Ajker Patrika

ইলিশের আশায় জালের ধাক্কা

খান রফিক, বরিশাল
ইলিশের আশায় জালের ধাক্কা

টানা ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞার মাধ্যমে নদনদীতে ডিম ছাড়ার সুযোগ করে দেওয়া হয়েছিল ইলিশকে। মৎস্য অধিদপ্তর দাবি করেছে, এবার ৫২ শতাংশ ডিম ছাড়তে সক্ষম হয়েছে  মা ইলিশ। কিন্তু তারপরও চিন্তিত সংশ্লিষ্টরা। কেননা ডিম থেকে উৎপাদন হওয়া জাটকা রক্ষা করা এখন বড় চ্যালেঞ্জ।

জাটকা রক্ষা না করা গেলে আসন্ন শীত মৌসুমে বড় ইলিশ পাওয়া নিয়ে সংশয় দেখা দিতে পারে। ইতিমধ্যে সাগর মোহনায় নিষিদ্ধ জাল দিয়ে দেদার শিকার হচ্ছে জাটকা।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে কখনো কখনো জব্দ হলেও ১০ ইঞ্চির এই ইলিশ বা জাটকা নৌ ও সড়কপথে যানবাহন ভরে পাচার হচ্ছে বিভিন্ন স্থানে। যদিও জাটকা ধরায় ১ নভেম্বর থেকে দীর্ঘ ৮ মাসের বিধিনিষেধ আরোপ করেছে মৎস্য অধিদপ্তর।

জানা যায়, জাটকা শিকারের মূল ক্ষেত্র এখন সাগর মোহনা। বিশেষ করে পটুয়াখালীর পাথরঘাটা, কলাপাড়া, রাঙ্গাবালী, ভোলার চরফ্যাশন, লালমোহন, মনপুরায় জাটকা ধরা হচ্ছে ব্যাপকভাবে।

এ জন্য জেলেরা ব্যবহার করছেন খুটা জাল। আবার মেঘনা ঘেরা বরিশালের হিজলা, মেহেন্দীগঞ্জেও ধরা হচ্ছে জাটকা। বিশাল নদীতে কয়েক কিলোমিটার খুটা জাল পেতে তা অনেক পড়ে তুললে শত শত জাটকা এক জালেই ধরা পড়ে।

বরিশাল মৎস্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তা (ইলিশ) ড. বিমল চন্দ্র দাস এ প্রসঙ্গে জানান, নভেম্বর থেকে জানুয়ারি এই তিন মাস জাটকা রক্ষা করা তাঁদের জন্য চ্যালেঞ্জ। কারণ, শীত মৌসুম আসছে।

জাটকা রক্ষা করতে না পারলে শীত মৌসুমে বড় ইলিশ পাওয়া কঠিন হবে। জেলেদের বরাত দিয়ে ড. বিমল জানান, সাগর মোহনায় খুটা জালে জাটকা ধরা হচ্ছে। তীর থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে এই জাল পেতে রাখা হয়। কুয়াকাটা, মহিপুর, পাথরঘাটা, চরফ্যাশন, লালমোহনের সাগর উপকূলবর্তী নদীতে এই খুটা জালে শত শত জাটকা ধরা হচ্ছে। শীত মৌসুমে ইলিশ পেতে এখনই জাটকা ধরা বন্ধ করা দরকার। তিনি অবশ্য দাবি করেছেন তাঁদের অভিযানও অব্যাহত রয়েছে।

জাটকা শিকারের সত্যতা মিলেছে সাগর মোহনাসহ বড় নদীগুলোর তীরবর্তী এলাকায়। পাথরঘাটা উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা জয়ন্ত কুমার অপু জানান, তাঁর উপজেলাসংলগ্ন সুন্দরবন ঘেঁষা সমুদ্রের এই অঞ্চলে খুটা জাল পেতে জাটকাসহ বিভিন্ন ছোট মাছ শিকার করা হয়। এ জন্য বন বিভাগ ও মৎস্য বিভাগের যৌথ ব্যবস্থাপনা দরকার। এ ছাড়া নদী-তীরবর্তী চরেও খুটা জাল পাতা হয়। নিষেধাজ্ঞাকালেও তাঁরা খুটা জাল উদ্ধার করেছেন।

বরিশাল সদর উপজেলার চন্দ্রমোহন ইউপির টুমচরের জেলে আ. ছালাম জানান, কালাবদর নদী-তীরবর্তী চরে জোয়ারের সময় খুটা জাল পেতে রাখা হয়। ভাটা এলে জালে জাটকাসহ ছোট মাছ ধরা পড়ে। অসাধু জেলেরা এই অপকর্ম করে। এটি হিজলা, মেহেন্দীগঞ্জের চরেও হচ্ছে।

এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বরিশাল আব্দুর রব সেরনিয়াবাত সেতু দিয়ে উপকূলীয় এলাকা পাথরঘাটা, রাঙ্গাবালী, মহিপুরের জাটকা আসছে। আর ভোলা এবং হিজলা, মেহেন্দীগঞ্জে ধরা পড়া জাটকা পাচার হচ্ছে নদীপথে লঞ্চ ও ট্রলারে। যে পরিমাণ পাচার হচ্ছে, তার বিপরীতে ধরা পড়ছে নামেমাত্র।

এ ব্যাপারে বরিশাল বিভাগীয় মৎস্য অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. আনিছুর রহমান জানান, জাটকা রক্ষায় তাঁরা ১ নভেম্বর থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত বিধিনিষেধ আরোপ করেছেন। এ সময়ে ১০ ইঞ্চি সাইজের ইলিশের বাচ্চা ধরা নিষিদ্ধ। কিন্তু ইলিশ ধরতে গিয়ে একশ্রেণির জেলে জাটকাও ধরে ফেলছেন। খুটা জাল, বেহেন্দী জাল দিয়ে এই জাটকা ধরা হচ্ছে।

তাঁরা অনেক জাল রাঙ্গাবালীতে জব্দ করে কেটে ফেলেছেন।

আবারও নতুন করে অভিযানে নামবেন। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, গেল ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞায় ৫২ ভাগ ডিম ছাড়তে পেড়েছে ইলিশ। এই ডিম থেকে সারা দেশে ৪২ হাজার কোটি ইলিশের বাচ্চা জাটকায় যুক্ত হবে।

যে কারণে এখন জাটকা রক্ষা করাই জরুরি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

পদোন্নতি দিয়ে ৬৫ হাজার সহকারী প্রধান শিক্ষক নিয়োগের পরিকল্পনা: ডিজি

দিনাজপুরে হিন্দু নেতাকে অপহরণ করে হত্যা: ভারত সরকার ও বিরোধী দল কংগ্রেসের উদ্বেগ

সমালোচনার মুখে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্রের নিয়োগ বাতিল

আজ থেকে ৫০০ টাকায় মিলবে ১০ এমবিপিএস গতির ইন্টারনেট

মির্জা ফখরুলের কাছে অভিযোগ, ১৬ দিনের মাথায় ঠাকুরগাঁও থানার ওসি বদলি

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত