Ajker Patrika

‘আমি কি ভুলিতে পারি’

সম্পাদকীয়
‘আমি কি ভুলিতে পারি’

আজ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। অনেকেই হয়তো ভুলতে বসেছে যে আজ মূলত শহীদ দিবস। ১৯৯৯ সালে ইউনেসকো একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। এ দিবসটি এখন বিশ্বব্যাপী পালন করা হয়। দিবসটি এসেছে আমাদের শহীদ দিবসের হাত ধরে—এ কথা ভুলে যাওয়া উচিত নয়।

সংগ্রামটা তখন থেকেই শুরু, যখন ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশরা ভাগ করে দেয় ভারতীয় উপমহাদেশ। প্রায় এক হাজার মাইলের বিশাল দূরত্বে অবস্থিত দুটি ভূখণ্ড নিয়ে গঠিত হয় একটি দেশ—পাকিস্তান। পশ্চিম পাকিস্তানের ক্ষমতাধর উর্দুভাষীরা পূর্ব বাংলার ভাষাকে অগ্রাহ্য করে উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করতে চেয়েছিল। তারই প্রতিবাদ ছিল বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করা নিয়ে। ভাষা প্রশ্নটি বাঙালিকে তার সংস্কৃতি, ঐতিহ্য এবং ইতিহাসের দিকে ফিরিয়ে দেয়।

পাকিস্তান রাষ্ট্রের জন্মের আগে থেকেই ভাষা প্রশ্নটি নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছিল। তবে ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি সেই আন্দোলন চরমে পৌঁছে যায়। সেদিন ১৪৪ ধারা ভেঙে ১০ জনি মিছিল করেন শিক্ষার্থীরা। পরিষদ ভবন ঘেরাও করার প্রস্তুতি নেন তাঁরা। পুলিশ অতর্কিতে গুলি চালায়। সেদিন শহীদ হন রফিক, বরকত, জব্বারসহ অনেকে। সালাম গুলিবিদ্ধ হয়ে হাসপাতালে শহীদ হন ৭ এপ্রিল। পরদিনও গুলি চলে। শফিউর রহমানসহ আরও কয়েকজন শহীদ হন। তাঁদের কারণেই একুশে ফেব্রুয়ারি আমাদের শহীদ দিবস। আর এই দিনের গুরুত্ব বুঝেই ইউনেসকো দিবসটিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের মর্যাদা দেয়।

আমরা কেন চেয়েছিলাম অন্যতম রাষ্ট্রভাষা বাংলা হোক? শুধুই কি বাংলা ভাষী মানুষ সংখ্যায় বেশি বলে? না। বাঙালির শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতিকে বিকশিত করতে হলে বাংলা ভাষার কোনো বিকল্প হতে পারে না। বাংলা ঠিকভাবে জানা না থাকলে অন্য ভাষায় অনুবাদও যে ভালো হয় না, তা বিজ্ঞজনেরা ভালো জানেন। বিশ্বায়নের পর ইংরেজির যে প্রকোপ, তাতে ‘জাতে’ ওঠার জন্য দশটা বাংলা শব্দের মধ্যে পাঁচটা ইংরেজি শব্দ উচ্চারণ না করলে উচ্চতায় পৌঁছানো যায় না। আন্তর্জাতিক যোগাযোগের জন্য ইংরেজি জানাটা খুব জরুরি। শুধু ইংরেজি কেন, যেকোনো ভাষা শেখা বা জানাটা দক্ষতা। কিন্তু নিজের ভাষাকে অবহেলা করে অন্য ভাষার ওপর আস্থা রাখলে তাতে নিজের ভাষার প্রতি যথাযথ সম্মানবোধ থাকে না। আমরা এখনো উচ্চশিক্ষা বাংলায় করতে পারিনি, পারিনি উচ্চ আদালতে বাংলাকে সেভাবে স্থান দিতে। তেমনি সমাজের ওপরতলায় ইংরেজির প্রতি আগ্রহ দিনে দিনে আরও বাড়িয়ে চলেছি। খেটে খাওয়া মানুষের ভাষা কিন্তু বাংলাই। সেটা যেন আমরা ভুলে না যাই।

শুধু ইংরেজির মিশেলে নয়, শুদ্ধভাবে বাংলা বলার প্রবণতা যে কমে আসছে, সেটাও লক্ষ করা যাচ্ছে। এটাও দুঃখজনক যে আমাদের দেশের বিভিন্ন জাতিসত্তার মানুষের ভিন্ন ভিন্ন ভাষার যথাযথ বিকাশ হচ্ছে না। তাতে সেই সব ভাষার প্রতিও যথাযথ সম্মান দেখানো হচ্ছে না। নিজের ভাষার উন্নতি করার মাধ্যমে অন্য ভাষার সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ানো খুব জরুরি, সেটা যেন আমরা বুঝতে শিখি।

শহীদ স্মৃতি অমর হোক।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের ৪ বিচারকের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিল যুক্তরাষ্ট্র

প্রধান উপদেষ্টার নির্বাচনের সময়সীমা ঘোষণার পর যা বলল ইইউ

আপনাদের সঙ্গে হাত মেলাব না, বিস্ফোরক তামিম

কাগজে-কলমে মেয়র হওয়ায় দায়িত্ব পালন করলাম: জাতীয় ঈদগাহ পরিদর্শন শেষে ইশরাক

এপ্রিলে নির্বাচন ঘোষণায় বিএনপি ও জাতির প্রত্যাশা পূরণ হয়নি: সালাহউদ্দিন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত