Ajker Patrika

শুধু আমার সঙ্গেই কথা বলছেন

সম্পাদকীয়
Thumbnail image

তখন আমার বছর ছয়েক বয়স, নেহাতই শিশু। মনে মনে একটা প্রতিযোগিতার আয়োজন করতাম। প্রতিযোগিতাটি ছিল বিশ্বের সেরা কবিতা বাছাইয়ের। দুটি কবিতা ফাইনালে উঠত। ব্লেকের ‘দ্য লিট্ল ব্ল্যাক বয়’ আর স্টিফেন ফস্টারের ‘সোয়ান রিভার’। লং আইল্যান্ডের কাছে সিডাহার্স্ট নামের এক গ্রামে আমার দিদিমার বাড়ির একটা ঘরে পায়চারি করতে করতে আবৃত্তি করতাম মনে মনে। ব্লেকের অবিস্মরণীয় সেই কবিতা, ফস্টারের লেখা গায়ে কাঁটা দেওয়া সেই সব গানও গাইতাম, সেটাও মনে মনেই।
ব্লেক কীভাবে পড়া শুরু করেছিলাম, সেটাও যেন একটা রহস্য। যত দূর মনে পড়ে আমার মা-বাবার বাড়িতে মাত্র কয়েকটাই কবিতা সংকলন ছিল। তুলনায় অনেক বেশি ছিল ইতিহাস, রাজনীতিসংক্রান্ত বই এবং অনেক উপন্যাস। কিন্তু ব্লেকের সঙ্গে আমার পরিচয় আমার দিদার বাড়িতেই, যদিও দিদা খুব একটা বইয়ের পোকা ছিলেন না। ব্লেকের ‘দ্য সং অব ইনোসেন্স অ্যান্ড অব এক্সপেরিয়েন্স’ ছিল, শেক্‌সপিয়ারের নাটকের গানগুলো নিয়ে একটা চটি বই ছিল, যার অনেকগুলোই আমি মুখস্থ করে ফেলেছিলাম। বিশেষ প্রিয় ছিল ‘সিমবালিন’ নাটকের গান।

এ ধরনের প্রতিযোগিতার ভাবনা খুব স্বাভাবিকভাবেই মনে আসত। কল্পভাবনা জুড়ে থাকত। যখন আমি খুবই ছোট, সেই তখন থেকেই মনে হতো বিশ্বের সেরা সম্মান হলো, বিশ্বের সেরা কবিতার খেতাবটি পাওয়া। আমি এবং আমার বোন এভাবেই বড় হয়েছি। কখনো জোয়ান অব আর্ক হয়ে ফ্রান্সকে বাঁচাচ্ছি, কখনো মারি কুরি হয়ে আবিষ্কার করছি রেডিয়াম। পরে ধীরে ধীরে বুঝতে পেরেছি এই ধরনের শ্রেণিতান্ত্রিক চিন্তার বিপদ বা সীমাবদ্ধতার দিকগুলো, কিন্তু সেই শৈশবে পুরস্কার দেওয়াটাকে খুব গুরুত্বপূর্ণ 
বলেই মনে হতো।

এটাও মনে হতো, ব্লেক নিজেও জানেন, এই পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানটির কথা, তার ফলাফলের কথাও। জানি যে তিনি বেঁচে নেই, কিন্তু আমার কাছে তিনি তো মৃত নন, তাঁর কণ্ঠস্বর বাজছে মাথার ভেতর, বিশেষ করে এবং শুধু আমার সঙ্গেই তিনি কথা বলছেন।

 আমেরিকান কবি ও প্রাবন্ধিক লুইস গ্লুক ২০২০ সালে নোবেল পুরস্কার পান। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত