‘বিষমুক্ত’ সবজির গ্রাম ধনবাড়ীর মুশুদ্দি

বছরজুড়ে আবাদি জমিতে বিভিন্ন রকমের সবজি চাষ করে ভাগ্যের পরিবর্তন করেছেন ধনবাড়ী উপজেলার মুশুদ্দি ইউনিয়নের কৃষকেরা। এ এলাকাটি বিষমুক্ত নিরাপদ সবজির গ্রাম হিসেবে পরিচিত। এসব সবজি উপজেলা-জেলার চাহিদা মিটিয়ে সরবরাহ করা হচ্ছে দেশের বিভিন্ন স্থানে। সবজি চাষে লাভবান হওয়ায় দিন দিন আগ্রহ বাড়ছে এ অঞ্চলের কৃষকের।

উপজেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে উপজেলায় ৫৫০ হেক্টর জমিতে সবজির আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে শুধু মুশুদ্দি ইউনিয়নেই ১০৩ হেক্টর জমিতে চাষ করা হয়েছে। এ ছাড়া প্রণোদনা, পরামর্শ ও বিভিন্ন প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করা হচ্ছে কৃষকদের আগ্রহ বাড়াতে।

স্থানীয় চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মুশুদ্দি ইউনিয়নটি সবজিপ্রধান এলাকা। দেশের ১০টি মডেল সবজির গ্রামের মধ্যে মুশুদ্দি একটি। এখানে বছরজুড়ে লাউ, মিষ্টিকুমড়া, করলা, শিম, শসা, চিচিঙ্গা, বরবটি, ঢ্যাঁড়স, পুঁইশাক, লাউশাক, ফুলকপি, বাঁধাকপিসহ বিভিন্ন রকমের সবজির আবাদ হয়। রাসায়নিক সারের পরিবর্তে জৈবসার দিয়ে চাষ করা হয় এসব সবজি। পোকা দমনের জন্য ব্যবহার করা হয় সেক্স ফেরোমিও ও আলোর ফাঁদ।

কৃষকেরা উৎপাদিত সবজি ভোরবেলায় খেত থেকে সংগ্রহ করে স্থানীয় বাজারে বিক্রি করেন। এ সময় বিভিন্ন অঞ্চলের পাইকারেরা এ সবজি কিনে ট্রাকযোগে নিয়ে যান।

কামারপাড়া গ্রামের কৃষক আ. রাজ্জাক (৪৩) বলেন, ‘আমি ১৫ বছর ধরে বিভিন্ন জাতের সবজি চাষ করে আসছি। সব খরচ বাদে প্রতিবছর আড়াই থেকে তিন লাখ টাকা থাকে। এ ইউনিয়নের সবজি আবাদে সফলতা দেখে উপজেলার অন্য কৃষকদের মধ্যেও আগ্রহ বেড়েছে।’

কৃষক হারুন মিয়া বলেন, ‘শুধু আমিই না, আমার মতো যারা সবজি আবাদ করে অনেকেরই ভাগ্যের পরিবর্তন এসেছে। ধান চাষের চেয়ে সবজি আবাদে পাঁচ গুণ বেশি লাভ।’ অপর কৃষক মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ইউনিয়নের শত কৃষক এখন স্বাবলম্বী।

স্থানীয় সবজি ব্যবসায়ী আব্দুল কাদের বলেন, ‘আমি প্রতিদিন সকালে মুশুদ্দি বাজারে থেকে সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে বিষ ও রাসায়নিক সারমুক্ত সবজি কিনে ট্রাকযোগে ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় পাঠা বিক্রি করি।’

মুশুদ্দি ইউনিয়নের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা ফরিদ মিয়া বলেন, এ ইউনিয়নটি মূলত সবজি প্রধান এলাকা। কৃষকেরা বছরজুড়ে সব ধরনের সবজি আবাদ করে থাকেন। বাণিজ্যিক ভিত্তিতে এসব সবজি আবাদ করেন কৃষকেরা।

কৃষি কর্মকর্তা মাজেদুল ইসলাম বলেন, কৃষি অফিস থেকে সব ধরনের পরামর্শ ও প্রণোদনা মুশুদ্দি ইউনিয়নের কৃষকদের দেওয়া হচ্ছে। ওই এলাকার মাটি খুবই উর্বর এবং সবজি চাষের জন্য উপযোগী। কৃষকেরাও সবজি চাষে বেশ আগ্রহী।