Ajker Patrika

ফসলি জমির মাটি ইটভাটায়

মোহাম্মদ উজ্জ্বল, মহম্মদপুর (মাগুরা)
আপডেট : ১৯ জানুয়ারি ২০২২, ১৩: ৪৫
ফসলি জমির মাটি ইটভাটায়

মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলার মাঠে মাঠে মাটির ওপরের উর্বর অংশ (টপ সয়েল) কাটার মহোৎসব চলছে। নির্বিঘ্নে ফসলি জমির ওপরের উর্বর অংশ কেটে নেওয়া হচ্ছে উপজেলার বিভিন্ন ইটভাটায়। উপজেলার আট ইউনিয়নের বহু কৃষক টাকার জন্য মাটির উর্বর অংশ ইটভাটায় বিক্রি করে দিচ্ছেন বলে খবর পাওয়া গেছে।

গতকাল উপজেলার বিভিন্ন এলাকার একাধিক মাঠ ঘুরে দেখা গেছে, নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে খননযন্ত্র দিয়ে মাটি কেটে ট্রলি ও ট্রাকসহ বিভিন্ন যানবাহন ভরে ইট ভাটায় নেওয়া হচ্ছে। এসব যানবাহন বিভিন্ন গ্রামীণ সড়ক দিয়ে চলাচল করায় সড়কগুলোও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলায় ৩৬টি ইটভাটা রয়েছে। প্রতি বছর ডিসেম্বর মাসে ভাটায় ইট তৈরির জন্য প্রচুর মাটির প্রয়োজন হয়। এ সময় মাটি ব্যবসায়ীরা উপজেলার বিভিন্ন মাঠের টপ সয়েল কেনা শুরু করেন। আবাদি জমির মাটি থেকে ভালো মানের ইট তৈরি হয় বলেই মাটি ব্যবসায়ীরা কৃষকদের কাছ থেকে টপ সয়েল কিনে নেন।

নাম প্রকাশের অনিচ্ছুক এক কৃষক বলেন, ‘ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত চলে ফসলি জমির উপরিভাগের মাটি কাটার মহাযজ্ঞ। কৃষি জমি সমান করার নামে নামে অতি স্বল্পমূল্যে মাটি ব্যবসায়ীরা টপ সয়েল কিনে নেন। পরে তাঁরা এ মাটি ভাটা মালিকদের কাছে চড়াদামে বিক্রি করেন।

মাগুরার মহম্মদপুরে খননযন্ত্রের মাধ্যমে কৃষিজমির ওপরের অংশ (টপ সয়েল) কেটে ট্রাক্টরে করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে উপজেলার ইটভাটাগুলোতেরাজাপুর ইউনিয়নের কৃষক আজম আলী বলেন, ‘আমার খেতের জমি উঁচু নিচু। খেত সমতল করতে জমির মাটি ভাটাই বিক্রি করে দিয়েছি। এ টাকা দিয়ে সার-ওষুধ কিনে জমিতে দিলে মাটি আবার উর্বর হয়ে যাবে।’

কৃষক অলিয়ার রহমান বলেন, ‘বিভিন্ন সময়ে মাটি ক্রেতারা আসেন, বিভিন্ন প্রলোভন দেখান। অসচ্ছল কৃষি পরিবারগুলোর জন্য এ মাটি বিক্রির টাকা কাজে লাগে। তবে এর কারণে জমিতে ফসল উৎপাদনের পরিমাণ কমে যায়।’

উপজেলার কৃষি কর্মকর্তাদের মতে, জমির ওপরের ৮ থেকে ১০ ইঞ্চি পর্যন্ত মাটিকে সাধারণত উর্বর অংশ বা টপ সয়েল বলা হয়। মাটির এ অংশেই থাকে মূল জৈবশক্তি। এক কথাই টপ সয়েল হলো জমির প্রাণ। কৃষকেরা জমির টপ সয়েল ইটভাটায় বিক্রি করে নিজেদের পায়েই কুড়াল মারছেন। এ মাটি বিক্রির সঙ্গে সঙ্গে অজ্ঞতার কারণে তাঁরা জমির উর্বরাশক্তিও বিক্রি করে দিচ্ছেন। বিশাল ক্ষতি হচ্ছে ফসলি জমির। কৃষিতে এর বিরূপ প্রভাব পড়ছে এবং নিজেদের অজান্তেই কৃষকেরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।

উপজেলা কৃষি অফিসার আব্দুস সোবহান বলেন, ‘কৃষিজমির টপ সয়েল বিক্রি করায় ফসলি জমির উপরিভাগের মাটিতে থাকা জিপসাম বা দস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এ ছাড়া মাটিতে থাকা জীবাণু এবং অণুজীবের কার্যাবলি সীমিত হয়ে যাচ্ছে। এসব কারণে দিনদিন ফসলি জমির উর্বরতা ও উৎপাদন ক্ষমতা হ্রাস পাচ্ছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘এর ফলে ফসল উৎপাদন ব্যাপকভাবে ব্যাহত হবে। এ মাটি কেটে নেওয়া হলে কমপক্ষে দুই থেকে তিন বছর ওই জমিতে ফসলের ভালো ফলন আশা করা যাবে না। ফলে ভবিষ্যতে এ উপজেলায় খাদ্যঘাটতির আশঙ্কা থাকছে।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রামানদ পাল বলেন, ‘টপ সয়েল কাটার খবর কানে আসার সঙ্গে সঙ্গে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছি। মাটির উর্বর অংশ বিক্রি না করার জন্য কৃষকদের উদ্বুদ্ধও করা হচ্ছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

১০০ বছর পর জানা গেল ‘অপ্রয়োজনীয়’ প্রত্যঙ্গটি নারীর প্রজননের জন্য গুরুত্বপূর্ণ

‘এই টাকা দিয়ে কী হয়, আমি এত চাপ নিচ্ছি, লাখ পাঁচেক দিতে বলো’, ওসির অডিও ফাঁস

কিশোরগঞ্জে আওয়ামী লীগের ঝটিকা মিছিল, যুবলীগ নেতা গ্রেপ্তার

উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের এপিএস মোয়াজ্জেমকে অব্যাহতি

ঘন ঘন নাক খুঁটিয়ে স্মৃতিভ্রংশ ডেকে আনছেন না তো!

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত