Ajker Patrika

তেল ধরে রেখে দাম তুলছেন ব্যবসায়ীরা

আয়নাল হোসেন, ঢাকা
আপডেট : ২১ এপ্রিল ২০২২, ০৯: ৫০
Thumbnail image

ভোজ্যতেলের দাম বাড়ানোর দাবি জানিয়ে আসছেন ব্যবসায়ীরা। সরকার বলছে, ঈদের পর বিষয়টি বিবেচনা করা হবে। ব্যবসায়ীরা ধরে নিয়েছেন ঈদের পরেই দাম বাড়বে। সেই আশায় তাঁরা কমিয়ে দিয়েছেন সরবরাহ। এর ফলে বাজারে প্রতিদিনই বাড়ছে ভোজ্যতেলের দাম।

বুধবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ভোজ্যতেল পরিশোধনকারীদের সঙ্গে এক বৈঠক করেছে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব এ কে এম আলী আহাদ খান বলেন, ভোজ্যতেল পরিশোধনকারীদের সঙ্গে মন্ত্রণালয়ে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় হয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজার পর্যালোচনা করে ঈদের পর নতুন দাম নির্ধারণ করা হবে বলে জানান তিনি।

জানতে চাইলে সিটি গ্রুপের পরিচালক বিশ্বজিত সাহা বলেন, তাঁরা দুই প্রধান পাইকারি বাজার চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ ও রাজধানীর মৌলভীবাজারে ভোজ্যতেল সরবরাহ বন্ধ রেখেছেন। এ দুটি এলাকার ব্যবসায়ীরা দাম নিয়ে ভেজাল করেন। তবে তাঁরা সারা দেশের ব্যবসায়ীদের কাছে তেল সরবরাহ করছেন। ঈদের পর তেলের দাম বাড়বে। এ কারণে সবাই তেল ধরে রাখার চেষ্টা করছেন।

বাজারে ভোজ্যতেলের দাম সর্বোচ্চ পর্যায়ে বিক্রি হয় মার্চের শুরুতে। পরে সরকারের হস্তক্ষেপে এবং বিভিন্ন বাজারে অভিযান চালানোর পর ভোজ্যতেলের বিভিন্ন পর্যায়ে ব্যবসায়ীদের নিয়ে কয়েক দফা বৈঠক করে ভোক্তা-অধিকার অধিদপ্তর। সরকার ভোক্তার কথা বিবেচনায় নিয়ে আমদানি, উৎপাদন ও ব্যবসায়ী পর্যায়ে ৩০ শতাংশ ভ্যাট কমায়। এরপর সরকার মিলমালিকদের সঙ্গে বৈঠক করে নতুন দাম নির্ধারণ করে। এতে ব্যবসায়ীরা প্রতিশ্রুতি দেন রোজা পর্যন্ত দাম আর বাড়াবেন না। তখন পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলেছিলেন, মিল থেকে সরবরাহ স্বাভাবিক থাকলে দাম স্থিতিশীল থাকবে। কিন্তু সেই প্রতিশ্রুতি বাস্তবে রূপ নেয়নি। এর মধ্যে রোজার পর দাম বাড়ানোর আশায় অনেকেই সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছেন।

খুচরা পর্যায়ে সাধারণত খোলা তেল কেজি হিসেবে এবং বোতলজাত তেল লিটার হিসেবে বিক্রি হয়। রাজধানীসংলগ্ন কেরানীগঞ্জের আগানগর এলাকার মুদিদোকানি সৌরভ মাহমুদ জানান, তিন সপ্তাহ আগে তিনি প্রতি কেজি খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি করেছেন ১৫০-১৫৫ টাকা এবং পাম তেল ১৪০ টাকা দরে। গতকাল বুধবার সয়াবিন তেল বিক্রি করেছেন ১৮৫-১৯০ টাকা এবং পাম তেল ১৭০ টাকা কেজি দরে। তিনি বলেন, পাইকারিতে বাজারে দাম বাড়ায় তাঁরাও বাড়তি দামে তেল বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন।

১ এপ্রিল রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে খুচরা পর্যায়ে প্রতি লিটার সয়াবিন তেলের দাম ছিল ১৪৫-১৫৪ টাকা। গতকাল বুধবার তা বাজারভেদে বিক্রি হয়েছে ১৬০-১৬৫ টাকায়। অথচ সয়াবিন তেলের সরকারনির্ধারিত দর প্রতি লিটার ১৩৬ টাকা। ১ এপ্রিল প্রতি লিটার পাম তেলের দাম ছিল ১৩১-১৪৩ টাকা। গতকাল বুধবার তা বিক্রি হয়েছে ১৪২-১৪৫ টাকা। আর সরকারনির্ধারিত দাম হচ্ছে ১৩০ টাকা প্রতি লিটার।

রাজধানীর বনশ্রীর ৫ নম্বর ব্লকের মুদিদোকানি মেসার্স আল্লাহর দান জেনারেল স্টোরের মালিক মো. নাছির উদ্দিন জানান, তিনি এক মাস ধরে খোলা ভোজ্যতেল বিক্রি বন্ধ রেখেছেন। কারণ খোলা তেল পাইকারিতে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। সে তেল এনে লোকসান দিয়ে তো আর বিক্রি করা যাবে না।

অবশ্য রাষ্ট্রায়ত্ত বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) দাবি অনুযায়ী, গতকাল বুধবার প্রতি লিটার খোলা তেল বিক্রি হয়েছে ১৫৫-১৫৮ টাকায় এবং পাম তেল বিক্রি হয়েছে ১৪২-১৪৫ টাকায়।

ভোজ্যতেলের দাম দফায় দফায় বাড়ার বিষয়ে জানতে চাইলে ব্যবসায়ী ও শিল্প বণিকদের শীর্ষ সংগঠন দ্য ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের (এফবিসিসিআই) সভাপতি জসিম উদ্দিন বলেন, ভোজ্যতেলের দাম মূলত আন্তর্জাতিক বাজারের ওপর নির্ভর করছে। আগে প্রতি টন ৪০০ ডলারে আমদানি করা তেলে ভ্যাট দিতে হতো ১৫ শতাংশ। এখন প্রতি টন ১ হাজার ৭০০ ডলারে ভ্যাট দিতে হচ্ছে ৫ শতাংশ। এতে ভ্যাট কমানো হলেও সরকারের লোকসান হচ্ছে না। অর্থাৎ ভ্যাট আগের চেয়ে বেশিই আদায় হচ্ছে।

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, বাজারে ভোজ্যতেল নিয়ন্ত্রণ করছে চার-পাঁচজন ব্যবসায়ী। বাজারে প্রতিযোগিতা থাকলে দাম হয়তো দফায় দফায় এতটা বাড়ানো সম্ভব হতো না। ঈদের পর দাম কোথায় গিয়ে ঠেকে তা বলা মুশকিল। সরকারকে এ ব্যাপারে কঠোর মনিটরিং করতে হবে বলে জানান তিনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত