Ajker Patrika

জলাশয় ভরাট করে হচ্ছে হল

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি
আপডেট : ১২ নভেম্বর ২০২১, ১০: ৩৬
জলাশয় ভরাট করে হচ্ছে হল

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে জলাশয় ভরাট করে ছাত্রীদের জন্য একটি আবাসিক হল নির্মাণ করা হচ্ছে। আবার নির্মাণাধীন হলটির পাশে একাডেমিক ভবন। এতে ছাত্রীদের নিরাপত্তা ও স্বাচ্ছন্দ্য বিঘ্নিত হতে পারে। বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠ শিক্ষকেরা বলছেন, হলের স্থান নির্ধারণের সময় তাঁরা আপত্তি জানিয়েছিলেন। নির্ধারিত স্থান পরিবর্তন করে তৎকালীন উপাচার্য তাঁর ব্যক্তিগত আগ্রহে এখানে হল নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেন।

তবে উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তারের দাবি, ওই স্থানে জলাশয় ছিল না। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘যেখানে হল নির্মিত হচ্ছে সেটি ছিল নিচু ভূমি। জলাশয় ছিল না। পূর্ববতী প্রশাসন এই স্থান নির্ধারণ করেছে। অবকাঠামোগত উন্নয়ন করতে গেলে এমনটা হবেই।’ স্থান পরিবর্তনের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এটি আমার জানা নেই।’

উপ-উপাচার্য অধ্যাপক চৌধুরী মো. জাকারিয়ার দাবি, এটি জলাশয় ছিল না। তিনি বলেন, নিচু ভূমি হওয়ায় এখানে হলের পানি এসে জমা হতো। ফলে চারপাশ দিয়ে বেঁধে মাছ চাষ করা হতো।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল দপ্তর সূত্রে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামোগত উন্নয়নে ২০১৫ সালে ৩৬৪ কোটি টাকার একটি বাজেট পাস হয়। সেই বাজেটে শিক্ষার্থীদের আবাসন সংকট নিরসন ও শিক্ষার মানন্নোয়নে ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য ১০ তলাবিশিষ্ট দুটি আবাসিক হল, একটি ২০ তলা একাডেমিক ভবন এবং শিক্ষকদের জন্য একটি ১০ তলা টাওয়ার নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। পরিকল্পনা অনুযায়ী স্থান নির্ধারণের জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি ‘দেশরত্ন শেখ হাসিনা’ নামে ছাত্রীদের জন্য হলের স্থান নির্ধারণ করে রোকেয়া হলের পাশে।

তবে ২০১৭ সালে অধ্যাপক আব্দুস সোবহান উপাচার্যের দায়িত্ব গ্রহণের পর নতুন করে ৫০ বছর মেয়াদি মাস্টারপ্ল্যান তৈরি করা হয়। নতুন পরিকল্পনায় ‘দেশরত্ন শেখ হাসিনা’ হলের স্থান পরিবর্তন করে খালেদা জিয়া হল ও তৃতীয় বিজ্ঞান ভবনের মাঝের ‘জলাশয়ের’ মধ্যে নির্ধারণ করা হয়। সম্প্রতি জলাশয় ভরাট করে সেখানে হল নির্মাণের কাজ শুরু করেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।

২০১৫ সালে তৈরি করা মাস্টারপ্ল্যানের স্থান নির্ধারণী কমিটির সদস্য ছিলেন উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মঞ্জুর হোসেন। তিনি বলেন, ‘আমরা মাস্টারপ্ল্যানে মেয়েদের হলগুলো একটি অঞ্চলের মধ্যে নিয়ে আসতে চেয়েছিলাম। যার কারণে রোকেয়া হলের পাশেই ‘দেশরত্ন শেখ হাসিনা’ হলের স্থান নির্ধারণ করা হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তী সময়ে উপাচার্যের দায়িত্ব পেয়ে অধ্যাপক আব্দুস সোবহান সেই জায়গা বাতিল করে নতুর স্থান নির্ধারণ করেন।’

অধ্যাপক মঞ্জুর আরও বলেন, জলাশয় ভরাট করে যেখানে হল নির্মাণ করা হচ্ছে, তার পাশেই একাডেমিক ভবন। ফলে মেয়েদের নিরাপত্তার একটি বিষয় রয়েছে। এ ছাড়া জলাশয় ভরাট করে ভবন নির্মাণে সরকারি নিষেধাজ্ঞা আছে।

পরিবেশ অধিদপ্তরের রাজশাহী বিভাগীয় পরিচালক সুফিয়া নাজিম বলেন, জলাধার সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী কোনোভাবেই জলাশয় ভরাট করা যাবে না। সে ক্ষেত্রে অনুমতি দেওয়া না-নেওয়ার প্রশ্নই আসে না। জলাশয় ভরাট সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। যদি কেউ জলাশয় ভরাট করে, তা আইনের লঙ্ঘন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক আনন্দ কুমার সাহা বিগত চার বছর উপ-উপাচার্যের দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি প্রশাসনে থাকাকালেই ৫০ বছর মেয়াদি মাস্টারপ্ল্যান তৈরি করা হয়। জলাশয় ভরাট করে হল নির্মাণের বিষয়ে তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর নামে নির্মিত হতে যাওয়া হলটির স্থান নির্ধারণের সময় প্রশাসনের মধ্যেই আমরা অনেকেই আপত্তি জানিয়েছিলাম। কারণ, এটি একাডেমিক ভবনের খুবই কাছে। তা ছাড়া, জলাশয়ের মধ্যে এর স্থান নির্ধারণ করা হয়েছিল। কিন্তু তৎকালীন উপাচার্য তাঁর একান্ত ব্যক্তিগত আগ্রহে জলাশয়ের মধ্যেই হল নির্মাণের স্থান নির্ধারণ করেন।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

জামায়াতের অফিসে আগুন নেভাতে গিয়ে কোরআন শরিফ দেখেননি, দাবি ফায়ার সার্ভিসের

ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স: রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে আসন নেই সাবেক প্রধানমন্ত্রীর

দিনাজপুরে নিহত মাইক্রোবাস-আরোহীদের সবাই সরকারি কর্মকর্তা

ফরিদপুরে গাড়ির চাকায় ছিন্নভিন্ন অজ্ঞাত ব্যক্তি, অক্ষত শুধু পায়ের জুতা

নুসরাত ফারিয়ার গ্রেপ্তার বিব্রতকর: উপদেষ্টা ফারুকী

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত