Ajker Patrika

ঢাবিতে দিনদুপুরে গুলি করে ছিনতাইয়ের চেষ্টা

ফারুক ছিদ্দিক, ঢাবি 
আপডেট : ১০ ডিসেম্বর ২০২১, ১০: ০৮
ঢাবিতে দিনদুপুরে গুলি করে ছিনতাইয়ের চেষ্টা

বৃহস্পতিবার বেলা ১টা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) মোকাররম ভবনের সামনের রাস্তা দিয়ে মোটরসাইকেলে করে যাচ্ছিলেন এক ব্যক্তি। এ সময় পেছন থেকে আরও দুটি মোটরসাইকেলে করে চারজন এসে বাইক আরোহীর পিঠে ঝুলে থাকা ব্যাগ টান দেন। সঙ্গে সঙ্গেই রাস্তায় লুটিয়ে পড়েন ওই ব্যক্তি। উঠেই এক দৌড়ে সোজা চলে যান ঢাবির জিমনেসিয়ামের গেটের দিকে। পেছন দিক থেকে তাঁকে লক্ষ্য করে দুই রাউন্ড গুলি ছোড়া হয়। শব্দে আশপাশ কেঁপে ওঠে। তবে গুলি লক্ষ্যভ্রষ্ট হওয়ায় এ ঘটনায় কেউ হতাহত হননি। ভুক্তভোগী ওই ব্যক্তি ইসলামী ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা বলে জানা গেছে। তাঁর ব্যাগের পুরোটাতেই টাকা ছিল বলে ওই ব্যক্তি নিজেই জানিয়েছেন।

গতকালের এমন ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ইলিয়াস আহমেদ আজকের পত্রিকাকে এমন বর্ণনা দেন। এ বিষয়ে নীলক্ষেত পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মেহেদী সাংবাদিকদের বলেন, ‘মতিঝিল থেকে একজন লোক উবারের বাইকে করে আসছিলেন। তিনি দোয়েল চত্বর পার হওয়ার পরে কয়েকজন ঘিরে ধরে সঙ্গে থাকা ব্যাগ টানাটানি করছিল। পরে লোকটি পালিয়ে গেলে ছিনতাইকারীরাও চলে যায়।’ মেহেদী জানান, ‘এ ঘটনায় শাহবাগ থানা-পুলিশ ওই উবার বাইক আর চালককে হেফাজতে নিয়েছে।’

এদিকে বিষয়টিকে ঢাবি প্রক্টর অধ্যাপক ড এ কে এম গোলাম রাব্বানী ‘বিচ্ছিন্ন’ দাবি করলেও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের মনে নানা প্রশ্ন উঠছে। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের ভেতরেই এমন ঘটনা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঢাবির নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে নানা অভিযোগ তুলেছেন তাঁরা।

প্রক্টর গোলাম রব্বানী বলেন, ‘এটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা। উভয়পক্ষের কারও সঙ্গেই বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো সম্পর্ক নেই। ঘটনাস্থল আমরা পরিদর্শন করেছি। পুলিশ এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে সব বলা হয়েছে। যেকোনো মূল্যেই তাদের খুঁজে বের করা হবে। তবে ক্যাম্পাসকে নিরাপদ রাখার জন্য আমরা সব সময় চেষ্টা করে যাচ্ছি। আমাদের কিছু পদক্ষেপও রয়েছে।’

এর আগেও বিভিন্ন সময় বহিরাগতদের মাধ্যমে যৌন হয়রানি, যত্রতত্র গাড়ির চলাচল, বহিরাগতদের দৌরাত্ম্য, মাদক কারবার, ছিনতাইয়ের মতো ঘটনা নিয়ে মুখ খুলেছেন শিক্ষার্থীরা। রাতের বেলা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতর দিয়ে অবাধে ভারী যানবাহন চলাচল নিয়ে গত মাসে জগন্নাথ হলের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভও করেছেন। একই মাসে নিরাপদ ক্যাম্পাসের দাবিতে রাজু ভাস্কর্যে মানববন্ধন করেছেন ছাত্র অধিকার পরিষদের নেতা-কর্মীরা। ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের দুই গ্রুপের শিক্ষার্থীদের মারামারিতে নভেম্বরে চারুকলা অনুষদের আয়োজিত একটি চ্যারিটি কনসার্টও বন্ধ হয়ে যায়। তা ছাড়া ঢাবিতে স্থাপিত অধিকাংশ নষ্ট সিসিটিভি ও কবি সুফিয়া কামাল হলের সামনে স্পিডব্রেকার না থাকাসহ নানা বিষয়ে আতঙ্ক, শঙ্কা আর সংশয়ের কথাই জানালেন শিক্ষার্থীরা।

ঢাবির অ্যাকাউন্টিং ইনফরমেশন সিস্টেম বিভাগের শিক্ষার্থী মো. জাহিদ উদ্দিন বলেন, ‘টিএসসিতে সন্ধ্যায় গেলে মনে হয়, আমি নিজেই বহিরাগত। বিপুলসংখ্যক বহিরাগত এসে ক্যাম্পাসটাকে পার্ক বানিয়ে ফেলে। মাঝেমধ্যেই নিপীড়নের শিকার হন ছাত্রীরা। আমি মনে করি, ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা বাড়ানো হোক। নষ্ট সিসিটিভি সরিয়ে নতুন করে স্থাপন করা হোক।’

চলতি বছরের মে মাসের মাঝামাঝি সময়ে এলএসডি সেবন করে নিজের গলায় দা দিয়ে কেটে মারা যান ঢাবি শিক্ষার্থী হাফিজুর রহমান। সেই ঘটনাতেও তাৎক্ষণিকভাবে কোনো সিসিটিভি ফুটেজ পাওয়া যায়নি। পরে অন্য একজনের ধারণ করা ভিডিওতে গলাকাটার ঘটনা পরিষ্কার হয়। এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়মিত মাদকবিরোধী অভিযান চালায় প্রক্টরিয়াল মোবাইল টিম। কিন্তু করোনার পর ক্যাম্পাস খুললে ফের বহিরাগতদের ভিড় বাড়ে। বহিরাগতদের অনেকেই ক্যাম্পাসে এসে মাদক সেবন করেন বলে অভিযোগ অনেক শিক্ষার্থীর।

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে প্রক্টর গোলাম রব্বানী বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা সামাজিক মাধ্যমে বিভিন্ন বিষয়ে লেখালেখি করবে, এটাই স্বাভাবিক। তবে নির্দিষ্ট করে যদি তারা আমাদের কোনো পরামর্শ দেয়। সেটাও আমরা আলোচনা করব।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত