Ajker Patrika

২৫০ কৃষকের স্বপ্নভঙ্গ

আনোয়ার হোসেন, মনিরামপুর
আপডেট : ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০৮: ৫৭
২৫০ কৃষকের স্বপ্নভঙ্গ

যশোরের মনিরামপুরে হরিদাসকাটি ইউনিয়নের বিল বোকড়ের জলাবদ্ধ ৬০০ বিঘা জমি থেকে পানি সরিয়ে বোরো রোপণের স্বপ্ন দেখছিলেন ওই অঞ্চলের ২০০-২৫০ কৃষক। সে উদ্দেশ্যেই গত ২৭ দিন কৃষকেরা নিজেদের খরচে সেচযন্ত্র বসিয়ে পানি নিষ্কাশনের কাজ করেছেন।

২৭ দিনে তাঁরা যতটুকু পানি নিষ্কাশন করেছিলেন, গত শুক্রবারের বৃষ্টিতে বিলে সমপরিমাণ পানি বেড়ে গেছে। বৃষ্টির পর হতাশ হয়ে কৃষকেরা পানি সেচ বন্ধ করে দিয়েছেন। ফলে এ বছর বোরো চাষের স্বপ্নভঙ্গ হচ্ছে হরিদাসকাটি ইউনিয়নের বিল বোকড়ের শত শত খেতমালিকের।

একসময় বিল বোকড়ে কৃষক সোনা ফলাতেন। নেবুগাতী, কুচলিয়া, খড়িডাঙ্গা, পাঁচকাটিয়া এলাকার কৃষকদের কর্মতৎপরতায় মেতে থাকত মাঠ। বর্ষা মৌসুমে এ বিলে জমা পানি ধীরে ধীরে মুক্তেশ্বরী হয়ে বেরিয়ে যেত। ভবদহের জলাবদ্ধতার কারণে গত কয়েক বছর বিলে পানি আটকে থাকায় আমন চাষ বন্ধ হয়ে যায়। এবারও আমন ফলাতে পারেনি কৃষক। বাধ্য হয়ে নিজেদের উদ্যোগে পানি সেচে এ বিলের কৃষকেরা বোরো আবাদ করে আসছেন পাঁচ বছর ধরে।

এবারও চাষের উদ্দেশ্যে বিলে জমে থাকা ৩-৬ ফুট পানি সরানোর জন্য দুটি অংশে ভাগ হয়ে ১৬টি সেচযন্ত্র বসিয়ে গত ৯ জানুয়ারি থেকে পানি নিষ্কাশনের কাজ করছিলেন কৃষকেরা। দিন-রাত পানি সেচে মুক্তেশ্বরী নদীর উত্তর ও পূর্ব পাশে ফেলার কাজ চলে। ২৫-২৬ জন কৃষকের সমন্বয়ে গঠিত দুটি কমিটি সেচ কাজের তদারকি করছিলেন। কিন্তু গত শুক্রবারের বৃষ্টি স্বপ্ন ভেঙে দেয় এ বিলের কৃষকদের। এক দিনের ২-৩ ঘণ্টার বৃষ্টিতে ব্যর্থ হয় কৃষকদের সব প্রচেষ্টা। বিলে অবস্থিত মিহির বালার ঘেরে বাঁধ দিয়ে চলছিল সেচকাজ।

বিঘাপ্রতি আড়াই হাজার থেকে ৩ হাজার টাকা দিয়ে কৃষক নিজেদের উদ্যোগে পানি সরাচ্ছিলেন। বিলের পানি প্রায় সরানো শেষ পর্যায়ে ছিল। আর ৫-৭ দিন সেচ করলে বোরো রোপণের উপযোগী হয়ে যেত বিল। এরই মধ্যে শুক্রবারের ভারী বৃষ্টিতে ঘেরের বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয়ে যায় বিল। পানি জমে আগের অবস্থা সৃষ্টি হয়।

সেচ কমিটির সভাপতি অরবিন্দু মল্লিক বলেন, ‘পাঁচকাটিয়া ও নেবুগাতী মৌজায় ৬০০ বিঘা জমির পানি নিষ্কাশনের কাজে আমরা ১৬টি পাম্প বসাই। নেবুগাতী অংশের ৩৫০ বিঘার পানির সরাতে আটটি ও পাঁচকাটিয়া অংশে ২৫০ বিঘার পানি সরাতে আটটি পাম্প বসিয়ে কাজ চলছিল। ৯ জানুয়ারি থেকে সেচের কাজ শুরু হয়ে ৪ ফেব্রুয়ারি রাত পর্যন্ত মেশিন চলে। এরই মধ্যে শুক্রবার সকালে বৃষ্টি নামে।’

অরবিন্দু মল্লিক বলেন, ‘বৃষ্টির মধ্যে সেচ মেশিন চলছিল। আর ৫-৬ দিন সেচ করতে পারলে জমি চাষের উপযোগী হয়ে যেত। কিন্তু শুক্রবারের ভারী বৃষ্টিতে বিকেলে মিহিরের ঘেরের বাঁধ ভেঙে বিলে ঢুকে পড়ে। তখন মনের কষ্টে রাত ১১টায় পাম্প বন্ধ করে দিই।’

সেচ কমিটির এ নেতা বলেন, ‘আমাদের নেবুগাতী অংশে তেল ও মেশিন ভাড়া বাবদ ৫ লাখ টাকা খরচ হয়ে গেছে। কৃষকেরা যা দিয়েছেন তারপরও আমাদের ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা ঘাটতি। এখন কমিটির সদস্যদের সবাইকে ১০ হাজার টাকা করে লোকসান গুনতে হচ্ছে। আপাতত পানি সেচ করা বন্ধ আছে। নতুন করে কিছু কৃষক উদ্যোগ নিতে চাচ্ছেন। তাঁরা কতটুকু পারবেন জানি না। তবে এবার বিলে ধান হচ্ছে না।’

হরিদাসকাটি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য প্রণব বিশ্বাস বলেন, ‘ভবদহের জলাবদ্ধতায় হরিদাসকাটি এলাকায় গতবারের মতো এবারও সিংহভাগ বোরো ধানের ফসল হওয়ার সম্ভাবনা কম। যতটুকু হবে তা কৃষকদের নিজেদের সেচ খরচ করে। প্রতি বছর সেচ খরচ বাদে সার, চাষ, রোপণ, কীটনাশক আবার সেচ দিয়ে আবাদ ফলানো, ধান কেটে বাড়িতে আনা সব মিলিয়ে যা খরচ হয় তাতে দেখা যায় বিঘা প্রতি ৩-৪ হাজার টাকা লোকসান হয়। তবুও থেমে থাকে না দরিদ্র কৃষকেরা। ঘরে সারা বছরের দুমুঠো খাবার জোগাড়ের জন্য তাঁদের কত কষ্ট। এবার শেষ মুহূর্তে অসময়ে বৃষ্টি হওয়ায় বোরোর আশা ছেড়ে দিয়েছেন কৃষকেরা।’

মনিরামপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবুল হাসান বলেন, ‘হরিদাসকাটি ও কুলটিয়া এলাকায় পানি এবার অনেক বেশি। জলাবদ্ধতার জন্য অন্যবার ৪০০ হেক্টর জমিতে বোরো হতো না। পানি বেশি থাকায় এবার এসব অঞ্চলে বোরোর আবাদ আরও কমবে।’

বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) সহকারী পরিচালক ও মনিরামপুর-কেশবপুর অঞ্চলের সেচ কমিটির সদস্যসচিব সোহেল রানা বলেন, ‘পানি নিষ্কাশনে আমরা একটি প্রকল্পের জন্য আবেদন করেছি। সেটি কৃষি মন্ত্রণালয়ে রয়েছে। পাস হলে কৃষকদের কষ্ট থাকবে না।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত