Ajker Patrika

ভারতকে হারিয়ে সাফের শ্রেষ্ঠত্ব বাংলাদেশের

নাজিম আল শমষের, ঢাকা
আপডেট : ২৩ ডিসেম্বর ২০২১, ০৮: ৫৮
ভারতকে হারিয়ে সাফের শ্রেষ্ঠত্ব বাংলাদেশের

রেফারির শেষ বাঁশি বাজতেই মাঠের মাঝখানে শুয়ে পড়লেন মারিয়া মান্ডা আর তহুরা খাতুন। দলের বাকিরা দৌড়ে ঝাপটে ধরলেন অধিনায়ককে। মাঠে উপস্থিত ১৫ হাজারেরও বেশি দর্শক তখন জয়ের আনন্দে মাতোয়ারা। ভারতকে হারিয়ে আরও একবার বয়সভিত্তিক ফুটবলে দাপট দেখাল বাংলাদেশের মেয়েরা।

জাতীয় পর্যায়ে কখনোই ভারতকে হারাতে পারেনি বাংলাদেশ নারী ফুটবল দল। কিন্তু বয়সভিত্তিক ফুটবলে ঠিক যেন তার উল্টো। আগের নয়বার দেখায় সাতটাতেই জিতে এগিয়ে ছিল বাংলাদেশের মেয়েরা। গতকাল বুধবার কমলাপুরের বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহি মোস্তফা কামাল স্টেডিয়ামে সেই ব্যবধানটা আরও বাড়ালেন মারিয়া মান্ডারা।

আনাই মগিনির একমাত্র গোলে ভারতকে ১-০ গোলে হারিয়ে বাংলাদেশের ঘরে আনলেন সাফ অনূর্ধ্ব-১৯ নারী চ্যাম্পিয়নশিপের প্রথম শিরোপাও।

বাংলাদেশের শিরোপা জয়ে পরোক্ষ ভূমিকা ছিল মাঠে উপস্থিত ১৫ হাজারের বেশি দর্শকেরও। স্টেডিয়ামের উত্তর-দক্ষিণ গ্যালারির পুরোটাই ছিল দর্শকে ভরপুর। ফাইনাল উপলক্ষে খুলে দেওয়া হয়েছিল গ্যালারির দুয়ার। ঢুকতে না পেরে স্টেডিয়াম গেট থেকে ফিরে গেলেন অনেকেই। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও ইউটিউবে খেলা দেখেছেন প্রায় ২ লাখের মতো দর্শক। গ্যালারিতে যাঁরা ঢুকেছেন তাঁদের সবার মুখে সারাক্ষণই লেগে রইল একটাই রব ‘বাংলাদেশ, বাংলাদেশ’। নিজ দর্শকদের এমন প্রাণঢালা ভালোবাসার প্রতিদানটা বাংলাদেশের মেয়েরা দিলেন সাফের শিরোপা জিতেই।

গ্রুপ পর্বে ভারতকে ১-০ গোলে হারানো ম্যাচের একাদশ থেকে কেবল মার্জিয়াকে সাইডবেঞ্চে বসিয়ে প্রায় অপরিবর্তিত দলটাকেই ফাইনালে খেলিয়েছেন বাংলাদেশের কোচ গোলাম রব্বানী ছোটন। মার্জিয়ার পরিবর্তে শুরুর একাদশে খেলেছেন গ্রুপ পর্বে ৫ গোল করা ফরোয়ার্ড শাহেদা আক্তার রিপা।

পুরো ম্যাচে বলের দখলটা নিজেদের পায়ে রেখে ভারতের বিপক্ষে রীতিমতো ছড়ি ঘুরিয়েছেন বাংলাদেশের ফুটবলারেরা। বল বেশির ভাগ সময়ই রইল স্বাগতিকদের পায়ে। বলের নিয়ন্ত্রণ নিজেদের পায়ে রেখে ১৪ মিনিটে প্রায় এগিয়েই গিয়েছিল বাংলাদেশ। মারিয়া মান্ডার দূরপাল্লার শটে বল ভারত গোলরক্ষক আনশিকার গ্লাভস ফসকালে ফিরতি বলে শট নেন তহুরা খাতুন। মাটি কামড়ে বল জালে ঢোকার মুখে গোললাইনে বল আটকে দেন আনশিকা। ‘গোল হয়েছে’, বাংলাদেশের ফুটবলারদের এমন দাবি সত্ত্বেও গোল না দেওয়ার দাবিতেই অনড় থাকেন নেপালি রেফারি রায় অঞ্জনা।

২৫ মিনিটে আবারও দুর্ভাগ্যের শিকার স্বাগতিকেরা। ডান প্রান্ত থেকে আনাই মগিনির আকাশে ভাসানো শট প্রতিহত হয় বারে। গোলমুখে দলের একজন থাকলে হয়তো সেই দফাতেই লিড পেত বাংলাদেশ।

দ্বিতীয়ার্ধের প্রথম মিনিটে আবারও গোলবঞ্চিত বাংলাদেশ। ৪৬ মিনিটে ডি-বক্সের মুখে শামসুন্নাহার জুনিয়রের ভলি পোস্টে লেগে হয় প্রতিহত। ৬০ মিনিটে শাহেদা আক্তার রিপার ক্রস থেকে শামসুন্নাহার জুনিয়রের হেডও খুঁজে পায়নি জাল। ৭৫ মিনিটে জটলার ভেতর বাংলাদেশ বল ঢোকালেও অফসাইডের বাঁশি বাজান নেপালি রেফারি।

কয়েক দফা গোলের সুযোগ নষ্ট করার পর বাংলাদেশের কাঙ্ক্ষিত জয়ের মুহূর্তটা এসেছে ৮০ মিনিটে। শাহেদা আক্তার রিপার ব্যাকহিল থেকে আনাই মগিনির ৩০ গজ দূর থেকে নেওয়া দূরপাল্লার শট ঠেকাতে লাফিয়ে উঠেছিলেন ভারতের গোলরক্ষক আনশিকা। বল তাঁর গ্লাভস লেগে আলতোভাবে জালে জড়ালে গোলের উৎসবে ভাসেন মাঠে ভর্তি দর্শক। বাকি সময়টা নিজেদের পায়ে বলের দখল রেখে ভারতকে আর আক্রমণে ফিরতে না দিয়ে শিরোপা জিতে নেয় বাংলাদেশ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত