Ajker Patrika

অরক্ষিত ক্রসিংয়ে মরণফাঁদ

জসিম উদ্দিন, নীলফামারী
আপডেট : ১১ ডিসেম্বর ২০২১, ১৪: ০৩
অরক্ষিত ক্রসিংয়ে মরণফাঁদ

নীলফামারীর চিলাহাটি-সৈয়দপুর রেলওয়ের অরক্ষিত লেভেল ক্রসিংয়ের কারণে একের পর এক প্রাণহানির ঘটনা ঘটছে। এসব লেভেল ক্রসিংয়ে কোনো প্রতিবন্ধক ও গেটম্যান না থাকায় চলতি বছর চারটি দুর্ঘটনায় আটজনের প্রাণহানি ঘটে। এদের মধ্যে শিশু, মোটরসাইকেল আরোহী, ট্রলিচালক, ইপিজেড শ্রমিকসহ সাধারণ মানুষও রয়েছেন। সবশেষ গত বুধবার বউবাজারে একই পরিবারের তিন শিশুসহ চারজন নিহত হন।

সৈয়দপুর রেলওয়ে প্রকৌশলীর কার্যালয় সূত্র জানায়, চিলাহাটি থেকে সৈয়দপুর পর্যন্ত রেলপথের দূরত্ব ৫৪ কিলোমিটার। এ রেলপথে রয়েছে ৩৬টি লেভেল ক্রসিং। এর মধ্যে ৩৩টি বৈধ ও তিনটি অঘোষিত লেভেল ক্রসিং রয়েছে। বৈধ লেভেল ক্রসিংয়ের ৩৩টির মধ্যে মাত্র ১২টিতে গেটম্যান আছে; বাকি ২১টি লেভেল ক্রসিং অরক্ষিত।

নীলফামারী সদরের বউবাজারের অরক্ষিত রেলওয়ে লেভেল ক্রসিং এলাকায় বসবাসকারী হাসিবুল ইসলাম জানান, এই লেভেল ক্রসিংয়ে গেটম্যান থাকলে গত বুধবারের মর্মান্তিক দুর্ঘটনাটি ঘটত না। একই পরিবারের তিন শিশুসন্তান ও তাঁদের বাঁচাতে এগিয়ে আসা নৈশপ্রহরী শামীম হোসেনের মৃত্যুর জন্য তিনি রেলওয়ে কর্তৃপক্ষকে দায়ী করে এর প্রতিকার দাবি করেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক লেভেল ক্রসিংয়ে এক গেটম্যান জানান, বৈধ লেভেল ক্রসিংয়ের মধ্যেও অনেক ক্রসিংয়ে নেই কোনো প্রতিবন্ধক। তাই বাধ্য হয়ে গেটম্যানরা নিজ উদ্যোগে বাঁশ দিয়ে প্রতিবন্ধক তৈরি করে ট্রেন পারাপার নিশ্চিত করেন।

তিনি আরও জানান, রেলওয়ের জনবলসংকট থাকায় এসব লেভেল ক্রসিংয়ে টানা ১২ ঘণ্টা কাজ করতে হচ্ছে তাঁদের। এ ছাড়া কাছের স্টেশনের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগের কোনো ব্যবস্থা না থাকায় প্রায় সময়ই ট্রেন আসার অনেক আগে লেভেল ক্রসিং বন্ধ করতে হয়। এ নিয়ে অনেক সময় পথচারী বা যানবাহন চালকদের সঙ্গে বাগ্‌বিতণ্ডার ঘটনাও ঘটে বলে জানান তিনি।

পোড়াহাট লেভেল ক্রসিংয়ের গেটম্যান মামুনুর রশীদ করিম জানান, কাছের স্টেশন মাস্টারের সঙ্গে তাঁদের কোনো যোগাযোগের ব্যবস্থা নেই। তাঁরা আগের লেভেল ক্রসিংয়ে দায়িত্বরত গেটম্যানের সঙ্গে নিজস্ব মোবাইল ফোনে ট্রেন আসার খবর নিয়ে গেটের প্রতিবন্ধক বা ব্যারিয়ার দিয়ে ট্রেন পার করেন। অনেক সময় আগের স্টেশনের গেটম্যান মোবাইল ফোনের কল রিসিভ না করলে, তখন লাইনে দাঁড়িয়ে ট্রেনের ইঞ্জিন দেখে প্রতিবন্ধক দেওয়ার কাজটি করতে হয়। কিন্তু বিপত্তি ঘটে শীতকালে, তখন ঘন কুয়াশায় ট্রেনের শব্দ শুনে দায়িত্ব পালন করতে হয়। আবার রাতের বেলা ট্রেনের আলো দেখে কিংবা হুইসেল শুনে দায়িত্ব পালন করেন। এ কাজ করতে গিয়ে মাঝেমধ্যে ছোটখাটো দুর্ঘটনার সম্মুখীন হতে হয় তাঁদের।

বাংলাদেশ রেলওয়ে সৈয়দপুরের ঊর্ধ্বতন উপসহকারী প্রকৌশলী সুলতান মৃধা সৈয়দপুর-চিলাহাটি রেলওয়ের কয়েকটি লেভেল ক্রসিংয়ে বাঁশ দিয়ে যানবাহন আটকানোর সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, জনবলসংকটের কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। তবে যেসব লেভেল ক্রসিংয়ে ব্যারিয়ার বা গেটম্যান নেই, সেখানে সতর্কতামূলক নির্দেশনা সাইনবোর্ড দেওয়া রয়েছে।

এদিকে, গত বুধবার বউবাজারে নিহতদের পরিবারে চলছে শোকের মাতম। নিহত তিন শিশুর বাবা রিকশাচালক রেজোয়ান হোসেন বুক চাপড়ে বলেন, ‘আমার সব শেষ হয়ে গেল। আমারে আল্লাহ বেঁচে রাখছে কেন। এখানে গেটম্যান থাকলে আমার বুকের ধনগুলো বেঁচে যেত।’

প্রতিবেশী আব্দুল মোমেন জানান, রেলওয়ের লেভেল ক্রসিংয়ে পাশে সেতুর নির্মাণকাজের জন্য ইটবোঝাই ট্রলিটি চলন্ত অবস্থায় ছিল। ট্রলির কারণে শিশুরা ট্রেনের শব্দ শুনতে পায়নি। এখানে গেটম্যান থাকলে মর্মান্তিক এ ঘটনা ঘটত না বলে জানান তিনি।

ওই ঘটনায় নিহত যুবক শামীম হোসেনের বাড়িতেও চলছে শোকের মাতম। ছেলেকে হারিয়ে বৃদ্ধা মা চিনু বেগম বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন। বৃদ্ধা মা, স্ত্রী ও একমাত্র কন্যা নিয়ে চার সদস্য পরিবারের উপার্জনশীল ব্যক্তি ছিলেন শামীম।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সরকারি কর্মকর্তা–কর্মচারীদের নতুন বেতনকাঠামো আসছে, পে কমিশন গঠন

ব্যাংকে চোখ বেঁধে গ্রাহককে হাতুড়িপেটা, পায়ের নখ তোলার চেষ্টা

‘সোজা কথা, যারে ভালো লাগবে তারে কোপামু’

শুল্ক ছাড়া যুক্তরাজ্যে তৈরি পোশাক রপ্তানির সুযোগ পেল ভারত

সর্বাত্মক যুদ্ধে জড়াতে পারে থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়া—শক্তিতে কে বেশি এগিয়ে

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত