Ajker Patrika

জেলেরা হয়রানির শিকার

খান রফিক, বরিশাল
আপডেট : ২১ মার্চ ২০২২, ০৮: ৩৯
Thumbnail image

বরিশাল সদরের কালাবদর ও আড়িয়াল খাঁ নদের একটি অংশ ইলিশের অভয়াশ্রমের মধ্যে পড়েছে। অভয়াশ্রমের বাইরে বাকি অংশে জেলেরা মাছ শিকারে নেমে হয়রানির শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

কালাবদরের পূর্বপারে ভোলার আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এসে সদরের জেলেদের ধরে নিয়ে যাচ্ছে। তাঁদের ছাড়াতে গুনতে হচ্ছে অর্থ। এমন হয়রানি থেকে রক্ষায় অভয়াশ্রমের কালাবদর, আড়িয়াল খাঁর ১৮ কিলোমিটারে লাল নিশান দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন জেলে নেতারা।

গত ৩ মার্চ সদর উপজেলা টাস্কফোর্স কমিটির সভায় ওই দাবির পরিপ্রেক্ষিতে নদীতে লাল নিশান দিয়ে সীমানা নির্ধারণের সিদ্ধান্তও হয়েছে। কিন্তু অভয়াশ্রমে জাটকা রক্ষায় নিষেধাজ্ঞার ২১ দিন পার হলেও টাস্কফোর্সের সেই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে গরজ নেই মৎস্য অধিদপ্তরের। যে কারণে নিষেধাজ্ঞার আওতার বাইরে মাছ শিকারে গিয়েও দুশ্চিন্তায় থাকতে হচ্ছে জেলেদের।

বরিশাল জেলা মৎস্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তা (ইলিশ) ড. বিমল চন্দ্র দাস বলেন, সদরের বুখাইনগর থেকে চন্দ্রমোহন ও বাকেরগঞ্জের দুর্গাপাশার বিশারীকাঠী পর্যন্ত আড়িয়াল খাঁ নদ ও কালাবদর নদীর প্রায় ১০-১২ কিলোমিটার অভয়াশ্রমের আওতামুক্ত। তবে এ দুই নদীর ১৮ কিলোমিটার অভয়াশ্রমের মধ্যে পড়েছে। ১ মার্চ থেকে দুই মাস অভায়শ্রম অঞ্চলে সব ধরনের মাছ ধরা নিষিদ্ধ। অভয়াশ্রমের বাইরে জেলেরা মাছ ধরতে গিয়ে হয়রানির শিকার হচ্ছেন এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘এ ধরনের অভিযোগ আছে। অনেক সময় ভুলক্রমে জেলেদের ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। এ জন্য আমরা যারা নদীতে অভিযান করি, তাঁদের সতর্ক হওয়ার দরকার।’

শুক্রবার বিকেলে কালাবদরসংলগ্ন চন্দ্রমোহনের টুমচরে গিয়ে কথা হয় জেলেদের সঙ্গে। ইলিশ ধরে ফেরা টুমচরের জেলে রেজাউল জানান, ভরা জোবায়ও মাত্র ১২টি ইলিশ পেয়েছেন। পুলিশ আর কোস্টগার্ডের ভয়ে নদীর মাঝেও যেতে পারছেন না।

সেখানকার অপর জেলে আবুল কালাম কালাবদরের তীরে দাঁড়িয়ে জানান, কালাবদর নদীর পূর্বদিকে বিদ্যুতের টাওয়ার এলাকায় ভোলা জেলার ভেলুমিয়া গ্রাম। পুলিশ সেখান থেকে এসে তাঁদের নৌকাসহ ধরে নিয়ে যায়। পরে টাকা দিয়ে ছাড়িয়ে আনতে হয়। অভয়াশ্রমের বাইরে এই হয়রানি থেকে রক্ষা পেতে প্রশাসনকে নদীতে লাল নিশান দিতে বলেছেন। কিন্তু মৎস্য অধিদপ্তরের গরজ নেই।

বরিশাল সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও টাস্কফোর্স কমিটির সভাপতি মো. মনিরুজ্জামান বলেন, অবশ্যই টাস্কফোর্সের কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মৎস্য অধিদপ্তর নদীতে অভয়াশ্রম এলাকার সীমানা নির্ধারণ করবে। ইলিশের অভয়াশ্রমের স্বার্থে এটি করতে হবে। ইউএনও জানান, তিনি তো নদীতে থাকেন না। কেন এখনো সীমানা নির্ধারণ করা হয়নি, তা মৎস্য কর্মকর্তা জানেন।

টাস্কফোর্স কমিটির সভায় থাকা সদর উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা সঞ্জিব সন্যামত আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘৬ষ্ঠ অভয়াশ্রমের বরিশাল সদরের ১৮ কিলোমিটারের সীমানা নির্ধারিত। নতুন করে কেন সীমানা নির্ধারণ কিংবা লাল নিশান দিতে হবে? ইউএনও হয়তো বিষয়টা জানেন না। কোনো বাহিনী কিংবা কেউ যদি না জানে তবে তাঁরা আমাদের কাছে জানুক কোথায় অভয়াশ্রমের সীমানা। জেলেরা হয়রানি নানা কারণে হতে পারে। অভয়াশ্রম কিংবা এর বাইরে অবৈধ জাল পেলে তো ধরবেই।’

তবে জাতীয় মৎস্যজীবী সমিতির জেলা সভাপতি মো. সেলিম বলেন, গত ৩ মার্চ উপজেলা টাস্কফোর্স কমিটিতে হয়রানি রোধে কালাবদর, আড়িয়াল খাঁর অভয়াশ্রমে সীমানা চিহ্নিত করে দিতে বলেছেন ইউএনও। যাতে লাল নিশান দেখলে জেলেরা ওই দিকে না যান।

চন্দ্রমোহন ইউপির জেলে নেতা আকবর হোসেন বলেন, হয়রানি থেকে রেহাই পেতে লাল নিশান দেওয়ার কথা থাকলেও তা কার্যকর হয়নি।

বরিশাল সদর নৌ-থানার ওসি হাসনাত জামান বলেন, টাস্কফোর্সের সভায় আলোচনা হয়েছে যে অভয়াশ্রমের এলাকা লাল নিশান দিয়ে সীমানা নির্ধারণ করে দেওয়া হবে। মৎস্য কর্মকর্তারা জানেন, এ বিষয়ে তাঁরা কী পরিকল্পনা নিয়েছেন। তিনি বলেন, অনেক জেলে, বাহিনীর সদস্যরা জানেন না কোন পর্যন্ত অভয়াশ্রমের সীমানা। সে ক্ষেত্রে নিশান দিলে ভালো। অভয়াশ্রমের বাইরেও মাছ ধরতে গিয়ে হয়রানির শিকার হওয়া প্রসঙ্গে বলেন, জেলেরা নিজেদের ফায়দা লোটার জন্য হয়রানির কথা বলতে পারেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হেফাজতে যুবদল নেতার মৃত্যু, সেনা ক্যাম্প কমান্ডারকে প্রত্যাহার

‘মধ্যমপন্থী’ দল গড়ছেন অভ্যুত্থানের নেতারা, আলোচনায় ইলিশ প্রতীক

রাজধানীর প্রেসক্লাব এলাকায় লিফলেট বিতরণ করল আ.লীগ

লিবিয়ার সৈকতে ২০ জনের গলিত লাশ, সবাই বাংলাদেশি বলে ধারণা

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হেফাজতে যুবদল নেতার মৃত্যু, বিচার চাইল বিএনপি

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত