা কমিশনের কাজ নানাভাবে বাধাগ্রস্ত হয়েছিল। ১৯৭৩ সালে পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা প্রণয়নের কাজ চূড়ান্ত হলে কমিশনের সদস্যরা একমত হন যে এভাবে কাজে সাফল্য আসবে না। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কমিশনের সন্তোষজনক সম্পর্ক ছিল না। দেশের উন্নয়নের জন্য জরুরি ভিত্তিতে যে পদক্ষেপ নেওয়ার দরকার ছিল বলে মনে করতেন কমিশনের লোকেরা, রাজনীতিবিদ আর আমলারা সেগুলোর সঙ্গে পুরোপুরি একমত পোষণ করতেন না। ফলে কমিশন অর্থহীন হয়ে পড়েছিল। ফলে বিদায়ের কথা ভাবছিলেন কমিশনের প্রায় সব সদস্যই। বঙ্গবন্ধুর কাছে গিয়ে নুরুল ইসলাম বলেছিলেন, এখন উপযুক্ত অর্থনীতিবিদ ও আমলারা মিলে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করুক। কমিশনের আর প্রয়োজন নেই। প্রয়োজন পড়লে কমিশনের সদস্যরা অবশ্যই অনানুষ্ঠানিকভাবে পরামর্শ দেবেন, কমিশনের সদস্য বা সরকারের কর্মকর্তা হিসেবে নয়।
কিন্তু বঙ্গবন্ধু তাঁদের কথা একেবারেই শুনতে চাইলেন না। তিনি মনে করলেন, সবে পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার কাজ শুরু হয়েছে, বাংলাদেশ সরকার সংগঠিত হতে শুরু করেছে—এ সময় কমিশন ছেড়ে যাওয়া ঠিক হবে না।
১৯৭২ ও ১৯৭৩ সালে ব্যাপক ফসলহানি ঘটেছিল দেশে। ১৯৭৪ সালেও একই রকম অবস্থা হওয়ায় খাদ্য মজুত করার প্রবণতা বেড়ে যায়। মজুতের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তোলার দরকার ছিল সে সময়। খাদ্যশস্য মজুত না করার আহ্বান জানানো দরকার ছিল। নুরুল ইসলাম ভাবতেন, মজুতদারির বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধুরই বিভিন্ন অঞ্চলে গিয়ে বক্তৃতা দেওয়া দরকার। কিন্তু তিনি জানতেন না, সর্বজনের স্বার্থের খাতিরে কিংবা জরিমানা বা হুমকি দিয়ে ব্যক্তিস্বার্থপরতা বা নিজের ব্যক্তিগত প্রয়োজন বিসর্জন করানো বা লাভজনক মজুত করার প্রবণতা রোধ করতে পারে না।
নিজের প্রস্তাব নিয়ে ১৯৭৪ সালের মাঝামাঝি বঙ্গবন্ধুর কাছে গেলে বঙ্গবন্ধু বিমর্ষচিত্তে বলেছিলেন, ‘আপনি বাংলাদেশের মানুষকে চেনেন না। বহু বছর ধরে আমি তাদের সঙ্গে থেকেছি। আমি এদের খুব ভালো করেই চিনি। এরা ক্ষমা করবে না। যদি আপনি একবার ভুল করেন বা ব্যর্থ হন, তাহলে আপনার সারা জীবন তাদের জন্য যা করেছেন, সব বৃথা হয়ে যাবে।’
যাই হোক, আরেকটি ঘটনার উল্লেখ করা অপ্রাসঙ্গিক হবে না। ১৯৭৩ সালের শেষ দিক থেকেই বঙ্গবন্ধু আমলাতন্ত্রের ছলাকলা সম্পর্কে মোটামুটি জ্ঞান লাভ করেছিলেন। সে সময় বঙ্গবন্ধুর নির্দেশও ঠিকভাবে পালন করছিলেন না আমলারা। এ নিয়ে তিনি ক্রুদ্ধ ছিলেন। নুরুল ইসলাম গিয়েছিলেন কমিশনের কোনো এক কাজে। সিভিল সার্ভিসের সাবেক এক সদস্যকে ডেকে বঙ্গবন্ধু তাঁর নির্দেশ পালনে দেরি হচ্ছে কেন, তা খুঁজে বের করতে বললেন। তারপর নুরুল ইসলামের দিকে ফিরে বললেন, ‘ছোট লাঠি (ব্যাটন) হাতে শর্ট-প্যান্ট পরা আর ইংরেজি বলা (পাকিস্তানি) সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেনদের আদেশ এই আমলারা অবিলম্বে পালন করত। পাঞ্জাবি-পায়জামার মতো সাধারণ পোশাকের রাজনীতিবিদ, যারা বাংলায় কথা বলে আর মাঝে মাঝে পান চিবোয়, তাদের কথায় এরা মনোযোগ দিতে চায় না। সেনাবাহিনীর সেই সব ক্যাপ্টেন আবার ক্ষমতা নিয়ে শাসন করলেই এরা খুশি হবে।’
কথাগুলো যে কতটা অন্তর্ভেদী ছিল, সেটা নুরুল ইসলাম অনুভব করেছেন পরে। শারীরিক অসুস্থতার কারণে বঙ্গবন্ধু ১৯৭৫ সালের জানুয়ারি থেকে এক বছরের জন্য নুরুল ইসলামের ছুটি মঞ্জুর করেছিলেন। কিন্তু মার্চের ১৯ তারিখেই বঙ্গবন্ধু চিঠি লিখেছিলেন, নুরুল ইসলাম যেন যত দ্রুত সম্ভব আগের দায়িত্ব বুঝে নেন। কিন্তু সেই সুযোগ আর আসেনি নুরুল ইসলামের জীবনে। এর আগেই বাংলার ইতিহাসের নৃশংসতম হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটি ঘটে যায়।
লেখক: উপসম্পাদক, আজকের পত্রিকা
জাহীদ রেজা নূর

চলে গেলেন অর্থনীতিবিদ নুরুল ইসলাম। তাঁকে অর্থনীতিবিদদের অর্থনীতিবিদ কিংবা শিক্ষকদের শিক্ষক বলা হতো। রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দেওয়া ছয় দফা আন্দোলন। সেই আন্দোলন এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে যাঁরা অর্থনৈতিক বিষয়বস্তুর চুলচেরা হিসাব-নিকাশ করেছিলেন, নুরুল ইসলাম ছিলেন তাঁদের মধ্য অগ্রগণ্য। বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করার পর প্রথম যে পরিকল্পনা কমিশন হয়েছিল, নুরুল ইসলাম ছিলেন তার ডেপুটি চেয়ারম্যান। কমিশনের চেয়ারম্যান ছিলেন প্রধানমন্ত্রী, তাই এটাই ছিল কমিশনের সর্বোচ্চ পদ।
১৯৬৬ সালে ছয় দফা পেশ করেছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান। সে সময় ছয় দফা প্রসারে মূলত ছাত্রলীগ ও ইত্তেফাক পালন করেছিল মুখ্য ভূমিকা। আন্দোলন যতই তীব্র হয়েছে, ততই বিষয়টি নিয়ে পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণের প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। অর্থনীতিবিদেরা বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে মিলে পুরোদমে কাজ করেছেন মূলত ১৯৬৯ সাল থেকে। ছয় দফার বিশ্লেষণ, সত্তরের নির্বাচনের ইশতেহার তৈরি, ১৯৭১ সালের অসহযোগ আন্দোলনের নির্দেশমালা তৈরি, পাকিস্তানের সম্ভাব্য সংবিধান তৈরির ব্যাপারে আলোচনা করা ইত্যাদি বিষয়ে এই অর্থনীতিবিদেরা অবদান রেখেছেন।
আমাদের সৌভাগ্য, অন্য অনেক লেখালেখির মধ্যে নুরুল ইসলাম সে সময়টি এবং বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে একটি ক্ষুদ্র পুস্তিকা রচনা করে গেছেন। বাংলাদেশ নিয়ে নুরুল ইসলামের কার্যক্রম তাতে ধরা পড়েছে। বাংলাদেশ নিয়ে তাঁর আরও তিনটি উল্লেখযোগ্য বই আছে। সেগুলোর নাম এখানে বলা যেতে পারে। ‘মেকিং অব আ নেশন বাংলাদেশ: অ্যান ইকোনমিস্টস টেল’, ‘ডেভেলপমেন্ট প্ল্যানিং ইন বাংলাদেশ: আ স্টাডি ইন পলিটিক্যাল ইকোনমি’, ‘অ্যান ওডেসি: দ্য জার্নি অব মাই লাইফ’। এই বইগুলোয় বিস্তারিতভাবে নুরুল ইসলামের ভাবনার নাগাল পাওয়া যাবে।
আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা থেকে বঙ্গবন্ধু বের হওয়ার পর থেকেই মূলত অর্থনীতিবিদেরা ছয় দফা কর্মসূচির পক্ষে কাজ করতে শুরু করেন। তৎকালীন পাকিস্তান স্টেট ব্যাংকের গভর্নর এম রশিদ একটি বার্তা দিয়ে নুরুল ইসলামকে জানান, যত শিগগির সম্ভব নুরুল ইসলামকে ঢাকায় গিয়ে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে দেখা করতে বলেছেন বঙ্গবন্ধু। পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের অর্থনৈতিক বিষয় নিয়ে নুরুল ইসলামের তৎপরতার কথা বঙ্গবন্ধু জানতেন। বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে দেখা হওয়ার পর তিনি নুরুল ইসলামকে বললেন, এখন তাঁর পাশে বেশ কিছু বিশেষজ্ঞ প্রয়োজন, স্বাধিকার দাবি ও ছয় দফাকে জোরালো করার ব্যাপারে যাঁরা অবদান রাখতে পারেন।আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ইশতেহার রচনায় অর্থনৈতিক বিষয়গুলো দেখার কথাও তিনি বলেন।
ছয় দফা কর্মসূচির মূল বিষয়গুলো সম্প্রসারণের কাজটি যাঁদের হাতে দেওয়া হয়েছিল, তাঁদের একজন ছিলেন নুরুল ইসলাম। ১৯৭০ সালের নভেম্বর থেকে ১৯৭১ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু ও তাঁর ঊর্ধ্বতন সহকর্মীদের তত্ত্বাবধানে বিশেষজ্ঞদের কাজটি গোপনে শেষ করে ফেলার কথা ছিল। এ সময় ছয় দফা নিয়ে আলোচনায় দেখা গেছে, অনেক ব্যাপারেই খন্দকার মোশতাক আহমেদ একমত নন। তিনি খুব বেশি প্রশ্ন করতেন। ১৯৭১ সালের জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারির দিকে পাকিস্তানের লাহোরের একটি পত্রিকায় ছয় দফার মূল বিষয়গুলো ছাপা হলে সবাই অবাক হন। এগুলো ছিল গোপন বিষয়। এই খসড়ার অনুলিপি সংরক্ষিত থাকত ড. কামাল হোসেনের কাছে। পরিচালনা কমিটির সদস্য রাজনীতিবিদেরা সেটা কিছু সময়ের জন্য ধার নিতে পারতেন। সবচেয়ে ঘন ঘন ধার নিতেন খন্দকার মোশতাক আহমেদ। যখন ফাঁস হয় পত্রিকায়, তখন মোশতাকের হাতে এই খসড়ার একটি অনুলিপি ছিল। নুরুল ইসলামসহ অনেকেই এই ফাঁসের ব্যাপারে মোশতাককেই সন্দেহ করেছিলেন।
ছয় দফার পুরোটা ফাঁস হয়ে যাওয়ায় অন্য অনেকের মতো নুরুল ইসলামও খুব অখুশি হন। এখন পশ্চিম পাকিস্তানিরা আগেই পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে ছয় দফার বিষয়ে জেনে যাওয়ায় সংঘবদ্ধভাবে বিরোধিতা করতে পারবে। ড. কামাল হোসেন আর রেহমান সোবহানকে নিয়ে নুরুল ইসলাম বঙ্গবন্ধুর কাছে যান, বিষয়টির ভয়াবহতার কথা বলেন। বঙ্গবন্ধু বিষয়টিকে নিজের রাজনৈতিক জীবনের ঝুঁকি হিসেবে গ্রহণ করেন এবং আশ্বাস দেন যে বিষয়টি তিনি খতিয়ে দেখবেন।
দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বঙ্গবন্ধু দেশে ফিরলেন। নুরুল ইসলামকে বললেন পরিকল্পনা কমিশন গঠন করতে। পাকিস্তানের শেষের দিকে যাঁরা অর্থনৈতিক বিষয়ে কাজ করেছিলেন, তাঁদের নিয়েই কমিশনটি করতে বললেন। কমিশনের ডেপুটি চেয়ারম্যান হলেন নুরুল ইসলাম। সঙ্গে থাকলেন রেহমান সোবহান, আনিসুর রহমান এবং মুক্তিযুদ্ধের সময় মুজিবনগর সরকারের পরিকল্পনা বিভাগে কাজ করা মোশারফ হোসেন।
পরিকল্পনা কমিশনের কাজ নানাভাবে বাধাগ্রস্ত হয়েছিল। ১৯৭৩ সালে পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা প্রণয়নের কাজ চূড়ান্ত হলে কমিশনের সদস্যরা একমত হন যে এভাবে কাজে সাফল্য আসবে না। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কমিশনের সন্তোষজনক সম্পর্ক ছিল না। দেশের উন্নয়নের জন্য জরুরি ভিত্তিতে যে পদক্ষেপ নেওয়ার দরকার ছিল বলে মনে করতেন কমিশনের লোকেরা, রাজনীতিবিদ আর আমলারা সেগুলোর সঙ্গে পুরোপুরি একমত পোষণ করতেন না। ফলে কমিশন অর্থহীন হয়ে পড়েছিল। ফলে বিদায়ের কথা ভাবছিলেন কমিশনের প্রায় সব সদস্যই। বঙ্গবন্ধুর কাছে গিয়ে নুরুল ইসলাম বলেছিলেন, এখন উপযুক্ত অর্থনীতিবিদ ও আমলারা মিলে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করুক। কমিশনের আর প্রয়োজন নেই। প্রয়োজন পড়লে কমিশনের সদস্যরা অবশ্যই অনানুষ্ঠানিকভাবে পরামর্শ দেবেন, কমিশনের সদস্য বা সরকারের কর্মকর্তা হিসেবে নয়।
কিন্তু বঙ্গবন্ধু তাঁদের কথা একেবারেই শুনতে চাইলেন না। তিনি মনে করলেন, সবে পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার কাজ শুরু হয়েছে, বাংলাদেশ সরকার সংগঠিত হতে শুরু করেছে—এ সময় কমিশন ছেড়ে যাওয়া ঠিক হবে না।
১৯৭২ ও ১৯৭৩ সালে ব্যাপক ফসলহানি ঘটেছিল দেশে। ১৯৭৪ সালেও একই রকম অবস্থা হওয়ায় খাদ্য মজুত করার প্রবণতা বেড়ে যায়। মজুতের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তোলার দরকার ছিল সে সময়। খাদ্যশস্য মজুত না করার আহ্বান জানানো দরকার ছিল। নুরুল ইসলাম ভাবতেন, মজুতদারির বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধুরই বিভিন্ন অঞ্চলে গিয়ে বক্তৃতা দেওয়া দরকার। কিন্তু তিনি জানতেন না, সর্বজনের স্বার্থের খাতিরে কিংবা জরিমানা বা হুমকি দিয়ে ব্যক্তিস্বার্থপরতা বা নিজের ব্যক্তিগত প্রয়োজন বিসর্জন করানো বা লাভজনক মজুত করার প্রবণতা রোধ করতে পারে না।
নিজের প্রস্তাব নিয়ে ১৯৭৪ সালের মাঝামাঝি বঙ্গবন্ধুর কাছে গেলে বঙ্গবন্ধু বিমর্ষচিত্তে বলেছিলেন, ‘আপনি বাংলাদেশের মানুষকে চেনেন না। বহু বছর ধরে আমি তাদের সঙ্গে থেকেছি। আমি এদের খুব ভালো করেই চিনি। এরা ক্ষমা করবে না। যদি আপনি একবার ভুল করেন বা ব্যর্থ হন, তাহলে আপনার সারা জীবন তাদের জন্য যা করেছেন, সব বৃথা হয়ে যাবে।’
যাই হোক, আরেকটি ঘটনার উল্লেখ করা অপ্রাসঙ্গিক হবে না। ১৯৭৩ সালের শেষ দিক থেকেই বঙ্গবন্ধু আমলাতন্ত্রের ছলাকলা সম্পর্কে মোটামুটি জ্ঞান লাভ করেছিলেন। সে সময় বঙ্গবন্ধুর নির্দেশও ঠিকভাবে পালন করছিলেন না আমলারা। এ নিয়ে তিনি ক্রুদ্ধ ছিলেন। নুরুল ইসলাম গিয়েছিলেন কমিশনের কোনো এক কাজে। সিভিল সার্ভিসের সাবেক এক সদস্যকে ডেকে বঙ্গবন্ধু তাঁর নির্দেশ পালনে দেরি হচ্ছে কেন, তা খুঁজে বের করতে বললেন। তারপর নুরুল ইসলামের দিকে ফিরে বললেন, ‘ছোট লাঠি (ব্যাটন) হাতে শর্ট-প্যান্ট পরা আর ইংরেজি বলা (পাকিস্তানি) সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেনদের আদেশ এই আমলারা অবিলম্বে পালন করত। পাঞ্জাবি-পায়জামার মতো সাধারণ পোশাকের রাজনীতিবিদ, যারা বাংলায় কথা বলে আর মাঝে মাঝে পান চিবোয়, তাদের কথায় এরা মনোযোগ দিতে চায় না। সেনাবাহিনীর সেই সব ক্যাপ্টেন আবার ক্ষমতা নিয়ে শাসন করলেই এরা খুশি হবে।’
কথাগুলো যে কতটা অন্তর্ভেদী ছিল, সেটা নুরুল ইসলাম অনুভব করেছেন পরে। শারীরিক অসুস্থতার কারণে বঙ্গবন্ধু ১৯৭৫ সালের জানুয়ারি থেকে এক বছরের জন্য নুরুল ইসলামের ছুটি মঞ্জুর করেছিলেন। কিন্তু মার্চের ১৯ তারিখেই বঙ্গবন্ধু চিঠি লিখেছিলেন, নুরুল ইসলাম যেন যত দ্রুত সম্ভব আগের দায়িত্ব বুঝে নেন। কিন্তু সেই সুযোগ আর আসেনি নুরুল ইসলামের জীবনে। এর আগেই বাংলার ইতিহাসের নৃশংসতম হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটি ঘটে যায়।
লেখক: উপসম্পাদক, আজকের পত্রিকা

চলে গেলেন অর্থনীতিবিদ নুরুল ইসলাম। তাঁকে অর্থনীতিবিদদের অর্থনীতিবিদ কিংবা শিক্ষকদের শিক্ষক বলা হতো। রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দেওয়া ছয় দফা আন্দোলন। সেই আন্দোলন এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে যাঁরা অর্থনৈতিক বিষয়বস্তুর চুলচেরা হিসাব-নিকাশ করেছিলেন, নুরুল ইসলাম ছিলেন তাঁদের মধ্য অগ্রগণ্য। বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করার পর প্রথম যে পরিকল্পনা কমিশন হয়েছিল, নুরুল ইসলাম ছিলেন তার ডেপুটি চেয়ারম্যান। কমিশনের চেয়ারম্যান ছিলেন প্রধানমন্ত্রী, তাই এটাই ছিল কমিশনের সর্বোচ্চ পদ।
১৯৬৬ সালে ছয় দফা পেশ করেছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান। সে সময় ছয় দফা প্রসারে মূলত ছাত্রলীগ ও ইত্তেফাক পালন করেছিল মুখ্য ভূমিকা। আন্দোলন যতই তীব্র হয়েছে, ততই বিষয়টি নিয়ে পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণের প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। অর্থনীতিবিদেরা বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে মিলে পুরোদমে কাজ করেছেন মূলত ১৯৬৯ সাল থেকে। ছয় দফার বিশ্লেষণ, সত্তরের নির্বাচনের ইশতেহার তৈরি, ১৯৭১ সালের অসহযোগ আন্দোলনের নির্দেশমালা তৈরি, পাকিস্তানের সম্ভাব্য সংবিধান তৈরির ব্যাপারে আলোচনা করা ইত্যাদি বিষয়ে এই অর্থনীতিবিদেরা অবদান রেখেছেন।
আমাদের সৌভাগ্য, অন্য অনেক লেখালেখির মধ্যে নুরুল ইসলাম সে সময়টি এবং বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে একটি ক্ষুদ্র পুস্তিকা রচনা করে গেছেন। বাংলাদেশ নিয়ে নুরুল ইসলামের কার্যক্রম তাতে ধরা পড়েছে। বাংলাদেশ নিয়ে তাঁর আরও তিনটি উল্লেখযোগ্য বই আছে। সেগুলোর নাম এখানে বলা যেতে পারে। ‘মেকিং অব আ নেশন বাংলাদেশ: অ্যান ইকোনমিস্টস টেল’, ‘ডেভেলপমেন্ট প্ল্যানিং ইন বাংলাদেশ: আ স্টাডি ইন পলিটিক্যাল ইকোনমি’, ‘অ্যান ওডেসি: দ্য জার্নি অব মাই লাইফ’। এই বইগুলোয় বিস্তারিতভাবে নুরুল ইসলামের ভাবনার নাগাল পাওয়া যাবে।
আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা থেকে বঙ্গবন্ধু বের হওয়ার পর থেকেই মূলত অর্থনীতিবিদেরা ছয় দফা কর্মসূচির পক্ষে কাজ করতে শুরু করেন। তৎকালীন পাকিস্তান স্টেট ব্যাংকের গভর্নর এম রশিদ একটি বার্তা দিয়ে নুরুল ইসলামকে জানান, যত শিগগির সম্ভব নুরুল ইসলামকে ঢাকায় গিয়ে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে দেখা করতে বলেছেন বঙ্গবন্ধু। পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের অর্থনৈতিক বিষয় নিয়ে নুরুল ইসলামের তৎপরতার কথা বঙ্গবন্ধু জানতেন। বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে দেখা হওয়ার পর তিনি নুরুল ইসলামকে বললেন, এখন তাঁর পাশে বেশ কিছু বিশেষজ্ঞ প্রয়োজন, স্বাধিকার দাবি ও ছয় দফাকে জোরালো করার ব্যাপারে যাঁরা অবদান রাখতে পারেন।আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ইশতেহার রচনায় অর্থনৈতিক বিষয়গুলো দেখার কথাও তিনি বলেন।
ছয় দফা কর্মসূচির মূল বিষয়গুলো সম্প্রসারণের কাজটি যাঁদের হাতে দেওয়া হয়েছিল, তাঁদের একজন ছিলেন নুরুল ইসলাম। ১৯৭০ সালের নভেম্বর থেকে ১৯৭১ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু ও তাঁর ঊর্ধ্বতন সহকর্মীদের তত্ত্বাবধানে বিশেষজ্ঞদের কাজটি গোপনে শেষ করে ফেলার কথা ছিল। এ সময় ছয় দফা নিয়ে আলোচনায় দেখা গেছে, অনেক ব্যাপারেই খন্দকার মোশতাক আহমেদ একমত নন। তিনি খুব বেশি প্রশ্ন করতেন। ১৯৭১ সালের জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারির দিকে পাকিস্তানের লাহোরের একটি পত্রিকায় ছয় দফার মূল বিষয়গুলো ছাপা হলে সবাই অবাক হন। এগুলো ছিল গোপন বিষয়। এই খসড়ার অনুলিপি সংরক্ষিত থাকত ড. কামাল হোসেনের কাছে। পরিচালনা কমিটির সদস্য রাজনীতিবিদেরা সেটা কিছু সময়ের জন্য ধার নিতে পারতেন। সবচেয়ে ঘন ঘন ধার নিতেন খন্দকার মোশতাক আহমেদ। যখন ফাঁস হয় পত্রিকায়, তখন মোশতাকের হাতে এই খসড়ার একটি অনুলিপি ছিল। নুরুল ইসলামসহ অনেকেই এই ফাঁসের ব্যাপারে মোশতাককেই সন্দেহ করেছিলেন।
ছয় দফার পুরোটা ফাঁস হয়ে যাওয়ায় অন্য অনেকের মতো নুরুল ইসলামও খুব অখুশি হন। এখন পশ্চিম পাকিস্তানিরা আগেই পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে ছয় দফার বিষয়ে জেনে যাওয়ায় সংঘবদ্ধভাবে বিরোধিতা করতে পারবে। ড. কামাল হোসেন আর রেহমান সোবহানকে নিয়ে নুরুল ইসলাম বঙ্গবন্ধুর কাছে যান, বিষয়টির ভয়াবহতার কথা বলেন। বঙ্গবন্ধু বিষয়টিকে নিজের রাজনৈতিক জীবনের ঝুঁকি হিসেবে গ্রহণ করেন এবং আশ্বাস দেন যে বিষয়টি তিনি খতিয়ে দেখবেন।
দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বঙ্গবন্ধু দেশে ফিরলেন। নুরুল ইসলামকে বললেন পরিকল্পনা কমিশন গঠন করতে। পাকিস্তানের শেষের দিকে যাঁরা অর্থনৈতিক বিষয়ে কাজ করেছিলেন, তাঁদের নিয়েই কমিশনটি করতে বললেন। কমিশনের ডেপুটি চেয়ারম্যান হলেন নুরুল ইসলাম। সঙ্গে থাকলেন রেহমান সোবহান, আনিসুর রহমান এবং মুক্তিযুদ্ধের সময় মুজিবনগর সরকারের পরিকল্পনা বিভাগে কাজ করা মোশারফ হোসেন।
পরিকল্পনা কমিশনের কাজ নানাভাবে বাধাগ্রস্ত হয়েছিল। ১৯৭৩ সালে পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা প্রণয়নের কাজ চূড়ান্ত হলে কমিশনের সদস্যরা একমত হন যে এভাবে কাজে সাফল্য আসবে না। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কমিশনের সন্তোষজনক সম্পর্ক ছিল না। দেশের উন্নয়নের জন্য জরুরি ভিত্তিতে যে পদক্ষেপ নেওয়ার দরকার ছিল বলে মনে করতেন কমিশনের লোকেরা, রাজনীতিবিদ আর আমলারা সেগুলোর সঙ্গে পুরোপুরি একমত পোষণ করতেন না। ফলে কমিশন অর্থহীন হয়ে পড়েছিল। ফলে বিদায়ের কথা ভাবছিলেন কমিশনের প্রায় সব সদস্যই। বঙ্গবন্ধুর কাছে গিয়ে নুরুল ইসলাম বলেছিলেন, এখন উপযুক্ত অর্থনীতিবিদ ও আমলারা মিলে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করুক। কমিশনের আর প্রয়োজন নেই। প্রয়োজন পড়লে কমিশনের সদস্যরা অবশ্যই অনানুষ্ঠানিকভাবে পরামর্শ দেবেন, কমিশনের সদস্য বা সরকারের কর্মকর্তা হিসেবে নয়।
কিন্তু বঙ্গবন্ধু তাঁদের কথা একেবারেই শুনতে চাইলেন না। তিনি মনে করলেন, সবে পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার কাজ শুরু হয়েছে, বাংলাদেশ সরকার সংগঠিত হতে শুরু করেছে—এ সময় কমিশন ছেড়ে যাওয়া ঠিক হবে না।
১৯৭২ ও ১৯৭৩ সালে ব্যাপক ফসলহানি ঘটেছিল দেশে। ১৯৭৪ সালেও একই রকম অবস্থা হওয়ায় খাদ্য মজুত করার প্রবণতা বেড়ে যায়। মজুতের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তোলার দরকার ছিল সে সময়। খাদ্যশস্য মজুত না করার আহ্বান জানানো দরকার ছিল। নুরুল ইসলাম ভাবতেন, মজুতদারির বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধুরই বিভিন্ন অঞ্চলে গিয়ে বক্তৃতা দেওয়া দরকার। কিন্তু তিনি জানতেন না, সর্বজনের স্বার্থের খাতিরে কিংবা জরিমানা বা হুমকি দিয়ে ব্যক্তিস্বার্থপরতা বা নিজের ব্যক্তিগত প্রয়োজন বিসর্জন করানো বা লাভজনক মজুত করার প্রবণতা রোধ করতে পারে না।
নিজের প্রস্তাব নিয়ে ১৯৭৪ সালের মাঝামাঝি বঙ্গবন্ধুর কাছে গেলে বঙ্গবন্ধু বিমর্ষচিত্তে বলেছিলেন, ‘আপনি বাংলাদেশের মানুষকে চেনেন না। বহু বছর ধরে আমি তাদের সঙ্গে থেকেছি। আমি এদের খুব ভালো করেই চিনি। এরা ক্ষমা করবে না। যদি আপনি একবার ভুল করেন বা ব্যর্থ হন, তাহলে আপনার সারা জীবন তাদের জন্য যা করেছেন, সব বৃথা হয়ে যাবে।’
যাই হোক, আরেকটি ঘটনার উল্লেখ করা অপ্রাসঙ্গিক হবে না। ১৯৭৩ সালের শেষ দিক থেকেই বঙ্গবন্ধু আমলাতন্ত্রের ছলাকলা সম্পর্কে মোটামুটি জ্ঞান লাভ করেছিলেন। সে সময় বঙ্গবন্ধুর নির্দেশও ঠিকভাবে পালন করছিলেন না আমলারা। এ নিয়ে তিনি ক্রুদ্ধ ছিলেন। নুরুল ইসলাম গিয়েছিলেন কমিশনের কোনো এক কাজে। সিভিল সার্ভিসের সাবেক এক সদস্যকে ডেকে বঙ্গবন্ধু তাঁর নির্দেশ পালনে দেরি হচ্ছে কেন, তা খুঁজে বের করতে বললেন। তারপর নুরুল ইসলামের দিকে ফিরে বললেন, ‘ছোট লাঠি (ব্যাটন) হাতে শর্ট-প্যান্ট পরা আর ইংরেজি বলা (পাকিস্তানি) সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেনদের আদেশ এই আমলারা অবিলম্বে পালন করত। পাঞ্জাবি-পায়জামার মতো সাধারণ পোশাকের রাজনীতিবিদ, যারা বাংলায় কথা বলে আর মাঝে মাঝে পান চিবোয়, তাদের কথায় এরা মনোযোগ দিতে চায় না। সেনাবাহিনীর সেই সব ক্যাপ্টেন আবার ক্ষমতা নিয়ে শাসন করলেই এরা খুশি হবে।’
কথাগুলো যে কতটা অন্তর্ভেদী ছিল, সেটা নুরুল ইসলাম অনুভব করেছেন পরে। শারীরিক অসুস্থতার কারণে বঙ্গবন্ধু ১৯৭৫ সালের জানুয়ারি থেকে এক বছরের জন্য নুরুল ইসলামের ছুটি মঞ্জুর করেছিলেন। কিন্তু মার্চের ১৯ তারিখেই বঙ্গবন্ধু চিঠি লিখেছিলেন, নুরুল ইসলাম যেন যত দ্রুত সম্ভব আগের দায়িত্ব বুঝে নেন। কিন্তু সেই সুযোগ আর আসেনি নুরুল ইসলামের জীবনে। এর আগেই বাংলার ইতিহাসের নৃশংসতম হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটি ঘটে যায়।
লেখক: উপসম্পাদক, আজকের পত্রিকা

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২০ দিন আগে
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫বাসস, ঢাকা

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

চলে গেলেন অর্থনীতিবিদ নুরুল ইসলাম। তাঁকে অর্থনীতিবিদদের অর্থনীতিবিদ কিংবা শিক্ষকদের শিক্ষক বলা হতো। রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দেওয়া ছয় দফা আন্দোলন।
১১ মে ২০২৩
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

চলে গেলেন অর্থনীতিবিদ নুরুল ইসলাম। তাঁকে অর্থনীতিবিদদের অর্থনীতিবিদ কিংবা শিক্ষকদের শিক্ষক বলা হতো। রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দেওয়া ছয় দফা আন্দোলন।
১১ মে ২০২৩
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২০ দিন আগে
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

চলে গেলেন অর্থনীতিবিদ নুরুল ইসলাম। তাঁকে অর্থনীতিবিদদের অর্থনীতিবিদ কিংবা শিক্ষকদের শিক্ষক বলা হতো। রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দেওয়া ছয় দফা আন্দোলন।
১১ মে ২০২৩
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২০ দিন আগে
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

চলে গেলেন অর্থনীতিবিদ নুরুল ইসলাম। তাঁকে অর্থনীতিবিদদের অর্থনীতিবিদ কিংবা শিক্ষকদের শিক্ষক বলা হতো। রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দেওয়া ছয় দফা আন্দোলন।
১১ মে ২০২৩
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২০ দিন আগে
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫