Ajker Patrika

পর্যটকের সঙ্গে বাড়ে ভাড়াও

মাইনউদ্দিন শাহেদ, কক্সবাজার
Thumbnail image

দুর্গাপূজা, ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) ও প্রবারণা পূর্ণিমা উপলক্ষে টানা ছুটিতে কক্সবাজারে এখন ভরপুর পর্যটক। আজ রোববার পর্যন্ত কোনো হোটেল ও রিসোর্টে কক্ষ খালি নেই। কক্সবাজার শহর ও মেরিন ড্রাইভ সড়কে ৫০০টির মতো হোটেল-মোটেল, রিসোর্ট ও কটেজে ১ লাখ ৭০ হাজার পর্যটকের রাতযাপনের সুযোগ রয়েছে।

সেখানে গত শুক্রবারই লক্ষাধিক পর্যটক কক্সবাজারে অবস্থান করছেন বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। এ পরিস্থিতি গতকাল শনিবার এবং আজও থাকবে।

মৌসুমের শুরুতে এমন পর্যটকের সমাগমে বিভিন্ন হোটেল, রিসোর্ট ও কটেজে পর্যটকদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। এ ছাড়া খাবার, শপিং ও পরিবহনেও বেশি অর্থ হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে। অনেক পর্যটক অতিরিক্ত টাকা নেওয়ার প্রতিবাদ করায় দুর্ব্যবহারের শিকারও হয়েছেন। এসব ঘটনায় কয়েকটি হোটেলকে জরিমানা করেছে প্রশাসন।

জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার কক্সবাজার-সেন্ট মার্টিন রুটে পর্যটকদের যাতায়াতে জাহাজ চলাচল শুরু হয়েছে। কর্ণফুলী এক্সপ্রেসের এই জাহাজ এ বছর ভাড়া বাড়িয়েছে। গত বছর এ রুটে সর্বনিম্ন ভাড়া ছিল ২ হাজার ২০০ টাকা, এ বছর তা বাড়িয়ে ৩ হাজার ২০০ টাকা করা হয়েছে।

কক্সবাজারে হোটেল অভিসার, কক্স হিলটন, সি কক্সসহ বেশ কিছু হোটেল, রিসোর্ট ও কটেজের বিরুদ্ধে অতিরিক্ত কক্ষ ভাড়া আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। শহরের পর্যটন জোনের লাবণী পয়েন্ট এলাকায় পর্যটকদের কাছ থেকে অতিরিক্ত কক্ষ ভাড়া নেওয়ার অভিযোগে গত শুক্রবার রাতে হোটেল অভিসারকে ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

শুক্রবার দুপুরে শহরের সুগন্ধা পয়েন্টের ড্রাগন মার্কেটের এক আচারের দোকানির বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসনের তথ্যকেন্দ্রে পর্যটকের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের অভিযোগ করা হয়। সঙ্গে সঙ্গে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট অভিযান চালিয়ে দোকানিকে সতর্ক করেন। এর আগের দিন একই পয়েন্টে তিন ঘোড়ার মালিককে বাড়তি টাকা নেওয়া ও পর্যটকের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের অভিযোগে ৪ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। একই দিন এক ফটোগ্রাফারের সঙ্গে ছবি তোলা নিয়ে পর্যটকের ঝগড়া হয় বলে জানা গেছে।

হোটেল-মোটেল জোন ঘুরে জানা গেছে, তারকা মানের হোটেল ছাড়া অন্যান্য হোটেল, রিসোর্ট ও কটেজে ইচ্ছেমতো কক্ষ ভাড়া নেওয়া হচ্ছে। বেশির ভাগ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে মূল্যতালিকা টাঙানো নেই। কোনো কোনো হোটেল, রেস্তোরাঁ ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে দুই ধরনের মূল্যতালিকা রয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

কলাতলী এলাকার মাঝারি মানের হোটেল কক্স হিলটনের দুই পর্যটক অভিযোগ করেন, তাঁদের কাছ থেকে প্রতি কক্ষ ৪ হাজার টাকা ভাড়া নেওয়া হয়েছে। অথচ এই হোটেলের কক্ষ সর্বোচ্চ ২ হাজার ৫০০ টাকা বলে জানা গেছে।

নোয়াখালীর হাতিয়া থেকে আসা জিয়া উদ্দিন কলাতলীর সি কক্স হোটেলে উঠেছেন। তিনি বলেন, হোটেল ভাড়ার পাশাপাশি খাওয়াদাওয়ায়ও বাড়তি টাকা নেওয়া হচ্ছে।

গত বৃহস্পতিবার জেলা প্রশাসনের পর্যটন সেলে হোটেল অভিসারের বিরুদ্ধে অভিযোগ দেন এক পর্যটক। তিনি অভিযোগ করেন, হোটেল কর্তৃপক্ষ তাঁকে এক দিনের জন্য কক্ষ ভাড়া দেননি। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত একটি কক্ষের ভাড়া চাওয়া হয়েছে ৮ হাজার টাকা। অভিযোগ অস্বীকার করে হোটেল কক্স হিলটনের পরিচালক আইয়ুবুর রহমান বলেন, ‘আমরা পর্যটন মেলা ও বিচ কার্নিভ্যাল উপলক্ষে ৫০ শতাংশ ছাড় দিয়েছিলাম। হয়তো কোনো পর্যটক ওই চিন্তা থেকে অভিযোগ করছেন।’

ট্যুর অপারেটর ট্রিপ জোনের মালিক জিকু পাল বলেন, এখনো ৩০ শতাংশ পর্যটক অনলাইনে বুকিং সেবা নিয়ে থাকেন। বাকি পর্যটক কক্সবাজার পৌঁছে দালাল ও মধ্যস্বত্বভোগীদের হাতে প্রতারিত হচ্ছেন।

হোটেল মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার বলেন, তারকা মান ও মাঝারি হোটেলগুলোতে বেশির ভাগ কক্ষ ভাড়া হয়েছে। কেউ যাতে অতিরিক্ত ভাড়া না নেন, তার নির্দেশনা দেওয়া আছে। তাঁরা প্রতিনিয়ত তদারক করছেন। দালাল চক্রের সঙ্গে কিছু হোটেল ব্যবস্থাপকের যোগসাজশ রয়েছে। এর ফলে পর্যটকদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা হাতিয়ে নিয়ে তাঁদের কমিশন দেওয়া হয়।

জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট (পর্যটন সেল) মাসুম বিল্লাহ বলেন, কয়েকটি হোটেলে অতিরিক্ত কক্ষ ভাড়া আদায়ের অভিযোগ পেয়েছেন। তা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যে অভিযোগ পেয়ে কয়েকটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে অভিযান চালানো হয়েছে। একটি হোটেলকে ৩০ হাজার টাকা জরিমানাও করা হয়েছে।

ট্যুরিস্ট পুলিশের কক্সবাজার অঞ্চলের সহকারী পুলিশ সুপার চৌধুরী মিজানুজ্জামান বলেন, পর্যটকদের হয়রানির অভিযোগ পেলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া সার্বিক নিরাপত্তা ও সেবায় অতিরিক্ত টহলও বাড়ানো হয়েছে। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত