Ajker Patrika

ফিউশনের ধারায় চাকমা বিয়ের পোশাক

আপডেট : ২৯ নভেম্বর ২০২২, ১১: ৪২
ফিউশনের ধারায় চাকমা বিয়ের পোশাক

খুব বেশি দূরের কথা নয়; ২০০০ সালের আগে চাকমা সম্প্রদায়ের নারীরা বিয়ের দিন শাড়ি পরতেন। বিশেষ এ দিনটিতে চাকমা নারীরা নিজেদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক পিননহাদি পরতেন না। চাকমা নারীদের পোশাকের নিচের অংশকে বলা হয় পিনন। ওপরের পরিধেয় পোশাকটি হচ্ছে হাদি।

চাকমা সম্প্রদায়ের রোজকার ব্যবহৃত আড়ম্বরহীন পরিধেয় পিননহাদিতে যেন বিয়ের দিনটিতে মধ্যমণি হয়ে ওঠা দুষ্কর ছিল। পাশাপাশি কনের মাথায় যে মোটা কাপড়ের আলোয়ান দেওয়া হতো, তা দীর্ঘ সময় মাথায় রাখাও ছিল কষ্টসাধ্য। তাই বিয়েতে প্রথমে শাড়ি ও পরে লেহেঙ্গা বেছে নিতে শুরু করেন চাকমা নারীরা। অন্যদিকে ছেলেরাও ফিনফিনে খাটো ধুতিতে খুব একটা স্বচ্ছন্দবোধ করতেন না। কিন্তু বিয়ের মতো জীবনের বিশেষ দিনটিতে নিজেদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক উপেক্ষিত থাকবে, সেটা মেনে নিতে পারেননি আর্য্যেশ্বরী বুটিক পেরাবাহর স্বত্বাধিকারী ও ফ্যাশন উদ্যোক্তা সৌম্য চাকমা।

চাকমা মেয়েদের পরিধেয় পিননহাদিকে কী করে বিয়েতে পরার উপযোগী করে তোলা যায় তা নিয়েই ভাবতে লাগলেন সৌম্য চাকমা।বইপত্র আর গুগল ঘেঁটে নতুন নতুন আইডিয়া টুকতে লাগলেন। কী করে ঐতিহ্যবাহী পোশাকেই চাকমা তরুণ-তরুণীদের বিয়ের পিঁড়িতে বসানো যায় তা নিয়ে কাজ করতে শুরু করলেন। সময়টা ২০০৮ সাল। একটু একটু করে বিয়ের পোশাকে ফিউশন আনার চেষ্টা চালাচ্ছেন সৌম্য চাকমা। ধীরে ধীরে দেখা গেল আশপাশের মানুষ তৈরি পোশাকগুলো পছন্দ করছে।

২০১৪ সালে ফেসবুকে আর্য্যেশ্বরী বুটিক পেরাবাহ নামে একটি পেজ খোলেন সৌম্য। এ ছাড়া রাঙামাটি শহরে স্টেডিয়ামের পাশে একটি আউটলেট খোলেন তিনি। সৌম্য চাকমা বলেন, ‘চাকমা ভাষায় পেরাবাহ মানে হচ্ছে বাবুই পাখির বাসা। বাবুই পাখি শিল্পী পাখি, তাই ক্রিয়েটর হিসেবে নিজের বুটিক হাউসের নাম পেরাবাহ রেখেছি।’

মডেল: অতসী, পোশাক: আর্য্যেশ্বরী বুটিক পেরাবাহ, মেকআপ: নিপুনস মেকওভার জোন, রাঙামাটি। ছবি: সতেজ চাকমাপিননহাদির নকশা, কাপড় ও অন্যান্য অনুষঙ্গে নতুনত্ব আনার পর ধীরে ধীরে স্থানীয় অনেকেই পিননহাদির ব্রাইডাল কালেকশনের প্রতি আগ্রহী হয়ে ওঠেন। সৌম্য চাকমা জানান, ঘন কারুকার্য ও আভিজাত্যের ছোঁয়া থাকে বলে বিয়ের জন্য তৈরি পিননহাদির দাম একটু বেশি। যেহেতু অনেক দামি সাধারণের পক্ষে এটা কেনা একটু কঠিন। তবে সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছাতে দামটা একটু কমিয়ে আনার চেষ্টাও চলছে বলে জানান সৌম্য। 

পিননের রকমফের
পিনন দুই ধরনের কাপড়ে বোনা হয়। রেয়ন ও সুতি। বিয়ের জন্য যেসব পিনন তৈরি হয়, সেগুলো রেয়নে বোনা হলে দাম বেশি হয়।রেয়নেও পরিবর্তন এসেছে। আগে রাঙামাটিতে একধরনের বাঁশ পাওয়া যেত, কর্ণফুলী রেয়ন মিলে সে বাঁশের আঁশ থেকে একধরনের সূক্ষ্ম ও মিহি সুতা তৈরি হতো। এই সুতায় তৈরি কাপড়গুলো হতো মসৃণ। বর্তমানে চীন থেকে আমদানি করা রেয়ন দিয়ে পিনন তৈরি করা হয়। তবে প্রতিদিনের ব্যবহারের জন্য সুতি কাপড় দিয়ে পিনন তৈরি করা হয়। এগুলোর দাম তুলনামূলক কম।

কাস্টোমাইজ করা যায় 
পিননের ওপরে পরার জন্য ব্লাউজ বা টপসের মতো পোশাকটি সাধারণত ক্রেতার পছন্দমতো কাপড়েই তৈরি করে দেন সৌম্য চাকমা। তিনি বলেন, ‘ক্রেতা যদি রেয়নের ব্লাউজ বানিয়ে দিতে বলেন, তাহলে সেটা বানিয়ে দেওয়া হয়। কেউ যদি মসলিন, সাটিন, কাতান বা সুতি দিয়ে বানাতে চান তাহলে সেভাবেই বানিয়ে দেওয়া হয়।’ কাটিং ও নকশা কাস্টমাইজ করে নেওয়ার সুযোগ রয়েছে।

মডেল: হেরি , পোশাক: আর্য্যেশ্বরী বুটিক পেরাবাহ, মেকআপ: নিপুনস মেকওভার জোন, রাঙামাটিনকশা
গণিতের যেমন সূত্র থাকে, তেমনি পিননহাদিরও বুননশৈলী রয়েছে। সৌম্য চাকমা বলেন, ‘চাকমা পোশাকের নকশার একটি চার্ট আছে। যার নাম আলাম। আলামে পিননহাদির অনেক ধরনের বুননশৈলী আছে। বিয়ের পিননহাদির নকশা আলাম থেকে তুলে আনি।’

ঘোমটায় নতুনত্ব
সৌম্য চাকমা বলেন, ‘আলোয়ান বলে যে চাদরের মতো কাপড়টি কনেরা আগে মাথায় দিতেন, সেটা অনেক ভারী ছিল। তাই আমি ভাবলাম, ঘোমটা দেওয়ার কাপড়টা যদি একটু পাতলা কাপড় দিয়ে বানানো হয়, তাহলে দেখতেও ভালো লাগে আবার বহন করাও সহজ হয়।’ পিননহাদির সঙ্গে মাথায় ঘোমটা দেওয়ার জন্য সৌম্য চাকমা নেট,টিস্য়ু বা মসলিনের মতো পাতলা কাপড় দিয়ে ওড়না তৈরি করেন। জমকালো ভাব আনতে এসব ওড়নায় পাথর, কারচুপি বা হাতের কাজ করেন। 

চাকমা পুরুষদের বিয়ের পোশাক
চাকমা পুরুষদের বিয়ের ঐতিহ্যবাহী পোশাক হলো ধুতি। সেগুলো আকারে ও লম্বায় একটু খাটো ছিল। বেশ পাতলা কাপড়ের ছিল বলে অনেকেই গুছিয়ে পরতে পারতেন না। তা ছাড়া দীর্ঘক্ষণ পরে থাকাও যেত না। সৌম্য চাকমা মোটা সুতি কাপড়ে প্যান্টের আদলে ধুতিগুলো তৈরি করতে শুরু করলেন, যাতে সহজেই পরা যায়। এতে বেশ সাড়াও পাওয়া গেছে।

ধুতির সঙ্গে পরার জন্য শর্ট পাঞ্জাবি, কটি, ফতুয়া বা লং পাঞ্জাবিগুলো ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ীই বানানো হয়। এগুলো তৈরি হয় সুতি কাপড়ে। তবে পাগড়ির মতো মাথায় বেঁধে নেওয়ার জন্য যে কাপড়টি বরেরা পরেন তা কখনো কখনো রেয়ন দিয়ে তৈরি হয়। এ কাপড়টির নাম হবং।

দরদাম
ব্রাইডাল পিননহাদির পুরো সেটের দাম পড়ে ১৮ হাজার থেকে ৪৫ হাজার টাকার মধ্যে। বরের পোশাক সেট হিসেবে নিলে, অর্থাৎ ধুতি, পাঞ্জাবি ও কটি একসঙ্গে নিলে দাম পড়বে ৮ হাজার থেকে সাড়ে ৮ হাজার টাকা। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মামলার আসামিসহ বিএসইসির ২২ কর্মকর্তাকে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত

সরকারি টাকায় ব্যক্তিগত সড়ক কার্পেটিং বিচারপতি খিজির হায়াতের, প্রমাণ পেয়েছে দুদক

অভিনেতা সিদ্দিককে মারধর করে থানায় সোপর্দ, ছিঁড়ে ফেলা হয় পরনের পোশাক

ঐকমত্য কমিশনের সদস্যদের তেলের বরাদ্দ ২৫০ থেকে বেড়ে ৫০০ লিটার

বগুড়ায় ছাত্রদল নেতার ওপর হামলা, পাঁচ নেতা-কর্মীকে শোকজ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত