Ajker Patrika

উদার গণতান্ত্রিক মূল্যবোধসম্পন্ন রাজনৈতিক দলের অভাব আছে

মাসুদ রানা
উদার গণতান্ত্রিক মূল্যবোধসম্পন্ন রাজনৈতিক দলের অভাব আছে

শান্তনু মজুমদার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক। গণতন্ত্র, গণতন্ত্রের ঘাটতি, নির্বাচন, রাষ্ট্র ও সুধী সমাজের সম্পর্ক, রাজনৈতিক ধর্মনিরপেক্ষতা, আত্মপরিচয়ের রাজনীতি, ডিজইনফরমেশন তথা কুতথ্য এবং ধর্মীয় গুজবের মতো বিষয়গুলো নিয়ে তিনি গবেষণা করেন। আগামী সংসদ নির্বাচন এবং দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে তিনি আজকের পত্রিকার মাসুদ রানার সঙ্গে কথা বলেছেন।

আজকের পত্রিকা: বর্তমানে দেশের সার্বিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আপনার পর্যবেক্ষণ কী?
শান্তনু মজুমদার: সার্বিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আর সবার মতো আমার মনেও একধরনের অস্বস্তি ও উদ্বেগ আছে। পরিস্থিতিটা স্বাভাবিক নয়। তবে আতঙ্কিত নই। রাজনীতির প্রভাব জনজীবনে পড়তে শুরু করেছে। ইউক্রেন যুদ্ধসহ নানা কারণে এমনিতেই দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিসহ নানা দিক থেকে সাধারণ মানুষের জীবন দুর্বিষহ হয়ে পড়েছিল। চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে মানুষের অবস্থা আরও খারাপ হয়ে যাচ্ছে। শ্রমজীবী মানুষ তো বটেই, মধ্যবিত্তের দৈনন্দিন জীবনেও এখন চাপটা লাগছে। সার্বিকভাবে পরিস্থিতিটা সুখকর কিছু নয়। 
 
আজকের পত্রিকা: পাঁচ বছর পরপর নির্বাচন নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়। এর সমাধানের কি কোনো উপায় নেই?
শান্তনু মজুমদার: আপনি কি কোনো চটজলদি জাদুকরি সমাধানের কথা ভাবছেন? সে ক্ষেত্রে আমি আপনার সঙ্গে একমত নই। রাষ্ট্রীয় ও রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলো শক্তিশালী ও স্বাধীন না থাকলে সুষ্ঠু নির্বাচনের সম্ভাবনা কমে যায়। এই অর্জনটা সময়সাপেক্ষ। পৃথিবীর কোথাও এটা আসমান থেকে পড়েনি। ২০০ বছরের গণতন্ত্রের ইতিহাস বলে, পৃথিবীর কোনো দেশেই বিনা পরিশ্রমে, বিনা টেনশনে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা পায়নি। দেশে নির্বাচনের ঘণ্টা বেজে গেছে। এখন এসব আলোচনার সুযোগ কম। এখনকার কাজ হচ্ছে এবারের নির্বাচন গণতন্ত্রসম্মত উপায়ে সুষ্ঠু-নিরপেক্ষ করার ভাবনা-চিন্তা করা এবং এই লক্ষ্য পূরণে সক্রিয় হওয়া। 
 
আজকের পত্রিকা: তবু এই আলোচনাটা আরেকটু চলুক? 
শান্তনু মজুমদার: ঠিক আছে। দেশের কিছুসংখ্যক জ্ঞানী-গুণী মানুষ তিন দশক ধরে আমাদের মন ছোট করে দেওয়ার মতো কথা বলছেন। তাঁদের কথাবার্তা থেকে মনে হয়, এ দেশের মতো খারাপ রাজনীতি আর রাজনীতিক বিশ্বের আর কোথাও নেই। এ ধরনের পর্যবেক্ষণ কিন্তু তথ্য-উপাত্তভিত্তিক নয়। এ ধরনের পর্যবেক্ষণ থেকে একটি গণতন্ত্রবিরোধী উপসংহারেও পৌঁছে গেছেন কিছু মানুষ। উপসংহারটা হচ্ছে, দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। তাহলে করণীয় কী? করণীয় হচ্ছে ‘নিরপেক্ষ’ ব্যক্তিদের অধীনে নির্বাচনটা ছেড়ে দেওয়া। এই ‘নিরপেক্ষ’ শব্দের কোনো ব্যাখ্যা অবশ্য জানা যায় না। আর এই ‘নিরপেক্ষ’ ব্যক্তিরা যে অনির্বাচিত, এ কথাটা কোথাও বলার সুযোগ নেই। এ অবস্থায় একটি প্রশ্ন অনালোচিত থেকেই যায়—গণতন্ত্রে যেকোনো পরিচয়েই হোক, অনির্বাচিত ব্যক্তিদের ক্ষমতা গ্রহণের সুযোগ আছে কি না? কিছু জ্ঞানী মানুষ আবার তত্ত্বাবধায়কের বিরোধিতা দেখলে আবেগী প্রতিক্রিয়া দেখান। তখন আলোচনা বা তর্ক কোনোটিই চলে না। কেউ কেউ তত্ত্বাবধায়কবিরোধীকে অমুকের দালাল-তমুকের দালাল হিসেবে লেবেল লাগিয়ে দুর্নাম ছড়ান।

আমাদের মনে রাখতে হবে, স্বাধীনতার পরে গণতান্ত্রিক অভিযাত্রাটা খুব স্বল্পমেয়াদি হয়েছিল। ১৯৭৫ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত সামরিক সরকার ছিল। এ সময় দলীয় সরকার ছিল না। সামরিক শাসন শেষে যে নতুন সুযোগ এসেছিল, সেটাও সেভাবে কাজে লাগানো যায়নি। ১৯৯৪ সালের মার্চে মাগুরা উপনির্বাচনে ক্ষমতাসীনদের ব্যাপক অনিয়মের বিরোধিতা করতে গিয়ে গণতন্ত্রের জন্য অনাকাঙ্ক্ষিত একটা ঘটনা ঘটে যায়। বলা শুরু হয়, দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। সে সময় বিরোধী দলের প্রতি নমনীয় বুদ্ধিজীবী এবং শক্তিমান হতে থাকা নতুন ধারার শহুরে সুশীল সমাজের অনেকেই এই বক্তব্যে সোচ্চার ছিলেন।

একটু আগেই বলেছি, ১৯৭৫ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে দলীয় সরকার ছিল না। দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হয়েছে ১৯৭৩ সালে। সেই নির্বাচনে কিছু সহিংসতা ও অনিয়ম হলেও, কোনো গবেষক এবং সে সময়কার আন্তর্জাতিক কোনো মিডিয়া নির্বাচনটিকে খারিজ করেনি।

রাজনৈতিক দল সময়ভেদে অবস্থান পরিবর্তন করে। যেমন বর্তমানে যে দল তত্ত্বাবধায়ক চাইছে তারা একসময় এর ঘোর বিরোধী ছিল। বর্তমান ক্ষমতাসীনেরাও তত্ত্বাবধায়ক প্রসঙ্গে তাদের অবস্থান পাল্টেছে। কিন্তু মাগুরা উপনির্বাচনকে উদাহরণ করে এত বড় একটা রায় শহুরে সুশীল সমাজ কেন দিয়েছিলেন?

আমি মনে করি, বাংলাদেশের নির্বাচনী প্রতিষ্ঠানগুলো সামরিক শাসন-পরবর্তী যুগে শক্তিশালী হতে না পারার একটি বড় কারণ, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নামে নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্ব অনির্বাচিত লোকদের হাতে ছেড়ে দেওয়া। নিরপেক্ষতার বিষয়টি নিয়েও দুই বড় দলের মনে প্রশ্ন আছে। ২০০১ সালের নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগ এবং ২০০৮ সালের নির্বাচন নিয়ে বিএনপি সুখী ছিল না। ২০০৭ সালের শুরুতে ক্ষমতা নেওয়া তত্ত্বাবধায়কের তিন মাসের জায়গায় দুই বছর থেকে যাওয়াটাই-বা কতটা গণতান্ত্রিক ছিল?

আমার মনে হয়, নিরপেক্ষ নির্বাচনের আলোচনায় স্কয়ার ওয়ানে ফিরে গিয়ে লাভ নেই। অনির্বাচিত ব্যক্তিদের হাতে ক্ষমতা দিয়ে নির্বাচন করানো এবং রাজনীতিকদের অযোগ্য-অপদার্থ হিসেবে চিহ্নিত করানো বন্ধ হোক। দুই শর বেশি দেশ যেভাবে নির্বাচন করে, উত্তর-ঔপনিবেশিক দেশগুলো সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য যেসব চেষ্টা-চরিত্র করে, সেগুলোই আমাদের পথ হোক। প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, নির্বাচন কমিশন যাতে পক্ষপাতিত্বের পথে যেতে না পারে, তার জন্য যত রকমের প্রতিষেধক-প্রতিরোধক নেওয়া দরকার, সেগুলোর আলোচনা দরকার।
 
আজকের পত্রিকা: ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচন নিয়ে কিন্তু বিতর্ক আছে? 
শান্তনু মজুমদার: বিতর্ক আছে এটা ঠিক। তবে এই দুই নির্বাচনকে একভাবে দেখলে হবে না। ২০১৪ সালে তত্ত্বাবধায়ককে কেন্দ্র করে প্রধান দুই পক্ষ নো-রিটার্ন পয়েন্টে চলে গিয়েছিল। বিরোধীরা তত্ত্বাবধায়ক বাদে নির্বাচন হতে না দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিল। ক্ষমতাসীনেরা সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার কথা বলেছিল। তখন একটা শক্তিমত্তার পরীক্ষা হয়েছিল।

তখন আর বিষয়টা সংলাপের মধ্যে ছিল না। পক্ষান্তরে ২০১৮ সালে পরিস্থিতি বেশ ভালো ছিল। তথাপি নির্বাচনটি কাঙ্ক্ষিত মান অর্জন করতে পারেনি। এটা অবশ্যই দুঃখের ব্যাপার। এবার কিন্তু সে রকম কোনো কিছু বরদাশত হওয়ার সুযোগ নেই।
 
আজকের পত্রিকা: বিএনপিকে বাদ দিয়ে এবার যদি নির্বাচন হয়ে যায়, তাহলে ভবিষ্যৎ গণতন্ত্রের জন্য মঙ্গলজনক হবে কি?
শান্তনু মজুমদার: বিষয়টা বাদ দেওয়ার ব্যাপার নয়। বিএনপি বলছে, বর্তমান প্রধানমন্ত্রীকে ক্ষমতায় রেখে এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া নির্বাচনে যাবে না। এটা যদি অনড় অবস্থান হয়, তাহলে তো তারা আবার ২০১৪ সালের অবস্থানে ফিরে গেল। আবার ক্ষমতাসীনেরা তফসিল ঘোষণার আগে বলল, সংলাপে বসার সময় পার হয়ে গেছে। এগুলো খুব বেশি কাজের কথা মনে হয় কি? কোনো দল নির্বাচনে আসবে কি না, তা দলের নিজস্ব বিচার-বিবেচনা। কিন্তু যদি কেউ কাউকে বাদ দিয়ে নির্বাচন করতে চায়, সেটা অবশ্যই গণতন্ত্রের জন্য ভালো হবে না। আবার কেউ যদি অগণতান্ত্রিক নির্বাচনী ব্যবস্থার দাবিতে অটল থাকে, তাহলেও সুবিধা হবে না।

এসব বাদ দিয়ে আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু-নিরপেক্ষ করার জন্য সবার পক্ষ থেকে চাপ তৈরি করা দরকার। গণবুদ্ধিজীবী, সুশীল সমাজ, মিডিয়া, রাজনৈতিক দল এবং সাধারণ মানুষের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা করা দরকার। সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্য সরকার ও নির্বাচন কমিশনকে চাপে রাখাই এ সময়ের জরুরি কাজ।
 
আজকের পত্রিকা: কেউ কেউ বলে থাকেন, সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে নির্বাচন হলে সংকট নিরসন সহজ হতে পারে। আপনি কী বলবেন?
শান্তনু মজুমদার: এটা বুদ্ধিবৃত্তিক আলোচনার জন্য ভালো। এটা নিয়ে কথাবার্তা হতে পারে আগামী নির্বাচনের পরে। একটা প্রশ্ন—যেসব দেশে এভাবে নির্বাচন হয়, সেখানে কি রাজনৈতিক সংকট ও সংঘর্ষ হয় না? সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে নির্বাচন হলেই যে আমাদের রাজনৈতিক সংকটগুলো সমাধান হবে, এটা আমি মনে করি না; বরং রাজনৈতিক সংস্কৃতির মানোন্নয়ন, গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করা, সরকারি দলের হাত থেকে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান মুক্ত রাখার কষ্টকর চ্যালেঞ্জগুলোতে আমাদের জয়ী হতে হবে। উত্তর-ঔপনিবেশিক প্রতিটি রাষ্ট্র এ ধরনের চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে যায়।

এখানে একটা নির্জলা বাস্তবতা উল্লেখ করা দরকার—দক্ষিণ এশিয়ার মানুষের মধ্যে গণতন্ত্র নিয়ে যে রকম উচ্ছ্বাস দেখা যায়, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ চর্চার ক্ষেত্রে কিন্তু সেই পর্যায়ের মনোযোগ দেখা যায় না। বাংলাদেশ এই প্রবণতার বাইরে নয়।
 
আজকের পত্রিকা: নির্বাচন কমিশনকে আইনে যে ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে, সেই ক্ষমতা তারা কেন ব্যবহার করতে পারে না?
শান্তনু মজুমদার: রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানগুলো তুড়ি বাজালেই শক্তিশালী বা ধ্বংস হয়ে যায় না। একটা সমাজে গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির বিকাশ এবং জনমনে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের চর্চার নিট যোগফল হলো গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান। আমাদের এখানে এগুলো বারবার জখম হয়েছে। যখন যাঁরা ক্ষমতায় ছিলেন, তাঁদের ওপরে এর দায় বর্তাবে অবশ্যই। যেসব ব্যক্তি নির্বাচনী পদগুলোতে থাকেন, তাঁদের কাছে পদে থাকাটাই প্রধান বিবেচনা হয়ে ওঠে কি না, তা-ও ভেবে দেখার বিষয়।
 
আজকের পত্রিকা: আওয়ামী লীগ প্রতি নির্বাচনের আগে কৌশল পরিবর্তন করছে। কিন্তু বিএনপি একই কৌশলে আছে। এভাবে বিএনপি কি অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে পারবে?
শান্তনু মজুমদার: বিএনপির কৌশল আমার জানা নেই। আমি বুঝি যে প্রতিটি রাজনৈতিক দল নিজ মতাদর্শ, বুদ্ধিমত্তা ও সামর্থ্য অনুযায়ী কৌশল নির্ধারণ করে। এগুলোর ভিত্তিতে কখনো তারা জয়ী হয়, কখনো হেরে যায়। এই বিষয়ে বাইরের লোকেরা কীই-বা বলতে পারবে!

কোনো দলকে আগ বাড়ানো, কোনো দলকে পিছু টানা বা কোনো দলকে টেনে নামানো নয়; বরং মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত মূল্যবোধসম্পন্ন দলগুলোকে সরকারে এবং বিরোধী দলে দেখতে পাওয়াটাই হবে বড় অর্জন। এ ক্ষেত্রে আরও বলতে চাই, আমাদের দেশে উদার গণতান্ত্রিক মূল্যবোধসম্পন্ন রাজনৈতিক দলের অভাব আছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মসজিদে আমির হামজাকে রাজনৈতিক আলোচনা করতে নিষেধ করায় লাঞ্ছিত বিএনপি নেতা

বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়ে পথচারীর মৃত্যু, মেট্রোরেল চলাচল বন্ধ

তিন ঘণ্টা পর আংশিক চালু মেট্রোরেল

বিমানবন্দর রেলস্টেশনে ট্রেন থেকে আগ্নেয়াস্ত্রভর্তি ট্রলি ব্যাগ উদ্ধার

সুদান: সবুজ স্বর্গে পচে যাচ্ছে খাবার, অন্য পাশে দুর্ভিক্ষে মারা যাচ্ছে শিশু

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেষ সাক্ষীর জেরা চলছে

বাসস, ঢাকা  
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।

আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।

এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।

গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।

পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্‌ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।

মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।

অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।

মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মসজিদে আমির হামজাকে রাজনৈতিক আলোচনা করতে নিষেধ করায় লাঞ্ছিত বিএনপি নেতা

বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়ে পথচারীর মৃত্যু, মেট্রোরেল চলাচল বন্ধ

তিন ঘণ্টা পর আংশিক চালু মেট্রোরেল

বিমানবন্দর রেলস্টেশনে ট্রেন থেকে আগ্নেয়াস্ত্রভর্তি ট্রলি ব্যাগ উদ্ধার

সুদান: সবুজ স্বর্গে পচে যাচ্ছে খাবার, অন্য পাশে দুর্ভিক্ষে মারা যাচ্ছে শিশু

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পাওয়ার আশায় সাগরে জেলেরা

  • এবার ভারতের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নিষেধাজ্ঞা দেয় সরকার।
  • গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলে পল্লিগুলোতে ব্যস্ততা।
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।

মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।

বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’

জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’

নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’

সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’

পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।

কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।

একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।

কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।

[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মসজিদে আমির হামজাকে রাজনৈতিক আলোচনা করতে নিষেধ করায় লাঞ্ছিত বিএনপি নেতা

বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়ে পথচারীর মৃত্যু, মেট্রোরেল চলাচল বন্ধ

তিন ঘণ্টা পর আংশিক চালু মেট্রোরেল

বিমানবন্দর রেলস্টেশনে ট্রেন থেকে আগ্নেয়াস্ত্রভর্তি ট্রলি ব্যাগ উদ্ধার

সুদান: সবুজ স্বর্গে পচে যাচ্ছে খাবার, অন্য পাশে দুর্ভিক্ষে মারা যাচ্ছে শিশু

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ভারতের নিষেধাজ্ঞা: স্থলবন্দর থেকে ফেরত আসছে রপ্তানি পণ্য

  • ক্রয়াদেশের চালান নিয়ে বাড়ছে দুশ্চিন্তা
  • সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষা
  • আজ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ডেকেছে জরুরি বৈঠক
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২০ মে ২০২৫, ০২: ৪৪
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।

ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।

গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।

বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।

জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’

বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।

এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।

স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।

সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।

আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।

এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মসজিদে আমির হামজাকে রাজনৈতিক আলোচনা করতে নিষেধ করায় লাঞ্ছিত বিএনপি নেতা

বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়ে পথচারীর মৃত্যু, মেট্রোরেল চলাচল বন্ধ

তিন ঘণ্টা পর আংশিক চালু মেট্রোরেল

বিমানবন্দর রেলস্টেশনে ট্রেন থেকে আগ্নেয়াস্ত্রভর্তি ট্রলি ব্যাগ উদ্ধার

সুদান: সবুজ স্বর্গে পচে যাচ্ছে খাবার, অন্য পাশে দুর্ভিক্ষে মারা যাচ্ছে শিশু

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।

১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।

গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।

সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?

১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।

ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মসজিদে আমির হামজাকে রাজনৈতিক আলোচনা করতে নিষেধ করায় লাঞ্ছিত বিএনপি নেতা

বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়ে পথচারীর মৃত্যু, মেট্রোরেল চলাচল বন্ধ

তিন ঘণ্টা পর আংশিক চালু মেট্রোরেল

বিমানবন্দর রেলস্টেশনে ট্রেন থেকে আগ্নেয়াস্ত্রভর্তি ট্রলি ব্যাগ উদ্ধার

সুদান: সবুজ স্বর্গে পচে যাচ্ছে খাবার, অন্য পাশে দুর্ভিক্ষে মারা যাচ্ছে শিশু

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত