Ajker Patrika

ধরপাকড়েও কমছে না হয়রানি

সোহেল মারমা, চট্টগ্রাম
ধরপাকড়েও কমছে না হয়রানি

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে দালালের দৌরাত্ম্য কমছে না। হাসপাতালে আসা রোগী ও স্বজনদের ভুল বুঝিয়ে, কখনো কম টাকায় স্বাস্থ্য পরীক্ষার প্রলোভন দেখিয়ে বেসরকারি হাসপাতাল কিংবা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যান এসব ব্যক্তি। এমনকি রোগীদের কাছ থেকে জোর করে ব্যবস্থাপত্র দেখা, তাঁদের বিভিন্ন ওষুধের দোকানে যেতে জোরাজুরি করাসহ নানাভাবে হয়রানির অভিযোগ রয়েছে তাঁদের বিরুদ্ধে।

এমন অভিযোগে গত তিন মাসে চমেক হাসপাতাল থেকে ৩০ জন দালালকে আটক করেছে পুলিশ। অক্টোবরের শুরু থেকে চলতি মাসের ২৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত বিভিন্ন সময় তাঁদের আটক করা হয়। তাঁদের বেশির ভাগই হাসপাতালের প্রসূতি ওয়ার্ড থেকে আটক হন।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রচলিত আইনে হাসপাতাল থেকে দালালদের আটকের পর তাঁদের শাস্তি হিসেবে জরিমানা করা হয়। আবার কাউকে ৫৪ ধারায় আদালতে চালান করে পুলিশ। পরে তাঁরা আইনজীবীর মাধ্যমে জরিমানা দিয়ে ছাড়া পেয়ে যান। ফলে সামান্য জরিমানা দিয়ে ছাড়া পেয়ে পুনরায় তাঁরা একই কাজে নেমে পড়ছেন।

চমেক হাসপাতালটি নগরীর পাঁচলাইশ থানায় অবস্থিত। দালালের হাতে হয়রানির অভিযোগের বিষয়ে পাঁচলাইশ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সাদেকুর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘দালালদের বিরুদ্ধে সাধারণত কেউ বাদী হয়ে মামলা করেন না। এ কারণে তাঁদের কঠোর কোনো শাস্তি হচ্ছে না। এতে তাঁরা ছাড়া পেয়ে আবারও একই কাজে জড়াচ্ছেন।’

চমেক হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক নুরুল আলম আশেক বলেন, ‘আমি এখানে দায়িত্ব নেওয়ার পর যখনই তথ্য পাচ্ছি দালালদের আটক করে আইনানুগ ব্যবস্থা নিচ্ছি। গত নভেম্বর ও ডিসেম্বরে ২০ দালাল আটক করা হয়েছে। এতে মনে হতে পারে, হাসপাতালে দালালদের দৌরাত্ম্য আগের তুলনায় বেড়েছে। তা কিন্তু না। চমেক হাসপাতালে অতীতেও দালালদের উৎপাত ছিল। কিন্তু সেইভাবে হয়তো দালালদের ধরপাকড় হতো না বলেই সবার নজরে আসত না। এখন বেশি ধরা পড়ছে বলে সবার নজরে আসছে।’

নুরুল আলম আরও বলেন, ‘দালালদের দৌরাত্ম্য কমাতে হাসপাতাল প্রশাসনকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। তাদের আরও কার্যকরী ব্যবস্থা নিতে হবে। দালাল নির্মূলে শুধু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের তৎপর হলে হবে না। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী চাইলেই হাসপাতালের ভেতর অভিযান চালাতে পারে না। কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়েই পুলিশকে অভিযান চালাতে হয়।’

পুলিশ ও হাসপাতাল কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চমেক হাসপাতালে কয়েক স্তরের দালাল চক্র সক্রিয় রয়েছে। এর মধ্যে বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানি, নামে-বেনামে প্যাথোলজি, ল্যাব, রোগ নির্ণয়কেন্দ্র (ডায়াগনস্টিক সেন্টার), ফার্মেসি, ক্লিনিক ও বেসরকারি হাসপাতালের পক্ষে কাজ করেন এসব দালাল। তাঁরা মূলত কমিশনের ভিত্তিতে নিযুক্ত করে থাকেন। এসব দালাল হাসপাতালে আসা রোগীদের বিভিন্ন প্রলোভনে নিজেদের দেখানো প্রতিষ্ঠানে নিয়ে যান। পরে ওষুধ কেনা, অপ্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য পরীক্ষা, চিকিৎসাসহ বিভিন্ন প্রতারণার মাধ্যমে রোগী ও স্বজনদের কাছ থেকে বাড়তি টাকা হাতিয়ে নেন। এ ছাড়া অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া, রক্ত সংগ্রহসহ আরও কয়েকটি স্তরে দালাল চক্র সক্রিয় রয়েছে। চমেক হাসপাতালে জরুরি বিভাগ, ব্লাডব্যাংক, বহির্বিভাগ, প্যাথোলজি বিভাগসহ বিভিন্ন ওয়ার্ড ঘিরে তাঁরা অবস্থান করে থাকেন।

জানতে চাইলে চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শামীম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আগের তুলনায় কার্যকরী ব্যবস্থা হাতে নিয়েছে। এ জন্য বর্তমানে দালাল বেশি ধরা পড়ছে। মূলত আমাদের কর্মচারীরা দালালদের ধরে পুলিশে দিচ্ছেন। আগে খুব বেশি দালাল ধরা পড়ত না।’

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শামীম আরও বলেন, ‘হাসপাতালে দালাল যাতে ভিড় করতে না পারে, সে জন্য আমরা বিভিন্ন কার্যক্রম হাতে নিয়েছি। সন্ধ্যার পর বিভিন্ন ওয়ার্ডের দরজা বন্ধ করে রাখা, ক্লোজড সার্কিট (সিসি) ক্যামেরা স্থাপনের মাধ্যমে নজরদারি, হাসপাতালে নিয়োজিত আনসার সদস্যদের আরও বেশি সতর্ক করা হয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বিশ্ববিদ্যালয় ঘোষণা হলেই মেয়াদ শেষ নতুন পরিচালনা কমিটির

‘মবের হাত থেকে বাঁচাতে’ পলকের বাড়ি হয়ে গেল অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প

ভ্যানিটি ব্যাগ ধরে টান, সন্তানসহ ছিটকে পড়তেই তরুণীর গালে ছুরিকাঘাত

এনসিপিকে চাঁদা দিচ্ছেন ধনীরা, ক্রাউডফান্ডিং করেও অর্থ সংগ্রহ করা হবে: নাহিদ ইসলাম

আ. লীগ নির্বাচনে অংশ নেবে কি না, তারাই সিদ্ধান্ত নেবে: বিবিসিকে প্রধান উপদেষ্টা

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত