Ajker Patrika

খুশকিকে বিদায় জানান

খুশকিকে বিদায় জানান

চুলের দীর্ঘমেয়াদি সমস্যাগুলোর মধ্য়ে খুশকি অন্যতম। শুধু শীতের শুষ্ক আবহাওয়াতেই নয়, ধুলোবালি, দূষণ, মাথার ত্বকের অতিরিক্ত শুষ্কতা বা তৈলাক্ততার ফলে অনেকেই প্রায় সারা বছর খুশকির সমস্যায় ভোগেন। এ জন্য অতিরিক্ত অ্যান্টিড্যানড্রাফ শ্যাম্পু ব্যবহারের কারণে অতিরিক্ত চুল ঝরে যাওয়া, চুল রুক্ষ হয়ে যাওয়াসহ মাথার ত্বকে নানা রকম সংক্রমণ হতে পারে।

খুশকির সমস্যা সমাধানে প্রথমেই এর ধরন সম্পর্কে জানতে হবে। চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. তাওহীদা রহমান ইরিন বলেন, ‘যাঁদের মাথার ত্বক খুব শুষ্ক, তাঁদের খুশকির সমস্যা হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে। এই খুশকি ছোট ছোট, গুঁড়ো গুঁড়ো হয়ে থাকে।’

খুশকি হওয়ার কারণ

  • মাথার ত্বকে ময়েশ্চারাইজারের অভাব।
  • মাথার ত্বক অনেক বেশি তৈলাক্ত হওয়া।
  • মাথার ত্বকে প্রাকৃতিকভাবে তৈরি হওয়া তেল, মৃত কোষ ও ধুলোবালি জমা।
  • চুল রং করা ও ত্বকের অ্যালার্জি।
  • চুল ভালোভাবে পরিষ্কার না করে স্প্রে, জেল ইত্যাদি ব্যবহার করা।
  • শ্যাম্পু করার পর কন্ডিশনার লাগিয়ে তা ঠিকভাবে পরিষ্কার না করা। 

ডা. তাওহীদা রহমান ইরিন জানান, যাঁদের তৈলাক্ত ত্বক, তাঁদের আরেক ধরনের খুশকি হতে পারে—সেটাকে সিবোরিক ডার্মাটাইটিস বলা হয়। সেটি ত্বকের একটি রোগ। এ ধরনের খুশকি দেখতে একটু হলদেটে, ভেজা ভেজা হয়। এই খুশকি শুধু চুলে নয়, ভ্রু, চোখের পাপড়ি, নাকের দুই পাশে, ছেলেদের দাড়িতে, বুকের লোমে হয়ে থাকে। 

নিয়ন্ত্রণ
খুশকি হলে বেশি বেশি শ্যাম্পু করলেই সমস্যার সমাধান হয়ে যায় না; বরং বেশি শ্যাম্পু করার কারণে মাথার ত্বকের তেলগ্রন্থি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাতে মাথার ত্বক শুষ্ক হওয়া, চুল পড়ে যাওয়া ও চুল ভেঙে যাওয়ার মতো সমস্যা তৈরি হতে পারে।

মডেল: মাফিনশ্যাম্পু নির্বাচন
ডা. তাওহীদা রহমান ইরিন জানান, যাঁদের মাথার ত্বক শুষ্ক, তাঁরা তেল বা কন্ডিশনারযুক্ত অ্যান্টিড্যানড্রাফ শ্যাম্পু ব্যবহার করতে পারেন। যাঁদের মাথার ত্বক তেলতেলে, তাঁরা অ্যান্টিফাঙ্গাল উপাদানযুক্ত অ্যান্টিড্যানড্রাফ শ্যাম্পু ব্যবহার করতে পারেন। বাজারে যেসব অ্যান্টিড্যানড্রাফ শ্যাম্পু পাওয়া যায়, সেগুলো চুল অনেক বেশি শুষ্ক ও রুক্ষ করে তোলে। তাই শ্যাম্পু বাছাইয়ের সময় অ্যালোভেরা, জিনজার, আপেল সিডার ভিনেগার আছে এমন শ্যাম্পু বাছাই করতে হবে।

যেভাবে শ্যাম্পু করবেন
যাঁদের চুলে অনেক বেশি খুশকি, তাঁদের প্রথম এক মাস প্রতিদিন অ্যান্টিড্যানড্রাফ শ্যাম্পু দিয়ে চুল পরিষ্কার করতে হবে। এর পরের এক মাস সপ্তাহে তিন দিন, তার পরের এক মাস সপ্তাহে এক দিন চুল পরিষ্কার করতে হবে। চুল যদি একেবারে খুশকিমুক্ত হয়ে যায় তাহলে সপ্তাহে এক দিন অ্যান্টিড্যানড্রাফ শ্যাম্পু দিয়ে চুল পরিষ্কার করার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা।

এ ছাড়া চুলে তেল ম্যাসাজ করে চিকন দাঁতের চিরুনি দিয়ে ভালোভাবে আঁচড়াতে হবে। এতে মাথার ত্বক থেকে অনেকখানি খুশকি উঠে আসবে। এরপর অ্যান্টিড্যানড্রাফ শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুতে হবে। কিছু কিছু অ্যান্টি-ড্যানড্রাফ শ্যাম্পু মাথার ত্বকে পাঁচ মিনিট ধরে ম্যাসাজ করার পরামর্শও দেন চিকিৎসকেরা। পানি দিয়ে ভালোভাবে চুল ধুয়ে নরম তোয়ালে দিয়ে মুছে ফ্যানের বাতাসে শুকিয়ে নিতে হবে।

চুল শ্যাম্পু করার পর ও কন্ডিশনার ব্যবহারের পর ভালোভাবে পরিষ্কার করা না হলে স্ক্যাল্পে খুশকি হতে পারে। পানি দিয়ে ভালোভাবে চুল ধুয়ে নরম তোয়ালে দিয়ে মুছে ফ্যানের বাতাসে শুকিয়ে নিতে হবে। 

শোভন মেকওভারের কসমেটোলজিস্ট শোভন সাহা বলেন, যাঁদের মাথায় খুশকি অনেক বেশি, তাঁরা প্রফেশনাল ট্রিটমেন্ট নেওয়ার পর ভালো মানের অ্যান্টিড্যানড্রাফ শ্যাম্পু নিয়মিত ব্যবহার করলে একেবারে খুশকির সমস্যা থেকে মুক্তি পাবেন। তবে নিয়মিত যত্নে মাথার ত্বক অনেক শুষ্ক হলে শ্যাম্পু করার আগে খাঁটি নারকেল বা জলপাইয়ের তেল দিয়ে ম্যাসাজ করে নিতে পারেন।

জীবনযাপন
পারকিনসনস, এইচআইভি ইত্যাদি রোগের কারণেও চুলে খুশকি হতে পারে। ফলে খুশকির চিকিৎসার সঙ্গে এসব রোগ আছে কি না, তা নিশ্চিত হতে হবে। এ ছাড়া খাদ্যতালিকায় ভিটামিন বি, ডি, জিংকজাতীয় খাবার রাখা জরুরি। চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে এসবের সম্পূরকও খেতে হতে পারে কোনো কোনো ক্ষেত্রে। 

খুশকি তাড়ানোর ঘরোয়া টোটকা

  • হট অয়েল থেরাপি: রাতে শোয়ার সময় মাথার ত্বকে গরম তেল ম্যাসাজ করুন। পরদিন সকালে গোসল করার এক ঘণ্টা আগে ভিনেগারের সঙ্গে লেবুর রস মিশিয়ে কটন বল দিয়ে আলতো করে ঘুষুন। এরপর একটা ডিম ফেটে লাগিয়ে রাখুন ২০ মিনিট। তারপর শ্যাম্পু দিয়ে ভালো করে চুল ধুয়ে ফেলুন। শেষ ধোয়ায় ১ কাপ গরম পানিতে একটি লেবুর রস ব্যবহার করুন। সপ্তাহে একবার এভাবে চুলের যত্ন দিন টানা তিন মাস।
  • স্টিমিং: তেল গরম করে চুলে আধা ঘণ্টা ম্যাসাজ করুন। এরপর বড় তোয়ালে কুসুম গরম পানিতে ভিজিয়ে নিংড়ে নিয়ে সেই তোয়ালে দিয়ে পুরো চুল জড়িয়ে রাখুন ১৫ মিনিট। এরপর অ্যান্টিড্যানড্রাফ শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন।
  • টক দই: ৬ টেবিল চামচ টক দই খুব ভালো করে ফেটিয়ে নিন। এরপর তাতে ১ টেবিল চামচ মেহেদিবাটা ভালোভাবে মিশিয়ে মিশ্রণটি চুলের গোড়াসহ পুরো চুলে লাগিয়ে ৩০ থেকে ৪০ মিনিট অপেক্ষা করুন। এরপর চুল ভালো করে শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে এক দিন এ মিশ্রণটি ব্যবহার করুন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত