Ajker Patrika

টিকার নামে টাকা আদায়

রাশেদ কামাল, কালিয়া (নড়াইল)
আপডেট : ১৮ জানুয়ারি ২০২২, ১১: ০৫
টিকার নামে টাকা আদায়

নড়াইলের কালিয়া উপজেলার চাঁচুড়ী-পুরুলিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আশরাফুল ইসলামের বিরুদ্ধে স্কুলছাত্রদের করোনার টিকা রেজিস্ট্রেশন ও নির্ধারিত কেন্দ্রে যেতে টাকা আদায় করার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

তিনি প্রায় ৪০০ ছাত্র-ছাত্রীর কাছ থেকে ১০০ টাকা করে আদায় করেন বলে অভিযোগ রয়েছে। ওই ঘটনায় শিক্ষার্থীসহ অভিভাবকদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে । তবে প্রধান শিক্ষক যাতায়াত বাবদ শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার সত্যতা স্বীকার করেছেন। ঘটনার বিষয়ে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আরিফুল ইসলাম।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, ৬ থেকে ১৪ জানুয়ারি উপজেলার ৩১টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও ৬টি কলেজের ১৫ হাজার শিক্ষার্থীকে করোনার টিকা দেওয়া শুরু হয়েছে। এর মধ্যে নবগঙ্গা নদীর পশ্চিম তীরের ১৫টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও ২টি কলেজের ৬ হাজার শিক্ষার্থীকে টিকা দেওয়ার জন্য নড়াইল নার্সিং ইনস্টিটিউটে কেন্দ্র স্থাপন করা হয়। আর নবগঙ্গা নদীর পূর্ব তীরের ১৬টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও ৪টি কলেজের ১২ হাজার শিক্ষার্থীকে টিকা দেওয়ার জন্য উপজেলা পরিষদের হলরুমে কেন্দ্র স্থাপন করা হয়। এর মধ্যে নড়াইল নার্সিং ইনস্টিটিউট কেন্দ্র থেকে ৬ হাজার ও কালিয়া উপজেলা পরিষদ কেন্দ্র থেকে ৯ হাজার ৭২২ জন শিক্ষার্থী টিকা গ্রহণ করেছে।

নড়াইল নার্সিং ইনস্টিটিউট কেন্দ্রের আওতায় থাকা উপজেলার চাঁচুড়ী-পুরুলিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নির্ধারিত তারিখের আগে বিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রেশন টোকেন সংগ্রহ ও টিকাকেন্দ্রে যাতায়াতের জন্য ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জনপ্রতি ১০০ টাকা করে নিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। ৫ জানুয়ারি শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে হাজির করে টোকেন দেওয়ার সময় টাকা নেওয়া হয়েছে বলে ওই বিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষার্থী ও অভিভাবক অভিযোগ করেছেন।

বিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষার্থী বলেছেন, বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অনেকের কাছ থেকে টোকেন ও যাতায়াত বাবদ ১০০ টাকা করে নিয়েছেন। প্রধান শিক্ষক স্বাস্থ্যবিধি না মেনে শিক্ষার্থীদের গাদাগাদি করে নিম্নমানের বাসে করে টিকাকেন্দ্রে নিয়ে যান।

ওই বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক উপজেলার চন্দ্রপুর গ্রামের মো. রাজু খানসহ অনেকেই অভিযোগ করে বলেছেন, প্রধান শিক্ষক নানা অজুহাতে ছাত্র-ছাত্রীদের কাছ থেকে টাকা নেন।  শুধু তা-ই নয়, বাসে করে টিকাকেন্দ্রে নেওয়ার সময় স্বাস্থ্যবিধিও মানেনি বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আশরাফুল ইসলাম ছাত্র-ছাত্রীদের কাছ থেকে টাকা আদায়ের সত্যতা স্বীকার করে বলেছেন, অভিভাবকদের অনুরোধে শিক্ষার্থীদের টিকাকেন্দ্র যাতায়াতের খরচ বাবদ জনপ্রতি ১০০ টাকা করে নেওয়া হয়েছে। সেই টাকা দিয়ে বাস ভাড়া করে ৩৭৫ জন ছাত্র-ছাত্রীকে নড়াইল টিকাদান কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আবার দ্বিতীয় ডোজ নেওয়ার সময়ও তিনি বাস ভাড়া করে তাঁদের টিকাকেন্দ্রে নিয়ে যাবেন। যাতায়াত বাবদ ছাত্র-ছাত্রীদের কাছ থেকে টাকা আদায় করা যাবে কি না, সে বিষয়ে সরকারি কোনো নির্দেশনা তিনি জানেন না।

কালিয়া উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. শাহাজান মিয়া বলেছেন, বিষয়টি তিনি শুনেছেন। বিষয়টিতে সরকারিভাবে তিনি কোনো নির্দেশনা পাননি। তিনিও উপজেলার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে ওই ধরনের কোনো নির্দেশনা দেননি। ঘটনাটিতে তদন্তের পর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও তিনি জানান।

কালিয়ার ইউএনও মো. আরিফুল ইসলাম বলেছেন, শিক্ষার্থীদের কাছ টিকা নিতে যাতায়াত খরচের জন্য টাকা আদায়ের কোনো নিয়ম নেই। বিভিন্ন মাধ্যমে ঘটনাটি জানতে পেরে তিনি গত রোববার উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে ঘটনাটি তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন। তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়া পর পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত