Ajker Patrika

দিনভর চরম দুর্ভোগ

সুনামগঞ্জ ও মৌলভীবাজার প্রতিনিধি
আপডেট : ২৩ নভেম্বর ২০২১, ১১: ৩৭
দিনভর চরম দুর্ভোগ

পাঁচ দফা দাবিতে সুনামগঞ্জ ও মৌলভীবাজারে চলছে অনির্দিষ্টকালের পরিবহন ধর্মঘট। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন সিলেট বিভাগীয় কমিটি এ ধর্মঘটের ডাক দেয়। এতে একাত্মতা ঘোষণা করেছে জেলা পরিবহন ও পণ্য পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়ন।

গতকাল সোমবার সকাল ৬টা থেকে শুরু হয় এ ধর্মঘট। এদিকে ধর্মঘটের কারণে বিপাকে পড়েছেন যাত্রীরা। দ্বিগুণ ভাড়ায় তাঁদের যেতে হচ্ছে গন্তব্যে। পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে আটকা পড়েছেন পর্যটকেরা।

পাঁচ দফা দাবির মধ্যে রয়েছে—সিলেট জেলা অটো টেম্পো, অটোচালক শ্রমিক জোটের ত্রিবার্ষিক নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করা। সিলেটের আঞ্চলিক শ্রম দপ্তরের উপপরিচালককে প্রত্যাহার। সিলেট জেলা বাস-মিনিবাস-কোচ ও মাইক্রোবাস শ্রমিক ইউনিয়ন নেতাদের ওপর করা মামলা প্রত্যাহার। ট্রাফিক ও হাইওয়ে পুলিশের সব ধরনের হয়রানি বন্ধ। মেয়াদোত্তীর্ণ শেরপুর, শেওলা, লামাকাজী, শাহপরান ও ফেঞ্চুগঞ্জ সেতু থেকে টোল আদায় বন্ধ এবং চৌহাট্টাসহ নগরীর বিভিন্ন স্থানে সব ধরনের গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা করা।

মৌলভীবাজার: মৌলভীবাজারের সঙ্গে সারা দেশের দূরপাল্লার বাস বন্ধ রয়েছে। রাস উৎসবসহ বিভিন্ন পর্যটনকেন্দ্রে আসা পর্যটকেরাও জানতেন না ধর্মঘটের বিষয়ে। ফলে তাঁরা আটকা পড়েছেন বলে জানিয়েছেন বিভিন্ন রিসোর্ট ও কটেজের ব্যবস্থাপকেরা।

এক হোটেলের ব্যবস্থাপক সতরোজিত আচার্য বলেন, এ রকম ঘন ঘন ধর্মঘটের ফলে পর্যটক যেমন কমে তেমনি আমাদের ব্যবসায়ও ক্ষতি হয়। ইতিমধ্যে কয়েকজন পর্যটকেরা আটকা পড়ে গেছে। তাঁরা বাড়িতে ফিরতে পারছেন না।’

চাকরিজীবী কামরুল হোসেন ফাত্তাহ বলেন, ‘হঠাৎ করে বাস বন্ধ করায় আমাদের দুর্ভোগ বেড়েছে। অধিক ভাড়ায় সিএনজিচালিত অটোরিকশায় গন্তব্যে পৌঁছাতে হচ্ছে।’

ব্যবসায়ী জিল্লুল হোসেন বলেন, ‘করোনায় ব্যবসায়ীরা চরম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এখন অযৌক্তিক ধর্মঘটে ব্যবসায় ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারছি না।’

এসএসসি পরীক্ষার্থী দুর্জয় দেব বলে, পরীক্ষার মধ্যে গাড়ি বন্ধ রাখা হয়েছে, এটা আমাদের জন্য দুর্ভোগের। বাধ্য হয়ে বেশি ভাড়ায় রিকশা বা সিএনজি নিয়ে পরীক্ষা দিতে যায়।’

বাস-মিনিবাস চালক সমিতির সভাপতি নুরুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘আমরা পুরো বিষয়টি জানি না। মালিক সমিতি থেকে শুধু বলা হয়েছে সিলেট বিভাগে ধর্মঘট আহ্বান করা হয়েছে।’

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন সিলেট বিভাগীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক সজিব আলী বলেন, ‘৯ নভেম্বর সিলেট বিভাগীয় কমিশনার ও ডিআইজির কাছে পাঁচ দফা দাবিসংবলিত স্মারকলিপি দিয়ে বাস্তবায়নের আলটিমেটাম দেওয়া হয়। ২২ নভেম্বরের আগে দাবি না মানলে ওইদিন থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য পরিবহন ধর্মঘট ডাকা হয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘যেহেতু প্রশাসন থেকে দাবি বাস্তবায়নে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি, তাই সোমবার থেকে সিলেট বিভাগে সর্বাত্মক পরিবহন ধর্মঘট কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে।’

জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান বলেন, ‘যেহেতু সমস্যা আমাদের জেলায় নেই, সেই পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন নেতাদের সঙ্গে আলাপ করেছি। তারা জানিয়েছেন মৌলভীবাজারে গাড়ি চলাচল করবে।’

সুনামগঞ্জ: সকাল থেকে জেলা সদরের কোনো বাস ছেড়ে যায়নি। শহরের ওয়েজখালি, মল্লিকপুর এলাকায় পরিবহন শ্রমিকদের পিকেটিং করতে দেখা গেছে। এ সময় ধর্মঘটকারীরা সিএনজিচালিত অটোরিকশাও চলতে বাধা দেন। হঠাৎ এমন ধর্মঘটের ফলে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন যাত্রীরা। পাশাপাশি এসএসসি পরীক্ষা থাকায় শিক্ষার্থীদের বিপাকে পড়তে হয়।

পরিবহন ধর্মঘটের খবর না জেনে অনেকে সিলেট বা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে চিকিৎসা, পরীক্ষাসহ জরুরি কাজের জন্য শহরের বাস টার্মিনালে এসে জড়ো হন। অন্যদিকে বাস চলাচল বন্ধ থাকায় বিকল্প উপায়ে মানুষকে যেতে দেখা গেছে। তবে গুনতে হয়েছে বাড়তি ভাড়া।

সুনামগঞ্জ শহর থেকে জগন্নাথপুর উপজেলা সদরে যাওয়ার জন্য পৌর এলাকার বাসিন্দা বিশ্ব সরকার বাসা থেকে বের হয়ে গাড়ি না পেয়ে পড়েছেন বিপাকে। বিশ্ব সরকার বলেন, ‘বাস না পেয়ে মোটরসাইকেল ভাড়া করে যাচ্ছি। দ্বিগুণ ভাড়া দিতে হচ্ছে। এ ছাড়াও ট্রাক, ভ্যান বন্ধ রাখায় সবজিচাষিরা পড়েছেন আরও বিড়ম্বনায়।

সুনামগঞ্জ বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জুয়েল মিয়া বলেন, ‘শ্রমিকেরা বাস না চালালে আমাদের বন্ধ রাখতেই হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত