Ajker Patrika

চেনা গল্পের ভিড়ে কিছুটা আলাদা

খায়রুল বাসার নির্ঝর, ঢাকা
আপডেট : ০৭ জানুয়ারি ২০২৩, ১১: ৪৯
Thumbnail image

চট্টগ্রাম টু ঢাকা রুটের বাসে সুলতানাকে মাঝেমধ্যেই দেখা যায়। মহাখালী বাসস্ট্যান্ডে নামলে একটা অটোরিকশা এসে তাকে নিয়ে যায় গন্তব্যে। এই পুরো পথ সুলতানা তটস্থ থাকে, বাসে কখনো দু চোখের পাতা এক হলেও আশঙ্কার হাতছানি তাকে বারবার ডেকে তোলে। শারীরিক অস্বস্তিও কম ভোগায় না পুরো পথজুড়ে। কারণ চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় সুলতানা তো একা আসে না, বিশেষ উপায়ে নিজের শরীরের ভেতরে বয়ে নিয়ে আসে নিষিদ্ধ মাদক।

যেকোনো সময় আইনের হাতে ধরা পড়ার তীব্র ভয় আর শারীরিক যন্ত্রণা সঙ্গী করে এই ‘ট্রিপ’ সুলতানাকে মাঝেমধ্যেই করতে হয়। কারণ যে চক্রের জালে সে জড়িয়ে পড়েছে, তা ছিঁড়ে বেরিয়ে আসা শুধু কঠিন নয়, প্রায় অসম্ভবও। শরীরে মাদক বহনের বিনিময়ে সুলতানা মোটা টাকাও পায়। সে টাকায় তার একান্নবর্তী পরিবারের খরচ চলে।

ভাইকে ব্যবসার পুঁজি দেওয়া, মায়ের চিকিৎসা, স্বামীর রোজগারের পথটা নিশ্চিত করা, মেয়ের ভবিষ্যৎ—অনেক দুশ্চিন্তার ভার তার কাঁধে। সুলতানাকে তাই প্রায়ই ক্লান্ত-বিষণ্ন-বিধ্বস্ত দেখায়। তবে মেয়ের ভালো ভবিষ্যৎ গড়ে দেওয়ার স্বপ্ন তার অসুস্থ শরীরে জোগায় আরও কিছুটা পথ চলার শক্তি।

শঙ্খ দাশগুপ্তের ‘গুটি’ সিরিজে যে সুলতানাকে দেখা যাচ্ছে, একটু খোলা চোখে তাকালে তাকে আপনি খুঁজে পাবেন আশপাশেই। এ শহরে কিংবা গ্রামে এমন অসংখ্য নারীর দেখা মিলবে, যাঁরা ঘরে-বাইরে সারা দিন খেটে চলেছেন। নারী ক্ষমতায়নের ধারণার সঙ্গে যাঁদের ঘুণাক্ষরেও পরিচয় ঘটেনি কোনো দিন, সফল নারীদের তালিকায় হয়তো যাঁদের নামও আসবে না কখনো, তবুও তাঁরাই প্রতিনিয়ত সচল রাখছেন পারিবারিক অর্থনীতির চাকা। সেই সাধারণ-আটপৌরে নারীটিকে গল্পের প্রধান চরিত্রে রেখেছেন শঙ্খ দাশগুপ্ত। এই ঝলমলে-চকচকে-চোখ ধাঁধানো কনটেন্টের ভিড়ে তিনি যে এই সাহসটা করলেন, সে কারণে বাড়তি বাহবা নির্মাতার প্রাপ্য।

কিন্তু যে গল্পের হাইওয়ে ধরে সুলতানাকে নিয়ে এলেন তিনি, তা যেন মোড়ে মোড়ে খানিকটা খেই হারিয়েও ফেলল। সিরিজটি শুরু হয়েছিল মাদক পাচারের অন্দরের রহস্য দিয়ে, পথ চলতে চলতে সেটা রূপ নিয়েছে পলায়নের গল্পে। ‘গুটি’ সিরিজের গল্প যতক্ষণে শুরু হয়েছে, ততক্ষণে সুলতানা সিদ্ধান্ত নিয়েছে, মাদক পাচারের কাজ আর সে করবে না। চট্টগ্রাম ছেড়ে ঢাকায় বাসা দেখার তোড়জোড় করে, মেয়েকে ভর্তি করার জন্য স্কুলে খোঁজ লাগায়। কয়েকবার ব্যর্থ হওয়ার পর একসময় স্বামী-সন্তান নিয়ে পালিয়েও যায়। এর পরের গল্পটা কোথাও স্থির হয় না। চট্টগ্রাম থেকে কুমিল্লা হয়ে অবৈধ পথে গল্প ছোটে মালয়েশিয়ার পথে। আর তার পিছে ছুটতে থাকে মাদক পাচারকারী গ্যাং। সব ঘটনা বৈচিত্র্যহীন আর মুখস্থ উপায়ে ঘটতে থাকে, আলাদা করে রহস্য কিংবা মুগ্ধতা জমা হয় না।

তবে পুরোটা সময়ই চোখ আটকে থাকে বাঁধনের দিকে। সুলতানা চরিত্রকে এতটা দরদ ঢেলে ফুটিয়ে তুলেছেন তিনি, কোথাও বিশ্বাসযোগ্যতার এতটুকুও কমতি নেই। অল্প উপস্থিতি দিয়েও নিজেকে দারুণভাবে মেলে ধরার চেষ্টা করেছেন মৌসুমী হামিদ। তীব্র সংকটের সময়ে ‘ভালোবাসার মানুষ’কে পেয়ে, হাসপাতালের সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে তাঁর সংলাপ মন ছুঁয়ে যায়। সুলতানার স্বামীর চরিত্রে শাহরিয়ার নাজিম জয়ও অসাধারণ। সুফিয়া চরিত্রে অহনা সৌরভের স্বল্প উপস্থিতিও আনন্দ দেবে। তবে, এত ভালো অভিনয়শিল্পীদের নিয়ে গল্পের হাল আরও শক্ত হাতে সামলাতে পারতেন নির্মাতা। সেদিক থেকে কিছুটা ঘাটতি রয়েই গেল।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত