Ajker Patrika

বিদায়ের সুর বাজে

সাখাওয়াত ফাহাদ, ঢাকা
বিদায়ের সুর বাজে

আর মাত্র এক দিন বাকি! ২৮ দিনের মাসটি শেষ হতে চলেছে। সেই সঙ্গে বিদায়ের সুর বেজে উঠেছে বইমেলায়। শেষ মুহূর্তে পছন্দের বই কিনে নিতে মেলায় ছুটে আসছেন বইপ্রেমীরা। আবার অনেকে এক বছরের অপেক্ষার কথা ভেবে মেলার ব্যস্ততা উপভোগ করছেন আপনমনে। তবে কোনো কিছুই চিরস্থায়ী নয়, এমন কঠিন সত্য মেনে নিয়েই বিদায়ের আয়োজন চলছে বইমেলায়।

গল্প, প্রেম, আনন্দের মেলায় রোববার বিকেলে বই কেনায় ব্যস্ত ছিলেন মাশরুর রহমান খান। তিনি এ মাসে ১২ বার মেলায় এসেছেন! ফেব্রুয়ারি মাসে মেলায় না এলে তাঁর উসখুস লাগে। বই কিনতে না পারলে অস্থির হয়ে ওঠেন। মাশরুর রহমান খান জানালেন, এখন পর্যন্ত মেলা থেকে ১৭টি বই কিনেছেন তিনি। আরও ৮টি বই কেনার তালিকায় আছে। শেষ দিন সেগুলো কিনবেন।

এই তালিকায় আছে বিদ্যানন্দ প্রকাশনীর ‘নিরক্ষরের গল্পগুচ্ছ’। বইটির হাজার কপি ইতিমধ্যে বিক্রি হয়ে গেছে। দেশের বিভিন্ন প্রান্তের একেবারেই নিরক্ষর কৃষক, কাঠুরে, জেলে, মাঝি, দিনমজুরসহ বিভিন্ন পেশার ১৩ জন মানুষের ১২টি গল্প জায়গা পেয়েছে বইটিতে। বিদ্যানন্দের স্বেচ্ছাসেবীরা এই গল্পগুলো শুনেছেন, লিখেছেন, সম্পাদনা করেছেন। বইটির প্রচ্ছদে আঙুলের ছাপ দিয়েছেন রিকশাচালক সেলিম ভূঁইয়া আর নামলিপি ‘নিরক্ষরের গল্পগুচ্ছ’ লেখাটি লিখেছেন ঢাকায় একটি প্রতিষ্ঠানে অফিস সহকারী হিসেবে কাজ করা এমতাজুল হক।

বিদ্যানন্দের জনসংযোগ প্রধান সালমান খান ইয়াছিন জানান, নিরক্ষর এই শ্রমজীবী লেখকেরা নিজের গল্প ছাপার অক্ষরে দেখে আপ্লুত হয়েছেন। তিনি বলেন, ‘এই বইটির মাধ্যমে সারা জীবন বঞ্চনার শিকার হওয়া নিরক্ষর মানুষেরা লেখক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছেন।’ বইটির বিক্রি করে পাওয়া পুরো অর্থই রয়্যালটি হিসেবে তাঁদের হাতে তুলে দেওয়া হবে বলে জানান সালমান খান ইয়াছিন। বইটি ভাষার জন্য প্রাণ দেওয়া নিরক্ষর শহীদদের উৎসর্গ করা হয়েছে।

বইয়ে নিজেদের নাম ও গল্প দেখে আনন্দের শেষ নেই লেখকদের। লেখক জয়নাল আবেদীন বলেন, ‘এলাকার মানুষ বইয়ের কথা শুইনা হাসিঠাট্টা করছে। বই দেখার পর এখন সবাই সম্মানের চোখে দেখতেছে।’ আরেক লেখক রুহুল আমিন জানিয়েছেন, বইটি হাতে নিয়ে কান্না আটকে রাখতে পারেননি তিনি। তিনি বলেন, ‘মেলায় আমাদের লেখা বই বিক্রি হইতেছে, এটা জীবনের সবচেয়ে বড় পাওয়া।’

‘মেলা চলে যাচ্ছে’ বলে আফসোস করছিলেন সংস্কৃতিকর্মী ও কবি রহমান মুফিজ। গ্রন্থিক প্রকাশনীতে এবার তাঁর কবিতার বই ‘বাজি রাখো চোখ’ প্রকাশিত হয়েছে। তিনি জানিয়েছেন, এই বইয়ের কবিতাগুলোতে বর্তমান সময়ের যাতনা, ব্যথা, নিষ্পেষণ, শোষণ, নিপীড়ন এবং একটা অন্ধকার সময়ের দুঃসহ যন্ত্রণার বয়ান উঠে এসেছে।

মানুষের জীবন ও জীবনের প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির হিসাবনিকাশে ব্যস্ত কবি জীবনানন্দ দাশের গদ্যসত্তা নিয়ে ঐতিহ্য প্রকাশ করেছে শান্তনু কায়সারের ‘গভীর গভীরতর অসুখ: গদ্যসত্তার জীবনানন্দ দাশ’।

রোববার মেলার ২৬তম দিনে ১৫৫টি নতুন বই এসেছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে ৬৮টি কবিতা, ২৭টি উপন্যাস ও ১০টি গল্পের বই। এর মধ্যে কথাপ্রকাশ থেকে প্রকাশিত হয়েছে নাসির আলী মামুন সম্পাদিত ‘এস এম সুলতান জীবনদর্শন ও শিল্প’, জাগতিক প্রকাশন থেকে এসেছে লেখক, কবি ও সাংবাদিক কাজী আলিম-উজ-জামানের কবিতার বই ‘হে প্রেমময়ী নিষ্ঠুর হেমন্ত’, মুক্তদেশ প্রকাশনী প্রকাশিত আউয়াল চৌধুরীর উপন্যাস ‘আফসানা’, পাঠকসমাবেশ প্রকাশিত ফয়জুল লতিফ চৌধুরীর গল্প ‘কার্ল মার্ক্সের সমাধিতে হুমায়ূন আহমেদ’ উল্লেখযোগ্য।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত