Ajker Patrika

পিরোজপুরের শুঁটকিপল্লিতে লাগেনি আধুনিকতার ছোঁয়া

পিরোজপুর প্রতিনিধি
আপডেট : ১১ মার্চ ২০২২, ১২: ৩১
পিরোজপুরের শুঁটকিপল্লিতে লাগেনি আধুনিকতার ছোঁয়া

পিরোজপুরের শুঁটকিপল্লি। এখানে উৎপাদন হয় সামুদ্রিক মাছের শুঁটকি। এ শুঁটকির কদর রয়েছে ঢাকা, চট্টগ্রাম, বান্দরবান, জয়পুরহাটসহ দেশের বিভিন্ন জেলায়। এমনকি এ শুঁটকি যাচ্ছে দেশের বাইরেও। তবে শুঁটকি উৎপাদন ও বিপণন ব্যবস্থায় এখনো ব্যবহার হচ্ছে না প্রযুক্তির।

উদ্যোক্তারা মনে করছেন, স্থায়ীভাবে জায়গা না থাকাসহ বিনিয়োগের অভাবে প্রযুক্তির ব্যবহার করা হচ্ছে না। উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারে শুঁটকির উৎপাদন বাড়বে এবং অর্জিত হবে বৈদেশিক মুদ্রা, সৃষ্টি হবে কর্মসংস্থান।

পিরোজপুর সদর উপজেলার শংকরপাশা ইউনিয়নের পাড়েরহাটের চিতলিয়া এলাকার মৎস্যবন্দরের কাছে অবস্থিত শুঁটকিপল্লিতে। এ পল্লিতে পাঁচ-সাতটি সেটে শুঁটকি তৈরি করা হয়। এতে কাজ করে ৫০-৬০ জন শ্রমিক। ২৫-৩০ বছর ধরে চলছে এখানে শুঁটকির ব্যবসা। বছরের আশ্বিন-চৈত্র পর্যন্ত বঙ্গোপসাগর থেকে ট্রলারে করে বিভিন্ন সামুদ্রিক মাছ আসে পাড়েরহাট মৎস্যবন্দরে। এ বন্দর থেকে বাইলা, কাইল্যা, ছুরি, মরমা, বেজিসহ নানা প্রজাতির সামুদ্রিক মাছ কিনে শুঁটকি করা হয়। এসব মাছ ভাগা বা কাঠি হিসেবে কেনেন চাষিরা। এক ভাগা বা কাঠিতে ১৫-১৭ কেজি মাছ পাওয়া যায়। এক কাঠি মাছ শুঁকিয়ে তিন ভাগের এক ভাগ শুঁটকি করা হয়। আশ্বিন থেকে চৈত্র—ছয় মাস চলে এ শুঁটকি তৈরির কাজ। বছরের মধ্যে এ সময়টিতে সামুদ্রিক মাছ ভালো পাওয়া যায়। বছরে কোটি টাকার শুঁটকি উৎপাদন করা হয় এখানে।

শুঁটকি ব্যবসায়ী আকিজুল বলেন, ‘পিরোজপুরের পাড়িরহাটের শুঁটকি ব্যবসা ঐতিহ্যবাহী। আমরা দীর্ঘদিন ধরে এ ব্যবসা করে আসছি। এখনো কোনো রকম কেমিক্যাল, ফরমালিন ব্যবহার না করে শুঁটকি উৎপাদন করা হয়। করোনায় লকডাউনে দুই বছর ধরে আমরা ভালো দাম পাচ্ছি না।’

ব্যবসায়ী আজগর আলী বলেন, ‘কোনো রকম প্রযুক্তির ব্যবহার ছাড়াই আমরা বছরের পর বছর শুঁটকি উৎপাদন করে যাচ্ছি। যদি প্রযুক্তির ব্যবহার করা যেত, তাহলে কম খরচে কম সময়ে উৎপাদন আরও বাড়ত। কিন্তু এ শুঁটকিপল্লি নিয়ে তেমন কেউ চিন্তা করে না। আমাদের কোনো ব্যাংকলোন দেওয়া হয় না; ফলে সমস্যায় পড়তে হয়। সরকার যদি স্বল্প সুদে আমাদের ব্যবসার জন্য লোন দিত, তাহলে ব্যবসায়ীরা উপকৃত হতেন।’

দক্ষিণ উপকূলীয় মৎস্য কল্যাণ সমিতির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মিজানুর রহমান বলেন, ‘সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক উপায়ে এখানে শুঁটকি উৎপাদন করা হয়। নেই কোনো মিলকারখানা। ফাঁকা মাঠে সূর্য়ের আলোতে সাগরের মাছ শুকিয়ে শুঁটকি তৈরি করা হয়। শুঁটকিপল্লির ব্যবসায় ও শ্রমিকেরা অনেক সমস্যায় জর্জরিত। দাম ভালো পাওয়া যায় না আবার শ্রমিক সমস্যা, এনজিওর লোন সব মিলে ব্যবসায়ীরা রয়েছেন ভোগান্তিতে। স্বল্প সুদে লোন দিয়ে এবং যদি এখানে উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার করা যেত, তাহলে উৎপাদন বাড়ত।

পিরোজপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এম এ বারী বলেন, পিরোজপুরের পাড়িরহাটের শুঁটকিপল্লিটি অনেক পুরোনো। এখানে প্রাকৃতিক নিয়মে সূর্যের আলোতে শুঁটকি উৎপাদন করা হয়। এখানে একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হলে উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে বাড়বে শুঁটকি উৎপাদন। যাতে অর্জিত হবে বৈদেশিক মুদ্রা, বাড়বে কর্মসংস্থান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত