রাসেল মাহমুদ, মাদারীপুর থেকে ফিরে

মাদারীপুর সদর উপজেলার একটি গ্রাম হাসানকান্দি। গ্রামটির একটি মোড়ের নাম ‘ইতালি মোড়’। মুখে মুখে এই নামকরণের কারণ, গ্রামের প্রায় সাড়ে তিন হাজার মানুষ ইতালিপ্রবাসী। মাদারীপুরের আরও কয়েকটি গ্রামে আছে ইতালিপ্রবাসীদের ছড়াছড়ি। তবে এঁদের সিংহভাগই গেছেন ঝুঁকিপূর্ণ অবৈধ পথে।
অবৈধভাবে গেলেও তাঁদের ওপর ভর করে বদলে গেছে অধিকাংশের পারিবারিক অবস্থা। ইতালিপ্রবাসী ও তাঁদের পরিবারের এই ভাগ্যবদল দেশটিতে যেতে আগ্রহী করেছে মাদারীপুরসহ আশপাশের জেলাগুলোর যুবকসহ বিভিন্ন বয়সীদের। এই স্বপ্নকেই পুঁজি করে জেলাগুলোতে গড়ে উঠেছে ভয়ংকর মানব পাচারকারী চক্র। লিবিয়া থেকে শুরু করে জেলার গ্রাম পর্যন্ত এই চক্রের বিস্তার। জনপ্রতিনিধিরাও আছেন এই চক্রে।
মানব পাচারকারী চক্রের ফাঁদে পড়ে অবৈধভাবে ইতালি পাড়ি জমাতে গিয়ে প্রাণও হারাচ্ছেন অনেকে। সর্বশেষ লিবিয়া হয়ে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দেওয়ার সময় নৌকায় আগুন লেগে নিহত ৯ জনের ৫ জনই মাদারীপুরের। বাকি চারজনের তিনজন গোপালগঞ্জের, অন্যজন পাকিস্তানি। বিভিন্ন সময়ে সাগরে ডুবে মৃত্যুর ঘটনাও অনেক। এ ছাড়া লিবিয়ায় গেম ঘরে (ভূমধ্যসাগর পাড়ি দেওয়ার আগে অভিবাসীদের রাখার স্থান) নির্যাতন করে জনপ্রতি কয়েক লাখ টাকা আদায়, টাকা না দিলে হত্যার ঘটনাও ঘটছে। দালালদের বিরুদ্ধে অনেকে মুখ খুললেও ভয়ে অনেকে নীরবও থাকেন।
ভুক্তভোগী ও তাঁদের স্বজনেরা জানান, লিবিয়ায় নিতে দালালেরা ৬ থেকে ৮ লাখ টাকা এবং ইতালি নিতে ১২ থেকে ১৪ লাখ টাকায় রফা করে। তবে ‘গেম’ করানো ও হাতবদল করে কারও কারও ক্ষেত্রে ৩০ থেকে ৫০ লাখ টাকাও আদায় করে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে টাকা লেনদেনের কোনো প্রমাণ রাখে না দালালেরা।
মাদারীপুর জেলা পুলিশের সূত্রে জানা যায়, ২০১৩ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত জেলায় ৩২৯টি মানব পাচারের মামলা হয়েছে। এসব মামলায় আসামি ১ হাজার ৪৬৬ জন। গ্রেপ্তার হয়েছে ২৮৭ জন। এসব মামলার মধ্যে তদন্ত শেষে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে ৯৬টির, চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে ৮৭টির, তদন্তাধীন ১০৯টি মামলা। যেসব মামলার বিচার হয়েছে, এর কোনোটিতেই কারও সাজা হয়নি। খালাস পেয়েছেন ১১১ জন। বিচারাধীন রয়েছে ৬৯টি মামলা।
মাদারীপুর সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোহাম্মদ মনির হোসেন বলেন, ঝুঁকি জেনেও অনেকে যাচ্ছেন। পরিচিতদের মাধ্যমে প্রথমে টাকা লেনদেন হয়। পরে লেনদেন হয় দালালের সঙ্গে। সমস্যা হলে তখন অনেকে মামলা করেন।
মামলার এজাহার, ভুক্তভোগীদের স্বজনদের তথ্যমতে, মাদারীপুর ও গোপালগঞ্জেই অর্ধশত দালাল রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার সুন্দরদী গ্রামের মোশারফ কাজী, যুবরাজ কাজী, রাঘদি ইউনিয়নের বড়দিয়া গ্রামের ইলিয়াস, সাথী, মাদারীপুর সদর উপজেলার সুচিয়ার ভাঙ্গা গ্রামের আজাদ বেপারী, নয়াচর গ্রামের এমদাদ বেপারী, বড়াইলবাড়ী গ্রামের রুবেল খাঁ; রাজৈর পৌরসভার গোবিন্দপুর গ্রামের মিরাজ বেপারী, খালিয়া ইউনিয়নের স্বরমঙ্গল গ্রামের ওসমান গণি, শিবচর উপজেলার দত্তপাড়ার শহিদুল মাতুব্বর ও সিরাজ মাতুব্বর।
মানব পাচারের মামলার বিষয়ে জানতে মাদারীপুরের পুলিশ সুপার মো. মাসুদ আলমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, পুলিশ সপ্তাহের কর্মসূচি নিয়ে তিনি ঢাকায় ব্যস্ত আছেন।
মাদারীপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মারুফুর রশিদ খান আজকের পত্রিকাকে বলেন, অবৈধ পথে কেউ যেন না যান, সে জন্য সচেতনতামূলক কাজ করা হচ্ছে। দক্ষ শ্রমিক তৈরির জন্য প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।
দালাল চক্র লিবিয়ায়, দেশে
হাসানকান্দি গ্রামের মতিউর রহমান বলেন, এই গ্রাম থেকে প্রথম ইতালি যান আতিয়ার মাতুব্বর ১৯৯০ সালের দিকে। তিনি গিয়েছিলেন আলমগীর ও জলিল দালালের মাধ্যমে রাশিয়া হয়ে। পরে গ্রামের বহু লোক ইতালি যান। ২০০০ সালের দিকে বাসচালকের সহকারীরা গ্রামের একটি জায়গাকে ‘ইতালি মোড়’ বলা শুরু করেন। ধীরে ধীরে সেটি ইতালি মোড় হিসেবে পরিচিত হয়ে ওঠে।
মাদারীপুরে ভুক্তভোগী ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত সাত-আট বছরে মাদারীপুর থেকে লিবিয়া হয়ে ইতালিতে সবচেয়ে বেশি লোক গেছেন সদর উপজেলার শিড়খাড়া ইউনিয়নের পশ্চিম মাঠ গ্রামের সুমির মাধ্যমে। বড় ভাইকে ইতালি পাঠাতে গিয়ে লিবিয়ায় বাংলাদেশি দালাল শরীফের সঙ্গে পরিচয় হয় সুমির। পরে দুজনের বিয়ে হয়। এরপর শরীফের মাধ্যমে তিনি অবৈধভাবে ইতালিতে লোক পাঠানো শুরু করেন। লিবিয়ায় যে কজন দালাল গেমে লোক পাঠান, তাঁদের একজন শরীফ। তবে শরীফের বিস্তারিত পরিচয় জানেন না কেউ। এই চক্রে লিবিয়ার নাগরিক হাইতাম ও ইসাম জড়িত। লিবিয়ায় রাজৈরের গোবিন্দপুরের মিরাজ বেপারী, মুকসুদপুরের রাঘদি ইউনিয়নের ইলিয়াসসহ কয়েকজন দালাল রয়েছেন। তাঁরা স্থানীয় দালালসহ ইউপি সদস্য ও কাউন্সিলরের মাধ্যমেও টাকা লেনদেন করেন।
পশ্চিম মাঠ গ্রামের ইসমত আরা বলেন, সুমিকে ১০ লাখ টাকা দিয়ে তাঁর ছেলে ইব্রাহিম খলিলউল্লাহকে দুই বছর আগে গেমে পাঠান। দুই মাস আগে ছেলে ইতালি পৌঁছায়।
শিড়খাড়া ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য আলী কাজী বলেন, ‘লিবিয়ায় বিপদে পড়া লোকজনের কাছে জেনেছি, সুমি দালাল।’
গ্রামবাসী জানান, সুমিদের আগে একটি ছোট টিনের ঘর ছিল, এখন সেখানে দালান তৈরি হচ্ছে। তাঁর বাবা শাখাওয়াত মাতুব্বর বছরখানেক আগে মারা গেছেন।
বক্তব্য জানতে ২৩ ফেব্রুয়ারি সুমির বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, ভবনের দোতলার ছাদ ঢালাই শেষ হয়েছে। বাড়িতে পরিবারের কাউকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। সুমি কোথায় আছেন বা নির্মাণকাজের তদারকি কে করছেন, গ্রামের কেউ তা বলতে পারলেন না। গ্রামের আরব আলী মাতুব্বর বললেন, সুমিদের বাড়িতে এখন কেউ থাকে না।
দালাল চক্রের ফাঁদে পড়ে ইতালি যেতে তিনবারের গেমে ১৬ লাখ টাকা খুইয়েছেন পশ্চিম স্বরমঙ্গল গ্রামের মো. রাকিবুল শিকদার। তিনি জানান, মাঝিকান্দির ইতালিপ্রবাসী ওহিদুলের মাধ্যমে তিনি দুবাই হয়ে লিবিয়া গিয়েছিলেন। গেম ঘরে নিতে দালাল মিরাজের কথায় রাজৈর পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মিজানের কাছে তাঁর পরিবার ১ লাখ টাকা দিয়েছিল। গেমে দেওয়ার পর লিবিয়ার কোস্ট গার্ড আটক করে কারাগারে পাঠায়। সেখান থেকে তাঁকে ছাড়ানো হয়।
তবে ওয়ার্ড কাউন্সিলর মিজানুর রহমান মিজান বলেন, গেম ঘরে নিতে নয়, লিবিয়ায় কারাগারে আটক রাকিবসহ কয়েকজনকে ছাড়াতে দালালকে টাকা দেওয়ার ব্যাপারে মধ্যস্থতা করেছিলেন।
রাজৈরের বৌলগ্রামের আব্দুল জব্বারের কাহিনি আরও ভয়াবহ। তিনি বললেন, তাঁকে ইতালি পাঠাতে তাঁর পরিবার গোপালগঞ্জের ইলিয়াসের স্ত্রী সাথীর কাছে ৮ লাখ টাকা দিয়েছিল। তাঁকে লিবিয়া নিয়ে গেম ঘর আর বিক্রি করে একাধিকবার টাকা নেওয়া হয়। এর মধ্যে ৫ লাখ টাকা দেওয়া হয় সাথীর ভগ্নিপতি রাজৈরের খালিয়ার ১ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আরিফ শেখকে। ইলিয়াসের মাধ্যমে ইতালি যেতে ১২ লাখ টাকায় রফা হলেও ৫০ লাখ টাকা খরচ করেও চার বছর পর লিবিয়া থেকে দেশে ফিরতে হয়েছে। মামলা করেছেন। আসামিরা এখন ভয় দেখান।
তবে ইউপি সদস্য আরিফ শেখ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমি ইলিয়াস দালাল নামে কাউকে চিনি না। টাকা দেওয়ার বিষয়েও কিছু জানি না।’
ইতালিপ্রবাসী কয়েকজন জানান, মানব পাচারকারীরা ইতালিতে শুরুতে অবৈধভাবে লোক নিত রাশিয়া-জার্মানি হয়ে। পরে পথ বদলে নেয় ইরান, তুরস্ক, গ্রিস হয়ে। গত এক দশকে দুবাই, সিরিয়া, মিসর, লিবিয়া ও তিউনিসিয়া হয়ে অবৈধভাবে ইতালিতে নিচ্ছে পাচারকারীরা।
ইতালিফেরত রেজাউল বেপারী বলেন, ২০০২ সালে বিভিন্ন দালাল ধরে পাকিস্তান-ইরান-তুরস্ক-গ্রিস হয়ে তিনি ইতালি যান। তাঁর ছোট ভাইও গেছেন একইভাবে।
মাদারীপুরের ইতালিপ্রবাসী-অধ্যুষিত এলাকাগুলোর কিশোররাও এখন স্বপ্ন দেখে গেমে ইতালি যাওয়ার। তাদের একজন হাসানকান্দি গ্রামের ১৭ বছরের ফয়সাল শরীফ। দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছে। বাবা মসজিদের ইমাম। নিজেদের আর্থিক অবস্থা তেমন ভালো না হলেও ইতালিপ্রবাসী চাচার কাছ থেকে টাকা ধার নিয়ে গেমে যাওয়ার ইচ্ছা জানাল আজকের পত্রিকাকে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও অভিবাসন বিশেষজ্ঞ ড. তাসনিম সিদ্দিকী বলেন, মানব পাচার দমন করতে চাইলে জঙ্গি দমনের মতো জিরো টলারেন্স দেখাতে হবে। সচেতনতা তৈরি করতে হবে, যাতে কেউ অবৈধভাবে না যায়। তিনি বলেন, ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে দায়ীদের নাম নিয়ে তাঁদের ধরে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিলে মানব পাচার প্রতিরোধ কমানো সম্ভব।
প্রতিবেদন তৈরিতে সাহায্য করেছেন মাদারীপুর প্রতিনিধি আয়শা সিদ্দিকা আকাশী

মাদারীপুর সদর উপজেলার একটি গ্রাম হাসানকান্দি। গ্রামটির একটি মোড়ের নাম ‘ইতালি মোড়’। মুখে মুখে এই নামকরণের কারণ, গ্রামের প্রায় সাড়ে তিন হাজার মানুষ ইতালিপ্রবাসী। মাদারীপুরের আরও কয়েকটি গ্রামে আছে ইতালিপ্রবাসীদের ছড়াছড়ি। তবে এঁদের সিংহভাগই গেছেন ঝুঁকিপূর্ণ অবৈধ পথে।
অবৈধভাবে গেলেও তাঁদের ওপর ভর করে বদলে গেছে অধিকাংশের পারিবারিক অবস্থা। ইতালিপ্রবাসী ও তাঁদের পরিবারের এই ভাগ্যবদল দেশটিতে যেতে আগ্রহী করেছে মাদারীপুরসহ আশপাশের জেলাগুলোর যুবকসহ বিভিন্ন বয়সীদের। এই স্বপ্নকেই পুঁজি করে জেলাগুলোতে গড়ে উঠেছে ভয়ংকর মানব পাচারকারী চক্র। লিবিয়া থেকে শুরু করে জেলার গ্রাম পর্যন্ত এই চক্রের বিস্তার। জনপ্রতিনিধিরাও আছেন এই চক্রে।
মানব পাচারকারী চক্রের ফাঁদে পড়ে অবৈধভাবে ইতালি পাড়ি জমাতে গিয়ে প্রাণও হারাচ্ছেন অনেকে। সর্বশেষ লিবিয়া হয়ে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দেওয়ার সময় নৌকায় আগুন লেগে নিহত ৯ জনের ৫ জনই মাদারীপুরের। বাকি চারজনের তিনজন গোপালগঞ্জের, অন্যজন পাকিস্তানি। বিভিন্ন সময়ে সাগরে ডুবে মৃত্যুর ঘটনাও অনেক। এ ছাড়া লিবিয়ায় গেম ঘরে (ভূমধ্যসাগর পাড়ি দেওয়ার আগে অভিবাসীদের রাখার স্থান) নির্যাতন করে জনপ্রতি কয়েক লাখ টাকা আদায়, টাকা না দিলে হত্যার ঘটনাও ঘটছে। দালালদের বিরুদ্ধে অনেকে মুখ খুললেও ভয়ে অনেকে নীরবও থাকেন।
ভুক্তভোগী ও তাঁদের স্বজনেরা জানান, লিবিয়ায় নিতে দালালেরা ৬ থেকে ৮ লাখ টাকা এবং ইতালি নিতে ১২ থেকে ১৪ লাখ টাকায় রফা করে। তবে ‘গেম’ করানো ও হাতবদল করে কারও কারও ক্ষেত্রে ৩০ থেকে ৫০ লাখ টাকাও আদায় করে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে টাকা লেনদেনের কোনো প্রমাণ রাখে না দালালেরা।
মাদারীপুর জেলা পুলিশের সূত্রে জানা যায়, ২০১৩ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত জেলায় ৩২৯টি মানব পাচারের মামলা হয়েছে। এসব মামলায় আসামি ১ হাজার ৪৬৬ জন। গ্রেপ্তার হয়েছে ২৮৭ জন। এসব মামলার মধ্যে তদন্ত শেষে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে ৯৬টির, চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে ৮৭টির, তদন্তাধীন ১০৯টি মামলা। যেসব মামলার বিচার হয়েছে, এর কোনোটিতেই কারও সাজা হয়নি। খালাস পেয়েছেন ১১১ জন। বিচারাধীন রয়েছে ৬৯টি মামলা।
মাদারীপুর সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোহাম্মদ মনির হোসেন বলেন, ঝুঁকি জেনেও অনেকে যাচ্ছেন। পরিচিতদের মাধ্যমে প্রথমে টাকা লেনদেন হয়। পরে লেনদেন হয় দালালের সঙ্গে। সমস্যা হলে তখন অনেকে মামলা করেন।
মামলার এজাহার, ভুক্তভোগীদের স্বজনদের তথ্যমতে, মাদারীপুর ও গোপালগঞ্জেই অর্ধশত দালাল রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার সুন্দরদী গ্রামের মোশারফ কাজী, যুবরাজ কাজী, রাঘদি ইউনিয়নের বড়দিয়া গ্রামের ইলিয়াস, সাথী, মাদারীপুর সদর উপজেলার সুচিয়ার ভাঙ্গা গ্রামের আজাদ বেপারী, নয়াচর গ্রামের এমদাদ বেপারী, বড়াইলবাড়ী গ্রামের রুবেল খাঁ; রাজৈর পৌরসভার গোবিন্দপুর গ্রামের মিরাজ বেপারী, খালিয়া ইউনিয়নের স্বরমঙ্গল গ্রামের ওসমান গণি, শিবচর উপজেলার দত্তপাড়ার শহিদুল মাতুব্বর ও সিরাজ মাতুব্বর।
মানব পাচারের মামলার বিষয়ে জানতে মাদারীপুরের পুলিশ সুপার মো. মাসুদ আলমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, পুলিশ সপ্তাহের কর্মসূচি নিয়ে তিনি ঢাকায় ব্যস্ত আছেন।
মাদারীপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মারুফুর রশিদ খান আজকের পত্রিকাকে বলেন, অবৈধ পথে কেউ যেন না যান, সে জন্য সচেতনতামূলক কাজ করা হচ্ছে। দক্ষ শ্রমিক তৈরির জন্য প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।
দালাল চক্র লিবিয়ায়, দেশে
হাসানকান্দি গ্রামের মতিউর রহমান বলেন, এই গ্রাম থেকে প্রথম ইতালি যান আতিয়ার মাতুব্বর ১৯৯০ সালের দিকে। তিনি গিয়েছিলেন আলমগীর ও জলিল দালালের মাধ্যমে রাশিয়া হয়ে। পরে গ্রামের বহু লোক ইতালি যান। ২০০০ সালের দিকে বাসচালকের সহকারীরা গ্রামের একটি জায়গাকে ‘ইতালি মোড়’ বলা শুরু করেন। ধীরে ধীরে সেটি ইতালি মোড় হিসেবে পরিচিত হয়ে ওঠে।
মাদারীপুরে ভুক্তভোগী ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত সাত-আট বছরে মাদারীপুর থেকে লিবিয়া হয়ে ইতালিতে সবচেয়ে বেশি লোক গেছেন সদর উপজেলার শিড়খাড়া ইউনিয়নের পশ্চিম মাঠ গ্রামের সুমির মাধ্যমে। বড় ভাইকে ইতালি পাঠাতে গিয়ে লিবিয়ায় বাংলাদেশি দালাল শরীফের সঙ্গে পরিচয় হয় সুমির। পরে দুজনের বিয়ে হয়। এরপর শরীফের মাধ্যমে তিনি অবৈধভাবে ইতালিতে লোক পাঠানো শুরু করেন। লিবিয়ায় যে কজন দালাল গেমে লোক পাঠান, তাঁদের একজন শরীফ। তবে শরীফের বিস্তারিত পরিচয় জানেন না কেউ। এই চক্রে লিবিয়ার নাগরিক হাইতাম ও ইসাম জড়িত। লিবিয়ায় রাজৈরের গোবিন্দপুরের মিরাজ বেপারী, মুকসুদপুরের রাঘদি ইউনিয়নের ইলিয়াসসহ কয়েকজন দালাল রয়েছেন। তাঁরা স্থানীয় দালালসহ ইউপি সদস্য ও কাউন্সিলরের মাধ্যমেও টাকা লেনদেন করেন।
পশ্চিম মাঠ গ্রামের ইসমত আরা বলেন, সুমিকে ১০ লাখ টাকা দিয়ে তাঁর ছেলে ইব্রাহিম খলিলউল্লাহকে দুই বছর আগে গেমে পাঠান। দুই মাস আগে ছেলে ইতালি পৌঁছায়।
শিড়খাড়া ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য আলী কাজী বলেন, ‘লিবিয়ায় বিপদে পড়া লোকজনের কাছে জেনেছি, সুমি দালাল।’
গ্রামবাসী জানান, সুমিদের আগে একটি ছোট টিনের ঘর ছিল, এখন সেখানে দালান তৈরি হচ্ছে। তাঁর বাবা শাখাওয়াত মাতুব্বর বছরখানেক আগে মারা গেছেন।
বক্তব্য জানতে ২৩ ফেব্রুয়ারি সুমির বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, ভবনের দোতলার ছাদ ঢালাই শেষ হয়েছে। বাড়িতে পরিবারের কাউকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। সুমি কোথায় আছেন বা নির্মাণকাজের তদারকি কে করছেন, গ্রামের কেউ তা বলতে পারলেন না। গ্রামের আরব আলী মাতুব্বর বললেন, সুমিদের বাড়িতে এখন কেউ থাকে না।
দালাল চক্রের ফাঁদে পড়ে ইতালি যেতে তিনবারের গেমে ১৬ লাখ টাকা খুইয়েছেন পশ্চিম স্বরমঙ্গল গ্রামের মো. রাকিবুল শিকদার। তিনি জানান, মাঝিকান্দির ইতালিপ্রবাসী ওহিদুলের মাধ্যমে তিনি দুবাই হয়ে লিবিয়া গিয়েছিলেন। গেম ঘরে নিতে দালাল মিরাজের কথায় রাজৈর পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মিজানের কাছে তাঁর পরিবার ১ লাখ টাকা দিয়েছিল। গেমে দেওয়ার পর লিবিয়ার কোস্ট গার্ড আটক করে কারাগারে পাঠায়। সেখান থেকে তাঁকে ছাড়ানো হয়।
তবে ওয়ার্ড কাউন্সিলর মিজানুর রহমান মিজান বলেন, গেম ঘরে নিতে নয়, লিবিয়ায় কারাগারে আটক রাকিবসহ কয়েকজনকে ছাড়াতে দালালকে টাকা দেওয়ার ব্যাপারে মধ্যস্থতা করেছিলেন।
রাজৈরের বৌলগ্রামের আব্দুল জব্বারের কাহিনি আরও ভয়াবহ। তিনি বললেন, তাঁকে ইতালি পাঠাতে তাঁর পরিবার গোপালগঞ্জের ইলিয়াসের স্ত্রী সাথীর কাছে ৮ লাখ টাকা দিয়েছিল। তাঁকে লিবিয়া নিয়ে গেম ঘর আর বিক্রি করে একাধিকবার টাকা নেওয়া হয়। এর মধ্যে ৫ লাখ টাকা দেওয়া হয় সাথীর ভগ্নিপতি রাজৈরের খালিয়ার ১ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আরিফ শেখকে। ইলিয়াসের মাধ্যমে ইতালি যেতে ১২ লাখ টাকায় রফা হলেও ৫০ লাখ টাকা খরচ করেও চার বছর পর লিবিয়া থেকে দেশে ফিরতে হয়েছে। মামলা করেছেন। আসামিরা এখন ভয় দেখান।
তবে ইউপি সদস্য আরিফ শেখ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমি ইলিয়াস দালাল নামে কাউকে চিনি না। টাকা দেওয়ার বিষয়েও কিছু জানি না।’
ইতালিপ্রবাসী কয়েকজন জানান, মানব পাচারকারীরা ইতালিতে শুরুতে অবৈধভাবে লোক নিত রাশিয়া-জার্মানি হয়ে। পরে পথ বদলে নেয় ইরান, তুরস্ক, গ্রিস হয়ে। গত এক দশকে দুবাই, সিরিয়া, মিসর, লিবিয়া ও তিউনিসিয়া হয়ে অবৈধভাবে ইতালিতে নিচ্ছে পাচারকারীরা।
ইতালিফেরত রেজাউল বেপারী বলেন, ২০০২ সালে বিভিন্ন দালাল ধরে পাকিস্তান-ইরান-তুরস্ক-গ্রিস হয়ে তিনি ইতালি যান। তাঁর ছোট ভাইও গেছেন একইভাবে।
মাদারীপুরের ইতালিপ্রবাসী-অধ্যুষিত এলাকাগুলোর কিশোররাও এখন স্বপ্ন দেখে গেমে ইতালি যাওয়ার। তাদের একজন হাসানকান্দি গ্রামের ১৭ বছরের ফয়সাল শরীফ। দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছে। বাবা মসজিদের ইমাম। নিজেদের আর্থিক অবস্থা তেমন ভালো না হলেও ইতালিপ্রবাসী চাচার কাছ থেকে টাকা ধার নিয়ে গেমে যাওয়ার ইচ্ছা জানাল আজকের পত্রিকাকে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও অভিবাসন বিশেষজ্ঞ ড. তাসনিম সিদ্দিকী বলেন, মানব পাচার দমন করতে চাইলে জঙ্গি দমনের মতো জিরো টলারেন্স দেখাতে হবে। সচেতনতা তৈরি করতে হবে, যাতে কেউ অবৈধভাবে না যায়। তিনি বলেন, ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে দায়ীদের নাম নিয়ে তাঁদের ধরে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিলে মানব পাচার প্রতিরোধ কমানো সম্ভব।
প্রতিবেদন তৈরিতে সাহায্য করেছেন মাদারীপুর প্রতিনিধি আয়শা সিদ্দিকা আকাশী
রাসেল মাহমুদ, মাদারীপুর থেকে ফিরে

মাদারীপুর সদর উপজেলার একটি গ্রাম হাসানকান্দি। গ্রামটির একটি মোড়ের নাম ‘ইতালি মোড়’। মুখে মুখে এই নামকরণের কারণ, গ্রামের প্রায় সাড়ে তিন হাজার মানুষ ইতালিপ্রবাসী। মাদারীপুরের আরও কয়েকটি গ্রামে আছে ইতালিপ্রবাসীদের ছড়াছড়ি। তবে এঁদের সিংহভাগই গেছেন ঝুঁকিপূর্ণ অবৈধ পথে।
অবৈধভাবে গেলেও তাঁদের ওপর ভর করে বদলে গেছে অধিকাংশের পারিবারিক অবস্থা। ইতালিপ্রবাসী ও তাঁদের পরিবারের এই ভাগ্যবদল দেশটিতে যেতে আগ্রহী করেছে মাদারীপুরসহ আশপাশের জেলাগুলোর যুবকসহ বিভিন্ন বয়সীদের। এই স্বপ্নকেই পুঁজি করে জেলাগুলোতে গড়ে উঠেছে ভয়ংকর মানব পাচারকারী চক্র। লিবিয়া থেকে শুরু করে জেলার গ্রাম পর্যন্ত এই চক্রের বিস্তার। জনপ্রতিনিধিরাও আছেন এই চক্রে।
মানব পাচারকারী চক্রের ফাঁদে পড়ে অবৈধভাবে ইতালি পাড়ি জমাতে গিয়ে প্রাণও হারাচ্ছেন অনেকে। সর্বশেষ লিবিয়া হয়ে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দেওয়ার সময় নৌকায় আগুন লেগে নিহত ৯ জনের ৫ জনই মাদারীপুরের। বাকি চারজনের তিনজন গোপালগঞ্জের, অন্যজন পাকিস্তানি। বিভিন্ন সময়ে সাগরে ডুবে মৃত্যুর ঘটনাও অনেক। এ ছাড়া লিবিয়ায় গেম ঘরে (ভূমধ্যসাগর পাড়ি দেওয়ার আগে অভিবাসীদের রাখার স্থান) নির্যাতন করে জনপ্রতি কয়েক লাখ টাকা আদায়, টাকা না দিলে হত্যার ঘটনাও ঘটছে। দালালদের বিরুদ্ধে অনেকে মুখ খুললেও ভয়ে অনেকে নীরবও থাকেন।
ভুক্তভোগী ও তাঁদের স্বজনেরা জানান, লিবিয়ায় নিতে দালালেরা ৬ থেকে ৮ লাখ টাকা এবং ইতালি নিতে ১২ থেকে ১৪ লাখ টাকায় রফা করে। তবে ‘গেম’ করানো ও হাতবদল করে কারও কারও ক্ষেত্রে ৩০ থেকে ৫০ লাখ টাকাও আদায় করে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে টাকা লেনদেনের কোনো প্রমাণ রাখে না দালালেরা।
মাদারীপুর জেলা পুলিশের সূত্রে জানা যায়, ২০১৩ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত জেলায় ৩২৯টি মানব পাচারের মামলা হয়েছে। এসব মামলায় আসামি ১ হাজার ৪৬৬ জন। গ্রেপ্তার হয়েছে ২৮৭ জন। এসব মামলার মধ্যে তদন্ত শেষে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে ৯৬টির, চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে ৮৭টির, তদন্তাধীন ১০৯টি মামলা। যেসব মামলার বিচার হয়েছে, এর কোনোটিতেই কারও সাজা হয়নি। খালাস পেয়েছেন ১১১ জন। বিচারাধীন রয়েছে ৬৯টি মামলা।
মাদারীপুর সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোহাম্মদ মনির হোসেন বলেন, ঝুঁকি জেনেও অনেকে যাচ্ছেন। পরিচিতদের মাধ্যমে প্রথমে টাকা লেনদেন হয়। পরে লেনদেন হয় দালালের সঙ্গে। সমস্যা হলে তখন অনেকে মামলা করেন।
মামলার এজাহার, ভুক্তভোগীদের স্বজনদের তথ্যমতে, মাদারীপুর ও গোপালগঞ্জেই অর্ধশত দালাল রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার সুন্দরদী গ্রামের মোশারফ কাজী, যুবরাজ কাজী, রাঘদি ইউনিয়নের বড়দিয়া গ্রামের ইলিয়াস, সাথী, মাদারীপুর সদর উপজেলার সুচিয়ার ভাঙ্গা গ্রামের আজাদ বেপারী, নয়াচর গ্রামের এমদাদ বেপারী, বড়াইলবাড়ী গ্রামের রুবেল খাঁ; রাজৈর পৌরসভার গোবিন্দপুর গ্রামের মিরাজ বেপারী, খালিয়া ইউনিয়নের স্বরমঙ্গল গ্রামের ওসমান গণি, শিবচর উপজেলার দত্তপাড়ার শহিদুল মাতুব্বর ও সিরাজ মাতুব্বর।
মানব পাচারের মামলার বিষয়ে জানতে মাদারীপুরের পুলিশ সুপার মো. মাসুদ আলমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, পুলিশ সপ্তাহের কর্মসূচি নিয়ে তিনি ঢাকায় ব্যস্ত আছেন।
মাদারীপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মারুফুর রশিদ খান আজকের পত্রিকাকে বলেন, অবৈধ পথে কেউ যেন না যান, সে জন্য সচেতনতামূলক কাজ করা হচ্ছে। দক্ষ শ্রমিক তৈরির জন্য প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।
দালাল চক্র লিবিয়ায়, দেশে
হাসানকান্দি গ্রামের মতিউর রহমান বলেন, এই গ্রাম থেকে প্রথম ইতালি যান আতিয়ার মাতুব্বর ১৯৯০ সালের দিকে। তিনি গিয়েছিলেন আলমগীর ও জলিল দালালের মাধ্যমে রাশিয়া হয়ে। পরে গ্রামের বহু লোক ইতালি যান। ২০০০ সালের দিকে বাসচালকের সহকারীরা গ্রামের একটি জায়গাকে ‘ইতালি মোড়’ বলা শুরু করেন। ধীরে ধীরে সেটি ইতালি মোড় হিসেবে পরিচিত হয়ে ওঠে।
মাদারীপুরে ভুক্তভোগী ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত সাত-আট বছরে মাদারীপুর থেকে লিবিয়া হয়ে ইতালিতে সবচেয়ে বেশি লোক গেছেন সদর উপজেলার শিড়খাড়া ইউনিয়নের পশ্চিম মাঠ গ্রামের সুমির মাধ্যমে। বড় ভাইকে ইতালি পাঠাতে গিয়ে লিবিয়ায় বাংলাদেশি দালাল শরীফের সঙ্গে পরিচয় হয় সুমির। পরে দুজনের বিয়ে হয়। এরপর শরীফের মাধ্যমে তিনি অবৈধভাবে ইতালিতে লোক পাঠানো শুরু করেন। লিবিয়ায় যে কজন দালাল গেমে লোক পাঠান, তাঁদের একজন শরীফ। তবে শরীফের বিস্তারিত পরিচয় জানেন না কেউ। এই চক্রে লিবিয়ার নাগরিক হাইতাম ও ইসাম জড়িত। লিবিয়ায় রাজৈরের গোবিন্দপুরের মিরাজ বেপারী, মুকসুদপুরের রাঘদি ইউনিয়নের ইলিয়াসসহ কয়েকজন দালাল রয়েছেন। তাঁরা স্থানীয় দালালসহ ইউপি সদস্য ও কাউন্সিলরের মাধ্যমেও টাকা লেনদেন করেন।
পশ্চিম মাঠ গ্রামের ইসমত আরা বলেন, সুমিকে ১০ লাখ টাকা দিয়ে তাঁর ছেলে ইব্রাহিম খলিলউল্লাহকে দুই বছর আগে গেমে পাঠান। দুই মাস আগে ছেলে ইতালি পৌঁছায়।
শিড়খাড়া ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য আলী কাজী বলেন, ‘লিবিয়ায় বিপদে পড়া লোকজনের কাছে জেনেছি, সুমি দালাল।’
গ্রামবাসী জানান, সুমিদের আগে একটি ছোট টিনের ঘর ছিল, এখন সেখানে দালান তৈরি হচ্ছে। তাঁর বাবা শাখাওয়াত মাতুব্বর বছরখানেক আগে মারা গেছেন।
বক্তব্য জানতে ২৩ ফেব্রুয়ারি সুমির বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, ভবনের দোতলার ছাদ ঢালাই শেষ হয়েছে। বাড়িতে পরিবারের কাউকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। সুমি কোথায় আছেন বা নির্মাণকাজের তদারকি কে করছেন, গ্রামের কেউ তা বলতে পারলেন না। গ্রামের আরব আলী মাতুব্বর বললেন, সুমিদের বাড়িতে এখন কেউ থাকে না।
দালাল চক্রের ফাঁদে পড়ে ইতালি যেতে তিনবারের গেমে ১৬ লাখ টাকা খুইয়েছেন পশ্চিম স্বরমঙ্গল গ্রামের মো. রাকিবুল শিকদার। তিনি জানান, মাঝিকান্দির ইতালিপ্রবাসী ওহিদুলের মাধ্যমে তিনি দুবাই হয়ে লিবিয়া গিয়েছিলেন। গেম ঘরে নিতে দালাল মিরাজের কথায় রাজৈর পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মিজানের কাছে তাঁর পরিবার ১ লাখ টাকা দিয়েছিল। গেমে দেওয়ার পর লিবিয়ার কোস্ট গার্ড আটক করে কারাগারে পাঠায়। সেখান থেকে তাঁকে ছাড়ানো হয়।
তবে ওয়ার্ড কাউন্সিলর মিজানুর রহমান মিজান বলেন, গেম ঘরে নিতে নয়, লিবিয়ায় কারাগারে আটক রাকিবসহ কয়েকজনকে ছাড়াতে দালালকে টাকা দেওয়ার ব্যাপারে মধ্যস্থতা করেছিলেন।
রাজৈরের বৌলগ্রামের আব্দুল জব্বারের কাহিনি আরও ভয়াবহ। তিনি বললেন, তাঁকে ইতালি পাঠাতে তাঁর পরিবার গোপালগঞ্জের ইলিয়াসের স্ত্রী সাথীর কাছে ৮ লাখ টাকা দিয়েছিল। তাঁকে লিবিয়া নিয়ে গেম ঘর আর বিক্রি করে একাধিকবার টাকা নেওয়া হয়। এর মধ্যে ৫ লাখ টাকা দেওয়া হয় সাথীর ভগ্নিপতি রাজৈরের খালিয়ার ১ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আরিফ শেখকে। ইলিয়াসের মাধ্যমে ইতালি যেতে ১২ লাখ টাকায় রফা হলেও ৫০ লাখ টাকা খরচ করেও চার বছর পর লিবিয়া থেকে দেশে ফিরতে হয়েছে। মামলা করেছেন। আসামিরা এখন ভয় দেখান।
তবে ইউপি সদস্য আরিফ শেখ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমি ইলিয়াস দালাল নামে কাউকে চিনি না। টাকা দেওয়ার বিষয়েও কিছু জানি না।’
ইতালিপ্রবাসী কয়েকজন জানান, মানব পাচারকারীরা ইতালিতে শুরুতে অবৈধভাবে লোক নিত রাশিয়া-জার্মানি হয়ে। পরে পথ বদলে নেয় ইরান, তুরস্ক, গ্রিস হয়ে। গত এক দশকে দুবাই, সিরিয়া, মিসর, লিবিয়া ও তিউনিসিয়া হয়ে অবৈধভাবে ইতালিতে নিচ্ছে পাচারকারীরা।
ইতালিফেরত রেজাউল বেপারী বলেন, ২০০২ সালে বিভিন্ন দালাল ধরে পাকিস্তান-ইরান-তুরস্ক-গ্রিস হয়ে তিনি ইতালি যান। তাঁর ছোট ভাইও গেছেন একইভাবে।
মাদারীপুরের ইতালিপ্রবাসী-অধ্যুষিত এলাকাগুলোর কিশোররাও এখন স্বপ্ন দেখে গেমে ইতালি যাওয়ার। তাদের একজন হাসানকান্দি গ্রামের ১৭ বছরের ফয়সাল শরীফ। দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছে। বাবা মসজিদের ইমাম। নিজেদের আর্থিক অবস্থা তেমন ভালো না হলেও ইতালিপ্রবাসী চাচার কাছ থেকে টাকা ধার নিয়ে গেমে যাওয়ার ইচ্ছা জানাল আজকের পত্রিকাকে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও অভিবাসন বিশেষজ্ঞ ড. তাসনিম সিদ্দিকী বলেন, মানব পাচার দমন করতে চাইলে জঙ্গি দমনের মতো জিরো টলারেন্স দেখাতে হবে। সচেতনতা তৈরি করতে হবে, যাতে কেউ অবৈধভাবে না যায়। তিনি বলেন, ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে দায়ীদের নাম নিয়ে তাঁদের ধরে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিলে মানব পাচার প্রতিরোধ কমানো সম্ভব।
প্রতিবেদন তৈরিতে সাহায্য করেছেন মাদারীপুর প্রতিনিধি আয়শা সিদ্দিকা আকাশী

মাদারীপুর সদর উপজেলার একটি গ্রাম হাসানকান্দি। গ্রামটির একটি মোড়ের নাম ‘ইতালি মোড়’। মুখে মুখে এই নামকরণের কারণ, গ্রামের প্রায় সাড়ে তিন হাজার মানুষ ইতালিপ্রবাসী। মাদারীপুরের আরও কয়েকটি গ্রামে আছে ইতালিপ্রবাসীদের ছড়াছড়ি। তবে এঁদের সিংহভাগই গেছেন ঝুঁকিপূর্ণ অবৈধ পথে।
অবৈধভাবে গেলেও তাঁদের ওপর ভর করে বদলে গেছে অধিকাংশের পারিবারিক অবস্থা। ইতালিপ্রবাসী ও তাঁদের পরিবারের এই ভাগ্যবদল দেশটিতে যেতে আগ্রহী করেছে মাদারীপুরসহ আশপাশের জেলাগুলোর যুবকসহ বিভিন্ন বয়সীদের। এই স্বপ্নকেই পুঁজি করে জেলাগুলোতে গড়ে উঠেছে ভয়ংকর মানব পাচারকারী চক্র। লিবিয়া থেকে শুরু করে জেলার গ্রাম পর্যন্ত এই চক্রের বিস্তার। জনপ্রতিনিধিরাও আছেন এই চক্রে।
মানব পাচারকারী চক্রের ফাঁদে পড়ে অবৈধভাবে ইতালি পাড়ি জমাতে গিয়ে প্রাণও হারাচ্ছেন অনেকে। সর্বশেষ লিবিয়া হয়ে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দেওয়ার সময় নৌকায় আগুন লেগে নিহত ৯ জনের ৫ জনই মাদারীপুরের। বাকি চারজনের তিনজন গোপালগঞ্জের, অন্যজন পাকিস্তানি। বিভিন্ন সময়ে সাগরে ডুবে মৃত্যুর ঘটনাও অনেক। এ ছাড়া লিবিয়ায় গেম ঘরে (ভূমধ্যসাগর পাড়ি দেওয়ার আগে অভিবাসীদের রাখার স্থান) নির্যাতন করে জনপ্রতি কয়েক লাখ টাকা আদায়, টাকা না দিলে হত্যার ঘটনাও ঘটছে। দালালদের বিরুদ্ধে অনেকে মুখ খুললেও ভয়ে অনেকে নীরবও থাকেন।
ভুক্তভোগী ও তাঁদের স্বজনেরা জানান, লিবিয়ায় নিতে দালালেরা ৬ থেকে ৮ লাখ টাকা এবং ইতালি নিতে ১২ থেকে ১৪ লাখ টাকায় রফা করে। তবে ‘গেম’ করানো ও হাতবদল করে কারও কারও ক্ষেত্রে ৩০ থেকে ৫০ লাখ টাকাও আদায় করে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে টাকা লেনদেনের কোনো প্রমাণ রাখে না দালালেরা।
মাদারীপুর জেলা পুলিশের সূত্রে জানা যায়, ২০১৩ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত জেলায় ৩২৯টি মানব পাচারের মামলা হয়েছে। এসব মামলায় আসামি ১ হাজার ৪৬৬ জন। গ্রেপ্তার হয়েছে ২৮৭ জন। এসব মামলার মধ্যে তদন্ত শেষে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে ৯৬টির, চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে ৮৭টির, তদন্তাধীন ১০৯টি মামলা। যেসব মামলার বিচার হয়েছে, এর কোনোটিতেই কারও সাজা হয়নি। খালাস পেয়েছেন ১১১ জন। বিচারাধীন রয়েছে ৬৯টি মামলা।
মাদারীপুর সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোহাম্মদ মনির হোসেন বলেন, ঝুঁকি জেনেও অনেকে যাচ্ছেন। পরিচিতদের মাধ্যমে প্রথমে টাকা লেনদেন হয়। পরে লেনদেন হয় দালালের সঙ্গে। সমস্যা হলে তখন অনেকে মামলা করেন।
মামলার এজাহার, ভুক্তভোগীদের স্বজনদের তথ্যমতে, মাদারীপুর ও গোপালগঞ্জেই অর্ধশত দালাল রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার সুন্দরদী গ্রামের মোশারফ কাজী, যুবরাজ কাজী, রাঘদি ইউনিয়নের বড়দিয়া গ্রামের ইলিয়াস, সাথী, মাদারীপুর সদর উপজেলার সুচিয়ার ভাঙ্গা গ্রামের আজাদ বেপারী, নয়াচর গ্রামের এমদাদ বেপারী, বড়াইলবাড়ী গ্রামের রুবেল খাঁ; রাজৈর পৌরসভার গোবিন্দপুর গ্রামের মিরাজ বেপারী, খালিয়া ইউনিয়নের স্বরমঙ্গল গ্রামের ওসমান গণি, শিবচর উপজেলার দত্তপাড়ার শহিদুল মাতুব্বর ও সিরাজ মাতুব্বর।
মানব পাচারের মামলার বিষয়ে জানতে মাদারীপুরের পুলিশ সুপার মো. মাসুদ আলমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, পুলিশ সপ্তাহের কর্মসূচি নিয়ে তিনি ঢাকায় ব্যস্ত আছেন।
মাদারীপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মারুফুর রশিদ খান আজকের পত্রিকাকে বলেন, অবৈধ পথে কেউ যেন না যান, সে জন্য সচেতনতামূলক কাজ করা হচ্ছে। দক্ষ শ্রমিক তৈরির জন্য প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।
দালাল চক্র লিবিয়ায়, দেশে
হাসানকান্দি গ্রামের মতিউর রহমান বলেন, এই গ্রাম থেকে প্রথম ইতালি যান আতিয়ার মাতুব্বর ১৯৯০ সালের দিকে। তিনি গিয়েছিলেন আলমগীর ও জলিল দালালের মাধ্যমে রাশিয়া হয়ে। পরে গ্রামের বহু লোক ইতালি যান। ২০০০ সালের দিকে বাসচালকের সহকারীরা গ্রামের একটি জায়গাকে ‘ইতালি মোড়’ বলা শুরু করেন। ধীরে ধীরে সেটি ইতালি মোড় হিসেবে পরিচিত হয়ে ওঠে।
মাদারীপুরে ভুক্তভোগী ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত সাত-আট বছরে মাদারীপুর থেকে লিবিয়া হয়ে ইতালিতে সবচেয়ে বেশি লোক গেছেন সদর উপজেলার শিড়খাড়া ইউনিয়নের পশ্চিম মাঠ গ্রামের সুমির মাধ্যমে। বড় ভাইকে ইতালি পাঠাতে গিয়ে লিবিয়ায় বাংলাদেশি দালাল শরীফের সঙ্গে পরিচয় হয় সুমির। পরে দুজনের বিয়ে হয়। এরপর শরীফের মাধ্যমে তিনি অবৈধভাবে ইতালিতে লোক পাঠানো শুরু করেন। লিবিয়ায় যে কজন দালাল গেমে লোক পাঠান, তাঁদের একজন শরীফ। তবে শরীফের বিস্তারিত পরিচয় জানেন না কেউ। এই চক্রে লিবিয়ার নাগরিক হাইতাম ও ইসাম জড়িত। লিবিয়ায় রাজৈরের গোবিন্দপুরের মিরাজ বেপারী, মুকসুদপুরের রাঘদি ইউনিয়নের ইলিয়াসসহ কয়েকজন দালাল রয়েছেন। তাঁরা স্থানীয় দালালসহ ইউপি সদস্য ও কাউন্সিলরের মাধ্যমেও টাকা লেনদেন করেন।
পশ্চিম মাঠ গ্রামের ইসমত আরা বলেন, সুমিকে ১০ লাখ টাকা দিয়ে তাঁর ছেলে ইব্রাহিম খলিলউল্লাহকে দুই বছর আগে গেমে পাঠান। দুই মাস আগে ছেলে ইতালি পৌঁছায়।
শিড়খাড়া ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য আলী কাজী বলেন, ‘লিবিয়ায় বিপদে পড়া লোকজনের কাছে জেনেছি, সুমি দালাল।’
গ্রামবাসী জানান, সুমিদের আগে একটি ছোট টিনের ঘর ছিল, এখন সেখানে দালান তৈরি হচ্ছে। তাঁর বাবা শাখাওয়াত মাতুব্বর বছরখানেক আগে মারা গেছেন।
বক্তব্য জানতে ২৩ ফেব্রুয়ারি সুমির বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, ভবনের দোতলার ছাদ ঢালাই শেষ হয়েছে। বাড়িতে পরিবারের কাউকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। সুমি কোথায় আছেন বা নির্মাণকাজের তদারকি কে করছেন, গ্রামের কেউ তা বলতে পারলেন না। গ্রামের আরব আলী মাতুব্বর বললেন, সুমিদের বাড়িতে এখন কেউ থাকে না।
দালাল চক্রের ফাঁদে পড়ে ইতালি যেতে তিনবারের গেমে ১৬ লাখ টাকা খুইয়েছেন পশ্চিম স্বরমঙ্গল গ্রামের মো. রাকিবুল শিকদার। তিনি জানান, মাঝিকান্দির ইতালিপ্রবাসী ওহিদুলের মাধ্যমে তিনি দুবাই হয়ে লিবিয়া গিয়েছিলেন। গেম ঘরে নিতে দালাল মিরাজের কথায় রাজৈর পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মিজানের কাছে তাঁর পরিবার ১ লাখ টাকা দিয়েছিল। গেমে দেওয়ার পর লিবিয়ার কোস্ট গার্ড আটক করে কারাগারে পাঠায়। সেখান থেকে তাঁকে ছাড়ানো হয়।
তবে ওয়ার্ড কাউন্সিলর মিজানুর রহমান মিজান বলেন, গেম ঘরে নিতে নয়, লিবিয়ায় কারাগারে আটক রাকিবসহ কয়েকজনকে ছাড়াতে দালালকে টাকা দেওয়ার ব্যাপারে মধ্যস্থতা করেছিলেন।
রাজৈরের বৌলগ্রামের আব্দুল জব্বারের কাহিনি আরও ভয়াবহ। তিনি বললেন, তাঁকে ইতালি পাঠাতে তাঁর পরিবার গোপালগঞ্জের ইলিয়াসের স্ত্রী সাথীর কাছে ৮ লাখ টাকা দিয়েছিল। তাঁকে লিবিয়া নিয়ে গেম ঘর আর বিক্রি করে একাধিকবার টাকা নেওয়া হয়। এর মধ্যে ৫ লাখ টাকা দেওয়া হয় সাথীর ভগ্নিপতি রাজৈরের খালিয়ার ১ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আরিফ শেখকে। ইলিয়াসের মাধ্যমে ইতালি যেতে ১২ লাখ টাকায় রফা হলেও ৫০ লাখ টাকা খরচ করেও চার বছর পর লিবিয়া থেকে দেশে ফিরতে হয়েছে। মামলা করেছেন। আসামিরা এখন ভয় দেখান।
তবে ইউপি সদস্য আরিফ শেখ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমি ইলিয়াস দালাল নামে কাউকে চিনি না। টাকা দেওয়ার বিষয়েও কিছু জানি না।’
ইতালিপ্রবাসী কয়েকজন জানান, মানব পাচারকারীরা ইতালিতে শুরুতে অবৈধভাবে লোক নিত রাশিয়া-জার্মানি হয়ে। পরে পথ বদলে নেয় ইরান, তুরস্ক, গ্রিস হয়ে। গত এক দশকে দুবাই, সিরিয়া, মিসর, লিবিয়া ও তিউনিসিয়া হয়ে অবৈধভাবে ইতালিতে নিচ্ছে পাচারকারীরা।
ইতালিফেরত রেজাউল বেপারী বলেন, ২০০২ সালে বিভিন্ন দালাল ধরে পাকিস্তান-ইরান-তুরস্ক-গ্রিস হয়ে তিনি ইতালি যান। তাঁর ছোট ভাইও গেছেন একইভাবে।
মাদারীপুরের ইতালিপ্রবাসী-অধ্যুষিত এলাকাগুলোর কিশোররাও এখন স্বপ্ন দেখে গেমে ইতালি যাওয়ার। তাদের একজন হাসানকান্দি গ্রামের ১৭ বছরের ফয়সাল শরীফ। দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছে। বাবা মসজিদের ইমাম। নিজেদের আর্থিক অবস্থা তেমন ভালো না হলেও ইতালিপ্রবাসী চাচার কাছ থেকে টাকা ধার নিয়ে গেমে যাওয়ার ইচ্ছা জানাল আজকের পত্রিকাকে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও অভিবাসন বিশেষজ্ঞ ড. তাসনিম সিদ্দিকী বলেন, মানব পাচার দমন করতে চাইলে জঙ্গি দমনের মতো জিরো টলারেন্স দেখাতে হবে। সচেতনতা তৈরি করতে হবে, যাতে কেউ অবৈধভাবে না যায়। তিনি বলেন, ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে দায়ীদের নাম নিয়ে তাঁদের ধরে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিলে মানব পাচার প্রতিরোধ কমানো সম্ভব।
প্রতিবেদন তৈরিতে সাহায্য করেছেন মাদারীপুর প্রতিনিধি আয়শা সিদ্দিকা আকাশী

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২০ দিন আগে
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫বাসস, ঢাকা

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

মাদারীপুর সদর উপজেলার একটি গ্রাম হাসানকান্দি। গ্রামটির একটি মোড়ের নাম ‘ইতালি মোড়’। মুখে মুখে এই নামকরণের কারণ, গ্রামের প্রায় সাড়ে তিন হাজার মানুষ ইতালিপ্রবাসী। মাদারীপুরের আরও কয়েকটি গ্রামে আছে ইতালিপ্রবাসীদের ছড়াছড়ি। তবে এঁদের সিংহভাগই গেছেন ঝুঁকিপূর্ণ অবৈধ পথে।
২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

মাদারীপুর সদর উপজেলার একটি গ্রাম হাসানকান্দি। গ্রামটির একটি মোড়ের নাম ‘ইতালি মোড়’। মুখে মুখে এই নামকরণের কারণ, গ্রামের প্রায় সাড়ে তিন হাজার মানুষ ইতালিপ্রবাসী। মাদারীপুরের আরও কয়েকটি গ্রামে আছে ইতালিপ্রবাসীদের ছড়াছড়ি। তবে এঁদের সিংহভাগই গেছেন ঝুঁকিপূর্ণ অবৈধ পথে।
২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২০ দিন আগে
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

মাদারীপুর সদর উপজেলার একটি গ্রাম হাসানকান্দি। গ্রামটির একটি মোড়ের নাম ‘ইতালি মোড়’। মুখে মুখে এই নামকরণের কারণ, গ্রামের প্রায় সাড়ে তিন হাজার মানুষ ইতালিপ্রবাসী। মাদারীপুরের আরও কয়েকটি গ্রামে আছে ইতালিপ্রবাসীদের ছড়াছড়ি। তবে এঁদের সিংহভাগই গেছেন ঝুঁকিপূর্ণ অবৈধ পথে।
২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২০ দিন আগে
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

মাদারীপুর সদর উপজেলার একটি গ্রাম হাসানকান্দি। গ্রামটির একটি মোড়ের নাম ‘ইতালি মোড়’। মুখে মুখে এই নামকরণের কারণ, গ্রামের প্রায় সাড়ে তিন হাজার মানুষ ইতালিপ্রবাসী। মাদারীপুরের আরও কয়েকটি গ্রামে আছে ইতালিপ্রবাসীদের ছড়াছড়ি। তবে এঁদের সিংহভাগই গেছেন ঝুঁকিপূর্ণ অবৈধ পথে।
২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২০ দিন আগে
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫