Ajker Patrika

অবৈধ যানে গ্রামীণ সড়ক নষ্ট

আব্দুর রাজ্জাক, ঘিওর (মানিকগঞ্জ)
অবৈধ যানে গ্রামীণ সড়ক নষ্ট

মানিকগঞ্জের ঘিওরে মাটি-বালু বহনে অবাধে ব্যবহার করা হচ্ছে অনুমোদনহীন যান ট্রাক, ডাম্প ট্রাক, ট্রাক্টর ও হাইড্রোলিক ট্রলি। এসব যান অতিরিক্ত বোঝাই ও বেপরোয়া গতিতে চলাচলের কারণে গ্রামীণ রাস্তায় খানাখন্দ সৃষ্টি হচ্ছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত সড়কে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা।

এদিকে ধুলাবালুতে ভোগান্তিতে পড়ছে শিক্ষার্থীসহ এলাকাবাসী। মাটি ব্যবসায়ীরা রাজনৈতিক ও স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী হওয়ায় লোকজন কোনো প্রতিবাদ করার সাহস পায় না।

ভুক্তভোগী এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে উপজেলার পুরোনো ধলেশ্বরী, কালীগঙ্গা, ইছামতী নদী থেকে মাটি-বালু তুলে বিক্রি করছেন স্থানীয় প্রভাবশালীরা। মাটি বহনে ডাম্প ট্রাক ও হাইড্রোলিক যান ব্যবহার করা হচ্ছে। উপজেলার ঘিওর সদর ইউনিয়ন, পয়লা, বড়টিয়া, নালী, বালিয়াখোড়া, বানিয়াজুরী ও সিংজুরী ইউনিয়নের সড়কে প্রতিদিন এই যান চলাচল করে।

গতকাল শনিবার দুপুরে উপজেলার পয়লা ইউনিয়নে দেখা যায় চরবাইলজুরী গ্রামের মৃত নুরুল হকের বাড়ির পেছনের রাস্তাটি খানাখন্দে ভরে গেছে। এসব স্থানে প্রায় প্রতিদিনই ছোটখাটো দুর্ঘটনা ঘটে বলে স্থানীয়রা জানান।

সিংজুরী এলাকার বাসিন্দা আসলাম মিয়া বলেন, ‘রাস্তায় ভালোভাবেই যাওয়া যায়, কিন্তু ভাঙা স্থানে এলে আমাদের ভয় করে। কখন যেন গাড়ি উল্টে যায়। হাইড্রোলিক ট্রলি গাড়িতে অনবরত বালু আনা-নেওয়ার কারণে এই খানাখন্দ হয়েছে।’ আব্দুল আজিজ বলেন, ‘ধুলাবালুর কারণে মুখে রুমাল দিয়ে চলতে হয়। হাইড্রোলিক ট্রলির মালিকেরা প্রভাবশালী। এদের বিরুদ্ধে ভয়ে কেউ মুখ খুলতে সাহস পায় না।’

সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলার ঘিওর সদর ইউনিয়নসহ মাইলাগী, বৈলট এলাকা; পয়লা ইউনিয়নের বড় কুষ্টিয়া, চরবাইলজুরী, তেরশ্রী; সিংজুরী ইউনিয়নের বীর সিংজুরী, আশাপুর, সোধঘাটা; বড়টিয়া ইউনিয়নের ফুলহাড়া, হিজুলিয়া, ঠাকুরকান্দি, শ্রীবাড়ী, নেকিরকান্দি; বালিয়াখোড়া ইউনিয়নের পেঁচারকান্দা, ধুলন্ডি, বানিয়াজুরী, শোদঘাটা, জাবরা; নালী ইউনিয়নের বাঠাইমুরী, কলতা, হেলাচিয়া রাস্তা দিয়ে প্রতিদিন হাইড্রোলিক ট্রলি ও ডাম্প ট্রাক চলাচলের কারণে গ্রামীণ রাস্তাগুলো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। 
এ ছাড়া ওই সব এলাকার বিভিন্ন দপ্তর, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, বাড়িঘরসহ স্কুল-কলেজে ধুলাবালুর স্তর জমেছে।

ঘিওরে বাজারের ব্যবসায়ী মো. আলম বলেন, ‘প্রতিদিন সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত মাটিবোঝাই ডাম্প ট্রাক ও হাইড্রোলিক ট্রলি বেপরোয়াভাবে চলাচল করে। দোকানে ধুলাবালু পড়ে সব মালামাল নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।’

উপজেলা আওয়ামী লীগের এক নেতা নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন, ‘উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির মাসিক সভায় বহুবার অবৈধভাবে মাটি বিক্রির বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে। মাঝেমধ্যে বন্ধ হলেও পুনরায় চলাচল করে।’

হাইড্রোলিক ট্রাক্টরচালক রমজান আলী বলেন, ‘এই গাড়ি নিয়ে মাটি-বালু বহনের সময় পুলিশ আটক করে। তাই লুকিয়ে চালাই।’ ডাম্প ট্রাকচালক মো. রিয়াদ বলেন, ‘আমরা ভাড়ায় মাটি বহন করি। ঠিকাদার ও যাদের মাটি বহন করি, তারা সব ঝামেলা ম্যানেজ করেন।’  

মানিকগঞ্জ বিআরটিএ’র সহকারী পরিচালক (ইঞ্জিনিয়ার) মো. নূরুজ্জামান বলেন, ‘ডাম্প ট্রাক ও হাইড্রোলিক ট্রলির কোনো নিবন্ধন নেই। অবৈধ এসব যানে পণ্য পরিবহনে সরকারি নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। শুধু কৃষিপণ্য ও কৃষিকাজে ব্যবহার করার অনুমোদন রয়েছে।’

ইউএনও হামিদুর রহমান জানান, ‘ইতিমধ্যে কয়েকটি অবৈধ হাইড্রোলিক ট্রলি ও ডাম্প ট্রাক মালিকদের ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে জরিমানা করা হয়েছে। ঘিওরে কোনো ধরনের হাইড্রোলিক ট্রলি ও ডাম্প ট্রাকে মাটি-বালু বিক্রি করতে দেওয়া হবে না।’ 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত