Ajker Patrika

চাপের মুখে দেশের অর্থনীতি

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ০৬ জুন ২০২২, ১৫: ০৯
চাপের মুখে দেশের অর্থনীতি

বাণিজ্য ঘাটতি বেড়েই যাচ্ছে। বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময় হারও বেড়ে যাচ্ছে। মূল্যস্ফীতির চাপের পাশাপাশি রাজস্ব আদায়ও কম হচ্ছে। তাই বাস্তবভিত্তিক রাজস্ব ও মুদ্রানীতি দরকার। চলমান সংকট মুহূর্তে অপ্রয়োজনীয় ব্যয় অবশ্যই কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে বলে মনে করছে গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)।

গতকাল রোববার রাজধানীর সিপিডির কার্যালয়ে ‘বাংলাদেশের উন্নয়নে স্বাধীন পর্যালোচনা’ বিষয়ক সংবাদ সম্মেলনে প্রতিষ্ঠানটি এ পরামর্শ দিয়েছে। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সিপিডির বিশেষ ফেলো অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান, নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন, গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম। এ সময় বাজেটে শুধু প্রবৃদ্ধির দিকে নজর না দিয়ে বিভিন্ন খাতে ভর্তুকি পুনর্বিবেচনা করাসহ বেশ কিছু দিক তুলে ধরা হয়।

চারজনের একটি পরিবারের ঢাকায় বসবাসের জন্য মাসে ব্যয় করতে হচ্ছে ২৯ হাজার টাকা। তবে এ টাকা ব্যয়েও খাবারের পাতে মাছ-মাংস রাখার উপায় নেই। মাছ-মাংস খেতে হলে মাসে ব্যয় করতে হবে সাড়ে ৪২ হাজার টাকা। এক রুমের বাসার বাসিন্দাদেরই এমন ব্যয় হচ্ছে বলে মনে করছে সিপিডি।

সংবাদ সম্মেলনে ফাহমিদা খাতুন বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব বাংলাদেশেও পড়েছে। মূল্যস্ফীতির সরকারি হিসাব ও প্রকৃত বাজারের হিসাবের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। অনেক কিছুই হিসাবের বাইরে থেকে যায়। সরকার যে লক্ষ্য নেয়, বছর শেষে মূল্যস্ফীতি তা-ই থাকে। যদিও মানুষের সামগ্রিক জীবনযাত্রার ব্যয় অনেকখানি বেড়েছে।

ফাহমিদা খাতুন আরও বলেন, ‘বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষদের কোনো ধরনের মাছ ও মাংস না খেয়েই মাসে খরচ করতে হচ্ছে ২৯ হাজার ২০৬ টাকা। এক রুমের ভাড়া করা বাসায় যারা বসবাস করছে, তাদের এই ব্যয় হচ্ছে মাসে। এর কম যাদের মাসিক ব্যয়, তাদের খাবারের তালিকায় আরও অনেক কিছুতে ছাড় দিতে হচ্ছে। তবে যারা মাসে মাছ, মাংস (গরু, খাসি ও মুরগি) খাচ্ছে, তাদের মাসে ব্যয় হচ্ছে ৪২ হাজার ৫৪৮ টাকা। ঢাকায় এক রুমের ভাড়া করা বাসাতে বসবাসকারী মানুষদেরই এ ব্যয় হচ্ছে।

ফাহমিদা খাতুন বলেন, শ্রমিকদের মাসে বেতন হচ্ছে ৯ হাজার ৮০৪ থেকে ২৯ হাজার ২৫০ টাকা। কৃষিশ্রমিক, মৎস্যচাষি, ইলেকট্রিসিটি, গ্যাস, পানি সরবরাহকারী, মোটরসাইকেল ও পরিবহন, তথ্য ও যোগাযোগ আবাসন কোম্পানির সঙ্গে যুক্ত শ্রমজীবীদের বিবেচনা করে এই প্রাক্কলন করা হয়েছে। বিবিএস, টিসিবি ও বিশ্বব্যাংকের তথ্যের ভিত্তিতেই এটি করা হয়েছে। তবে সঠিকভাবে সার্ভে করলে এর প্রকৃত চিত্র পাওয়া যাবে।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ডলারের দাম বাড়ায় প্রবাসীরা তো একটু বাড়তি সুবিধা পাচ্ছেন। এই মুহূর্তে ঢালাওভাবে রেমিট্যান্সে প্রণোদনা দেওয়ার কোনো যৌক্তিকতা নেই। শুধু বিনিয়োগ, কর্মসংস্থান এবং উৎপাদনশীল খাতে প্রণোদনা রাখা যেতে পারে।

খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, বর্তমানে পোশাকশিল্পে ১৪ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি হচ্ছে। তার মানে, এ শিল্পের অবস্থা মোটামুটি ভালো। এই অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে তৈরি পোশাকশিল্পে আর প্রণোদনার দরকার নেই। এক প্রশ্নের জবাবে গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, এখন সময় এসেছে পোশাকশ্রমিকদের মজুরি বাড়ানো। কারণ, এই শিল্পের ব্যবসা ভালো যাচ্ছে।

সিপিডি বেশ কিছু সুপারিশ করেছে। এর মধ্যে রয়েছে নতুন ভিত্তিবছর ও নতুন পণ্য যোগ করে মূল্যস্ফীতির নতুন হিসাব করতে হবে। নিত্যপণ্যের আমদানি করকাঠামো পুনর্বিন্যাস করতে হবে। বাজার ব্যবস্থাপনা ও সরবরাহ শক্তিশালী করতে হবে। সাধারণ জনগণের ক্রয়ক্ষমতা বাড়াতে হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত