Ajker Patrika

বেড়িবাঁধ ভেঙে ভেসে গেছে ৭ শতাধিক ঘের

আবুল কাসেম, সাতক্ষীরা
Thumbnail image

সাতক্ষীরার শ্যামনগরে বেড়িবাঁধ ভেঙে সাত শতাধিক ঘের ভেসে গেছে। তাতে ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছেন মাছচাষিরা। আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়া চাষিরা সরকারি সহায়তার দাবি জানিয়েছেন।

সাতক্ষীরা মৎস্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, সাদা সোনা খ্যাত বাগদা চিংড়ি জেলাবাসীর আয়ের প্রধান উৎস। এই জেলায় ছোট-বড় মিলিয়ে ৬৫ হাজার ঘের রয়েছে। ৭৬ হাজার হেক্টর জায়গাজুড়ে এর চাষ করা হয়। এবারের বাগদা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩০ হাজার মেট্রিক টন।

সম্প্রতি খোলপেটুয়া নদীর দুর্গাবাটি পয়েন্টের বেড়িবাঁধ ভেঙে ১ হাজার ৬০০ হেক্টর জমির বাগদা ভেসে যায়। তাতে অন্তত ৯ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।

দেড় বছর আগে ঘূর্ণিঝড় ইয়াশের ফলে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে চিংড়িঘের ভেসে যাওয়ায় তখন ১৭৬ কোটি টাকার ক্ষতি হয়।

সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, জেলার সবচেয়ে খরস্রোতা নদী খোলপেটুয়া। চর দেবে যাওয়ায় শ্যামনগরের দুর্গাবাটি পয়েন্টে গত ১৫ জুলাই ৪০ মিটার বেড়িবাঁধ নদীতে বিলীন হয়। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয় বিপুলসংখ্যক চিংড়িঘের। সরকারিভাবে ১ হাজার ৬০০ হেক্টর জমির ঘের ভেসে যাওয়ার কথা বলা হলেও বাস্তবে এর পরিমাণ ২ হাজার হেক্টরের বেশি। ভাঙনের দেড় মাসেও সরকারি কোনো সহায়তা না পেয়ে ক্ষুব্ধ তাঁরা।

এ বিষয়ে দুর্গাবাটি এলাকার রণজিৎ দাস বলেন, ‘শুকনো মৌসুমে খরার পর বাগদার ভরা মৌসুমে ঘের ভেসে যাওয়ায় আমি ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। ২০ বিঘা জমির ঘেরে আমি জুলাই মাসে কমপক্ষে ৩ লাখ টাকার মাছ বিক্রি করতে পারতাম। কিন্তু বেড়িবাঁধ ভাঙনে সব শেষ। এখন কীভাবে আমি সংসার চালাব?’

পশ্চিম দুর্গাবাটি এলাকার আনন্দ বিশ্বাস বলেন, ‘অবস্থা একটু স্বাভাবিক হলে ঘেরে গিয়ে দেখি, বাগদার বংশবালাই নেই। পরে আবারও ধারদেনা করে এক চালান বাগদার পোনা ছেড়েছিলাম। কিন্তু ঘেরে থাকা দু-চারটা ভেটকি মাছের কারণে বাগদা থাকছে না। ভেটকি মাছ সব পোনা খেয়ে ফেলছে।’

একই এলাকার রমাকান্ত বিশ্বাস বলেন, ‘মাছ চাষই আমাদের জীবিকা অর্জনের প্রধান মাধ্যম। প্রতি বছর বাঁধ ভেঙে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হই। কিন্তু এতটুকু সরকারি সহযোগিতা পাই না। কম সুদে না পাই ঋণ, না পাই প্রণোদনা।’ সরকারি সহায়তার পাশাপাশি টেকসই বেড়িবাঁধের দাবি এই ঘেরচাষির।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের জেলা নির্বাহী প্রকৌশলী আবুল খায়ের বলেন, টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণের জন্য বরাদ্দ নেই। বরাদ্দ চেয়ে পাঠানো হয়েছে। পাস হলে দেখা যাবে।

সাতক্ষীরা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আনিসুর রহমান জানান, দুর্গাবাটির ভাঙনে ১ হাজার ৬০০ হেক্টর জমির সাত শতাধিক ঘের ভেসে গেছে। তাতে ৯ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত চাষিদের তালিকা প্রণয়ন করে জেলা প্রশাসনকে দেওয়া হয়েছে।

বাগদা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, দুর্গাবাটি এলাকায় যেহেতু বড় একটি বিপর্যয় ঘটে গেছে, সেহেতু লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে কি না এক্ষুনি বলা যাচ্ছে না।

জেলা প্রশাসক (ডিসি) হুমায়ুন কবির জানান, মৎস্য অধিদপ্তরের দেওয়া তালিকা মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। বরাদ্দ এলে ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে বিতরণ করা হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত