মমতাজউদ্দীন পাটোয়ারী

মার্কিন মুলুক থেকে প্রায়ই জানতে পারছি, সেখানকার স্কুলে বন্দুকধারী কোনো শিক্ষার্থী কিংবা উগ্র মানসিক কোনো তরুণ শিক্ষাঙ্গনে ঢুকে এলোপাতাড়ি গুলি ছুড়ছে। তাতে ছাত্র-শিক্ষক হতাহত হচ্ছে। শুধু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই নয়, সে দেশের দোকানপাট এবং বাসস্ট্যান্ডেও এ ধরনের হত্যাকাণ্ড প্রায়ই ঘটে থাকে। আমরা একদিকে বিস্মিত হই, অন্যদিকে প্রমাদ গুনি ভাগ্যিস আমাদের ছেলেপেলেরা এতটা বেপরোয়া হয়ে যায়নি।
কিন্তু সাভারের হাজী ইউনুছ আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী আশরাফুল আহসান জিতু তারই শিক্ষক উৎপল কুমার সরকারকে ক্রিকেট স্টাম্প দিয়ে পিটিয়ে গুরুতর আহত করে। হাসপাতালে মারা যান সেই শিক্ষক। শিক্ষকের অপরাধ ইভ টিজিংসহ আচরণগত সমস্যার কারণে শৃঙ্খলা কমিটির প্রধান হিসেবে জিতুকে শাসন করা। শিক্ষককে আঘাতের পরও সে শিক্ষাঙ্গনে এসে বীরদর্পে ঘুরে গেছে। জিতু এলাকায় কিশোর গ্যাং পরিচালনা করে বেড়াচ্ছিল। তার এভাবে বেড়ে ওঠার পেছনে অভিভাবকদের সমর্থন বা নীরব ভূমিকা ছিল। অথচ দশম শ্রেণির একজন শিক্ষার্থী এভাবে মানুষ হত্যার মতো গ্যাংস্টারে পরিণত হওয়া মার্কিন মুলুকের হঠাৎ রাইফেলধারী হয়ে ওঠার চেয়ে কোনো অংশেই কম নয়।
এ রকম গ্যাংস্টার দেশে খুব কম নেই। প্রায়ই এরা সংবাদের বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই বখাটে, মেয়েদের উত্ত্যক্তকারী শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের হুমকি-ধমকি দেওয়া ব্যক্তিদের নাম গণমাধ্যমে উঠে আসে। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রাবাসে এমন বেপরোয়া শিক্ষার্থীর আতঙ্কে বেশির ভাগ শিক্ষার্থীই শিক্ষাজীবন কাটান, দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষকদের অনেকেই এ ধরনের বেপরোয়া শিক্ষার্থীর আচরণে বিব্রত হন। এরা রাজনৈতিক পরিচয়ে এমন বেপরোয়া হয়ে ওঠার ‘সুযোগ’ পায়। আবার ধর্মীয় কিংবা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারিত গুজবে বিশ্বাসী হয়ে শিক্ষার্থী নামধারী কিশোর-তরুণদের একটি অংশ শিক্ষককে অপদস্থ করতে মোটেও দ্বিধা করে না। এর উদাহরণ নড়াইলের মির্জাপুর ইউনাইটেড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসকে জুতার মালা পরিয়ে অপদস্থ করা, তিনজন শিক্ষকের মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেওয়াসহ কলেজে ভয়ানক দাঙ্গা সৃষ্টির মতো পরিস্থিতি তৈরি করেছে। এর পেছনে উসকানিদাতা হয়তো অনেকেই ছিল। অথচ ফেসবুকের সরাসরি ধর্ম-সংক্রান্ত নয় এমন একটি পোস্ট একজন শিক্ষার্থী শেয়ার দেওয়ার অপরাধে হিন্দু সম্প্রদায়ের কলেজশিক্ষকদের বিরুদ্ধে উত্তেজনা সৃষ্টি, শিক্ষককে এভাবে অপদস্থ করা, মেরে ফেলতে তেড়ে আসার বিষয়টি কতটা হিংসাত্মক মনোবৃত্তির পরিচয় বহন করে, তা সহজেই অনুমেয়।
কদিন আগে মুন্সিগঞ্জের বিনোদপুর রামকুমার উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষক হৃদয় মণ্ডলকে তাঁরই শ্রেণিকক্ষের কয়েকজন শিক্ষার্থী ধর্ম অবমাননার মিথ্যা অপবাদ দিয়ে দেশে তুলকালাম ঘটিয়ে দিয়েছে। কয়েক বছর আগে একজন সংসদ সদস্য ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অপবাদ দিয়ে একজন প্রধান শিক্ষককে কান ধরিয়ে ওঠবস করিয়েছিলেন। অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এ ধরনের ঘটনা প্রায়ই ঘটছে। শিক্ষককে অপদস্থ করার পেছনে কখনো ছাত্র, কখনো পরিচালনা কমিটি, কখনো স্থানীয় প্রভাবশালী রাজনীতিবিদ শিক্ষক অংশ নিচ্ছেন।
আবার উল্টো অভিজ্ঞতাও কম নয়। নুসরাতকে পুড়িয়ে হত্যায় মাদ্রাসার অধ্যক্ষ, তাঁর কয়েকজন সহকর্মী এবং লম্পট ছাত্র, স্থানীয় রাজনীতির কিছু ব্যক্তি জড়িত থাকার অভিযোগও প্রমাণিত হয়েছে। পত্রপত্রিকায় শিক্ষার্থীকে শারীরিকভাবে নির্যাতন, ছাত্রাবাসে ছাত্রদের বলাৎকার, যৌন হয়রানি ইত্যাদিতেও জড়িত থাকার অসংখ্য ঘটনা বাংলাদেশে প্রায়ই ঘটে থাকে। অনেক ঘটনা গণমাধ্যমেও আসে না। কিন্তু শিশু শিক্ষার্থীর বলাৎকারের বিষয়টি এখন সমাজে বড় ধরনের দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এসব হচ্ছে কেন? এই প্রশ্নের উত্তর রয়েছে কয়েকটি বিষয়ের ওপর। প্রথমত পরিবার, দ্বিতীয়ত সমাজ, তৃতীয়ত শিক্ষাব্যবস্থা এবং চতুর্থত দেশের আর্থসামাজিক ও রাজনৈতিক ব্যবস্থায় নিয়মনীতি ও নৈতিকতার পরিবর্তে অনিয়ম, পেশিশক্তি, উচ্চবিত্তের অহংবোধ, দলবাজি ইত্যাদিকে প্রশ্রয় দেওয়া। গোটা শিক্ষাব্যবস্থার মধ্যে ক্রমাগত অনিয়ম ভর করছে, শিক্ষার পরিবর্তে অশিক্ষা ও কুশিক্ষার দাপট বৃদ্ধি পাচ্ছে। শিক্ষাঙ্গনের মর্যাদা বৃদ্ধির চেয়ে সামাজিক অন্ধবিশ্বাস, সাম্প্রদায়িকতা, বিজ্ঞানবিমুখতা, শিক্ষাসনদমুখিনতা, শিক্ষার বাণিজ্যিকীকরণ ইত্যাদি বৃদ্ধি পাচ্ছে। দীর্ঘ দিনের শিক্ষার অব্যবস্থাপনার কারণে এসবই দিন দিন প্রকট আকার ধারণ করছে। এরই প্রতিক্রিয়া এখন নীরবে বা সরবে প্রায়ই ঘটছে। অথচ শিক্ষা পশুত্ব, বিবেকহীনতা, সংকীর্ণতা, স্বার্থপরতা ইত্যাদি থেকে শিক্ষার্থীদের মুক্ত করার উপায় হিসেবে বিবেচিত।
আমাদের দেশের শিক্ষাঙ্গন এখন অনেক বিস্তৃত। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যাও এখন লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। দেশে কতটি কেজি স্কুল রয়েছে তার পরিসংখ্যান নেই। কতটি কওমি মাদ্রাসা আছে তা-ও হলফ করে বলা যাবে না। নুরানি মাদ্রাসার সংখ্যাও কারও জানা নেই। এ ছাড়া আছে আলিয়া মাদ্রাসা, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, এমপিওভুক্ত মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও কলেজ, সরকারি স্কুল এবং কলেজ, বিদেশি কারিকুলামে ইংরেজি মাধ্যম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, পাবলিক ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, কারিগরি শিক্ষা, নার্সিং, বিশেষায়িত ইত্যাদি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের যথার্থ পরিসংখ্যান পাওয়া মোটেও সহজ কাজ নয়।
সচরাচর বলা হয়ে থাকে, দেশে ৫ কোটি শিক্ষার্থী রয়েছে। তাহলে ধরে নিতে পারি, মোট জনসংখ্যার ৩ ভাগের ১ ভাগ শিক্ষার্থী। শিক্ষকতা পেশায় কতজন যুক্ত আছেন, তারও সঠিক পরিসংখ্যান নেই। বাংলাদেশের সংখ্যায় সবচেয়ে বড় পেশাজীবী হচ্ছেন শিক্ষকেরা। কিন্তু তাঁদের পরিচয় অনেকটাই প্রতিষ্ঠানভিত্তিক। চাকরিবিধি ও প্রতিষ্ঠানের মালিকানা কিংবা সরকারি স্বীকৃতির ওপর নির্ভরশীল। সে কারণে তাঁরা শিক্ষক হয়েও মর্যাদায় বেশির ভাগই ভিন্ন ভিন্ন গোত্রে যেন বিভক্ত। সংখ্যাটি ৩০ লাখের বেশি হবে। দেশে আরও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রয়োজন রয়েছে, আরও শিক্ষকেরও দরকার আছে। কিন্তু বলতে দ্বিধা নেই স্বাধীনতা-উত্তরকালে ফুলেফেঁপে ওঠা বিভিন্ন ধারার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয়েছে সম্পূর্ণরূপে অপরিকল্পিতভাবে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তালিকায় অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেরই নাম নেই, স্বীকৃতিও নেই। সরকারি বেতন কিংবা মাসিক ভাতা পান এমন শিক্ষক ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের চেয়ে না পাওয়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ঢের বেশি বলেই অনুমান করা যাচ্ছে। অথচ সব কটিকেই আমরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বলছি, স্বীকৃতি দিচ্ছি, আমাদের সন্তানদের শিক্ষার জন্য সেগুলোতে পাঠাচ্ছি।
শিক্ষার নামে এমন নৈরাজ্য কোনো দেশে চলতে দেওয়া হয় বলে আমাদের জানা নেই। সমমানের শিক্ষার দাবি করা হলেও শিক্ষাক্রমে রয়েছে ভিন্নতা, পঠনপাঠনের সুযোগ-সুবিধায়ও রয়েছে আকাশ-পাতাল পার্থক্য। পাঠদানে নিযুক্ত শিক্ষকদের মধ্যেও শিক্ষাগত যোগ্যতা, দক্ষতা, মানের ক্ষেত্রেও ন্যূনতম কোনো মানদণ্ড কার্যকর করা হচ্ছে না। পাঠ্যবইয়ের ক্ষেত্রেও রয়েছে নানা প্রতিষ্ঠানের নানা অবস্থান ও পছন্দ। শিক্ষার সঙ্গে এর সম্পর্ক খুঁজতে গেলে হতাশ হওয়া ছাড়া উপায় নেই। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের যেকোনো স্তরেই শিক্ষাক্রম বলে একটি আবশ্যিক অনুষঙ্গ রয়েছে। এর ভিত্তিতেই পাঠ্যপুস্তক রচিত হয়। শিক্ষার্থীদের পড়ানো হয়। কিন্তু বাংলাদেশে অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানই রয়েছে, যেগুলো বনিয়াদি শিক্ষার আবশ্যকীয় শিক্ষাক্রম অনুসরণ করে না। শিক্ষার্থীদের নানা ভাষা ও ধরনের বইপুস্তক এবং নিয়মনীতিতে বেড়ে তোলার চেষ্টা করে থাকে, যা শিক্ষাবিজ্ঞান সমর্থন করে না। শিক্ষাবিজ্ঞানের নির্দেশনা, অনুশীলন, চর্চা সবাই বোঝেন— এমনটিও নয়।
এ ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বাংলাদেশের শহরগুলোতে তিন-চার দশক আগ থেকেই বেড়ে উঠেছে, এখন তা গ্রামেও জায়গা করে নিচ্ছে। ফলে শিক্ষার নামে যা কিছু চলছে তার অনেকটাই শিক্ষার দর্শনের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়। কিন্তু কে শোনে কার কথা। অন্যদিকে সরকারি এবং অনুমোদনপ্রাপ্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যেও রয়েছে নানা জোড়াতালি দিয়ে বেড়ে ওঠার কয়েক দশকের নজির। যেখানে শিক্ষাক্রম, পাঠ্যপুস্তক, শিক্ষক প্রশিক্ষণ কার্যকর থাকলেও মানের বৈষম্য এতটাই প্রকট যে বেশির ভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানই মানসম্মত পাঠদানে সক্ষমতা রাখে না। ফলে এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অভ্যন্তরীণ দুর্বলতার কারণেই শিক্ষার্থীদের পাঠদান ও গড়ে তোলার প্রত্যাশা পূরণ করতে পারছে না। তাই সর্বত্রই শিক্ষার মানের সমস্যা প্রকট হয়ে উঠছে। বেশির ভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানই গুরুত্ব হারাতে বসেছে। এর ফলে একটি বিরাটসংখ্যক শিক্ষার্থী শিক্ষাবিমুখ হয়ে পড়ছে, ঝরেও পড়ছে, অদক্ষ জনগোষ্ঠীতে নাম লেখাচ্ছে।
বহুধাবিভক্ত এমন একটি শিক্ষাব্যবস্থা থেকে প্রত্যাশিত মানের শিক্ষার্থী ক্রমেই যেন কমে আসতে শুরু করেছে। বিশ্বজনীন এবং দেশীয় নানা বাস্তবতা এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। ফলে শিক্ষাব্যবস্থার অভ্যন্তরে শিশু-কিশোর, তরুণদের পঠনপাঠন নানা জটিল অবস্থার মুখে দাঁড়িয়েছে। এমন পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য বিরাজমান শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর কতটা কার্যকর ভূমিকা রাখা দরকার, নিজেরা কতটা প্রস্তুত সে ধরনের কোনো চিন্তাভাবনা নীতিনির্ধারণী এবং প্রতিষ্ঠান পর্যায়ে খুব একটা দেখা যায় না। সে কারণেই দেশের শিক্ষাব্যবস্থা আকারে বড় হয়ে উঠলেও প্রকারে বিভক্তি এবং দুর্বলতার ফলে গোটা শিক্ষাব্যবস্থাই নানা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনায় দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের বেশির ভাগই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আইন, বিধিবিধান জানেন না, মানেনও না। আবার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগেও রয়েছে অনিয়ম, দুর্নীতি এবং অযোগ্যদের নানা ফাঁকফোকর। শ্রেণিপাঠের পরিবর্তে কোচিং, নোটবই, গাইডবই এবং পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বনের নানা ব্যবস্থা। জিপিএ-৫ পাওয়ার দৌড়ে শিক্ষক এবং অভিভাবকদের মনোযোগ যেখানে, সেখানে শিক্ষার্থীর মানসগঠন, সাংস্কৃতিক বোধ, সমাজ ও বিশ্ববাস্তবতার জ্ঞান আহরণ হারিয়ে যেতে বসেছে। ফলে শিক্ষার নামে যা চলছে তাতে মেধাবী, যুক্তিশীল, উদার মানসিকতা, সৃজনশীলতা, উদ্ভাবনী ক্ষমতা শিক্ষার্থীদের মধ্যে হারিয়ে যেতে বসেছে। সে স্থান দখল করছে কার্যত অর্ধশিক্ষা, বখে যাওয়া, বেকার হওয়া এবং সমাজ ও সভ্যতাবিরোধী বিশ্বাসে বেড়ে ওঠা তরুণ-তরুণীতে।

মার্কিন মুলুক থেকে প্রায়ই জানতে পারছি, সেখানকার স্কুলে বন্দুকধারী কোনো শিক্ষার্থী কিংবা উগ্র মানসিক কোনো তরুণ শিক্ষাঙ্গনে ঢুকে এলোপাতাড়ি গুলি ছুড়ছে। তাতে ছাত্র-শিক্ষক হতাহত হচ্ছে। শুধু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই নয়, সে দেশের দোকানপাট এবং বাসস্ট্যান্ডেও এ ধরনের হত্যাকাণ্ড প্রায়ই ঘটে থাকে। আমরা একদিকে বিস্মিত হই, অন্যদিকে প্রমাদ গুনি ভাগ্যিস আমাদের ছেলেপেলেরা এতটা বেপরোয়া হয়ে যায়নি।
কিন্তু সাভারের হাজী ইউনুছ আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী আশরাফুল আহসান জিতু তারই শিক্ষক উৎপল কুমার সরকারকে ক্রিকেট স্টাম্প দিয়ে পিটিয়ে গুরুতর আহত করে। হাসপাতালে মারা যান সেই শিক্ষক। শিক্ষকের অপরাধ ইভ টিজিংসহ আচরণগত সমস্যার কারণে শৃঙ্খলা কমিটির প্রধান হিসেবে জিতুকে শাসন করা। শিক্ষককে আঘাতের পরও সে শিক্ষাঙ্গনে এসে বীরদর্পে ঘুরে গেছে। জিতু এলাকায় কিশোর গ্যাং পরিচালনা করে বেড়াচ্ছিল। তার এভাবে বেড়ে ওঠার পেছনে অভিভাবকদের সমর্থন বা নীরব ভূমিকা ছিল। অথচ দশম শ্রেণির একজন শিক্ষার্থী এভাবে মানুষ হত্যার মতো গ্যাংস্টারে পরিণত হওয়া মার্কিন মুলুকের হঠাৎ রাইফেলধারী হয়ে ওঠার চেয়ে কোনো অংশেই কম নয়।
এ রকম গ্যাংস্টার দেশে খুব কম নেই। প্রায়ই এরা সংবাদের বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই বখাটে, মেয়েদের উত্ত্যক্তকারী শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের হুমকি-ধমকি দেওয়া ব্যক্তিদের নাম গণমাধ্যমে উঠে আসে। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রাবাসে এমন বেপরোয়া শিক্ষার্থীর আতঙ্কে বেশির ভাগ শিক্ষার্থীই শিক্ষাজীবন কাটান, দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষকদের অনেকেই এ ধরনের বেপরোয়া শিক্ষার্থীর আচরণে বিব্রত হন। এরা রাজনৈতিক পরিচয়ে এমন বেপরোয়া হয়ে ওঠার ‘সুযোগ’ পায়। আবার ধর্মীয় কিংবা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারিত গুজবে বিশ্বাসী হয়ে শিক্ষার্থী নামধারী কিশোর-তরুণদের একটি অংশ শিক্ষককে অপদস্থ করতে মোটেও দ্বিধা করে না। এর উদাহরণ নড়াইলের মির্জাপুর ইউনাইটেড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসকে জুতার মালা পরিয়ে অপদস্থ করা, তিনজন শিক্ষকের মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেওয়াসহ কলেজে ভয়ানক দাঙ্গা সৃষ্টির মতো পরিস্থিতি তৈরি করেছে। এর পেছনে উসকানিদাতা হয়তো অনেকেই ছিল। অথচ ফেসবুকের সরাসরি ধর্ম-সংক্রান্ত নয় এমন একটি পোস্ট একজন শিক্ষার্থী শেয়ার দেওয়ার অপরাধে হিন্দু সম্প্রদায়ের কলেজশিক্ষকদের বিরুদ্ধে উত্তেজনা সৃষ্টি, শিক্ষককে এভাবে অপদস্থ করা, মেরে ফেলতে তেড়ে আসার বিষয়টি কতটা হিংসাত্মক মনোবৃত্তির পরিচয় বহন করে, তা সহজেই অনুমেয়।
কদিন আগে মুন্সিগঞ্জের বিনোদপুর রামকুমার উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষক হৃদয় মণ্ডলকে তাঁরই শ্রেণিকক্ষের কয়েকজন শিক্ষার্থী ধর্ম অবমাননার মিথ্যা অপবাদ দিয়ে দেশে তুলকালাম ঘটিয়ে দিয়েছে। কয়েক বছর আগে একজন সংসদ সদস্য ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অপবাদ দিয়ে একজন প্রধান শিক্ষককে কান ধরিয়ে ওঠবস করিয়েছিলেন। অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এ ধরনের ঘটনা প্রায়ই ঘটছে। শিক্ষককে অপদস্থ করার পেছনে কখনো ছাত্র, কখনো পরিচালনা কমিটি, কখনো স্থানীয় প্রভাবশালী রাজনীতিবিদ শিক্ষক অংশ নিচ্ছেন।
আবার উল্টো অভিজ্ঞতাও কম নয়। নুসরাতকে পুড়িয়ে হত্যায় মাদ্রাসার অধ্যক্ষ, তাঁর কয়েকজন সহকর্মী এবং লম্পট ছাত্র, স্থানীয় রাজনীতির কিছু ব্যক্তি জড়িত থাকার অভিযোগও প্রমাণিত হয়েছে। পত্রপত্রিকায় শিক্ষার্থীকে শারীরিকভাবে নির্যাতন, ছাত্রাবাসে ছাত্রদের বলাৎকার, যৌন হয়রানি ইত্যাদিতেও জড়িত থাকার অসংখ্য ঘটনা বাংলাদেশে প্রায়ই ঘটে থাকে। অনেক ঘটনা গণমাধ্যমেও আসে না। কিন্তু শিশু শিক্ষার্থীর বলাৎকারের বিষয়টি এখন সমাজে বড় ধরনের দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এসব হচ্ছে কেন? এই প্রশ্নের উত্তর রয়েছে কয়েকটি বিষয়ের ওপর। প্রথমত পরিবার, দ্বিতীয়ত সমাজ, তৃতীয়ত শিক্ষাব্যবস্থা এবং চতুর্থত দেশের আর্থসামাজিক ও রাজনৈতিক ব্যবস্থায় নিয়মনীতি ও নৈতিকতার পরিবর্তে অনিয়ম, পেশিশক্তি, উচ্চবিত্তের অহংবোধ, দলবাজি ইত্যাদিকে প্রশ্রয় দেওয়া। গোটা শিক্ষাব্যবস্থার মধ্যে ক্রমাগত অনিয়ম ভর করছে, শিক্ষার পরিবর্তে অশিক্ষা ও কুশিক্ষার দাপট বৃদ্ধি পাচ্ছে। শিক্ষাঙ্গনের মর্যাদা বৃদ্ধির চেয়ে সামাজিক অন্ধবিশ্বাস, সাম্প্রদায়িকতা, বিজ্ঞানবিমুখতা, শিক্ষাসনদমুখিনতা, শিক্ষার বাণিজ্যিকীকরণ ইত্যাদি বৃদ্ধি পাচ্ছে। দীর্ঘ দিনের শিক্ষার অব্যবস্থাপনার কারণে এসবই দিন দিন প্রকট আকার ধারণ করছে। এরই প্রতিক্রিয়া এখন নীরবে বা সরবে প্রায়ই ঘটছে। অথচ শিক্ষা পশুত্ব, বিবেকহীনতা, সংকীর্ণতা, স্বার্থপরতা ইত্যাদি থেকে শিক্ষার্থীদের মুক্ত করার উপায় হিসেবে বিবেচিত।
আমাদের দেশের শিক্ষাঙ্গন এখন অনেক বিস্তৃত। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যাও এখন লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। দেশে কতটি কেজি স্কুল রয়েছে তার পরিসংখ্যান নেই। কতটি কওমি মাদ্রাসা আছে তা-ও হলফ করে বলা যাবে না। নুরানি মাদ্রাসার সংখ্যাও কারও জানা নেই। এ ছাড়া আছে আলিয়া মাদ্রাসা, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, এমপিওভুক্ত মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও কলেজ, সরকারি স্কুল এবং কলেজ, বিদেশি কারিকুলামে ইংরেজি মাধ্যম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, পাবলিক ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, কারিগরি শিক্ষা, নার্সিং, বিশেষায়িত ইত্যাদি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের যথার্থ পরিসংখ্যান পাওয়া মোটেও সহজ কাজ নয়।
সচরাচর বলা হয়ে থাকে, দেশে ৫ কোটি শিক্ষার্থী রয়েছে। তাহলে ধরে নিতে পারি, মোট জনসংখ্যার ৩ ভাগের ১ ভাগ শিক্ষার্থী। শিক্ষকতা পেশায় কতজন যুক্ত আছেন, তারও সঠিক পরিসংখ্যান নেই। বাংলাদেশের সংখ্যায় সবচেয়ে বড় পেশাজীবী হচ্ছেন শিক্ষকেরা। কিন্তু তাঁদের পরিচয় অনেকটাই প্রতিষ্ঠানভিত্তিক। চাকরিবিধি ও প্রতিষ্ঠানের মালিকানা কিংবা সরকারি স্বীকৃতির ওপর নির্ভরশীল। সে কারণে তাঁরা শিক্ষক হয়েও মর্যাদায় বেশির ভাগই ভিন্ন ভিন্ন গোত্রে যেন বিভক্ত। সংখ্যাটি ৩০ লাখের বেশি হবে। দেশে আরও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রয়োজন রয়েছে, আরও শিক্ষকেরও দরকার আছে। কিন্তু বলতে দ্বিধা নেই স্বাধীনতা-উত্তরকালে ফুলেফেঁপে ওঠা বিভিন্ন ধারার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয়েছে সম্পূর্ণরূপে অপরিকল্পিতভাবে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তালিকায় অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেরই নাম নেই, স্বীকৃতিও নেই। সরকারি বেতন কিংবা মাসিক ভাতা পান এমন শিক্ষক ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের চেয়ে না পাওয়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ঢের বেশি বলেই অনুমান করা যাচ্ছে। অথচ সব কটিকেই আমরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বলছি, স্বীকৃতি দিচ্ছি, আমাদের সন্তানদের শিক্ষার জন্য সেগুলোতে পাঠাচ্ছি।
শিক্ষার নামে এমন নৈরাজ্য কোনো দেশে চলতে দেওয়া হয় বলে আমাদের জানা নেই। সমমানের শিক্ষার দাবি করা হলেও শিক্ষাক্রমে রয়েছে ভিন্নতা, পঠনপাঠনের সুযোগ-সুবিধায়ও রয়েছে আকাশ-পাতাল পার্থক্য। পাঠদানে নিযুক্ত শিক্ষকদের মধ্যেও শিক্ষাগত যোগ্যতা, দক্ষতা, মানের ক্ষেত্রেও ন্যূনতম কোনো মানদণ্ড কার্যকর করা হচ্ছে না। পাঠ্যবইয়ের ক্ষেত্রেও রয়েছে নানা প্রতিষ্ঠানের নানা অবস্থান ও পছন্দ। শিক্ষার সঙ্গে এর সম্পর্ক খুঁজতে গেলে হতাশ হওয়া ছাড়া উপায় নেই। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের যেকোনো স্তরেই শিক্ষাক্রম বলে একটি আবশ্যিক অনুষঙ্গ রয়েছে। এর ভিত্তিতেই পাঠ্যপুস্তক রচিত হয়। শিক্ষার্থীদের পড়ানো হয়। কিন্তু বাংলাদেশে অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানই রয়েছে, যেগুলো বনিয়াদি শিক্ষার আবশ্যকীয় শিক্ষাক্রম অনুসরণ করে না। শিক্ষার্থীদের নানা ভাষা ও ধরনের বইপুস্তক এবং নিয়মনীতিতে বেড়ে তোলার চেষ্টা করে থাকে, যা শিক্ষাবিজ্ঞান সমর্থন করে না। শিক্ষাবিজ্ঞানের নির্দেশনা, অনুশীলন, চর্চা সবাই বোঝেন— এমনটিও নয়।
এ ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বাংলাদেশের শহরগুলোতে তিন-চার দশক আগ থেকেই বেড়ে উঠেছে, এখন তা গ্রামেও জায়গা করে নিচ্ছে। ফলে শিক্ষার নামে যা কিছু চলছে তার অনেকটাই শিক্ষার দর্শনের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়। কিন্তু কে শোনে কার কথা। অন্যদিকে সরকারি এবং অনুমোদনপ্রাপ্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যেও রয়েছে নানা জোড়াতালি দিয়ে বেড়ে ওঠার কয়েক দশকের নজির। যেখানে শিক্ষাক্রম, পাঠ্যপুস্তক, শিক্ষক প্রশিক্ষণ কার্যকর থাকলেও মানের বৈষম্য এতটাই প্রকট যে বেশির ভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানই মানসম্মত পাঠদানে সক্ষমতা রাখে না। ফলে এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অভ্যন্তরীণ দুর্বলতার কারণেই শিক্ষার্থীদের পাঠদান ও গড়ে তোলার প্রত্যাশা পূরণ করতে পারছে না। তাই সর্বত্রই শিক্ষার মানের সমস্যা প্রকট হয়ে উঠছে। বেশির ভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানই গুরুত্ব হারাতে বসেছে। এর ফলে একটি বিরাটসংখ্যক শিক্ষার্থী শিক্ষাবিমুখ হয়ে পড়ছে, ঝরেও পড়ছে, অদক্ষ জনগোষ্ঠীতে নাম লেখাচ্ছে।
বহুধাবিভক্ত এমন একটি শিক্ষাব্যবস্থা থেকে প্রত্যাশিত মানের শিক্ষার্থী ক্রমেই যেন কমে আসতে শুরু করেছে। বিশ্বজনীন এবং দেশীয় নানা বাস্তবতা এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। ফলে শিক্ষাব্যবস্থার অভ্যন্তরে শিশু-কিশোর, তরুণদের পঠনপাঠন নানা জটিল অবস্থার মুখে দাঁড়িয়েছে। এমন পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য বিরাজমান শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর কতটা কার্যকর ভূমিকা রাখা দরকার, নিজেরা কতটা প্রস্তুত সে ধরনের কোনো চিন্তাভাবনা নীতিনির্ধারণী এবং প্রতিষ্ঠান পর্যায়ে খুব একটা দেখা যায় না। সে কারণেই দেশের শিক্ষাব্যবস্থা আকারে বড় হয়ে উঠলেও প্রকারে বিভক্তি এবং দুর্বলতার ফলে গোটা শিক্ষাব্যবস্থাই নানা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনায় দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের বেশির ভাগই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আইন, বিধিবিধান জানেন না, মানেনও না। আবার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগেও রয়েছে অনিয়ম, দুর্নীতি এবং অযোগ্যদের নানা ফাঁকফোকর। শ্রেণিপাঠের পরিবর্তে কোচিং, নোটবই, গাইডবই এবং পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বনের নানা ব্যবস্থা। জিপিএ-৫ পাওয়ার দৌড়ে শিক্ষক এবং অভিভাবকদের মনোযোগ যেখানে, সেখানে শিক্ষার্থীর মানসগঠন, সাংস্কৃতিক বোধ, সমাজ ও বিশ্ববাস্তবতার জ্ঞান আহরণ হারিয়ে যেতে বসেছে। ফলে শিক্ষার নামে যা চলছে তাতে মেধাবী, যুক্তিশীল, উদার মানসিকতা, সৃজনশীলতা, উদ্ভাবনী ক্ষমতা শিক্ষার্থীদের মধ্যে হারিয়ে যেতে বসেছে। সে স্থান দখল করছে কার্যত অর্ধশিক্ষা, বখে যাওয়া, বেকার হওয়া এবং সমাজ ও সভ্যতাবিরোধী বিশ্বাসে বেড়ে ওঠা তরুণ-তরুণীতে।
মমতাজউদ্দীন পাটোয়ারী

মার্কিন মুলুক থেকে প্রায়ই জানতে পারছি, সেখানকার স্কুলে বন্দুকধারী কোনো শিক্ষার্থী কিংবা উগ্র মানসিক কোনো তরুণ শিক্ষাঙ্গনে ঢুকে এলোপাতাড়ি গুলি ছুড়ছে। তাতে ছাত্র-শিক্ষক হতাহত হচ্ছে। শুধু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই নয়, সে দেশের দোকানপাট এবং বাসস্ট্যান্ডেও এ ধরনের হত্যাকাণ্ড প্রায়ই ঘটে থাকে। আমরা একদিকে বিস্মিত হই, অন্যদিকে প্রমাদ গুনি ভাগ্যিস আমাদের ছেলেপেলেরা এতটা বেপরোয়া হয়ে যায়নি।
কিন্তু সাভারের হাজী ইউনুছ আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী আশরাফুল আহসান জিতু তারই শিক্ষক উৎপল কুমার সরকারকে ক্রিকেট স্টাম্প দিয়ে পিটিয়ে গুরুতর আহত করে। হাসপাতালে মারা যান সেই শিক্ষক। শিক্ষকের অপরাধ ইভ টিজিংসহ আচরণগত সমস্যার কারণে শৃঙ্খলা কমিটির প্রধান হিসেবে জিতুকে শাসন করা। শিক্ষককে আঘাতের পরও সে শিক্ষাঙ্গনে এসে বীরদর্পে ঘুরে গেছে। জিতু এলাকায় কিশোর গ্যাং পরিচালনা করে বেড়াচ্ছিল। তার এভাবে বেড়ে ওঠার পেছনে অভিভাবকদের সমর্থন বা নীরব ভূমিকা ছিল। অথচ দশম শ্রেণির একজন শিক্ষার্থী এভাবে মানুষ হত্যার মতো গ্যাংস্টারে পরিণত হওয়া মার্কিন মুলুকের হঠাৎ রাইফেলধারী হয়ে ওঠার চেয়ে কোনো অংশেই কম নয়।
এ রকম গ্যাংস্টার দেশে খুব কম নেই। প্রায়ই এরা সংবাদের বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই বখাটে, মেয়েদের উত্ত্যক্তকারী শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের হুমকি-ধমকি দেওয়া ব্যক্তিদের নাম গণমাধ্যমে উঠে আসে। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রাবাসে এমন বেপরোয়া শিক্ষার্থীর আতঙ্কে বেশির ভাগ শিক্ষার্থীই শিক্ষাজীবন কাটান, দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষকদের অনেকেই এ ধরনের বেপরোয়া শিক্ষার্থীর আচরণে বিব্রত হন। এরা রাজনৈতিক পরিচয়ে এমন বেপরোয়া হয়ে ওঠার ‘সুযোগ’ পায়। আবার ধর্মীয় কিংবা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারিত গুজবে বিশ্বাসী হয়ে শিক্ষার্থী নামধারী কিশোর-তরুণদের একটি অংশ শিক্ষককে অপদস্থ করতে মোটেও দ্বিধা করে না। এর উদাহরণ নড়াইলের মির্জাপুর ইউনাইটেড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসকে জুতার মালা পরিয়ে অপদস্থ করা, তিনজন শিক্ষকের মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেওয়াসহ কলেজে ভয়ানক দাঙ্গা সৃষ্টির মতো পরিস্থিতি তৈরি করেছে। এর পেছনে উসকানিদাতা হয়তো অনেকেই ছিল। অথচ ফেসবুকের সরাসরি ধর্ম-সংক্রান্ত নয় এমন একটি পোস্ট একজন শিক্ষার্থী শেয়ার দেওয়ার অপরাধে হিন্দু সম্প্রদায়ের কলেজশিক্ষকদের বিরুদ্ধে উত্তেজনা সৃষ্টি, শিক্ষককে এভাবে অপদস্থ করা, মেরে ফেলতে তেড়ে আসার বিষয়টি কতটা হিংসাত্মক মনোবৃত্তির পরিচয় বহন করে, তা সহজেই অনুমেয়।
কদিন আগে মুন্সিগঞ্জের বিনোদপুর রামকুমার উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষক হৃদয় মণ্ডলকে তাঁরই শ্রেণিকক্ষের কয়েকজন শিক্ষার্থী ধর্ম অবমাননার মিথ্যা অপবাদ দিয়ে দেশে তুলকালাম ঘটিয়ে দিয়েছে। কয়েক বছর আগে একজন সংসদ সদস্য ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অপবাদ দিয়ে একজন প্রধান শিক্ষককে কান ধরিয়ে ওঠবস করিয়েছিলেন। অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এ ধরনের ঘটনা প্রায়ই ঘটছে। শিক্ষককে অপদস্থ করার পেছনে কখনো ছাত্র, কখনো পরিচালনা কমিটি, কখনো স্থানীয় প্রভাবশালী রাজনীতিবিদ শিক্ষক অংশ নিচ্ছেন।
আবার উল্টো অভিজ্ঞতাও কম নয়। নুসরাতকে পুড়িয়ে হত্যায় মাদ্রাসার অধ্যক্ষ, তাঁর কয়েকজন সহকর্মী এবং লম্পট ছাত্র, স্থানীয় রাজনীতির কিছু ব্যক্তি জড়িত থাকার অভিযোগও প্রমাণিত হয়েছে। পত্রপত্রিকায় শিক্ষার্থীকে শারীরিকভাবে নির্যাতন, ছাত্রাবাসে ছাত্রদের বলাৎকার, যৌন হয়রানি ইত্যাদিতেও জড়িত থাকার অসংখ্য ঘটনা বাংলাদেশে প্রায়ই ঘটে থাকে। অনেক ঘটনা গণমাধ্যমেও আসে না। কিন্তু শিশু শিক্ষার্থীর বলাৎকারের বিষয়টি এখন সমাজে বড় ধরনের দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এসব হচ্ছে কেন? এই প্রশ্নের উত্তর রয়েছে কয়েকটি বিষয়ের ওপর। প্রথমত পরিবার, দ্বিতীয়ত সমাজ, তৃতীয়ত শিক্ষাব্যবস্থা এবং চতুর্থত দেশের আর্থসামাজিক ও রাজনৈতিক ব্যবস্থায় নিয়মনীতি ও নৈতিকতার পরিবর্তে অনিয়ম, পেশিশক্তি, উচ্চবিত্তের অহংবোধ, দলবাজি ইত্যাদিকে প্রশ্রয় দেওয়া। গোটা শিক্ষাব্যবস্থার মধ্যে ক্রমাগত অনিয়ম ভর করছে, শিক্ষার পরিবর্তে অশিক্ষা ও কুশিক্ষার দাপট বৃদ্ধি পাচ্ছে। শিক্ষাঙ্গনের মর্যাদা বৃদ্ধির চেয়ে সামাজিক অন্ধবিশ্বাস, সাম্প্রদায়িকতা, বিজ্ঞানবিমুখতা, শিক্ষাসনদমুখিনতা, শিক্ষার বাণিজ্যিকীকরণ ইত্যাদি বৃদ্ধি পাচ্ছে। দীর্ঘ দিনের শিক্ষার অব্যবস্থাপনার কারণে এসবই দিন দিন প্রকট আকার ধারণ করছে। এরই প্রতিক্রিয়া এখন নীরবে বা সরবে প্রায়ই ঘটছে। অথচ শিক্ষা পশুত্ব, বিবেকহীনতা, সংকীর্ণতা, স্বার্থপরতা ইত্যাদি থেকে শিক্ষার্থীদের মুক্ত করার উপায় হিসেবে বিবেচিত।
আমাদের দেশের শিক্ষাঙ্গন এখন অনেক বিস্তৃত। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যাও এখন লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। দেশে কতটি কেজি স্কুল রয়েছে তার পরিসংখ্যান নেই। কতটি কওমি মাদ্রাসা আছে তা-ও হলফ করে বলা যাবে না। নুরানি মাদ্রাসার সংখ্যাও কারও জানা নেই। এ ছাড়া আছে আলিয়া মাদ্রাসা, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, এমপিওভুক্ত মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও কলেজ, সরকারি স্কুল এবং কলেজ, বিদেশি কারিকুলামে ইংরেজি মাধ্যম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, পাবলিক ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, কারিগরি শিক্ষা, নার্সিং, বিশেষায়িত ইত্যাদি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের যথার্থ পরিসংখ্যান পাওয়া মোটেও সহজ কাজ নয়।
সচরাচর বলা হয়ে থাকে, দেশে ৫ কোটি শিক্ষার্থী রয়েছে। তাহলে ধরে নিতে পারি, মোট জনসংখ্যার ৩ ভাগের ১ ভাগ শিক্ষার্থী। শিক্ষকতা পেশায় কতজন যুক্ত আছেন, তারও সঠিক পরিসংখ্যান নেই। বাংলাদেশের সংখ্যায় সবচেয়ে বড় পেশাজীবী হচ্ছেন শিক্ষকেরা। কিন্তু তাঁদের পরিচয় অনেকটাই প্রতিষ্ঠানভিত্তিক। চাকরিবিধি ও প্রতিষ্ঠানের মালিকানা কিংবা সরকারি স্বীকৃতির ওপর নির্ভরশীল। সে কারণে তাঁরা শিক্ষক হয়েও মর্যাদায় বেশির ভাগই ভিন্ন ভিন্ন গোত্রে যেন বিভক্ত। সংখ্যাটি ৩০ লাখের বেশি হবে। দেশে আরও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রয়োজন রয়েছে, আরও শিক্ষকেরও দরকার আছে। কিন্তু বলতে দ্বিধা নেই স্বাধীনতা-উত্তরকালে ফুলেফেঁপে ওঠা বিভিন্ন ধারার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয়েছে সম্পূর্ণরূপে অপরিকল্পিতভাবে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তালিকায় অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেরই নাম নেই, স্বীকৃতিও নেই। সরকারি বেতন কিংবা মাসিক ভাতা পান এমন শিক্ষক ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের চেয়ে না পাওয়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ঢের বেশি বলেই অনুমান করা যাচ্ছে। অথচ সব কটিকেই আমরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বলছি, স্বীকৃতি দিচ্ছি, আমাদের সন্তানদের শিক্ষার জন্য সেগুলোতে পাঠাচ্ছি।
শিক্ষার নামে এমন নৈরাজ্য কোনো দেশে চলতে দেওয়া হয় বলে আমাদের জানা নেই। সমমানের শিক্ষার দাবি করা হলেও শিক্ষাক্রমে রয়েছে ভিন্নতা, পঠনপাঠনের সুযোগ-সুবিধায়ও রয়েছে আকাশ-পাতাল পার্থক্য। পাঠদানে নিযুক্ত শিক্ষকদের মধ্যেও শিক্ষাগত যোগ্যতা, দক্ষতা, মানের ক্ষেত্রেও ন্যূনতম কোনো মানদণ্ড কার্যকর করা হচ্ছে না। পাঠ্যবইয়ের ক্ষেত্রেও রয়েছে নানা প্রতিষ্ঠানের নানা অবস্থান ও পছন্দ। শিক্ষার সঙ্গে এর সম্পর্ক খুঁজতে গেলে হতাশ হওয়া ছাড়া উপায় নেই। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের যেকোনো স্তরেই শিক্ষাক্রম বলে একটি আবশ্যিক অনুষঙ্গ রয়েছে। এর ভিত্তিতেই পাঠ্যপুস্তক রচিত হয়। শিক্ষার্থীদের পড়ানো হয়। কিন্তু বাংলাদেশে অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানই রয়েছে, যেগুলো বনিয়াদি শিক্ষার আবশ্যকীয় শিক্ষাক্রম অনুসরণ করে না। শিক্ষার্থীদের নানা ভাষা ও ধরনের বইপুস্তক এবং নিয়মনীতিতে বেড়ে তোলার চেষ্টা করে থাকে, যা শিক্ষাবিজ্ঞান সমর্থন করে না। শিক্ষাবিজ্ঞানের নির্দেশনা, অনুশীলন, চর্চা সবাই বোঝেন— এমনটিও নয়।
এ ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বাংলাদেশের শহরগুলোতে তিন-চার দশক আগ থেকেই বেড়ে উঠেছে, এখন তা গ্রামেও জায়গা করে নিচ্ছে। ফলে শিক্ষার নামে যা কিছু চলছে তার অনেকটাই শিক্ষার দর্শনের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়। কিন্তু কে শোনে কার কথা। অন্যদিকে সরকারি এবং অনুমোদনপ্রাপ্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যেও রয়েছে নানা জোড়াতালি দিয়ে বেড়ে ওঠার কয়েক দশকের নজির। যেখানে শিক্ষাক্রম, পাঠ্যপুস্তক, শিক্ষক প্রশিক্ষণ কার্যকর থাকলেও মানের বৈষম্য এতটাই প্রকট যে বেশির ভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানই মানসম্মত পাঠদানে সক্ষমতা রাখে না। ফলে এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অভ্যন্তরীণ দুর্বলতার কারণেই শিক্ষার্থীদের পাঠদান ও গড়ে তোলার প্রত্যাশা পূরণ করতে পারছে না। তাই সর্বত্রই শিক্ষার মানের সমস্যা প্রকট হয়ে উঠছে। বেশির ভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানই গুরুত্ব হারাতে বসেছে। এর ফলে একটি বিরাটসংখ্যক শিক্ষার্থী শিক্ষাবিমুখ হয়ে পড়ছে, ঝরেও পড়ছে, অদক্ষ জনগোষ্ঠীতে নাম লেখাচ্ছে।
বহুধাবিভক্ত এমন একটি শিক্ষাব্যবস্থা থেকে প্রত্যাশিত মানের শিক্ষার্থী ক্রমেই যেন কমে আসতে শুরু করেছে। বিশ্বজনীন এবং দেশীয় নানা বাস্তবতা এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। ফলে শিক্ষাব্যবস্থার অভ্যন্তরে শিশু-কিশোর, তরুণদের পঠনপাঠন নানা জটিল অবস্থার মুখে দাঁড়িয়েছে। এমন পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য বিরাজমান শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর কতটা কার্যকর ভূমিকা রাখা দরকার, নিজেরা কতটা প্রস্তুত সে ধরনের কোনো চিন্তাভাবনা নীতিনির্ধারণী এবং প্রতিষ্ঠান পর্যায়ে খুব একটা দেখা যায় না। সে কারণেই দেশের শিক্ষাব্যবস্থা আকারে বড় হয়ে উঠলেও প্রকারে বিভক্তি এবং দুর্বলতার ফলে গোটা শিক্ষাব্যবস্থাই নানা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনায় দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের বেশির ভাগই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আইন, বিধিবিধান জানেন না, মানেনও না। আবার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগেও রয়েছে অনিয়ম, দুর্নীতি এবং অযোগ্যদের নানা ফাঁকফোকর। শ্রেণিপাঠের পরিবর্তে কোচিং, নোটবই, গাইডবই এবং পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বনের নানা ব্যবস্থা। জিপিএ-৫ পাওয়ার দৌড়ে শিক্ষক এবং অভিভাবকদের মনোযোগ যেখানে, সেখানে শিক্ষার্থীর মানসগঠন, সাংস্কৃতিক বোধ, সমাজ ও বিশ্ববাস্তবতার জ্ঞান আহরণ হারিয়ে যেতে বসেছে। ফলে শিক্ষার নামে যা চলছে তাতে মেধাবী, যুক্তিশীল, উদার মানসিকতা, সৃজনশীলতা, উদ্ভাবনী ক্ষমতা শিক্ষার্থীদের মধ্যে হারিয়ে যেতে বসেছে। সে স্থান দখল করছে কার্যত অর্ধশিক্ষা, বখে যাওয়া, বেকার হওয়া এবং সমাজ ও সভ্যতাবিরোধী বিশ্বাসে বেড়ে ওঠা তরুণ-তরুণীতে।

মার্কিন মুলুক থেকে প্রায়ই জানতে পারছি, সেখানকার স্কুলে বন্দুকধারী কোনো শিক্ষার্থী কিংবা উগ্র মানসিক কোনো তরুণ শিক্ষাঙ্গনে ঢুকে এলোপাতাড়ি গুলি ছুড়ছে। তাতে ছাত্র-শিক্ষক হতাহত হচ্ছে। শুধু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই নয়, সে দেশের দোকানপাট এবং বাসস্ট্যান্ডেও এ ধরনের হত্যাকাণ্ড প্রায়ই ঘটে থাকে। আমরা একদিকে বিস্মিত হই, অন্যদিকে প্রমাদ গুনি ভাগ্যিস আমাদের ছেলেপেলেরা এতটা বেপরোয়া হয়ে যায়নি।
কিন্তু সাভারের হাজী ইউনুছ আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী আশরাফুল আহসান জিতু তারই শিক্ষক উৎপল কুমার সরকারকে ক্রিকেট স্টাম্প দিয়ে পিটিয়ে গুরুতর আহত করে। হাসপাতালে মারা যান সেই শিক্ষক। শিক্ষকের অপরাধ ইভ টিজিংসহ আচরণগত সমস্যার কারণে শৃঙ্খলা কমিটির প্রধান হিসেবে জিতুকে শাসন করা। শিক্ষককে আঘাতের পরও সে শিক্ষাঙ্গনে এসে বীরদর্পে ঘুরে গেছে। জিতু এলাকায় কিশোর গ্যাং পরিচালনা করে বেড়াচ্ছিল। তার এভাবে বেড়ে ওঠার পেছনে অভিভাবকদের সমর্থন বা নীরব ভূমিকা ছিল। অথচ দশম শ্রেণির একজন শিক্ষার্থী এভাবে মানুষ হত্যার মতো গ্যাংস্টারে পরিণত হওয়া মার্কিন মুলুকের হঠাৎ রাইফেলধারী হয়ে ওঠার চেয়ে কোনো অংশেই কম নয়।
এ রকম গ্যাংস্টার দেশে খুব কম নেই। প্রায়ই এরা সংবাদের বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই বখাটে, মেয়েদের উত্ত্যক্তকারী শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের হুমকি-ধমকি দেওয়া ব্যক্তিদের নাম গণমাধ্যমে উঠে আসে। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রাবাসে এমন বেপরোয়া শিক্ষার্থীর আতঙ্কে বেশির ভাগ শিক্ষার্থীই শিক্ষাজীবন কাটান, দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষকদের অনেকেই এ ধরনের বেপরোয়া শিক্ষার্থীর আচরণে বিব্রত হন। এরা রাজনৈতিক পরিচয়ে এমন বেপরোয়া হয়ে ওঠার ‘সুযোগ’ পায়। আবার ধর্মীয় কিংবা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারিত গুজবে বিশ্বাসী হয়ে শিক্ষার্থী নামধারী কিশোর-তরুণদের একটি অংশ শিক্ষককে অপদস্থ করতে মোটেও দ্বিধা করে না। এর উদাহরণ নড়াইলের মির্জাপুর ইউনাইটেড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসকে জুতার মালা পরিয়ে অপদস্থ করা, তিনজন শিক্ষকের মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেওয়াসহ কলেজে ভয়ানক দাঙ্গা সৃষ্টির মতো পরিস্থিতি তৈরি করেছে। এর পেছনে উসকানিদাতা হয়তো অনেকেই ছিল। অথচ ফেসবুকের সরাসরি ধর্ম-সংক্রান্ত নয় এমন একটি পোস্ট একজন শিক্ষার্থী শেয়ার দেওয়ার অপরাধে হিন্দু সম্প্রদায়ের কলেজশিক্ষকদের বিরুদ্ধে উত্তেজনা সৃষ্টি, শিক্ষককে এভাবে অপদস্থ করা, মেরে ফেলতে তেড়ে আসার বিষয়টি কতটা হিংসাত্মক মনোবৃত্তির পরিচয় বহন করে, তা সহজেই অনুমেয়।
কদিন আগে মুন্সিগঞ্জের বিনোদপুর রামকুমার উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষক হৃদয় মণ্ডলকে তাঁরই শ্রেণিকক্ষের কয়েকজন শিক্ষার্থী ধর্ম অবমাননার মিথ্যা অপবাদ দিয়ে দেশে তুলকালাম ঘটিয়ে দিয়েছে। কয়েক বছর আগে একজন সংসদ সদস্য ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অপবাদ দিয়ে একজন প্রধান শিক্ষককে কান ধরিয়ে ওঠবস করিয়েছিলেন। অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এ ধরনের ঘটনা প্রায়ই ঘটছে। শিক্ষককে অপদস্থ করার পেছনে কখনো ছাত্র, কখনো পরিচালনা কমিটি, কখনো স্থানীয় প্রভাবশালী রাজনীতিবিদ শিক্ষক অংশ নিচ্ছেন।
আবার উল্টো অভিজ্ঞতাও কম নয়। নুসরাতকে পুড়িয়ে হত্যায় মাদ্রাসার অধ্যক্ষ, তাঁর কয়েকজন সহকর্মী এবং লম্পট ছাত্র, স্থানীয় রাজনীতির কিছু ব্যক্তি জড়িত থাকার অভিযোগও প্রমাণিত হয়েছে। পত্রপত্রিকায় শিক্ষার্থীকে শারীরিকভাবে নির্যাতন, ছাত্রাবাসে ছাত্রদের বলাৎকার, যৌন হয়রানি ইত্যাদিতেও জড়িত থাকার অসংখ্য ঘটনা বাংলাদেশে প্রায়ই ঘটে থাকে। অনেক ঘটনা গণমাধ্যমেও আসে না। কিন্তু শিশু শিক্ষার্থীর বলাৎকারের বিষয়টি এখন সমাজে বড় ধরনের দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এসব হচ্ছে কেন? এই প্রশ্নের উত্তর রয়েছে কয়েকটি বিষয়ের ওপর। প্রথমত পরিবার, দ্বিতীয়ত সমাজ, তৃতীয়ত শিক্ষাব্যবস্থা এবং চতুর্থত দেশের আর্থসামাজিক ও রাজনৈতিক ব্যবস্থায় নিয়মনীতি ও নৈতিকতার পরিবর্তে অনিয়ম, পেশিশক্তি, উচ্চবিত্তের অহংবোধ, দলবাজি ইত্যাদিকে প্রশ্রয় দেওয়া। গোটা শিক্ষাব্যবস্থার মধ্যে ক্রমাগত অনিয়ম ভর করছে, শিক্ষার পরিবর্তে অশিক্ষা ও কুশিক্ষার দাপট বৃদ্ধি পাচ্ছে। শিক্ষাঙ্গনের মর্যাদা বৃদ্ধির চেয়ে সামাজিক অন্ধবিশ্বাস, সাম্প্রদায়িকতা, বিজ্ঞানবিমুখতা, শিক্ষাসনদমুখিনতা, শিক্ষার বাণিজ্যিকীকরণ ইত্যাদি বৃদ্ধি পাচ্ছে। দীর্ঘ দিনের শিক্ষার অব্যবস্থাপনার কারণে এসবই দিন দিন প্রকট আকার ধারণ করছে। এরই প্রতিক্রিয়া এখন নীরবে বা সরবে প্রায়ই ঘটছে। অথচ শিক্ষা পশুত্ব, বিবেকহীনতা, সংকীর্ণতা, স্বার্থপরতা ইত্যাদি থেকে শিক্ষার্থীদের মুক্ত করার উপায় হিসেবে বিবেচিত।
আমাদের দেশের শিক্ষাঙ্গন এখন অনেক বিস্তৃত। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যাও এখন লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। দেশে কতটি কেজি স্কুল রয়েছে তার পরিসংখ্যান নেই। কতটি কওমি মাদ্রাসা আছে তা-ও হলফ করে বলা যাবে না। নুরানি মাদ্রাসার সংখ্যাও কারও জানা নেই। এ ছাড়া আছে আলিয়া মাদ্রাসা, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, এমপিওভুক্ত মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও কলেজ, সরকারি স্কুল এবং কলেজ, বিদেশি কারিকুলামে ইংরেজি মাধ্যম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, পাবলিক ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, কারিগরি শিক্ষা, নার্সিং, বিশেষায়িত ইত্যাদি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের যথার্থ পরিসংখ্যান পাওয়া মোটেও সহজ কাজ নয়।
সচরাচর বলা হয়ে থাকে, দেশে ৫ কোটি শিক্ষার্থী রয়েছে। তাহলে ধরে নিতে পারি, মোট জনসংখ্যার ৩ ভাগের ১ ভাগ শিক্ষার্থী। শিক্ষকতা পেশায় কতজন যুক্ত আছেন, তারও সঠিক পরিসংখ্যান নেই। বাংলাদেশের সংখ্যায় সবচেয়ে বড় পেশাজীবী হচ্ছেন শিক্ষকেরা। কিন্তু তাঁদের পরিচয় অনেকটাই প্রতিষ্ঠানভিত্তিক। চাকরিবিধি ও প্রতিষ্ঠানের মালিকানা কিংবা সরকারি স্বীকৃতির ওপর নির্ভরশীল। সে কারণে তাঁরা শিক্ষক হয়েও মর্যাদায় বেশির ভাগই ভিন্ন ভিন্ন গোত্রে যেন বিভক্ত। সংখ্যাটি ৩০ লাখের বেশি হবে। দেশে আরও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রয়োজন রয়েছে, আরও শিক্ষকেরও দরকার আছে। কিন্তু বলতে দ্বিধা নেই স্বাধীনতা-উত্তরকালে ফুলেফেঁপে ওঠা বিভিন্ন ধারার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয়েছে সম্পূর্ণরূপে অপরিকল্পিতভাবে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তালিকায় অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেরই নাম নেই, স্বীকৃতিও নেই। সরকারি বেতন কিংবা মাসিক ভাতা পান এমন শিক্ষক ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের চেয়ে না পাওয়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ঢের বেশি বলেই অনুমান করা যাচ্ছে। অথচ সব কটিকেই আমরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বলছি, স্বীকৃতি দিচ্ছি, আমাদের সন্তানদের শিক্ষার জন্য সেগুলোতে পাঠাচ্ছি।
শিক্ষার নামে এমন নৈরাজ্য কোনো দেশে চলতে দেওয়া হয় বলে আমাদের জানা নেই। সমমানের শিক্ষার দাবি করা হলেও শিক্ষাক্রমে রয়েছে ভিন্নতা, পঠনপাঠনের সুযোগ-সুবিধায়ও রয়েছে আকাশ-পাতাল পার্থক্য। পাঠদানে নিযুক্ত শিক্ষকদের মধ্যেও শিক্ষাগত যোগ্যতা, দক্ষতা, মানের ক্ষেত্রেও ন্যূনতম কোনো মানদণ্ড কার্যকর করা হচ্ছে না। পাঠ্যবইয়ের ক্ষেত্রেও রয়েছে নানা প্রতিষ্ঠানের নানা অবস্থান ও পছন্দ। শিক্ষার সঙ্গে এর সম্পর্ক খুঁজতে গেলে হতাশ হওয়া ছাড়া উপায় নেই। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের যেকোনো স্তরেই শিক্ষাক্রম বলে একটি আবশ্যিক অনুষঙ্গ রয়েছে। এর ভিত্তিতেই পাঠ্যপুস্তক রচিত হয়। শিক্ষার্থীদের পড়ানো হয়। কিন্তু বাংলাদেশে অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানই রয়েছে, যেগুলো বনিয়াদি শিক্ষার আবশ্যকীয় শিক্ষাক্রম অনুসরণ করে না। শিক্ষার্থীদের নানা ভাষা ও ধরনের বইপুস্তক এবং নিয়মনীতিতে বেড়ে তোলার চেষ্টা করে থাকে, যা শিক্ষাবিজ্ঞান সমর্থন করে না। শিক্ষাবিজ্ঞানের নির্দেশনা, অনুশীলন, চর্চা সবাই বোঝেন— এমনটিও নয়।
এ ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বাংলাদেশের শহরগুলোতে তিন-চার দশক আগ থেকেই বেড়ে উঠেছে, এখন তা গ্রামেও জায়গা করে নিচ্ছে। ফলে শিক্ষার নামে যা কিছু চলছে তার অনেকটাই শিক্ষার দর্শনের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়। কিন্তু কে শোনে কার কথা। অন্যদিকে সরকারি এবং অনুমোদনপ্রাপ্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যেও রয়েছে নানা জোড়াতালি দিয়ে বেড়ে ওঠার কয়েক দশকের নজির। যেখানে শিক্ষাক্রম, পাঠ্যপুস্তক, শিক্ষক প্রশিক্ষণ কার্যকর থাকলেও মানের বৈষম্য এতটাই প্রকট যে বেশির ভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানই মানসম্মত পাঠদানে সক্ষমতা রাখে না। ফলে এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অভ্যন্তরীণ দুর্বলতার কারণেই শিক্ষার্থীদের পাঠদান ও গড়ে তোলার প্রত্যাশা পূরণ করতে পারছে না। তাই সর্বত্রই শিক্ষার মানের সমস্যা প্রকট হয়ে উঠছে। বেশির ভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানই গুরুত্ব হারাতে বসেছে। এর ফলে একটি বিরাটসংখ্যক শিক্ষার্থী শিক্ষাবিমুখ হয়ে পড়ছে, ঝরেও পড়ছে, অদক্ষ জনগোষ্ঠীতে নাম লেখাচ্ছে।
বহুধাবিভক্ত এমন একটি শিক্ষাব্যবস্থা থেকে প্রত্যাশিত মানের শিক্ষার্থী ক্রমেই যেন কমে আসতে শুরু করেছে। বিশ্বজনীন এবং দেশীয় নানা বাস্তবতা এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। ফলে শিক্ষাব্যবস্থার অভ্যন্তরে শিশু-কিশোর, তরুণদের পঠনপাঠন নানা জটিল অবস্থার মুখে দাঁড়িয়েছে। এমন পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য বিরাজমান শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর কতটা কার্যকর ভূমিকা রাখা দরকার, নিজেরা কতটা প্রস্তুত সে ধরনের কোনো চিন্তাভাবনা নীতিনির্ধারণী এবং প্রতিষ্ঠান পর্যায়ে খুব একটা দেখা যায় না। সে কারণেই দেশের শিক্ষাব্যবস্থা আকারে বড় হয়ে উঠলেও প্রকারে বিভক্তি এবং দুর্বলতার ফলে গোটা শিক্ষাব্যবস্থাই নানা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনায় দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের বেশির ভাগই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আইন, বিধিবিধান জানেন না, মানেনও না। আবার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগেও রয়েছে অনিয়ম, দুর্নীতি এবং অযোগ্যদের নানা ফাঁকফোকর। শ্রেণিপাঠের পরিবর্তে কোচিং, নোটবই, গাইডবই এবং পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বনের নানা ব্যবস্থা। জিপিএ-৫ পাওয়ার দৌড়ে শিক্ষক এবং অভিভাবকদের মনোযোগ যেখানে, সেখানে শিক্ষার্থীর মানসগঠন, সাংস্কৃতিক বোধ, সমাজ ও বিশ্ববাস্তবতার জ্ঞান আহরণ হারিয়ে যেতে বসেছে। ফলে শিক্ষার নামে যা চলছে তাতে মেধাবী, যুক্তিশীল, উদার মানসিকতা, সৃজনশীলতা, উদ্ভাবনী ক্ষমতা শিক্ষার্থীদের মধ্যে হারিয়ে যেতে বসেছে। সে স্থান দখল করছে কার্যত অর্ধশিক্ষা, বখে যাওয়া, বেকার হওয়া এবং সমাজ ও সভ্যতাবিরোধী বিশ্বাসে বেড়ে ওঠা তরুণ-তরুণীতে।

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫বাসস, ঢাকা

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

মার্কিন মুলুক থেকে প্রায়ই জানতে পারছি, সেখানকার স্কুলে বন্দুকধারী কোনো শিক্ষার্থী কিংবা উগ্র মানসিক কোনো তরুণ শিক্ষাঙ্গনে ঢুকে এলোপাতাড়ি গুলি ছুড়ছে। তাতে ছাত্র-শিক্ষক হতাহত হচ্ছে।
০১ জুলাই ২০২২
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

মার্কিন মুলুক থেকে প্রায়ই জানতে পারছি, সেখানকার স্কুলে বন্দুকধারী কোনো শিক্ষার্থী কিংবা উগ্র মানসিক কোনো তরুণ শিক্ষাঙ্গনে ঢুকে এলোপাতাড়ি গুলি ছুড়ছে। তাতে ছাত্র-শিক্ষক হতাহত হচ্ছে।
০১ জুলাই ২০২২
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

মার্কিন মুলুক থেকে প্রায়ই জানতে পারছি, সেখানকার স্কুলে বন্দুকধারী কোনো শিক্ষার্থী কিংবা উগ্র মানসিক কোনো তরুণ শিক্ষাঙ্গনে ঢুকে এলোপাতাড়ি গুলি ছুড়ছে। তাতে ছাত্র-শিক্ষক হতাহত হচ্ছে।
০১ জুলাই ২০২২
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

মার্কিন মুলুক থেকে প্রায়ই জানতে পারছি, সেখানকার স্কুলে বন্দুকধারী কোনো শিক্ষার্থী কিংবা উগ্র মানসিক কোনো তরুণ শিক্ষাঙ্গনে ঢুকে এলোপাতাড়ি গুলি ছুড়ছে। তাতে ছাত্র-শিক্ষক হতাহত হচ্ছে।
০১ জুলাই ২০২২
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫