পাভেল পার্থ

আমাদের কি বরেন্দ্র অঞ্চলের অভিনাথ মার্ডী ও রবি মার্ডী নামে দুই গরিব সাঁওতাল কৃষকের কথা মনে আছে? সেচের পানি না পেয়ে বিষ খেয়ে আত্মহত্যা করেছিলেন। মনে থাকার কোনো কারণ নেই। কারণ, গ্রামেগঞ্জে কৃষকের ঘরে বা হাটবাজারে বিষ থাকে। চাইলে কেউ বিষ খেয়ে মরতে পারে কিংবা বিষক্রিয়ায় গ্রামে, কৃষিজীবনে মানুষ বেশি আক্রান্ত হতে পারে। কিন্তু আমাদের কি ২০২৩ সালের জুন মাসে ঢাকা শহরের একটি ঘটনা মনে আছে? বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় এক অভিজাত পরিবারের দুই শিশু বালাইনাশকের বিষক্রিয়ায় মারা গিয়েছিল? না, তারা আত্মহত্যা করেনি। না, তাদের হয়তো খুনও করা হয়নি। তারা কোনো কৃষক পরিবারের ছিল না, এমনকি তারা হয়তো তাদের ছাদবাগান থাকলে সেখানেও যায়নি সেদিন। তাদের বেঘোরে মৃত্যু ঘটেছিল বিষের কারণেই। কারণ তাদের বাসায় তেলাপোকা মারতে ভয়াবহ রাসায়নিক বিষ অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ব্যবহৃত হয়েছিল। শায়ান মোবারত ও শাহির মোবারত নামে দুই উচ্ছল ভাইয়ের করুণ মৃত্যু ঘটে সেই ফসফাইডের বিষক্রিয়ায়। এ ঘটনার পর ‘ডিসিএস অর্গানাইজেশন লিমিটেড’ নামের একটি পেস্ট কন্ট্রোল সার্ভিস কোম্পানির চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালককে (এমডি) গ্রেপ্তার করে পুলিশ। হয়তো ঘটনাটি ঢাকার অভিজাত এলাকার ধনী পরিবারে ঘটেছে কিংবা কর্তৃপক্ষ ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে চেয়েছে দ্রুত।
বালাইনাশকের বিষক্রিয়ায় দেশজুড়ে মানুষ, পশুপাখি, গাছপালা, অণুজীব, পতঙ্গসহ বহু প্রাণের মৃত্যু ঘটছে প্রতিনিয়ত। এসব মৃত্যুর সব কিন্তু আত্মহত্যা নয়, রাসায়নিক কৃষিকাঠামোর ফলে হত্যাও আছে। তবে এই বালাইনাশকের কারণে খুন-জখমের বিচার, দণ্ড, শাস্তি হয়েছে এমন উদাহরণ বিরল। যা হোক, বসুন্ধরার দুই শিশুর মৃত্যু কেবল নয়, অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইডের বিষক্রিয়ায় মৃত্যু বিশ্বজুড়ে এক প্রশ্নহীন ‘সাধারণ’ ঘটনা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। ২০১৯ সালের ১৬ নভেম্বর রোমানিয়ার তিমিসোয়ারায়ও ঢাকার বসুন্ধরার মতোই ঘরের ভেতরে ফসফাইড ধোঁয়া ব্যবহারের ফলে দুই শিশুসহ তিনজনের মৃত্যু ঘটে। ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে ফ্রান্সের কাছাকাছি একটি কার্গো জাহাজে ফসফাইডের বিষক্রিয়ায় বহু মানুষ মারাত্মকভাবে আহত হয় এবং একজন মারা যায়। ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসের ট্রেইলর পার্কে ইঁদুর মারার জন্য এই ট্যাবলেট ব্যবহৃত হলে পার্কে ঘুরতে আসা চারটি শিশুর নিদারুণ মৃত্যু ঘটে বিষক্রিয়ায়। থাইল্যান্ড ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অনেক হোটেলে বিছানার ছারপোকা মারার জন্য এই ট্যাবলেট ব্যবহৃত হয় এবং অধিকাংশ সময় হোটেলের কক্ষ বন্ধ থাকে এবং এতে দেখা গেছে প্রচুর দুর্ঘটনা ঘটে। উত্তর ভারতে আত্মহত্যার ক্ষেত্রে এই বিষ ট্যাবলেট খুব বেশি ব্যবহৃত হয়। এমনকি ইরানে আত্মহত্যার ক্ষেত্রে এই বিষ ব্যবহৃত হয়। ২০০৯ সালে সংযুক্ত আরব আমিরাতে ফসফাইড আছে এমন সব ধরনের বালাইনাশক নিষিদ্ধ করা হয়।
বাংলাদেশে এই ‘ইঁদুর মারার বিষ’, ‘গ্যাস ট্যাবলেট’, ‘তেলাপোকার যম’ নানা নামে শহরের অলিগলিতে এই বিষ বিক্রি হয়। ‘কুইকফস’, ‘সালফস’ কিংবা ‘সেলফস’ নামে অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড বাণিজ্যিকভাবে বিক্রি হয় মুদিদোকান থেকে শুরু করে বালাইনাশক বিক্রয়কেন্দ্রে। এটি কতটা প্রাণসংহারী ও বিপজ্জনক এবং কীভাবে এর ব্যবহার করতে হয়, তা নিয়ে আমাদের জানা-বোঝা একেবারেই কম। তবে এই বিষ আমদানি, বিক্রি, মজুত বা ব্যবহারের অনুমোদন ও বৈধতা কিন্তু রাষ্ট্রই দিয়েছে। কৃষি বিপণন অধিদপ্তর, কৃষি বিভাগ, ভ্রাম্যমাণ আদালত, স্থানীয় সরকার, বাজার কমিটি যারা কোনো বাজারে দোকানে কী বিক্রি হয়, কেন হয় এসব দেখভাল করে, তারা দেশজুড়ে বালাইনাশক বিক্রি-ব্যবহারের ক্ষেত্রে চরম মাত্রায় উদাসীন। একই সঙ্গে দায়িত্বশীল নয় এবং এমনকি নিষিদ্ধ বালাইনাশক কেন বিক্রি ও ব্যবহৃত হচ্ছে, সে বিষয়েও কোনো দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে অপারগ। আর কর্তৃপক্ষের এই রহস্যজনক নিশ্চুপতা, অবহেলা কিংবা নানামুখী বাণিজ্যস্বার্থের কারণে দেশজুড়ে মাটি, পানি, বাতাস থেকে শুরু করে মানুষের শরীরে ছড়িয়ে পড়ছে মারাত্মক প্রাণসংহারী বালাইনাশক বিষ। একই সঙ্গে শহর এলাকায় ‘পেস্ট কন্ট্রোলের’ নামে প্রাণঘাতী বালাইনাশকের ব্যবহার জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশকে ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলছে। তবে যে অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড নিয়ে আমরা আলাপ শুরু করেছি, জানা যাচ্ছে, এই প্রাণঘাতী বিষ আমাদের খাবারে ব্যবহার করা হচ্ছে। বিশেষ করে আমরা সবচেয়ে বেশি যে খাদ্য গ্রহণ করি ভাত, সেই চালে।
‘চালের পোকা মারার ট্যাবলেটে স্বাস্থ্যঝুঁকি’ শিরোনামে একটি সরেজমিন প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে দৈনিক আজকের পত্রিকা। প্রতিবেদনটি জানায়, চালের পোকা দমনে অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইডের যথেচ্ছ ব্যবহার জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি করছে (সূত্র: ৩ /৪ / ২৪)। ডাল, সুজি, গম ও শাক-সবজিতেও এটি ব্যবহৃত হচ্ছে। বিশ্বব্যাপী গুদামে খাদ্যশস্য পোকামুক্ত রাখতে নিয়ম মেনে এটি ব্যবহৃত হলেও বাংলাদেশে গুদাম, পাইকারি ও খুচরা দোকান সর্বত্র এটি ব্যবহৃত হচ্ছে। এমনকি চালের বস্তায়ও ব্যবহৃত হচ্ছে এই বিষ। প্রতিবেদনমতে, গ্রামগঞ্জ থেকে শুরু করে শহরের মুদিদোকানেও বিক্রি হচ্ছে এই ভয়াবহ বিষ। ঢাকার মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট, বাবুবাজার, বাদামতলী, কারওয়ান বাজারের চালের আড়তে এবং বনশ্রী, রামপুরাসহ বিভিন্ন এলাকার মুদিদোকানেও চালের বস্তার পোকা মারতে অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ব্যবহারের কথা গণমাধ্যমকে জানান ব্যবসায়ী ও কর্মচারীরা। কোনো চালের বস্তায় পোকা দেখা গেলে একটি ট্যাবলেট দিয়ে এক দিন ঢেকে রাখা হয়। এরপর পোকা মরে গেলে চাল বিক্রি করা হয়।
২০০০ সালের দিকে কুমিল্লার একটি খাদ্যগুদামে অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ব্যবহার করা হয়েছিল। বন্ধ গুদামঘরে কোনো ভেন্টিলেশন বা ফাঁকা জায়গা ছিল না। সারা দিনে ফসফাইড গ্যাস জমে গুদামঘর ভর্তি হয়েছিল। পরদিন সেই গুদামে যে শ্রমিকেরা কাজ করতে গিয়েছিলেন, তাঁদের মধ্যে ছয়জন বিষক্রিয়ায় মারা যান এবং অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়েন। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানী গণমাধ্যমে জানান, চালের পোকা মারার জন্য ট্যাবলেট চালে লাগানো যাবে না, একটি শুকনো কাপড়ের ভেতরে রাখতে হবে এবং ২৪ ঘণ্টা পর চালের বস্তা থেকে বের করে সেই কাপড় কমপক্ষে এক ফুট মাটির তলায় পুঁতে ফেলতে হবে। গ্যাস ট্যাবলেট ব্যবহার করা হয়েছে এমন বস্তার চাল কমপক্ষে ১০ দিন পর খাওয়া দরকার। উচ্চ তাপেও ফসফাইড গ্যাস নিঃসরণ হয় না, কিন্তু পানি ও আর্দ্রতার স্পর্শে এলে এটি মানুষের ফুসফুসে ঢুকে যেতে পারে।
অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইডের বিষক্রিয়াজনিত মৃত্যুর ঘটনা খুব বেশি ঘটে। অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইডের বিষক্রিয়ায় মুহূর্তেই রক্ত সঞ্চালনব্যবস্থা, হৃদ্যন্ত্র এবং পুরো শরীর বিকল হয়ে যেতে পারে। দীর্ঘমেয়াদি এর সংস্পর্শে আসার মাধ্যমে ক্যানসার, ফুসফুসের জটিল অসুখ এবং নানা প্রাণঘাতী শারীরিক অসুস্থতা তৈরি হতে পারে। মাত্র ০.১৫ গ্রাম থেকে ০.৫ গ্রাম ফসফাইড প্রায় ৮৫ ভাগ মৃত্যু ঘটাতে পারে। তাহলে এই বিপজ্জনক বিষ কেন এবং কীভাবে রাষ্ট্রীয় কর্তৃপক্ষের অগোচরে (কিংবা গোচরে) চালের মতো এত গুরুত্বপূর্ণ খাদ্যে ব্যবহৃত হচ্ছে? সরকারের খাদ্যমান নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান, বাজার তদারককারী কর্তৃপক্ষ, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর কিংবা নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ তাহলে কী করছে? চালের বাজারে কেন এভাবে কোনো নিয়ন্ত্রণ ও পদ্ধতিগত ব্যবস্থাপনা ছাড়া এই বিষ ব্যবহৃত হচ্ছে? দ্রুত আমাদের এ ঘটনার তদন্ত ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা জরুরি।
চালসহ সব খাদ্যপণ্য গুদামজাতকরণ থেকে শুরু করে বালাই থেকে সুরক্ষায় অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইডের ব্যবহার নিষিদ্ধ করা দরকার। কারণ প্রতিদিন আমাদের নগরে মানুষ বাড়ছে, ঘিঞ্জি এলাকা বাড়ছে, একই সঙ্গে জলবায়ুগত সংকটের কারণে আর্দ্রতা ও দাবদাহ সবই বাড়ছে। এমন পরিস্থিতিতে চালসহ খাদ্যসামগ্রী আমরা কীভাবে নিরাপদে মজুত করতে পারি, সে বিষয়ে সামগ্রিকভাবে সবার মতামত ও প্রস্তাব নিয়ে জাতীয় পর্যায়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারি। আমাদের বহু লোকায়ত পদ্ধতি আছে, বহু ভেষজ প্রাকৃতিক পন্থা আছে, পাশাপাশি সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কাঠামোর নানা শক্তিশালী অনুশীলনও এ ক্ষেত্রে আমাদের জন্য সংবেদনশীল ও টেকসই হবে। এমনকি বাসাবাড়িতে তেলাপোকা, ছারপোকা, ইঁদুর মারার জন্য অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইডসহ সব প্রাণঘাতী রাসায়নিকের ব্যবহার নিষিদ্ধ করে প্রাকৃতিক নিরাপদ পন্থাগুলো আমাদের অনুশীলন করা জরুরি।
এ ক্ষেত্রে গ্রামীণ কৃষক সমাজ থেকে শুরু করে অন্যান্য দেশের বহু প্রাকৃতিক চর্চার উদাহরণ, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় এবং গবেষণা প্রতিষ্ঠানের নানা প্রাকৃতিক বালাইনাশক উদ্ভাবনসমূহ আমাদের একত্র করতে হবে। নিজেদের মধ্যে বিনিময় ও সহযোগিতা বাড়াতে হবে। আমাদের আশপাশের প্রাকৃতিক পরিবেশ, বাস্তুতন্ত্র ও প্রাণ-প্রকৃতির বিশৃঙ্খল দৈন্যদশাকে বুঝতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবগুলো আন্দাজ করতে হবে। কেন চালে বা বিছানায় পোকা হচ্ছে বা ইঁদুরের উপদ্রব কেন বাড়ে, এই বৈজ্ঞানিক প্রশ্নের ফয়সালা প্রাকৃতিক পন্থার বিজ্ঞান অনুশীলনের মধ্য দিয়েই খুঁজতে হবে। সব কার্যকারণ চাপিয়ে, দাবিয়ে, লুকিয়ে রেখে কেবল কিছু বহুজাতিক কোম্পানির রাসায়নিক বিক্রির মুনাফাকে চাঙা রাখতে আমরা বারবার আত্মঘাতী হয়ে উঠব? ডিডিটি, ডাইক্লোফেনাক, কিটোপ্রোফেন কিংবা কার্বোফুরানের মতো রাসায়নিক বিষগুলোর বিশাল ব্যবসা ও বাজার ছিল বাংলাদেশে। এমনকি এসব বিষ ছাড়া আমাদের উৎপাদন ও জীবন থমকে যাবে এমন মিথ্যাচার করা হয়েছিল দীর্ঘ সময়। এসব প্রাণঘাতী বিষ বাংলাদেশ নিষিদ্ধ করতে পেরেছে। আমরা আশা করব, অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইডের মতো বিষ নিষিদ্ধ করে আমাদের খাদ্য, স্বাস্থ্য ও জীবনকে নিরাপদ করবে রাষ্ট্র।
লেখক: লেখক ও গবেষক

আমাদের কি বরেন্দ্র অঞ্চলের অভিনাথ মার্ডী ও রবি মার্ডী নামে দুই গরিব সাঁওতাল কৃষকের কথা মনে আছে? সেচের পানি না পেয়ে বিষ খেয়ে আত্মহত্যা করেছিলেন। মনে থাকার কোনো কারণ নেই। কারণ, গ্রামেগঞ্জে কৃষকের ঘরে বা হাটবাজারে বিষ থাকে। চাইলে কেউ বিষ খেয়ে মরতে পারে কিংবা বিষক্রিয়ায় গ্রামে, কৃষিজীবনে মানুষ বেশি আক্রান্ত হতে পারে। কিন্তু আমাদের কি ২০২৩ সালের জুন মাসে ঢাকা শহরের একটি ঘটনা মনে আছে? বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় এক অভিজাত পরিবারের দুই শিশু বালাইনাশকের বিষক্রিয়ায় মারা গিয়েছিল? না, তারা আত্মহত্যা করেনি। না, তাদের হয়তো খুনও করা হয়নি। তারা কোনো কৃষক পরিবারের ছিল না, এমনকি তারা হয়তো তাদের ছাদবাগান থাকলে সেখানেও যায়নি সেদিন। তাদের বেঘোরে মৃত্যু ঘটেছিল বিষের কারণেই। কারণ তাদের বাসায় তেলাপোকা মারতে ভয়াবহ রাসায়নিক বিষ অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ব্যবহৃত হয়েছিল। শায়ান মোবারত ও শাহির মোবারত নামে দুই উচ্ছল ভাইয়ের করুণ মৃত্যু ঘটে সেই ফসফাইডের বিষক্রিয়ায়। এ ঘটনার পর ‘ডিসিএস অর্গানাইজেশন লিমিটেড’ নামের একটি পেস্ট কন্ট্রোল সার্ভিস কোম্পানির চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালককে (এমডি) গ্রেপ্তার করে পুলিশ। হয়তো ঘটনাটি ঢাকার অভিজাত এলাকার ধনী পরিবারে ঘটেছে কিংবা কর্তৃপক্ষ ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে চেয়েছে দ্রুত।
বালাইনাশকের বিষক্রিয়ায় দেশজুড়ে মানুষ, পশুপাখি, গাছপালা, অণুজীব, পতঙ্গসহ বহু প্রাণের মৃত্যু ঘটছে প্রতিনিয়ত। এসব মৃত্যুর সব কিন্তু আত্মহত্যা নয়, রাসায়নিক কৃষিকাঠামোর ফলে হত্যাও আছে। তবে এই বালাইনাশকের কারণে খুন-জখমের বিচার, দণ্ড, শাস্তি হয়েছে এমন উদাহরণ বিরল। যা হোক, বসুন্ধরার দুই শিশুর মৃত্যু কেবল নয়, অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইডের বিষক্রিয়ায় মৃত্যু বিশ্বজুড়ে এক প্রশ্নহীন ‘সাধারণ’ ঘটনা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। ২০১৯ সালের ১৬ নভেম্বর রোমানিয়ার তিমিসোয়ারায়ও ঢাকার বসুন্ধরার মতোই ঘরের ভেতরে ফসফাইড ধোঁয়া ব্যবহারের ফলে দুই শিশুসহ তিনজনের মৃত্যু ঘটে। ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে ফ্রান্সের কাছাকাছি একটি কার্গো জাহাজে ফসফাইডের বিষক্রিয়ায় বহু মানুষ মারাত্মকভাবে আহত হয় এবং একজন মারা যায়। ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসের ট্রেইলর পার্কে ইঁদুর মারার জন্য এই ট্যাবলেট ব্যবহৃত হলে পার্কে ঘুরতে আসা চারটি শিশুর নিদারুণ মৃত্যু ঘটে বিষক্রিয়ায়। থাইল্যান্ড ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অনেক হোটেলে বিছানার ছারপোকা মারার জন্য এই ট্যাবলেট ব্যবহৃত হয় এবং অধিকাংশ সময় হোটেলের কক্ষ বন্ধ থাকে এবং এতে দেখা গেছে প্রচুর দুর্ঘটনা ঘটে। উত্তর ভারতে আত্মহত্যার ক্ষেত্রে এই বিষ ট্যাবলেট খুব বেশি ব্যবহৃত হয়। এমনকি ইরানে আত্মহত্যার ক্ষেত্রে এই বিষ ব্যবহৃত হয়। ২০০৯ সালে সংযুক্ত আরব আমিরাতে ফসফাইড আছে এমন সব ধরনের বালাইনাশক নিষিদ্ধ করা হয়।
বাংলাদেশে এই ‘ইঁদুর মারার বিষ’, ‘গ্যাস ট্যাবলেট’, ‘তেলাপোকার যম’ নানা নামে শহরের অলিগলিতে এই বিষ বিক্রি হয়। ‘কুইকফস’, ‘সালফস’ কিংবা ‘সেলফস’ নামে অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড বাণিজ্যিকভাবে বিক্রি হয় মুদিদোকান থেকে শুরু করে বালাইনাশক বিক্রয়কেন্দ্রে। এটি কতটা প্রাণসংহারী ও বিপজ্জনক এবং কীভাবে এর ব্যবহার করতে হয়, তা নিয়ে আমাদের জানা-বোঝা একেবারেই কম। তবে এই বিষ আমদানি, বিক্রি, মজুত বা ব্যবহারের অনুমোদন ও বৈধতা কিন্তু রাষ্ট্রই দিয়েছে। কৃষি বিপণন অধিদপ্তর, কৃষি বিভাগ, ভ্রাম্যমাণ আদালত, স্থানীয় সরকার, বাজার কমিটি যারা কোনো বাজারে দোকানে কী বিক্রি হয়, কেন হয় এসব দেখভাল করে, তারা দেশজুড়ে বালাইনাশক বিক্রি-ব্যবহারের ক্ষেত্রে চরম মাত্রায় উদাসীন। একই সঙ্গে দায়িত্বশীল নয় এবং এমনকি নিষিদ্ধ বালাইনাশক কেন বিক্রি ও ব্যবহৃত হচ্ছে, সে বিষয়েও কোনো দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে অপারগ। আর কর্তৃপক্ষের এই রহস্যজনক নিশ্চুপতা, অবহেলা কিংবা নানামুখী বাণিজ্যস্বার্থের কারণে দেশজুড়ে মাটি, পানি, বাতাস থেকে শুরু করে মানুষের শরীরে ছড়িয়ে পড়ছে মারাত্মক প্রাণসংহারী বালাইনাশক বিষ। একই সঙ্গে শহর এলাকায় ‘পেস্ট কন্ট্রোলের’ নামে প্রাণঘাতী বালাইনাশকের ব্যবহার জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশকে ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলছে। তবে যে অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড নিয়ে আমরা আলাপ শুরু করেছি, জানা যাচ্ছে, এই প্রাণঘাতী বিষ আমাদের খাবারে ব্যবহার করা হচ্ছে। বিশেষ করে আমরা সবচেয়ে বেশি যে খাদ্য গ্রহণ করি ভাত, সেই চালে।
‘চালের পোকা মারার ট্যাবলেটে স্বাস্থ্যঝুঁকি’ শিরোনামে একটি সরেজমিন প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে দৈনিক আজকের পত্রিকা। প্রতিবেদনটি জানায়, চালের পোকা দমনে অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইডের যথেচ্ছ ব্যবহার জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি করছে (সূত্র: ৩ /৪ / ২৪)। ডাল, সুজি, গম ও শাক-সবজিতেও এটি ব্যবহৃত হচ্ছে। বিশ্বব্যাপী গুদামে খাদ্যশস্য পোকামুক্ত রাখতে নিয়ম মেনে এটি ব্যবহৃত হলেও বাংলাদেশে গুদাম, পাইকারি ও খুচরা দোকান সর্বত্র এটি ব্যবহৃত হচ্ছে। এমনকি চালের বস্তায়ও ব্যবহৃত হচ্ছে এই বিষ। প্রতিবেদনমতে, গ্রামগঞ্জ থেকে শুরু করে শহরের মুদিদোকানেও বিক্রি হচ্ছে এই ভয়াবহ বিষ। ঢাকার মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট, বাবুবাজার, বাদামতলী, কারওয়ান বাজারের চালের আড়তে এবং বনশ্রী, রামপুরাসহ বিভিন্ন এলাকার মুদিদোকানেও চালের বস্তার পোকা মারতে অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ব্যবহারের কথা গণমাধ্যমকে জানান ব্যবসায়ী ও কর্মচারীরা। কোনো চালের বস্তায় পোকা দেখা গেলে একটি ট্যাবলেট দিয়ে এক দিন ঢেকে রাখা হয়। এরপর পোকা মরে গেলে চাল বিক্রি করা হয়।
২০০০ সালের দিকে কুমিল্লার একটি খাদ্যগুদামে অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ব্যবহার করা হয়েছিল। বন্ধ গুদামঘরে কোনো ভেন্টিলেশন বা ফাঁকা জায়গা ছিল না। সারা দিনে ফসফাইড গ্যাস জমে গুদামঘর ভর্তি হয়েছিল। পরদিন সেই গুদামে যে শ্রমিকেরা কাজ করতে গিয়েছিলেন, তাঁদের মধ্যে ছয়জন বিষক্রিয়ায় মারা যান এবং অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়েন। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানী গণমাধ্যমে জানান, চালের পোকা মারার জন্য ট্যাবলেট চালে লাগানো যাবে না, একটি শুকনো কাপড়ের ভেতরে রাখতে হবে এবং ২৪ ঘণ্টা পর চালের বস্তা থেকে বের করে সেই কাপড় কমপক্ষে এক ফুট মাটির তলায় পুঁতে ফেলতে হবে। গ্যাস ট্যাবলেট ব্যবহার করা হয়েছে এমন বস্তার চাল কমপক্ষে ১০ দিন পর খাওয়া দরকার। উচ্চ তাপেও ফসফাইড গ্যাস নিঃসরণ হয় না, কিন্তু পানি ও আর্দ্রতার স্পর্শে এলে এটি মানুষের ফুসফুসে ঢুকে যেতে পারে।
অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইডের বিষক্রিয়াজনিত মৃত্যুর ঘটনা খুব বেশি ঘটে। অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইডের বিষক্রিয়ায় মুহূর্তেই রক্ত সঞ্চালনব্যবস্থা, হৃদ্যন্ত্র এবং পুরো শরীর বিকল হয়ে যেতে পারে। দীর্ঘমেয়াদি এর সংস্পর্শে আসার মাধ্যমে ক্যানসার, ফুসফুসের জটিল অসুখ এবং নানা প্রাণঘাতী শারীরিক অসুস্থতা তৈরি হতে পারে। মাত্র ০.১৫ গ্রাম থেকে ০.৫ গ্রাম ফসফাইড প্রায় ৮৫ ভাগ মৃত্যু ঘটাতে পারে। তাহলে এই বিপজ্জনক বিষ কেন এবং কীভাবে রাষ্ট্রীয় কর্তৃপক্ষের অগোচরে (কিংবা গোচরে) চালের মতো এত গুরুত্বপূর্ণ খাদ্যে ব্যবহৃত হচ্ছে? সরকারের খাদ্যমান নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান, বাজার তদারককারী কর্তৃপক্ষ, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর কিংবা নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ তাহলে কী করছে? চালের বাজারে কেন এভাবে কোনো নিয়ন্ত্রণ ও পদ্ধতিগত ব্যবস্থাপনা ছাড়া এই বিষ ব্যবহৃত হচ্ছে? দ্রুত আমাদের এ ঘটনার তদন্ত ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা জরুরি।
চালসহ সব খাদ্যপণ্য গুদামজাতকরণ থেকে শুরু করে বালাই থেকে সুরক্ষায় অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইডের ব্যবহার নিষিদ্ধ করা দরকার। কারণ প্রতিদিন আমাদের নগরে মানুষ বাড়ছে, ঘিঞ্জি এলাকা বাড়ছে, একই সঙ্গে জলবায়ুগত সংকটের কারণে আর্দ্রতা ও দাবদাহ সবই বাড়ছে। এমন পরিস্থিতিতে চালসহ খাদ্যসামগ্রী আমরা কীভাবে নিরাপদে মজুত করতে পারি, সে বিষয়ে সামগ্রিকভাবে সবার মতামত ও প্রস্তাব নিয়ে জাতীয় পর্যায়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারি। আমাদের বহু লোকায়ত পদ্ধতি আছে, বহু ভেষজ প্রাকৃতিক পন্থা আছে, পাশাপাশি সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কাঠামোর নানা শক্তিশালী অনুশীলনও এ ক্ষেত্রে আমাদের জন্য সংবেদনশীল ও টেকসই হবে। এমনকি বাসাবাড়িতে তেলাপোকা, ছারপোকা, ইঁদুর মারার জন্য অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইডসহ সব প্রাণঘাতী রাসায়নিকের ব্যবহার নিষিদ্ধ করে প্রাকৃতিক নিরাপদ পন্থাগুলো আমাদের অনুশীলন করা জরুরি।
এ ক্ষেত্রে গ্রামীণ কৃষক সমাজ থেকে শুরু করে অন্যান্য দেশের বহু প্রাকৃতিক চর্চার উদাহরণ, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় এবং গবেষণা প্রতিষ্ঠানের নানা প্রাকৃতিক বালাইনাশক উদ্ভাবনসমূহ আমাদের একত্র করতে হবে। নিজেদের মধ্যে বিনিময় ও সহযোগিতা বাড়াতে হবে। আমাদের আশপাশের প্রাকৃতিক পরিবেশ, বাস্তুতন্ত্র ও প্রাণ-প্রকৃতির বিশৃঙ্খল দৈন্যদশাকে বুঝতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবগুলো আন্দাজ করতে হবে। কেন চালে বা বিছানায় পোকা হচ্ছে বা ইঁদুরের উপদ্রব কেন বাড়ে, এই বৈজ্ঞানিক প্রশ্নের ফয়সালা প্রাকৃতিক পন্থার বিজ্ঞান অনুশীলনের মধ্য দিয়েই খুঁজতে হবে। সব কার্যকারণ চাপিয়ে, দাবিয়ে, লুকিয়ে রেখে কেবল কিছু বহুজাতিক কোম্পানির রাসায়নিক বিক্রির মুনাফাকে চাঙা রাখতে আমরা বারবার আত্মঘাতী হয়ে উঠব? ডিডিটি, ডাইক্লোফেনাক, কিটোপ্রোফেন কিংবা কার্বোফুরানের মতো রাসায়নিক বিষগুলোর বিশাল ব্যবসা ও বাজার ছিল বাংলাদেশে। এমনকি এসব বিষ ছাড়া আমাদের উৎপাদন ও জীবন থমকে যাবে এমন মিথ্যাচার করা হয়েছিল দীর্ঘ সময়। এসব প্রাণঘাতী বিষ বাংলাদেশ নিষিদ্ধ করতে পেরেছে। আমরা আশা করব, অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইডের মতো বিষ নিষিদ্ধ করে আমাদের খাদ্য, স্বাস্থ্য ও জীবনকে নিরাপদ করবে রাষ্ট্র।
লেখক: লেখক ও গবেষক
পাভেল পার্থ

আমাদের কি বরেন্দ্র অঞ্চলের অভিনাথ মার্ডী ও রবি মার্ডী নামে দুই গরিব সাঁওতাল কৃষকের কথা মনে আছে? সেচের পানি না পেয়ে বিষ খেয়ে আত্মহত্যা করেছিলেন। মনে থাকার কোনো কারণ নেই। কারণ, গ্রামেগঞ্জে কৃষকের ঘরে বা হাটবাজারে বিষ থাকে। চাইলে কেউ বিষ খেয়ে মরতে পারে কিংবা বিষক্রিয়ায় গ্রামে, কৃষিজীবনে মানুষ বেশি আক্রান্ত হতে পারে। কিন্তু আমাদের কি ২০২৩ সালের জুন মাসে ঢাকা শহরের একটি ঘটনা মনে আছে? বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় এক অভিজাত পরিবারের দুই শিশু বালাইনাশকের বিষক্রিয়ায় মারা গিয়েছিল? না, তারা আত্মহত্যা করেনি। না, তাদের হয়তো খুনও করা হয়নি। তারা কোনো কৃষক পরিবারের ছিল না, এমনকি তারা হয়তো তাদের ছাদবাগান থাকলে সেখানেও যায়নি সেদিন। তাদের বেঘোরে মৃত্যু ঘটেছিল বিষের কারণেই। কারণ তাদের বাসায় তেলাপোকা মারতে ভয়াবহ রাসায়নিক বিষ অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ব্যবহৃত হয়েছিল। শায়ান মোবারত ও শাহির মোবারত নামে দুই উচ্ছল ভাইয়ের করুণ মৃত্যু ঘটে সেই ফসফাইডের বিষক্রিয়ায়। এ ঘটনার পর ‘ডিসিএস অর্গানাইজেশন লিমিটেড’ নামের একটি পেস্ট কন্ট্রোল সার্ভিস কোম্পানির চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালককে (এমডি) গ্রেপ্তার করে পুলিশ। হয়তো ঘটনাটি ঢাকার অভিজাত এলাকার ধনী পরিবারে ঘটেছে কিংবা কর্তৃপক্ষ ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে চেয়েছে দ্রুত।
বালাইনাশকের বিষক্রিয়ায় দেশজুড়ে মানুষ, পশুপাখি, গাছপালা, অণুজীব, পতঙ্গসহ বহু প্রাণের মৃত্যু ঘটছে প্রতিনিয়ত। এসব মৃত্যুর সব কিন্তু আত্মহত্যা নয়, রাসায়নিক কৃষিকাঠামোর ফলে হত্যাও আছে। তবে এই বালাইনাশকের কারণে খুন-জখমের বিচার, দণ্ড, শাস্তি হয়েছে এমন উদাহরণ বিরল। যা হোক, বসুন্ধরার দুই শিশুর মৃত্যু কেবল নয়, অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইডের বিষক্রিয়ায় মৃত্যু বিশ্বজুড়ে এক প্রশ্নহীন ‘সাধারণ’ ঘটনা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। ২০১৯ সালের ১৬ নভেম্বর রোমানিয়ার তিমিসোয়ারায়ও ঢাকার বসুন্ধরার মতোই ঘরের ভেতরে ফসফাইড ধোঁয়া ব্যবহারের ফলে দুই শিশুসহ তিনজনের মৃত্যু ঘটে। ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে ফ্রান্সের কাছাকাছি একটি কার্গো জাহাজে ফসফাইডের বিষক্রিয়ায় বহু মানুষ মারাত্মকভাবে আহত হয় এবং একজন মারা যায়। ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসের ট্রেইলর পার্কে ইঁদুর মারার জন্য এই ট্যাবলেট ব্যবহৃত হলে পার্কে ঘুরতে আসা চারটি শিশুর নিদারুণ মৃত্যু ঘটে বিষক্রিয়ায়। থাইল্যান্ড ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অনেক হোটেলে বিছানার ছারপোকা মারার জন্য এই ট্যাবলেট ব্যবহৃত হয় এবং অধিকাংশ সময় হোটেলের কক্ষ বন্ধ থাকে এবং এতে দেখা গেছে প্রচুর দুর্ঘটনা ঘটে। উত্তর ভারতে আত্মহত্যার ক্ষেত্রে এই বিষ ট্যাবলেট খুব বেশি ব্যবহৃত হয়। এমনকি ইরানে আত্মহত্যার ক্ষেত্রে এই বিষ ব্যবহৃত হয়। ২০০৯ সালে সংযুক্ত আরব আমিরাতে ফসফাইড আছে এমন সব ধরনের বালাইনাশক নিষিদ্ধ করা হয়।
বাংলাদেশে এই ‘ইঁদুর মারার বিষ’, ‘গ্যাস ট্যাবলেট’, ‘তেলাপোকার যম’ নানা নামে শহরের অলিগলিতে এই বিষ বিক্রি হয়। ‘কুইকফস’, ‘সালফস’ কিংবা ‘সেলফস’ নামে অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড বাণিজ্যিকভাবে বিক্রি হয় মুদিদোকান থেকে শুরু করে বালাইনাশক বিক্রয়কেন্দ্রে। এটি কতটা প্রাণসংহারী ও বিপজ্জনক এবং কীভাবে এর ব্যবহার করতে হয়, তা নিয়ে আমাদের জানা-বোঝা একেবারেই কম। তবে এই বিষ আমদানি, বিক্রি, মজুত বা ব্যবহারের অনুমোদন ও বৈধতা কিন্তু রাষ্ট্রই দিয়েছে। কৃষি বিপণন অধিদপ্তর, কৃষি বিভাগ, ভ্রাম্যমাণ আদালত, স্থানীয় সরকার, বাজার কমিটি যারা কোনো বাজারে দোকানে কী বিক্রি হয়, কেন হয় এসব দেখভাল করে, তারা দেশজুড়ে বালাইনাশক বিক্রি-ব্যবহারের ক্ষেত্রে চরম মাত্রায় উদাসীন। একই সঙ্গে দায়িত্বশীল নয় এবং এমনকি নিষিদ্ধ বালাইনাশক কেন বিক্রি ও ব্যবহৃত হচ্ছে, সে বিষয়েও কোনো দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে অপারগ। আর কর্তৃপক্ষের এই রহস্যজনক নিশ্চুপতা, অবহেলা কিংবা নানামুখী বাণিজ্যস্বার্থের কারণে দেশজুড়ে মাটি, পানি, বাতাস থেকে শুরু করে মানুষের শরীরে ছড়িয়ে পড়ছে মারাত্মক প্রাণসংহারী বালাইনাশক বিষ। একই সঙ্গে শহর এলাকায় ‘পেস্ট কন্ট্রোলের’ নামে প্রাণঘাতী বালাইনাশকের ব্যবহার জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশকে ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলছে। তবে যে অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড নিয়ে আমরা আলাপ শুরু করেছি, জানা যাচ্ছে, এই প্রাণঘাতী বিষ আমাদের খাবারে ব্যবহার করা হচ্ছে। বিশেষ করে আমরা সবচেয়ে বেশি যে খাদ্য গ্রহণ করি ভাত, সেই চালে।
‘চালের পোকা মারার ট্যাবলেটে স্বাস্থ্যঝুঁকি’ শিরোনামে একটি সরেজমিন প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে দৈনিক আজকের পত্রিকা। প্রতিবেদনটি জানায়, চালের পোকা দমনে অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইডের যথেচ্ছ ব্যবহার জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি করছে (সূত্র: ৩ /৪ / ২৪)। ডাল, সুজি, গম ও শাক-সবজিতেও এটি ব্যবহৃত হচ্ছে। বিশ্বব্যাপী গুদামে খাদ্যশস্য পোকামুক্ত রাখতে নিয়ম মেনে এটি ব্যবহৃত হলেও বাংলাদেশে গুদাম, পাইকারি ও খুচরা দোকান সর্বত্র এটি ব্যবহৃত হচ্ছে। এমনকি চালের বস্তায়ও ব্যবহৃত হচ্ছে এই বিষ। প্রতিবেদনমতে, গ্রামগঞ্জ থেকে শুরু করে শহরের মুদিদোকানেও বিক্রি হচ্ছে এই ভয়াবহ বিষ। ঢাকার মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট, বাবুবাজার, বাদামতলী, কারওয়ান বাজারের চালের আড়তে এবং বনশ্রী, রামপুরাসহ বিভিন্ন এলাকার মুদিদোকানেও চালের বস্তার পোকা মারতে অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ব্যবহারের কথা গণমাধ্যমকে জানান ব্যবসায়ী ও কর্মচারীরা। কোনো চালের বস্তায় পোকা দেখা গেলে একটি ট্যাবলেট দিয়ে এক দিন ঢেকে রাখা হয়। এরপর পোকা মরে গেলে চাল বিক্রি করা হয়।
২০০০ সালের দিকে কুমিল্লার একটি খাদ্যগুদামে অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ব্যবহার করা হয়েছিল। বন্ধ গুদামঘরে কোনো ভেন্টিলেশন বা ফাঁকা জায়গা ছিল না। সারা দিনে ফসফাইড গ্যাস জমে গুদামঘর ভর্তি হয়েছিল। পরদিন সেই গুদামে যে শ্রমিকেরা কাজ করতে গিয়েছিলেন, তাঁদের মধ্যে ছয়জন বিষক্রিয়ায় মারা যান এবং অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়েন। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানী গণমাধ্যমে জানান, চালের পোকা মারার জন্য ট্যাবলেট চালে লাগানো যাবে না, একটি শুকনো কাপড়ের ভেতরে রাখতে হবে এবং ২৪ ঘণ্টা পর চালের বস্তা থেকে বের করে সেই কাপড় কমপক্ষে এক ফুট মাটির তলায় পুঁতে ফেলতে হবে। গ্যাস ট্যাবলেট ব্যবহার করা হয়েছে এমন বস্তার চাল কমপক্ষে ১০ দিন পর খাওয়া দরকার। উচ্চ তাপেও ফসফাইড গ্যাস নিঃসরণ হয় না, কিন্তু পানি ও আর্দ্রতার স্পর্শে এলে এটি মানুষের ফুসফুসে ঢুকে যেতে পারে।
অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইডের বিষক্রিয়াজনিত মৃত্যুর ঘটনা খুব বেশি ঘটে। অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইডের বিষক্রিয়ায় মুহূর্তেই রক্ত সঞ্চালনব্যবস্থা, হৃদ্যন্ত্র এবং পুরো শরীর বিকল হয়ে যেতে পারে। দীর্ঘমেয়াদি এর সংস্পর্শে আসার মাধ্যমে ক্যানসার, ফুসফুসের জটিল অসুখ এবং নানা প্রাণঘাতী শারীরিক অসুস্থতা তৈরি হতে পারে। মাত্র ০.১৫ গ্রাম থেকে ০.৫ গ্রাম ফসফাইড প্রায় ৮৫ ভাগ মৃত্যু ঘটাতে পারে। তাহলে এই বিপজ্জনক বিষ কেন এবং কীভাবে রাষ্ট্রীয় কর্তৃপক্ষের অগোচরে (কিংবা গোচরে) চালের মতো এত গুরুত্বপূর্ণ খাদ্যে ব্যবহৃত হচ্ছে? সরকারের খাদ্যমান নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান, বাজার তদারককারী কর্তৃপক্ষ, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর কিংবা নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ তাহলে কী করছে? চালের বাজারে কেন এভাবে কোনো নিয়ন্ত্রণ ও পদ্ধতিগত ব্যবস্থাপনা ছাড়া এই বিষ ব্যবহৃত হচ্ছে? দ্রুত আমাদের এ ঘটনার তদন্ত ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা জরুরি।
চালসহ সব খাদ্যপণ্য গুদামজাতকরণ থেকে শুরু করে বালাই থেকে সুরক্ষায় অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইডের ব্যবহার নিষিদ্ধ করা দরকার। কারণ প্রতিদিন আমাদের নগরে মানুষ বাড়ছে, ঘিঞ্জি এলাকা বাড়ছে, একই সঙ্গে জলবায়ুগত সংকটের কারণে আর্দ্রতা ও দাবদাহ সবই বাড়ছে। এমন পরিস্থিতিতে চালসহ খাদ্যসামগ্রী আমরা কীভাবে নিরাপদে মজুত করতে পারি, সে বিষয়ে সামগ্রিকভাবে সবার মতামত ও প্রস্তাব নিয়ে জাতীয় পর্যায়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারি। আমাদের বহু লোকায়ত পদ্ধতি আছে, বহু ভেষজ প্রাকৃতিক পন্থা আছে, পাশাপাশি সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কাঠামোর নানা শক্তিশালী অনুশীলনও এ ক্ষেত্রে আমাদের জন্য সংবেদনশীল ও টেকসই হবে। এমনকি বাসাবাড়িতে তেলাপোকা, ছারপোকা, ইঁদুর মারার জন্য অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইডসহ সব প্রাণঘাতী রাসায়নিকের ব্যবহার নিষিদ্ধ করে প্রাকৃতিক নিরাপদ পন্থাগুলো আমাদের অনুশীলন করা জরুরি।
এ ক্ষেত্রে গ্রামীণ কৃষক সমাজ থেকে শুরু করে অন্যান্য দেশের বহু প্রাকৃতিক চর্চার উদাহরণ, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় এবং গবেষণা প্রতিষ্ঠানের নানা প্রাকৃতিক বালাইনাশক উদ্ভাবনসমূহ আমাদের একত্র করতে হবে। নিজেদের মধ্যে বিনিময় ও সহযোগিতা বাড়াতে হবে। আমাদের আশপাশের প্রাকৃতিক পরিবেশ, বাস্তুতন্ত্র ও প্রাণ-প্রকৃতির বিশৃঙ্খল দৈন্যদশাকে বুঝতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবগুলো আন্দাজ করতে হবে। কেন চালে বা বিছানায় পোকা হচ্ছে বা ইঁদুরের উপদ্রব কেন বাড়ে, এই বৈজ্ঞানিক প্রশ্নের ফয়সালা প্রাকৃতিক পন্থার বিজ্ঞান অনুশীলনের মধ্য দিয়েই খুঁজতে হবে। সব কার্যকারণ চাপিয়ে, দাবিয়ে, লুকিয়ে রেখে কেবল কিছু বহুজাতিক কোম্পানির রাসায়নিক বিক্রির মুনাফাকে চাঙা রাখতে আমরা বারবার আত্মঘাতী হয়ে উঠব? ডিডিটি, ডাইক্লোফেনাক, কিটোপ্রোফেন কিংবা কার্বোফুরানের মতো রাসায়নিক বিষগুলোর বিশাল ব্যবসা ও বাজার ছিল বাংলাদেশে। এমনকি এসব বিষ ছাড়া আমাদের উৎপাদন ও জীবন থমকে যাবে এমন মিথ্যাচার করা হয়েছিল দীর্ঘ সময়। এসব প্রাণঘাতী বিষ বাংলাদেশ নিষিদ্ধ করতে পেরেছে। আমরা আশা করব, অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইডের মতো বিষ নিষিদ্ধ করে আমাদের খাদ্য, স্বাস্থ্য ও জীবনকে নিরাপদ করবে রাষ্ট্র।
লেখক: লেখক ও গবেষক

আমাদের কি বরেন্দ্র অঞ্চলের অভিনাথ মার্ডী ও রবি মার্ডী নামে দুই গরিব সাঁওতাল কৃষকের কথা মনে আছে? সেচের পানি না পেয়ে বিষ খেয়ে আত্মহত্যা করেছিলেন। মনে থাকার কোনো কারণ নেই। কারণ, গ্রামেগঞ্জে কৃষকের ঘরে বা হাটবাজারে বিষ থাকে। চাইলে কেউ বিষ খেয়ে মরতে পারে কিংবা বিষক্রিয়ায় গ্রামে, কৃষিজীবনে মানুষ বেশি আক্রান্ত হতে পারে। কিন্তু আমাদের কি ২০২৩ সালের জুন মাসে ঢাকা শহরের একটি ঘটনা মনে আছে? বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় এক অভিজাত পরিবারের দুই শিশু বালাইনাশকের বিষক্রিয়ায় মারা গিয়েছিল? না, তারা আত্মহত্যা করেনি। না, তাদের হয়তো খুনও করা হয়নি। তারা কোনো কৃষক পরিবারের ছিল না, এমনকি তারা হয়তো তাদের ছাদবাগান থাকলে সেখানেও যায়নি সেদিন। তাদের বেঘোরে মৃত্যু ঘটেছিল বিষের কারণেই। কারণ তাদের বাসায় তেলাপোকা মারতে ভয়াবহ রাসায়নিক বিষ অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ব্যবহৃত হয়েছিল। শায়ান মোবারত ও শাহির মোবারত নামে দুই উচ্ছল ভাইয়ের করুণ মৃত্যু ঘটে সেই ফসফাইডের বিষক্রিয়ায়। এ ঘটনার পর ‘ডিসিএস অর্গানাইজেশন লিমিটেড’ নামের একটি পেস্ট কন্ট্রোল সার্ভিস কোম্পানির চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালককে (এমডি) গ্রেপ্তার করে পুলিশ। হয়তো ঘটনাটি ঢাকার অভিজাত এলাকার ধনী পরিবারে ঘটেছে কিংবা কর্তৃপক্ষ ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে চেয়েছে দ্রুত।
বালাইনাশকের বিষক্রিয়ায় দেশজুড়ে মানুষ, পশুপাখি, গাছপালা, অণুজীব, পতঙ্গসহ বহু প্রাণের মৃত্যু ঘটছে প্রতিনিয়ত। এসব মৃত্যুর সব কিন্তু আত্মহত্যা নয়, রাসায়নিক কৃষিকাঠামোর ফলে হত্যাও আছে। তবে এই বালাইনাশকের কারণে খুন-জখমের বিচার, দণ্ড, শাস্তি হয়েছে এমন উদাহরণ বিরল। যা হোক, বসুন্ধরার দুই শিশুর মৃত্যু কেবল নয়, অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইডের বিষক্রিয়ায় মৃত্যু বিশ্বজুড়ে এক প্রশ্নহীন ‘সাধারণ’ ঘটনা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। ২০১৯ সালের ১৬ নভেম্বর রোমানিয়ার তিমিসোয়ারায়ও ঢাকার বসুন্ধরার মতোই ঘরের ভেতরে ফসফাইড ধোঁয়া ব্যবহারের ফলে দুই শিশুসহ তিনজনের মৃত্যু ঘটে। ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে ফ্রান্সের কাছাকাছি একটি কার্গো জাহাজে ফসফাইডের বিষক্রিয়ায় বহু মানুষ মারাত্মকভাবে আহত হয় এবং একজন মারা যায়। ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসের ট্রেইলর পার্কে ইঁদুর মারার জন্য এই ট্যাবলেট ব্যবহৃত হলে পার্কে ঘুরতে আসা চারটি শিশুর নিদারুণ মৃত্যু ঘটে বিষক্রিয়ায়। থাইল্যান্ড ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অনেক হোটেলে বিছানার ছারপোকা মারার জন্য এই ট্যাবলেট ব্যবহৃত হয় এবং অধিকাংশ সময় হোটেলের কক্ষ বন্ধ থাকে এবং এতে দেখা গেছে প্রচুর দুর্ঘটনা ঘটে। উত্তর ভারতে আত্মহত্যার ক্ষেত্রে এই বিষ ট্যাবলেট খুব বেশি ব্যবহৃত হয়। এমনকি ইরানে আত্মহত্যার ক্ষেত্রে এই বিষ ব্যবহৃত হয়। ২০০৯ সালে সংযুক্ত আরব আমিরাতে ফসফাইড আছে এমন সব ধরনের বালাইনাশক নিষিদ্ধ করা হয়।
বাংলাদেশে এই ‘ইঁদুর মারার বিষ’, ‘গ্যাস ট্যাবলেট’, ‘তেলাপোকার যম’ নানা নামে শহরের অলিগলিতে এই বিষ বিক্রি হয়। ‘কুইকফস’, ‘সালফস’ কিংবা ‘সেলফস’ নামে অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড বাণিজ্যিকভাবে বিক্রি হয় মুদিদোকান থেকে শুরু করে বালাইনাশক বিক্রয়কেন্দ্রে। এটি কতটা প্রাণসংহারী ও বিপজ্জনক এবং কীভাবে এর ব্যবহার করতে হয়, তা নিয়ে আমাদের জানা-বোঝা একেবারেই কম। তবে এই বিষ আমদানি, বিক্রি, মজুত বা ব্যবহারের অনুমোদন ও বৈধতা কিন্তু রাষ্ট্রই দিয়েছে। কৃষি বিপণন অধিদপ্তর, কৃষি বিভাগ, ভ্রাম্যমাণ আদালত, স্থানীয় সরকার, বাজার কমিটি যারা কোনো বাজারে দোকানে কী বিক্রি হয়, কেন হয় এসব দেখভাল করে, তারা দেশজুড়ে বালাইনাশক বিক্রি-ব্যবহারের ক্ষেত্রে চরম মাত্রায় উদাসীন। একই সঙ্গে দায়িত্বশীল নয় এবং এমনকি নিষিদ্ধ বালাইনাশক কেন বিক্রি ও ব্যবহৃত হচ্ছে, সে বিষয়েও কোনো দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে অপারগ। আর কর্তৃপক্ষের এই রহস্যজনক নিশ্চুপতা, অবহেলা কিংবা নানামুখী বাণিজ্যস্বার্থের কারণে দেশজুড়ে মাটি, পানি, বাতাস থেকে শুরু করে মানুষের শরীরে ছড়িয়ে পড়ছে মারাত্মক প্রাণসংহারী বালাইনাশক বিষ। একই সঙ্গে শহর এলাকায় ‘পেস্ট কন্ট্রোলের’ নামে প্রাণঘাতী বালাইনাশকের ব্যবহার জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশকে ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলছে। তবে যে অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড নিয়ে আমরা আলাপ শুরু করেছি, জানা যাচ্ছে, এই প্রাণঘাতী বিষ আমাদের খাবারে ব্যবহার করা হচ্ছে। বিশেষ করে আমরা সবচেয়ে বেশি যে খাদ্য গ্রহণ করি ভাত, সেই চালে।
‘চালের পোকা মারার ট্যাবলেটে স্বাস্থ্যঝুঁকি’ শিরোনামে একটি সরেজমিন প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে দৈনিক আজকের পত্রিকা। প্রতিবেদনটি জানায়, চালের পোকা দমনে অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইডের যথেচ্ছ ব্যবহার জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি করছে (সূত্র: ৩ /৪ / ২৪)। ডাল, সুজি, গম ও শাক-সবজিতেও এটি ব্যবহৃত হচ্ছে। বিশ্বব্যাপী গুদামে খাদ্যশস্য পোকামুক্ত রাখতে নিয়ম মেনে এটি ব্যবহৃত হলেও বাংলাদেশে গুদাম, পাইকারি ও খুচরা দোকান সর্বত্র এটি ব্যবহৃত হচ্ছে। এমনকি চালের বস্তায়ও ব্যবহৃত হচ্ছে এই বিষ। প্রতিবেদনমতে, গ্রামগঞ্জ থেকে শুরু করে শহরের মুদিদোকানেও বিক্রি হচ্ছে এই ভয়াবহ বিষ। ঢাকার মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট, বাবুবাজার, বাদামতলী, কারওয়ান বাজারের চালের আড়তে এবং বনশ্রী, রামপুরাসহ বিভিন্ন এলাকার মুদিদোকানেও চালের বস্তার পোকা মারতে অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ব্যবহারের কথা গণমাধ্যমকে জানান ব্যবসায়ী ও কর্মচারীরা। কোনো চালের বস্তায় পোকা দেখা গেলে একটি ট্যাবলেট দিয়ে এক দিন ঢেকে রাখা হয়। এরপর পোকা মরে গেলে চাল বিক্রি করা হয়।
২০০০ সালের দিকে কুমিল্লার একটি খাদ্যগুদামে অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ব্যবহার করা হয়েছিল। বন্ধ গুদামঘরে কোনো ভেন্টিলেশন বা ফাঁকা জায়গা ছিল না। সারা দিনে ফসফাইড গ্যাস জমে গুদামঘর ভর্তি হয়েছিল। পরদিন সেই গুদামে যে শ্রমিকেরা কাজ করতে গিয়েছিলেন, তাঁদের মধ্যে ছয়জন বিষক্রিয়ায় মারা যান এবং অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়েন। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানী গণমাধ্যমে জানান, চালের পোকা মারার জন্য ট্যাবলেট চালে লাগানো যাবে না, একটি শুকনো কাপড়ের ভেতরে রাখতে হবে এবং ২৪ ঘণ্টা পর চালের বস্তা থেকে বের করে সেই কাপড় কমপক্ষে এক ফুট মাটির তলায় পুঁতে ফেলতে হবে। গ্যাস ট্যাবলেট ব্যবহার করা হয়েছে এমন বস্তার চাল কমপক্ষে ১০ দিন পর খাওয়া দরকার। উচ্চ তাপেও ফসফাইড গ্যাস নিঃসরণ হয় না, কিন্তু পানি ও আর্দ্রতার স্পর্শে এলে এটি মানুষের ফুসফুসে ঢুকে যেতে পারে।
অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইডের বিষক্রিয়াজনিত মৃত্যুর ঘটনা খুব বেশি ঘটে। অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইডের বিষক্রিয়ায় মুহূর্তেই রক্ত সঞ্চালনব্যবস্থা, হৃদ্যন্ত্র এবং পুরো শরীর বিকল হয়ে যেতে পারে। দীর্ঘমেয়াদি এর সংস্পর্শে আসার মাধ্যমে ক্যানসার, ফুসফুসের জটিল অসুখ এবং নানা প্রাণঘাতী শারীরিক অসুস্থতা তৈরি হতে পারে। মাত্র ০.১৫ গ্রাম থেকে ০.৫ গ্রাম ফসফাইড প্রায় ৮৫ ভাগ মৃত্যু ঘটাতে পারে। তাহলে এই বিপজ্জনক বিষ কেন এবং কীভাবে রাষ্ট্রীয় কর্তৃপক্ষের অগোচরে (কিংবা গোচরে) চালের মতো এত গুরুত্বপূর্ণ খাদ্যে ব্যবহৃত হচ্ছে? সরকারের খাদ্যমান নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান, বাজার তদারককারী কর্তৃপক্ষ, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর কিংবা নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ তাহলে কী করছে? চালের বাজারে কেন এভাবে কোনো নিয়ন্ত্রণ ও পদ্ধতিগত ব্যবস্থাপনা ছাড়া এই বিষ ব্যবহৃত হচ্ছে? দ্রুত আমাদের এ ঘটনার তদন্ত ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা জরুরি।
চালসহ সব খাদ্যপণ্য গুদামজাতকরণ থেকে শুরু করে বালাই থেকে সুরক্ষায় অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইডের ব্যবহার নিষিদ্ধ করা দরকার। কারণ প্রতিদিন আমাদের নগরে মানুষ বাড়ছে, ঘিঞ্জি এলাকা বাড়ছে, একই সঙ্গে জলবায়ুগত সংকটের কারণে আর্দ্রতা ও দাবদাহ সবই বাড়ছে। এমন পরিস্থিতিতে চালসহ খাদ্যসামগ্রী আমরা কীভাবে নিরাপদে মজুত করতে পারি, সে বিষয়ে সামগ্রিকভাবে সবার মতামত ও প্রস্তাব নিয়ে জাতীয় পর্যায়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারি। আমাদের বহু লোকায়ত পদ্ধতি আছে, বহু ভেষজ প্রাকৃতিক পন্থা আছে, পাশাপাশি সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কাঠামোর নানা শক্তিশালী অনুশীলনও এ ক্ষেত্রে আমাদের জন্য সংবেদনশীল ও টেকসই হবে। এমনকি বাসাবাড়িতে তেলাপোকা, ছারপোকা, ইঁদুর মারার জন্য অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইডসহ সব প্রাণঘাতী রাসায়নিকের ব্যবহার নিষিদ্ধ করে প্রাকৃতিক নিরাপদ পন্থাগুলো আমাদের অনুশীলন করা জরুরি।
এ ক্ষেত্রে গ্রামীণ কৃষক সমাজ থেকে শুরু করে অন্যান্য দেশের বহু প্রাকৃতিক চর্চার উদাহরণ, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় এবং গবেষণা প্রতিষ্ঠানের নানা প্রাকৃতিক বালাইনাশক উদ্ভাবনসমূহ আমাদের একত্র করতে হবে। নিজেদের মধ্যে বিনিময় ও সহযোগিতা বাড়াতে হবে। আমাদের আশপাশের প্রাকৃতিক পরিবেশ, বাস্তুতন্ত্র ও প্রাণ-প্রকৃতির বিশৃঙ্খল দৈন্যদশাকে বুঝতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবগুলো আন্দাজ করতে হবে। কেন চালে বা বিছানায় পোকা হচ্ছে বা ইঁদুরের উপদ্রব কেন বাড়ে, এই বৈজ্ঞানিক প্রশ্নের ফয়সালা প্রাকৃতিক পন্থার বিজ্ঞান অনুশীলনের মধ্য দিয়েই খুঁজতে হবে। সব কার্যকারণ চাপিয়ে, দাবিয়ে, লুকিয়ে রেখে কেবল কিছু বহুজাতিক কোম্পানির রাসায়নিক বিক্রির মুনাফাকে চাঙা রাখতে আমরা বারবার আত্মঘাতী হয়ে উঠব? ডিডিটি, ডাইক্লোফেনাক, কিটোপ্রোফেন কিংবা কার্বোফুরানের মতো রাসায়নিক বিষগুলোর বিশাল ব্যবসা ও বাজার ছিল বাংলাদেশে। এমনকি এসব বিষ ছাড়া আমাদের উৎপাদন ও জীবন থমকে যাবে এমন মিথ্যাচার করা হয়েছিল দীর্ঘ সময়। এসব প্রাণঘাতী বিষ বাংলাদেশ নিষিদ্ধ করতে পেরেছে। আমরা আশা করব, অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইডের মতো বিষ নিষিদ্ধ করে আমাদের খাদ্য, স্বাস্থ্য ও জীবনকে নিরাপদ করবে রাষ্ট্র।
লেখক: লেখক ও গবেষক

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২২ দিন আগে
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫বাসস, ঢাকা

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

আমাদের কি বরেন্দ্র অঞ্চলের অভিনাথ মার্ডী ও রবি মার্ডী নামে দুই গরিব সাঁওতাল কৃষকের কথা মনে আছে? সেচের পানি না পেয়ে বিষ খেয়ে আত্মহত্যা করেছিলেন। মনে থাকার কোনো কারণ নেই। কারণ, গ্রামেগঞ্জে কৃষকের ঘরে বা হাটবাজারে বিষ থাকে। চাইলে কেউ বিষ খেয়ে মরতে পারে কিংবা বিষক্রিয়ায় গ্রামে, কৃষিজীবনে মানুষ বেশি আক্র
০৫ এপ্রিল ২০২৪
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

আমাদের কি বরেন্দ্র অঞ্চলের অভিনাথ মার্ডী ও রবি মার্ডী নামে দুই গরিব সাঁওতাল কৃষকের কথা মনে আছে? সেচের পানি না পেয়ে বিষ খেয়ে আত্মহত্যা করেছিলেন। মনে থাকার কোনো কারণ নেই। কারণ, গ্রামেগঞ্জে কৃষকের ঘরে বা হাটবাজারে বিষ থাকে। চাইলে কেউ বিষ খেয়ে মরতে পারে কিংবা বিষক্রিয়ায় গ্রামে, কৃষিজীবনে মানুষ বেশি আক্র
০৫ এপ্রিল ২০২৪
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২২ দিন আগে
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

আমাদের কি বরেন্দ্র অঞ্চলের অভিনাথ মার্ডী ও রবি মার্ডী নামে দুই গরিব সাঁওতাল কৃষকের কথা মনে আছে? সেচের পানি না পেয়ে বিষ খেয়ে আত্মহত্যা করেছিলেন। মনে থাকার কোনো কারণ নেই। কারণ, গ্রামেগঞ্জে কৃষকের ঘরে বা হাটবাজারে বিষ থাকে। চাইলে কেউ বিষ খেয়ে মরতে পারে কিংবা বিষক্রিয়ায় গ্রামে, কৃষিজীবনে মানুষ বেশি আক্র
০৫ এপ্রিল ২০২৪
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২২ দিন আগে
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

আমাদের কি বরেন্দ্র অঞ্চলের অভিনাথ মার্ডী ও রবি মার্ডী নামে দুই গরিব সাঁওতাল কৃষকের কথা মনে আছে? সেচের পানি না পেয়ে বিষ খেয়ে আত্মহত্যা করেছিলেন। মনে থাকার কোনো কারণ নেই। কারণ, গ্রামেগঞ্জে কৃষকের ঘরে বা হাটবাজারে বিষ থাকে। চাইলে কেউ বিষ খেয়ে মরতে পারে কিংবা বিষক্রিয়ায় গ্রামে, কৃষিজীবনে মানুষ বেশি আক্র
০৫ এপ্রিল ২০২৪
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২২ দিন আগে
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫