Ajker Patrika

অভয়াশ্রমে মা মাছ নিধন

নাসিরনগর (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি
আপডেট : ০২ এপ্রিল ২০২২, ১০: ৩৩
Thumbnail image

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে অভয়াশ্রমে চলছে অবাধে দেশীয় প্রজাতির মাছ নিধন। সরকারি নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে কিছু অসাধু মৌসুমি জেলে অভয়াশ্রম থেকে মা মাছ শিকার করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে গত ১৬ মার্চ ভিটাডুবী ধীবর মৎস্যজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক পরিমল চন্দ্র দাস উপজেলা নির্বাহী ও সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয়ে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। অন্যদিকে প্রশাসন বলছে, অভয়াশ্রম ও নদী থেকে অবৈধ জাল দিয়ে মাছ ধরা বন্ধ করতে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়েছে। তা ছাড়া অভয়াশ্রমের চারপাশে মা ও ছোট মাছ না ধরতে প্রতিনিয়ত জেলেদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে বোঝানো হচ্ছে।

অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার বাকলঙ্গন নদীকে মা মাছ সুরক্ষিত রাখার জন্য সরকারিভাবে মৎস্য অধিদপ্তরের মাধ্যমে একটি অভয়াশ্রম গড়ে তোলা হয়েছে। বর্তমানে অভয়াশ্রমটির চারপাশে শত শত চায়না জাল দিয়ে লাখ লাখ টাকার মাছ অবৈধভাবে ধরা হচ্ছে। শুধু তা-ই নয়, রাতের আঁধারে অভয়াশ্রমটিতে ঢুকে চুরি করে মাছ ধরে নিয়ে যায় একটি অসাধু চক্র। অবাধে মাছ ধরা বন্ধ করতে না পারলে মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে না এবং অভয়াশ্রমটির মা মাছ সুরক্ষার কোনো গুরুত্ব বহন করবে না।

উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় ৮টি মৎস্য অভয়াশ্রম রয়েছে। সরকারিভাবে বৃহত্তর কুমিল্লা জেলা মৎস্য উন্নয়ন ও হাওর প্রকল্পের আওতায় ২০১৫ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত ৮টি নদী-বিলকে অভয়াশ্রম ঘোষণা করে উপজেলা মৎস্য বিভাগ।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঘোষণার পর সরকারি অর্থায়নে অভয়াশ্রম বোঝানোর জন্য বাঁশের খুঁটি, গাছ ও গাছের ডালপালা দেওয়া হয়। এসব অভয়াশ্রমে ট্যাংরা, বোয়াল, আইর, শোল, চিংড়ি, পুঁটি, বাইন, রাণি, পলি, মেনি, বাতাসি ও টাকিসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ আশ্রয় নেয়। সাধারণত মার্চ থেকে জুন পর্যন্ত এ সকল অভয়াশ্রমে দেশীয় প্রজাতির মাছ ডিম ছাড়ে। ডিম ফুটে যেসব রেণু বের হয় সেগুলো বড় হয়ে প্রকৃতিতে মাছের ভারসাম্য রক্ষা করে।

৮টির মধ্যে কেবল উপজেলার গোকর্ণ ইউনিয়নের হরল বিলের অভয়াশ্রমটি কার্যকর আছে। বাদবাকি ৭টি অরক্ষিত এবং উপজেলার চাতলপাড় ইউনিয়নের ধলেশ্বরী নদীতে অভয়াশ্রমটি পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে আছে। এগুলোতে নেই কোনো খুঁটি ও বেড়া। বর্তমানে সেখানে সাইনবোর্ড ছাড়া আর কোনো কিছুরই চিহ্ন পাওয়া যায় না।

স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অভয়াশ্রমগুলোর চারপাশে মৌসুমি জেলেরা সরকারিভাবে নিষিদ্ধ করা বেড় জাল, হাজারি ছিপ দিয়ে অবাধে ১৫ থেকে ২০ কেজি ওজনের মা বোয়াল মাছ শিকার করছে। চায়না জাল দিয়ে ধরা হচ্ছে ছোট ছোট রেণু মাছ। সুকৌশলে স্থানীয় কিছু অসাধু ব্যবসায়ী রাতের আঁধারে এসব ডিমওয়ালা মা মাছ অবাধে শিকার করছেন।

উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা শুভ্র সরকার বলেন, সম্প্রতি বেশ কয়েকটি অভয়াশ্রম ও নদী থেকে অবৈধ জাল দিয়ে মাছ ধরার অপরাধে ১০টি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়েছে। পোড়ানো হয়েছে পাঁচ লাখ টাকার চায়না জাল। অভয়াশ্রমের চারপাশে মা ও ছোট মাছ না ধরতে প্রতিনিয়ত জেলেদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে বোঝানো হচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত