Ajker Patrika

আমন রোপণের মৌসুমে উধাও পটাশ সার

সনি আজাদ, (রাজশাহী) চারঘাট
Thumbnail image

চলছে আমন ধান রোপণের ভরা মৌসুম। অথচ রাজশাহীর চারঘাটের বিভিন্ন বাজার থেকে হঠাৎ করে উধাও হয়ে গেছে মিউরেট অব পটাশ (এমওপি) সার। কিছু ডিলারের কাছে যেটুকু সার পাওয়া যাচ্ছে, সেটিও বিক্রি হচ্ছে চড়া দামে। ফলে চাষিরা সারের তীব্র সংকটে পড়েছেন। তবে উপজেলা কৃষি বিভাগ বলছে, মাসখানেকের মধ্যে এ সংকট কেটে যাবে।

কৃষকদের অভিযোগ, তাঁদের কাছ থেকে সারের দাম বেশি নেওয়া হলেও ডিলাররা কোনো রসিদ দিচ্ছেন না। কেউ কেউ রসিদ দিলেও তাতে সরকারের নির্ধারিত দাম দেখাচ্ছেন। প্রতিবাদ করলে সার বিক্রি করবেন না জানিয়ে দিচ্ছেন তাঁরা। ডিলারদের কাছে একরকম জিম্মি হয়ে পড়েছেন কৃষকেরা।

তবে এ বিষয়ে ডিলারদের দাবি, চাহিদার তুলনায় বরাদ্দ কম পাওয়া যাচ্ছে। এ কারণে বাজারে সারের সংকট তৈরি হয়েছে। তবে সরকার নির্ধারিত দামেই সার বিক্রি করছেন তাঁরা।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, খরিপ-১, খরিপ-২ ও রবি—এই তিন মৌসুমে উপজেলায় মোট আবাদি জমির পরিমাণ ৩১ হাজার ৫৯১ হেক্টর। এই জমি আবাদ করতে ৩ হাজার ৬৬০ মেট্রিক টন টিএসপি, ৬ হাজার ৪০৯ মেট্রিক টন এমওপি, ৭ হাজার ১০৩ মেট্রিক টন ডিএপি এবং ১৪ হাজার ১৫৮ মেট্রিক টন ইউরিয়া সারের চাহিদা রয়েছে। সারের চাহিদা অনুযায়ী বরাদ্দও রয়েছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে আরও জানা গেছে, বরাদ্দের সার বিসিআইসির ৭ জন এবং বিএডিসির ১৪ জন ডিলারের মাধ্যমে উপজেলার কৃষকদের কাছে বিক্রি করা হচ্ছে। সরকার প্রতি বস্তা (৫০ কেজির বস্তা) টিএসপি সারের খুচরা মূল্য ১ হাজার ১০০ টাকা (২২ টাকা প্রতি কেজি), পটাশ প্রতি বস্তা ৭৫০ টাকা (১৫ টাকা কেজি), ডিএপি ও ইউরিয়া প্রতি বস্তা ১ হাজার ১০০ টাকা (২২ টাকা কেজি) নির্ধারণ করে দিয়েছে।

আরও জানা গেছে, উপজেলায় প্রায় ৫ হাজার ৪০০ হেক্টর জমিতে আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ ছাড়া উপজেলাজুড়ে সবজি চাষ করা হয়েছে। এ ছাড়া প্রচুর আমবাগান রয়েছে। এসব ফসল ও ফল উৎপাদন করতে গিয়ে জমিতে কৃষকেরা টিএসপি, পটাশ, ডিএপি ও ইউরিয়া সার ব্যবহার করেন।

উপজেলার রাওথা গ্রামের কৃষক শফিকুল ইসলাম বলেন, পটাশ সার ছাড়া আমন রোপণ সম্ভব নয়। উপজেলা সদরের এক ডিলারের দোকানে পটাশ ও টিএসপি কিনতে গেলে ডিলার তাঁকে পটাশ সার নেই বলে জানিয়ে দেন। পরে বিভিন্ন মাধ্যমে কথা বলার পর ডিলার তাঁকে দুই বস্তা সার দেন। প্রতি বস্তা টিএসপি ১ হাজার ৩০০ টাকা দাম নেন। ডিলার কোনো রসিদ দেননি।

উপজেলার ঝিকরা গ্রামের কৃষক আশরাফুল ইসলাম বলেন, জমিতে মুলা, তুলা ও কলার চাষ করেছেন তিনি। এখন জমিতে পটাশ সার দেওয়ার প্রয়োজন।

কিন্তু কোনো ডিলারের কাছে সার পাওয়া যাচ্ছে না। দুই ডিলারের কাছে সার পাওয়া গেলেও তাঁরা ৭৫০ টাকা বস্তার পটাশ সারের দাম ২ হাজার টাকা চেয়েছেন। এ অবস্থায় আবাদ করা দুষ্কর হয়ে গেছে।

এ বিষয়ে উপজেলার বিসিআইসি সারের ডিলার জাহাঙ্গীর আলম বলেন, এ সময় পটাশ ও টিএসপি সারের চাহিদা বেশি। অনেক সময় পটাশ সারের সরবরাহ থাকছে না। সার সরকার নির্ধারিত দামেই বিক্রি করা হচ্ছে। কৃষি অফিসের নির্দেশনা রয়েছে, কোনো কৃষকের কাছে ৫-১০ কেজির বেশি সার বিক্রি করা যাবে না।

এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ লুৎফুন নাহার বলেন, পটাশ সারের বরাদ্দ খুবই কম এবং সরবরাহ সংকট থাকায় উপজেলাজুড়ে সারের সংকট তৈরি হয়েছে। এই সমস্যা মাসখানেকের মধ্যে কেটে যাবে। তবে কোনো ডিলার সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে সারের দাম বেশি নিলে তাঁর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত