Ajker Patrika

‘মাছ-মাংস পাত থিকা উঠিচে, সবজিতেও টান পড়িচ্চে’

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২২ অক্টোবর ২০২২, ০৯: ৪৭
‘মাছ-মাংস পাত থিকা উঠিচে, সবজিতেও টান পড়িচ্চে’

‘মাছ-মাংস পাত থিকে উঠিচে আগেই। এখন তো সবজিতেও টান পড়িচ্চে। কয়েক সপ্তাহ থিকে পেঁপে খাইয়ে ছিলাম। আইজ পেঁপের দামও বারিচ্চে দেকচি।’ এসব কথা বলেন পারভিন বেগম নামের এক গৃহকর্মী। গতকাল শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর মেরাদিয়া বাজারে সবজি কিনতে এসেছিলেন তিনি।

পঞ্চাশোর্ধ্ব পারভিন আজকের পত্রিকাকে আরও জানান, মাসখানেক ধরে মোটা চালের ভাতের সঙ্গে ডাল আর পেঁপে দিয়ে দুই বেলার আহার সারছিলেন তাঁরা। এ সপ্তাহে সেই পেঁপে কিনতেও তাঁকে বেশ কয়েকবার ভাবতে হচ্ছে। গত বুধবার রাতেও ২০ টাকা কেজি দরে কাঁচা পেঁপে কিনেছেন তিনি। অথচ তা গতকাল ৩০ টাকায় পৌঁছায়।

রাজধানীর রামপুরা, মেরাদিয়া ও কচুক্ষেত বাজার ঘুরে দেখা গেছে, পারভিন বেগমের মতোই বাজারদরের সঙ্গে নিজেদের প্রয়োজন মেটানোর হিসাব মেলাতে হিমশিম খাচ্ছে সাধারণ মানুষ। এক সপ্তাহের ব্যবধানে মাছ-মাংস, শাকসবজির দাম বেড়েছে।

ব্রয়লার মুরগির দাম কেজিতে ২৫ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। গতকাল বিভিন্ন বাজারে ১৯০-১৯৫ টাকা কেজিতে মুরগি বিক্রি হতে দেখা গেছে। তা শিগগিরই ২০০ টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে আভাস দিয়েছেন বিক্রেতারা।

কচুক্ষেত বাজারের বিক্রেতা মোহাম্মদ শাহীন বলেন, ‘মুরগির দাম আইজ একটু কম আছে। এই সপ্তাহেই ২০০ ছাড়াইব মনে হয়।’

পাকিস্তানি মুরগি কেজিপ্রতি ৩২০ টাকা এবং দেশি মুরগি ৫০০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। মুরগির মতো ডিমের দামও বাড়তি। ডজনপ্রতি ফার্মের ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৪৫ টাকায়। পেঁয়াজের দাম কেজিতে ১৫ থেকে ২০ টাকা বেড়ে ৬০ টাকায় পৌঁছেছে। আদা কেজিপ্রতি ১৪০-১৬০ টাকা। টমেটো ১৪০-১৬০, গাজর ১৪০, বরবটি ও করলা ৭০-৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে। মুলা, লাউ, ফুলকপি ও বাঁধাকপির দাম কিছুটা কমেছে। বিভিন্ন বাজারে মুলা ৬০, লাউ ৬০ টাকা কেজি এবং বাঁধাকপি ও ফুলকপি প্রতিটি ৩০-৪০ টাকা দরে বিক্রি হয়। শিম ১৩০-১৪০, ঢ্যাঁড়স ৬০-৭০, আলু ৩০-৪০ এবং কাঁচা মরিচ ১০০ টাকায় বিক্রি হয়।

সপ্তাহের ব্যবধানে শসার দাম বেড়েছে ২০-৩০ টাকা। গতকাল ৭০ টাকা কেজি দরে শসা বিক্রি হতে দেখা গেছে। এ সপ্তাহে সেটা ৮০ টাকায় পৌঁছাবে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন বিক্রেতারা। মূল্যবৃদ্ধির কারণ জানতে চাইলে মেরাদিয়া বাজারের বিক্রেতা আব্দুল আলীম বলেন, ‘যেই সবজির আমদানি কম, সেই সবজির দাম বেশি। আমরা যেই দামে কিনতে পারি, তার কমে তো বেচতে পারমু না।’

ইলিশের অনুপস্থিতিতে অন্য মাছের দামও বাড়তির দিকে। রুই আকারভেদে ৩২৫-৫৫০ টাকা, কোরাল ৮৮০ থেকে ১ হাজার, কাতল ৫২০ এবং রুপচাঁদা ৬৮০-৭০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়। চিংড়ি ৬০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা কেজি। খাসির মাংস ৮৫০ টাকা এবং গরুর মাংস ৭০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয় রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে।

লালশাক, ডাঁটাশাক ও মুলাশাক বিক্রি হচ্ছে ১৫ টাকা আঁটি। তবে পুঁইশাকের দাম ৩০ টাকা। বিক্রেতারা জানান, আগামী সপ্তাহের শেষের দিকে শীতের সবজির দাম কিছুটা কমতে পারে। কচুক্ষেত বাজারের আলম মৃধা বলেন, ‘কয়েক দিন পর সবজির দাম একটু তো কমার কথা। কিন্তু সেইটা নিশ্চিতভাবে কওয়া যাইতেছে না।’

তবে দাম কমার আশার বাণীতে খুব একটা আস্থা রাখতে পারছেন না ক্রেতারা। রামপুরা বাজারে আসা তৌহিদুর রহমান বলেন, ‘প্রতি সপ্তাহেই শুনি আগামী সপ্তাহে দাম কমতে পারে। কিন্তু সেই আগামী সপ্তাহ আর আসে না। দাম শুধু বেড়েই যায়। দাম কমেছে এমন কিছু তো খুঁজে পাই না।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত