Ajker Patrika

অস্তিত্ব সংকটে সাত নদী

গাজী আবদুল কুদ্দুস, ডুমুরিয়া
আপডেট : ০৯ জানুয়ারি ২০২২, ১৩: ৪৮
Thumbnail image

ডুমুরিয়ায় প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে নদীর জায়গা দখলের অভিযোগ উঠেছে। উপজেলার ভদ্রা, হরি, সুখ, হামকুড়া, ঘ্যাংরাইল, হাতিটানা ও তালতলা নদীর জায়গায় প্রভাবশালীরা ভাগ বসিয়েছেন। এ ৭টি নদীর সীমানায় তারা মৎস্য ঘের, ইটভাটা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, বাড়িঘর, হাঁস-মুরগির খামার তৈরি করেছেন। এ কারণে নদীগুলো অস্তিত্ব সংকটে রয়েছে।

নদী দখল বন্ধে প্রশাসন বিভিন্ন সময়ে নানা পদক্ষেপ নেয়। কিন্তু দখলদারদের তালিকায় স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রভাবশালী ব্যক্তিদের নাম থাকায় থমকে যায় উচ্ছেদ অভিযান। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তথ্য মতে, খুলনায় রূপসা, ভৈরব, শিবসা, কাজিবাছাসহ ছোট-বড় মোট ৪১টি নদ-নদী রয়েছে। এদের মধ্যে ডুমুরিয়ার সাতটি নদী দখলের কারণে রয়েছে অস্তিত্ব সংকটে। এসব নদী রক্ষায় প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন স্থানীয়রা।

সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার বরাতিয়া মৌজার ভদ্রা নদীর জায়গা দখল করে গড়ে উঠেছে এসবি ব্রিকস। একই স্থানে নদীর জায়গায় কেপিবি ব্রিকস, কুলবাড়িয়ায় খর্ণিয়া মৌজায় সেতু-১ ব্রিকস, নুর জাহাপন-১ ব্রিকস, কেবি-২ ব্রিকস, রানাই মৌজায় হরি নদীর জায়গা দখল করে কেবি-ব্রিকস, আল-মদিনা ব্রিকস, মেরি ব্রিকসসহ অসংখ্য ইটভাটা গড়ে উঠেছে।

জানা গেছে, সিএ ও আরএল খতিয়ানের রেকর্ড অনুসারে জরিপ করে গত অক্টোবরে ভদ্রা ও হরি নদীর জায়গা দখল করে গড়ে ওঠা ১৪টি অবৈধ ইটভাটা চিহ্নিত করেছে জেলা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ড কমিটি।

নদীবিষয়ক সংগঠন পানি কমিটির সভাপতি অধ্যক্ষ এ বি এম শফিকুল ইসলাম বলেন, উপজেলার হরি, হামকুড়া ও সুখ নদীর জায়গা দখল চরমে পৌঁছেছে। হরি নদীর দুই পাশের ইটভাটাগুলো নদী ভরাট করে স্থাপনার আয়তন বাড়াচ্ছে। এ অবস্থায় নদী ক্রমশ ছোট হয়ে যাচ্ছে। এতে দু-এক বছরের মধ্যে নদীর অস্তিত্ব বিলীন হবে।

তিনি আরও বলেন, উপজেলার হামকুড়া নদীটি ভরাট হয়ে প্রবাহ কমে গেছে। নদীটির দুই পাশ থেকে অবৈধভাবে জায়গা দখল করে সেখানে মৎস্য ঘের, ঘরবাড়ি, ইটভাটা, হাঁস-মুরগির খামার গড়ে তোলা হয়েছে। এতে উপজেলার এক অংশ জলাবদ্ধতায় ডুবে থাকছে। প্রভাবশালী মহল সুখ নদীতে পাটা দিয়ে মাছ চাষ করায় পানির প্রবাহ কমে গেছে। পানির অভাবে আশপাশে ধান চাষ ব্যাহত হচ্ছে।

বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সভাপতি শেখ আশরাফ-উজ্জামান বলেন, ইটভাটা, বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, দোকানপাট, বাড়িঘর তৈরি করে প্রকাশ্যে নদীর জায়গা দখল করা হচ্ছে। দূষণের ফলে ময়ূর নদীর পানি কালচে হয়ে গেছে। কচুরিপানা ও ময়লা-আবর্জনা পচে দুর্গন্ধ সৃষ্টি হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, প্রশাসন মাঝে মধ্যে উচ্ছেদের উদ্যোগ নিলেও দখলদারের তালিকায় স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রভাবশালীরা থাকায় অভিযান থমকে যায়।

এদিকে ১৪ ডিসেম্বর হাইকোর্ট ডুমুরিয়ার হরি ও ভদ্রা নদীর জায়গা দখল করা ১৪টি অবৈধ ইটভাটা ৬০ দিনের মধ্যে উচ্ছেদের নির্দেশ দিয়েছেন। এর আগে ২৫ ফেব্রুয়ারি মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ (এউচআর পিবি) নদীর জায়গা দখল করে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা এসব ইটভাটা উচ্ছেদে জনস্বার্থে রিট পিটিশন দায়ের করেন। তারপরও নদীর জমি দখল কোনোক্রমেই বন্ধ হচ্ছে না।

ডুমুরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আবদুল ওয়াদুদ বলেন, ‘নদীর পাশে পানি উন্নয়ন বোর্ডের জায়গায় গড়ে ওঠা ১৪টি ইটভাটা ৬০ দিনের মধ্যে উচ্ছেদের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। আমরা সেই মোতাবেক কাজ করছি। এ ছাড়া কয়েকটি ইট ভাটাসহ নদীর জমি দখলকারীদের বিরুদ্ধে আমরা অভিযান চালিয়ে জরিমানা ও উচ্ছেদের নির্দেশ দিয়েছি। আশা করি অল্প দিনের মধ্যে ডুমুরিয়া উপজেলা নদীগুলো দখলমুক্ত করতে পারব।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হেফাজতে যুবদল নেতার মৃত্যু, সেনা ক্যাম্প কমান্ডারকে প্রত্যাহার

রাজধানীর প্রেসক্লাব এলাকায় লিফলেট বিতরণ করল আ.লীগ

‘মধ্যমপন্থী’ দল গড়ছেন অভ্যুত্থানের নেতারা, আলোচনায় ইলিশ প্রতীক

লিবিয়ার সৈকতে ২০ জনের গলিত লাশ, সবাই বাংলাদেশি বলে ধারণা

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হেফাজতে যুবদল নেতার মৃত্যু, বিচার চাইল বিএনপি

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত