Ajker Patrika

আমাদের মিস্টার বিন

আরাফাত আহমেদ রিফাত
আপডেট : ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১৯: ৫০
Thumbnail image

লোকটির পরনে সব সময় থাকে স্যুট-বুট, হাতে থাকে একটি পুতুল, চালান কলাপাতা রঙের ছোট্ট একটি গাড়ি। তিনি অদ্ভুত অদ্ভুত সব কাণ্ড করে চলেন। তাঁর টুকটাক কথা, অঙ্গভঙ্গি আর অভিব্যক্তি দেখে হেসে গড়াগড়ি খায় সবাই। বলছিলাম ব্রিটিশ অভিনেতা রোয়ান সেবাস্টিয়ান অ্যাটকিনসনের কথা। নামটি সবার কাছেই অপরিচিত শোনাবে। কারণ, সবাই তাঁকে চেনেন মিস্টার বিন নামে। শিশু থেকে বুড়ো সবার কাছেই তিনি প্রিয়।

এখন বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তের শোতে, বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলে, ফেসবুকে আর ইউটিউবে মিস্টার বিনের দেখা মিলছে। তবে তিনি রোয়ান সেবাস্টিয়ান অ্যাটকিনসন নন, তিনি ‘বাংলার মিস্টার বিন’খ্যাত পাবনার রাসেদ শিকদার। আসল মিস্টার বিনের সঙ্গে চেহারার অনেকটা মিল থাকায় রাসেদ মিস্টার বিনের মতো হাস্যরসাত্মক অভিনয় করেন।

রাসেদ শিকদার মূলত একজন জাদুশিল্পী। তাঁর জাদুর হাতেখড়ি ২০১০ সালে। ২০১৬ সালে তিনি ম্যাজিক ফেডারেশনের সদস্য হন। এরপর ২০১৭ সাল থেকে তিনি বাংলাদেশ টেলিভিশনের জাদুবিষয়ক ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ‘চোখের পলকে’ নিয়মিতভাবে জাদু দেখান। পাশাপাশি বেশ কিছু স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেলে বিভিন্ন সময়ে জাদু ও অভিনয় নিয়ে উপস্থিত হয়েছেন ইতিমধ্যে। ২০২০ সালে জাদুশিল্পীদের বৈশ্বিক সংগঠন ‘ইন্টারন্যাশনাল ব্রাদারহুড অব ম্যাজিশিয়ানস’-এর সদস্য পদ লাভ করেন রাসেদ শিকদার।

এক আলাপে রাসেদ জানান তাঁর মিস্টার বিন হয়ে ওঠার গল্প। আসল মিস্টার বিনের সঙ্গে চেহারায় অনেকটা মিল থাকায় ছোটবেলায় অনেকে তাঁকে মিস্টার বিন বলে ডাকত। তখন খুব খারাপ লাগত বিষয়টাতে। এরপর ক্লাস সেভেনে থাকতে শখের বশে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে জাদু শেখেন তিনি। জাদু দেখানোর জন্য যখন কোট-টাই পরে মঞ্চে যেতেন, তখন অনেককেই বলতে শোনেন, তিনি মিস্টার বিনের মতো দেখতে। এরপর ২০১৬ সালে জাদুশিল্পী এম রহমান তাঁকে মিস্টার বিন চরিত্র অনুকরণের পরামর্শ দেন। তখন বিষয়টা তেমন প্রাধান্য দেননি রাসেদ। কিন্তু লকডাউন চলাকালে এম রহমান আবার তাঁকে ভার্চুয়ালি মিস্টার বিন চরিত্রে কিছু করতে বলেন।

মূলত তখন থেকেই রাসেদ মিস্টার বিন চরিত্র অনুকরণে সক্রিয় হন। রাসেদ জানান, তিনি এ পর্যন্ত দেশের ৪৯টি জেলায় জাদুর অনুষ্ঠান করেছেন। পাশাপাশি বেশ কয়েকজন চলচ্চিত্র ও টিভি নাটক নির্মাতা তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। ভালো নির্মাতার অধীনে কমেডি চরিত্রে অভিনয় করে সুস্থ ধারার বিনোদন দিতে চান তিনি। হাসির ছলে করতে চান ভালো কাজ, তুলে আনতে চান সমাজের অসংগতিগুলো।

মানুষকে বিনোদন দেওয়ার পাশাপাশি রাসেদ বিভিন্ন সামাজিক কাজেও সক্রিয়। সম্প্রতি তিনি উন্মুক্ত জাদু প্রদর্শনী করে বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন ও অনলাইনে অর্থ সংগ্রহ করে কুড়িগ্রামের বন্যার্তদের সাহায্য করেন।

নিজের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে চাইলে রাসেদ বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই শিল্প-সংস্কৃতি নিয়ে কাজ করার ইচ্ছা ছিল। তবে বর্তমান বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে শিল্প-সংস্কৃতিমনা ব্যক্তিদের তেমন মূল্যায়ন নেই। তাই মিস্টার বিন আর ম্যাজিশিয়ান—দুটিকেই আমি শখ হিসেবে রাখতে চাই। আমার লেখাপড়া শেষে পেশা হিসেবে আমি ব্যবসাকে বেছে নেব।’

রাসেদ শিকদার ১৯৯৮ সালের ৫ অক্টোবর পাবনা জেলার বেড়া উপজেলার খানপুরা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। আমিনপুর থানার কাজিরহাট উচ্চবিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক এবং নাটোরের দিঘাপতিয়া এমকে কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাস করে পাবনার সরকারি এডওয়ার্ড কলেজে ভর্তি হন। বর্তমানে তিনি বিএসএস শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত