Ajker Patrika

দুই বছরে ২ হাজার তালাক

মেহেরপুর প্রতিনিধি
আপডেট : ২৬ অক্টোবর ২০২১, ১৪: ১৫
দুই বছরে ২ হাজার তালাক

আশঙ্কাজনক হারে বিবাহবিচ্ছেদ বাড়ছে মেহেরপুরে। এর মধ্যে নারীরাই তালাক দিচ্ছেন বেশি। মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইদানীং বিয়েতে ছেলে–মেয়ের মধ্যে বন্ধনের চেয়ে মোহ এবং আবেগ কাজ করে বেশি। তাই বিবাহবিচ্ছেদের ঘটনা বেড়ে গেছে।

অনুসন্ধানে ও জেলা রেজিস্ট্রারের তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ থেকে এ পর্যন্ত মেহেরপুরে দুই হাজারের বেশি তালাকের ঘটনা ঘটেছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বিবাহ রেজিস্ট্রার জানান, আগে স্বামী কর্তৃক স্ত্রী তালাক হতো। এখন অল্প বয়সী মেয়েরা বিয়ের কিছুদিন পরই স্বামীকে তালাক দিতে বিবাহ রেজিস্ট্রারের কাছে ভিড় করেন। যেহেতু মেয়েরাই তালাক দিচ্ছে সেই কারণে সব ঘটনা আদালত পর্যন্ত গড়াচ্ছে না।

মেহেরপুর জেলা রেজিস্ট্রার হতে প্রাপ্ত তথ্যে দেখা গেছে, ২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত মেহেরপুরে তালাক রেজিস্ট্রি হয়েছে ১ হাজার ৪শ ৭৪ টি। এর মধ্যে স্ত্রী কর্তৃক তালাকের সংখ্যা ৬১৮ টি, স্বামী কর্তৃক তালাকের সংখ্যা ৫৩৬টি এবং উভয়ের সম্মতিতে তালাকের সংখ্যা ৩২০ টি। এ ছাড়াও করোনার সময় তালাকের ঘটনা বেড়েছে। এর বেশির ভাগই স্ত্রী কর্তৃক। আবার কখনো কখনো গ্রাম্য সালিসের মাধ্যমেও বিবাহ বিচ্ছেদ হয়েছে।

মেহেরপুর সরকারি কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আল আমিন ধুমকেতু বলেন, গত এক দশকে বদলে গেছে তালাকের ধরন। আগে ৭০ শতাংশ তালাকের ঘটনা ঘটতো স্বামী কর্তৃক। কিন্তু সংসারে সুখের চাইতে বিলাসী ভাবনা বেড়ে যাওয়ায় তালাকের ঘটনায় নারীরা পুরুষের চেয়ে দশগুণ এগিয়ে গেছেন। বর্তমান সময়ে ৮০ শতাংশ তালাকের ঘটনা ঘটছে স্ত্রী কর্তৃক। গ্রাম থেকে শহর সবখানেই প্রায় অভিন্ন চিত্র।

আব্দুল্লাহ আল আমিন মনোবিজ্ঞানী এবং জেন্ডার বিশেষজ্ঞদের মতামত টেনে বলেন, পারিবারিক বন্ধন হ্রাস, বহুগামিতা, বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক, অতিমাত্রায় ভার্চুয়াল জগতে বিচরণ, অর্থনৈতিকভাবে নারীদের শক্ত অবস্থান, পেশাগত উন্নয়ন, আর্থসামাজিক অবস্থার পরিবর্তন, সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধি, শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের কারণেই বিবাহ বিচ্ছেদ এবং আলাদা থাকার প্রবণতা বাড়ছে।

মেহেরপুর পৌরসভার ১,২, ৩ নম্বর ওয়ার্ডের দায়িত্বে থাকা বিবাহ রেজিস্ট্রার কাজী তাজুল ইসলাম জানান, চলতি বছরে এ পর্যন্ত বিবাহ রেজিস্ট্রি হয়েছে ৪২ টি। তালাক হয়েছে ১০৮ টি। মেয়ে কর্তৃক তালাক হয়েছে ৪৯ টি, উভয়ের সম্মতিতে তালাক হয়েছে ৪৬টি এবং ছেলে কর্তৃক তালাক হয়েছে ১৩ টি। স্কুল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া ছেলেমেয়েদের মধ্যে ঘটছে এই তালাক ঘটনা।

মেহেরপুর জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ফরিদ আহমেদ বলেন, বিবাহবিচ্ছেদের ঘটনা বাড়ায় যৌতুক এবং নারী নির্যাতন মামলা বেশি আদালতে। এ কারণে ইদানীং কম বয়সী ছেলে–মেয়েরা মেহেরপুরের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ এবং আমলি আদালতে ভিড় করে থাকেন। সন্তানের খোরপোষ আদায়ের জন্য অনেকেই পারিবারিক আদালতে বিচার প্রার্থনায় ভিড় করেন। প্রতিদিন এই তিনটি আদালতে পাঁচ শতাধিক বিবাহবিচ্ছেদ ঘটনার মামলা পরিচালনা করতে হয় আইনজীবীদের। এখন বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটনা সমাজের বড় ক্রাইম হয়ে দাঁড়িয়েছে।

মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. সামন্ত সরকার বলেন, বিয়েতে ছেলেমেয়ের মধ্যে বন্ধনের চেয়ে মোহ এবং আবেগ কাজ করে বেশি। তাই বিবাহবিচ্ছেদে ঘটনা বাড়ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত