Ajker Patrika

এলআইপি সমাচার

সম্পাদকীয়
Thumbnail image

দুর্নীতি দমন কমিশনের কমিশনার (তদন্ত) মো. জহুরুল হক একটা খাঁটি কথা বলেছেন। তিনি দুর্নীতিবাজদের সিআইপি, ভিআইপি না বলে এলআইপি বা ‘লেস ইম্পর্ট্যান্ট পারসন’ নামে  অভিহিত করতে বলেছেন। কথাটা ভালো। কিন্তু এই পাচারকারীর দলকে রুখবে কে? 

কথাটা সত্য, দেশের গরিব মানুষ বিদেশে গিয়ে টাকা আয় করে দেশে পাঠায় আর শিক্ষিত অবস্থাপন্ন মানুষই দেশের টাকা বিদেশে পাচার করে। সরকার যে ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালিত করেছে, সে ব্যাপারে সন্দেহ নেই। কিন্তু পাচারকারীদের কর্মকাণ্ডে সেই উন্নয়নও প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। যাদের দিকে সন্দেহের তির, তারাই কোনো না কোনোভাবে সব দিক ‘ম্যানেজ’ করে ক্ষমতার প্রকাশ ঘটাচ্ছে।

ব্রিটিশদের শোষণ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য উপনিবেশের জোয়াল ভেঙে স্বাধীন হয়েছিল ভারতবর্ষ। ভারত ও পাকিস্তান নামে দুটি আলাদা রাষ্ট্রের জন্ম হয়েছিল তখন। লাহোর প্রস্তাবকে অগ্রাহ্য করে বাংলাকে পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। লাহোর প্রস্তাবের ‘স্টেটস’ শব্দটিকে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। গুরুত্ব দেওয়া হলে ১৯৪৭ সালেই উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশ, সিন্ধু, বেলুচিস্তান ও পাঞ্জাবকে নিয়ে একটা আলাদা রাষ্ট্র এবং বাংলা (তখন আসামও ছিল ভাবনার মধ্যে) হতো আলাদা রাষ্ট্র। যদি সে সময় বাংলা নামে একটি রাষ্ট্রের জন্ম হতো, তাহলে দেশ গঠনের প্রক্রিয়া কী হতে পারত তখন, সেটা এখন শুধু কল্পনাই করা যায়। তবে পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত হয়ে পূর্ব বাংলার মানুষ নতুন করে পশ্চিম পাকিস্তানি প্রশাসনিক আর সেনা আমলাতন্ত্রের মাধ্যমে শোষিত হতে থাকে। ফলে সে সময় যে মুক্তির আকাঙ্ক্ষা মানুষকে নতুন একটি শোষণহীন জীবনযাপনের স্বপ্ন দেখিয়েছিল, তাতে ছিল নিজ দেশ শাসনে সততা ও দক্ষতার অঙ্গীকার। অন্তত সেই স্বপ্নের মধ্যে বিরাটাকারে প্রত্যাশা ছিল, এই দেশকে বিদেশি কেউ এসে লুটেপুটে খাবে না।

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বিদেশি লুটেরাদের সরাসরি শোষণের পথ বন্ধ হয়েছে ঠিকই, কিন্তু সেখানে গজিয়েছে দেশি লুটেরা গোষ্ঠী। এই দেশি লুটেরাদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে তাদের বিদেশি শরিকেরা। ফলে যে স্বপ্ন ও প্রত্যাশা নিয়ে একটি নবীন দেশ যাত্রা শুরু করেছিল, সেই স্বপ্ন ও প্রত্যাশা মেনে দেশটা এগিয়ে যেতে পারেনি। ভেতরে ভেতরে যে প্রস্তুতির দরকার ছিল, তার অনেকটাই ছিল না। এবং সুযোগ পেয়ে এই বাঙালিই প্রমাণ করেছে, শোষণ, দুর্নীতি ইত্যাদি বিষয়ে বাঙালিও কাউকে ছেড়ে কথা বলে না। 

এই নিদারুণ হতাশাময় বাস্তব অবস্থায় সুশাসন প্রত্যাশা করা কঠিন। সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত হয়েছে পেশিশক্তির আস্ফালন। যার ক্ষমতা আছে, সে তার মতো করে আইনের প্রয়োগ চাইছে। ফলে যে নিদারুণ সংকটের সৃষ্টি হয়েছে, তাতে এই ‘এলআইপি’রাই ভিআইপি হতে থাকবে। সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের স্বপ্ন পরিণত হবে দুঃস্বপ্নে। আর দেশের এহেন অবস্থা তৈরির দায় নিতে হবে এ পর্যন্ত যে দলগুলো ক্ষমতাসীন হয়েছে, তাদের সবাইকে। কিন্তু সেই দায় নিয়ে ক্ষমা চাওয়ার পরিবর্তে কে কীভাবে ক্ষমতালগ্ন হবে, সেই প্রতিযোগিতায় নেমেছে, যা খুবই দুঃখজনক।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত