Ajker Patrika

ছুটির দিনে মানুষের ঢল

রজত কান্তি রায়, ঢাকা
ছুটির দিনে মানুষের ঢল

বইমেলা উপচে পড়েছিল হুমকি থাকার পরও! সাপ্তাহিক ছুটির দিনে বইমেলায় যেমন বানের পানির মতো মানুষ উপস্থিত হয়, আজও তার কমতি ছিল না।

বইমেলায় হামলা হতে পারে, এই মর্মে চিঠি পেয়েছে বাংলা একাডেমি। সংবাদমাধ্যমগুলো ফলাও করে তা প্রচার করেছে। মেলার প্রবেশপথগুলোতে তল্লাশি জোরদার হয়েছে আগের চেয়ে। সেটা দরকারি বটে, নিরাপত্তার জন্যই। শুধু দুই মন্ত্রীর অনুষ্ঠান বাদে আর কোনো নির্ধারিত অনুষ্ঠান বাতিল হয়নি। শুক্রবারের শিশুপ্রহর যথারীতি হয়েছে। আজও হবে।

হুমকি-ধমকি উপেক্ষা করে বইমেলায় উপস্থিত হওয়াও একধরনের প্রতিবাদ। নেতিবাচকতার বিরুদ্ধে বিপুলসংখ্যক মানুষের এই যে সরব উপস্থিতি, এর মূল্য আছে। মানুষ বই কিনছে, ঘুরছে ফিরছে, আড্ডা মারছে। দারুণ একটা পরিবেশ তৈরি করেছে। এই সবকিছুর মানেই হচ্ছে, একটা সুন্দর দিনের সমাপ্তি হয়েছিল গতকাল। আজ নতুন একটি দিনের শুরু হয়েছে। এক সাংবাদিক বন্ধুর সঙ্গে কথা হলো। তিনি জানালেন, লাখ লাখ মানুষ বইমেলায়। কিসের ভয়।

সাভার থেকে রনি আর তাঁর বন্ধু হায়াৎ এসেছিলেন বইমেলায়, সেই সকালবেলা। সন্ধ্যা পর্যন্ত ছিলেন। বইমেলার খাবারের দোকানগুলোতে খাবারের দাম আকাশচুম্বী বলে দুপুরে বেরিয়ে খেয়ে এসেছেন শাহবাগ থেকে। দুজনেই কলেজছাত্র। জিজ্ঞেস করলাম, ভয় করছে না? প্রথমে বুঝতে পারলেন না। বুঝতে পেরে বললেন, কিসের ভয়। হাজার হাজার মানুষ! কার এত সাহস আছে?

এসব বিশ্বাস আছে বলেই বইমেলার রয়েছে আলাদা সৌন্দর্য। সেই সৌন্দর্য মেলে ধরতে মেলায় হরেক রকমের, বিচিত্র স্বাদের বই আসছে শেষ দিকেও। মেলার প্রথম দিকে এসেছে হাসান মোরশেদের ‘ঈশানে নিশান’ নামের মুক্তিযুদ্ধের মৌলিক উপাখ্যান। মাঠেঘাটে ঘুরে তথ্য সংগ্রহ করে, প্রচলিত ইতিহাসের সঙ্গে মিলিয়ে দুধ আর পানি আলাদা করে সেসব প্রকাশ করার কারণে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক গবেষক হিসেবে ইতিমধ্যেই খ্যাতিমান হয়েছেন হাসান মোরশেদ। এবার তাঁর বইয়ের হাত ধরে দেশের প্রকাশনার জগৎ প্রবেশ করল দারুণ এক অধ্যায়ে। বইটির পেছনে একটি কিউআর কোড আছে। মোবাইল ফোনে সেই কোড স্ক্যান করলে দেখা যাবে ‘ঈশানে নিশান’ নামের একটি ডকুমেন্টারি, ইউটিউব থেকে। আমাদের প্রকাশনার জগতে বিষয়টি অভিনব। বইটির প্রকাশক ঐতিহ্য।

এমন অভিনব আরেকটি বই এসেছে মেলায়। উর্দু ভাষার কবি মির্জা গালিব। তাঁকে নিয়ে সাদত হাসান মান্টো চলচ্চিত্রের পাণ্ডুলিপি লিখেছিলেন ১৯৪২ সালে। মান্টোর জীবদ্দশায় সেই চলচ্চিত্র নির্মাণ করেননি কোনো পরিচালক। দেশভাগের পর মান্টো পাকিস্তানে চলে যাওয়ার পর সোহরাব মোদি সেই চলচ্চিত্র তৈরি করেছিলেন। কিন্তু ‘মেগাহিট’ চলচ্চিত্রটি দেখে যাওয়া হয়নি মান্টোর। তার আগেই তিনি মারা যান। সাদত হাসান মান্টোর লেখা ‘মির্জা গালিব’ নামের সেই চলচ্চিত্রের পাণ্ডুলিপি মূল উর্দু থেকে সরাসরি অনুবাদ করেছেন জাভেদ হুসেন। ‘মির্জা গালিব’ বইটি প্রকাশ করেছে প্রথমা।

এ দুটি বইয়ের পাশাপাশি মেলায় এসেছে সুব্রত অগাস্টিন গোমেজের ‘অন্তউড়ি’। এ বইয়ের প্রচ্ছদে লেখা আছে ‘আধুনিক বাংলা পদ্য-রূপান্তরে চর্যাপদ’। বইটি চর্যাপদ নিয়ে। ধর্ম, দর্শন, ইতিহাস ইত্যাদি পঠন-পাঠনের রূপরেখা যে বদলে গেছে বেশ আগেই, অন্তউড়ির ভূমিকা পড়লে তা স্পষ্ট বোঝা যায়।

বই আসছে এখনো মেলায়। বিচিত্র বিষয়ের। এটি অন্তত আশার কথা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘ভারতে ঢুকে’ পাকিস্তানি সেনাদের গুলি, সীমান্তে সংঘাত গড়াল ষষ্ঠ দিনে

বন্ধুকে ছাত্রলীগ সাজিয়ে পুলিশে দিয়ে তাঁর প্রেমিকাকে ধর্ষণ করলেন ছাত্রদল নেতা

বিবাহিতদের পুলিশ ক্যাডারে না নেওয়ার প্রস্তাব র‍্যাব ডিজির

পরিপাকতন্ত্রের ওষুধের পেছনেই মানুষের ব্যয় সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকা

পেহেলগাম হামলা: ধরা খেয়ে গেল মোদির কাশ্মীর ন্যারেটিভ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত